Datasets:
id
int64 1
200
| event
stringlengths 14
51
| news_headline
stringlengths 18
178
| news_body
stringlengths 165
20.2k
| source_link
stringlengths 36
542
| date
stringlengths 8
10
| news_corpora_name
stringlengths 2
24
| label
stringclasses 3
values |
|---|---|---|---|---|---|---|---|
1
|
তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড
|
তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: ‘কেয়ামতের আগে আর মেয়েটাকে দেখতে পাবো না’
|
বাংলাদেশে তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় করা মামলায় কয়েকদিন পর পর নতুন করে শুধু শুনানির দিনই ধার্য হচ্ছে।
আহত শ্রমিক ও নিহতদের আত্মীয়রা আজ নতুন করে আবার বিচারের দাবি তুলেছেন।
স্বজনদের বিচারের দাবি
যেখানে তাজরীন গার্মেন্টটি অবস্থিত ছিল সেই জায়গাটির নাম নিশ্চিন্তপুর।
কিন্তু ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলায় সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বহু মানুষের জীবন অনিশ্চিত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া শ্রমিকদের একজন সুমাইয়া খাতুন।
তার মা আমিরন আক্তার বলছিলেন, "তখন আমরা ওই জায়গাতেই ছিলাম। আগুন নিজেরা দেখেছি। আমি ইটখোলায় কাজ করতে গেছিলাম। ইটখোলার উপর দিয়ে ধাউ ধাউ করে আগুন দেখা যাচ্ছিলো। দৌড়ে এসে দেখি কারখানা থেকে কেউ নামতে পারছে না।"
তিনি বলছেন, তার মেয়েই তার সংসার চালাত। এখন মেয়ের ছবি দেখে মাঝে মাঝে চোখের পানি ফেলেন।
তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সেই সন্ধ্যায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন।
যারা মারা গেছেন, তাদের অনেকেই আগুনে দগ্ধ হয়ে অথবা ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
নিচে মুল দরজায় তালা লাগানো ছিল বলে অনেকেই পালাতে পারেননি এমন অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সেদিন ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।
যাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচেননি। পঙ্গুত্ব মেনে নিতে হয়েছে অনেককে।
হাওয়া বেগম তাজরীন গার্মেন্টসে হেল্পারের কাজ করতেন। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সেদিন গুরুতর আহত হন।
কিন্তু একই কারখানায় কর্মরত তার মেয়ে মেশিন অপারেটর মৌসুমি সেদিন ছাদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি।
মেয়ের সাথে তার শেষ সাক্ষাতের স্মৃতি মনে করে এই ঘটনার বিচারের দাবি করেছেন হাওয়া বেগম।
তিনি বলছেন, "লাঞ্চে যখন ছুটি দেয় তখন বাসায় এসে মা-বেটি একসাথে খেয়ে অফিসে ঢুকছি। তারপর ওই ঘটনা যখন ঘটে আমার মেয়ে পাঁচতলায় কাজ করতো আর আমি ছয়তলায়। মেয়ের সাথে আমার আর দেখা হয় নাই। কেয়ামত পর্যন্ত তার সাথে আমার আর দেখা হবে না।"
তিনি বলছেন, "যদি তালাটা না লাগানো থাকতো, অনেকেই হয়ত বাঁচত। আমার মেয়েটাও হয়ত যেকোনো প্রকারেই হোক বের হতে পারতো। একটা দুটো মানুষ না। অতগুলো মানুষ। চোর যদি চুরি করে তাকে তো সাজা-শাস্তি দেয়া হয়। আর এটাতো চুরি না। এটা মারাত্মক। আমার যেমন বুক খালি হইছে, আমার মতো আরও কত মানুষের স্বামী সন্তান গেছে।"
সাক্ষী হাজির করা কেন সম্ভব হচ্ছে না?
অগ্নিকাণ্ডের পর আশুলিয়া থানায় করা মামলার তদন্ত শেষে এর অভিযোগ পত্র দাখিল হয় পরের বছর ডিসেম্বরে।
তারও প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্যাক্টরির মালিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত চার বছরে ৩৫ বার মামলার শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মামলায় কোন অগ্রগতি নেই।
তাদের বক্তব্য, সাক্ষীদের প্রতি পাঠানো সমন তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কী তার কারণ?
সমন পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আশুলিয়া থানা পুলিশের। জানতে চেয়েছিলাম আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল হকের কাছে।
তিনি বলছেন, "ধরেন এখানে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক ছিল। ঘটনার সেই সময় সে এইখানে চাকরী করতো। তখন সে এই মামলার সাক্ষী হয়েছে। এখন সে এখান থেকে চলে গেছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা ধরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।"
তিনি আরও বলছেন, "সেক্ষেত্রে তার স্থায়ী ঠিকানায় সমন জারী করার দায়িত্ব সেই এলাকার থানার। তারা স্থায়ী ঠিকানায় যখন সমন পাঠাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে দূরবর্তী স্থান হয়ত কেউ কুড়িগ্রাম, কেউ ঠাকুরগাঁও থেকে নাও আসতে পারে।"
তিনি বলছেন, তাদের কাছে যেসব সমন এসেছে সেগুলো তারা ঠিকমতোই পাঠিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন কয়েকজন সাক্ষী তারা হাজিরও করেছেন।
সমন পৌঁছানোর জটিলতা মানছেন না শ্রমিক নেতারা
এই মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা মোট ১০৪ জন। যাদের বেশিরভাগই সেসময় তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিক। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জনকে হাজির করা সম্ভব হয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিকদের সাথে তাদের যোগাযোগ থাকলে পুলিশ কেন সমন পৌছাতে পারছে না?
তিনি বলছেন, "আজকেও অগ্নিকাণ্ডের বার্ষিকীতে বহু শ্রমিক এসেছিলো সেখানে। তাজরীনের শ্রমিকদের অনেকের সাথে আমাদেরও ভালো যোগাযোগ আছে। শুধু আমরা না আপনিও যদি চান আপনার পক্ষেও তাজরীনের একশ শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব। এখন কেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বা আশুলিয়ার পুলিশ সমন গুলো সাক্ষীদের পর্যন্ত পৌছাতে পারছে না, সেটা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হচ্ছে না।
|
https://www.bbc.com/bengali/news-50538572
|
11/24/2019
|
BBC Bangla
|
Govt critique
|
2
|
১৯৯৬ একতরফা নির্বাচন
|
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল
|
২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তাকে কবরস্থ করার কফিন তৈরি করেছিল বি এন পি, আওয়ামী লীগ সেটাকে পেরেক মেরে কবরস্ত করেছে। ভুলে গেলে চলবে না। গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি আওয়ামী লীগ একাই এই পথে আসেনি, বি এন পি’র দায়ও কম না, বি এন পি পথ তৈরি করে দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সেই পথে এগিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা ছেড়েছিল, এটাও ইতিহাসের অংশ। ২০০৬ সালেও বি এন পি পাতানো নির্বাচনের খেলা খেলতে চেয়েছিল। ২০০১-২০০৬ জামানায় তারাও মাঝারি মানের ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল, তাদের কত কুকীর্তি ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে; ২০০৯-২০২৪ এ আওয়ামী লীগ সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রমানিত ফ্যাসিস্ট, গনহত্যাকারী। তবে ২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পরেও বি এন পি চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজিতে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বি এন পি’র আমলনামাও মেলে ধরা জরূরী, তারা কারা, তারা কী করেছিল এবং এখন করছে। জনগণের সামনে সুযোগ এসেছে আওয়ামী লীগ ও বি এন পি’র বাইরে নতুন কিছু ভাবার। এই দুই দলই লুটেরা, বাটপাড়, লুম্পেন, গণতন্ত্রের শত্রু; কেউ মাঝারি আর কেউ চ্যাম্পিয়ন। সেজন্য সাধারন মানুষ আওয়ামী লীগের জামানায় দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হওয়ার পরেও বি এন পি’র ডাকে রাস্তায় নামেনি। ফিরে দেখা ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনঃ বিএনপি যেভাবে দলীয় সরকারের অধীনে জোরপূর্বক সব দলকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত ও একতরফা সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেছিল!
গতকাল ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৬ সালের এইদিনে তথা ১৫ ফেব্রুয়ারি সকল বিরোধীদলের বর্জন ও প্রতিরোধের মুখে গায়ের জোরে লোক দেখানো নির্বাচন করে বিএনপি। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এই ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলনের আন্দোলনের পটভূমিতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করা, যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব রকমের সহায়তা দেবে। প্রতিচিন্তা ম্যাগাজিনে ৩রা এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান লিখেছিলেন যে প্রথমবারের মতো অনির্বাচিত ব্যক্তি সমন্বয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। দলটির মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, ১৯৮৩ সালে জামায়াত এক জনসভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ফর্মুলা দিয়েছিল।
ওই সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। দাবি আগে উঠলেও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের সকল সংসদ সদস্যরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে তীব্র এক আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন, সংঘাত এবং সহিংসতার ভেতর দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় তৎকালীন সরকার।
প্রধান সব রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকারের অধীনে একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনটি কেবল একতরফাই ছিল না, সেটি বেশ সহিংসও ছিল। ১৯৯৬ সালের নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগের দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে বেশিরভাগই ভোট দেননি। নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের কম হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ২৮৯টি আসন। ওই সংসদে আনুষ্ঠানিক কোন বিরোধীদল ছিল না, কিন্ত একটি আসন পেয়ে বিরোধী নেতার চেয়ারে বসেছিলেন ফ্রিডম পার্টির সৈয়দ ফারুক রহমান। বাকি ১০টি আসন পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সব সময়েই ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের রাজনৈতিক যুক্তি দেয়া হয়। ২০১২ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দলটির সিনিয়র নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছিলেন, এক রকম ঝুঁকি নিয়েই নির্বাচনের পথে এগিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং সংবিধান রক্ষা’ করেছিল বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপির এই স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনের সুযোগে নানা দিক থেকে আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিল তখন, এর ফলশ্রুতিতে মাত্র দেড় মাসের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৩০শে মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে সংসদ ভেঙ্গে দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। বর্তমান আম্লিক ও সেকাচিনার শত অপকর্ম, সমালোচনা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে তারাই একমাত্র ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল বা করতে পেরেছিল – এটাও ইতিহাসের অংশ।
|
https://smsaif.me/15-feb-1996-bnp-election/
|
2/15/2025
|
smsaif
|
Govt critique
|
3
|
সোনালী ব্যাংক হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি
|
হলমার্কের তানভীরের নতুন আবদার
জেল থেকে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি
|
আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীর মাহমুদ বর্তমানে জেলখানায়। সেখান থেকে তিনি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে আবদার করেছেন, তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য মূলধন দিতে হবে। তাহলে তিনি খেলাপি ঋণ পরিশোধ করবেন। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এমন খবর পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংকের এই ঋণখেলাপি হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
এর আগে তানভীর মাহমুদের স্ত্রী হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের অঙ্গীকারে জামিন নেন। কিন্তু জামিনের পরে এ গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। পরে তার জামিন বাতিল হয় এবং পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারের ডেপুটি জেলারের সত্যায়িত ওই চিঠিতে হলমার্কের এমডি বলেছেন, গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ঋণের অর্থ পরিশোধ করেছেন। গ্রেফতারের পরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ও মেশিনপত্র নষ্ট হচ্ছে। এখন তাকে ও তার স্ত্রীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে এবং কারখানা চালানোর জন্য মূলধন (যা ব্যাংকে অবরুদ্ধ রয়েছে) ছাড় করা হলে ধাপে ধাপে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করবেন। এর আগে তানভীর সোনালী ব্যাংকের কাছে ঋণ পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ও কারখানা চালু করার প্রস্তাব করেন।
তানভীর তার চিঠিতে বলেছেন, জামিনে মুক্তির পর প্রথম বছর ১২ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় বছর ২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন। তৃতীয় বছর থেকে ১২০ কিস্তিতে বাকি অর্থ পরিশোধ করবেন।
হলমার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংক ছিল 'সোনার ডিমপাড়া হাঁস'। ২০১২ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রুপটি। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর ব্যাপক হৈচৈইয়ের মধ্যে মাত্র ৫৬৯ কোটি টাকা ফেরত দেয় হলমার্ক গ্রুপ। আইন-আদালত সব করেও ২০১৩ সালের পর থেকে পাঁচ বছরে গ্রুপটির কাছ থেকে একটি কানাকড়িও ফেরত পায়নি ব্যাংক। বন্ধক রাখা সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বেচার অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি হচ্ছে না। আর সব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেও কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে না।
নিজের চিঠিতে তানভীর বলেছেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কারখানা বন্ধ রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান কারাগারে বন্দি। ফলে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার করতে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ও সময় দরকার।
সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি হলমার্কের ঘটনা তদন্ত কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন- তিনি বলেন, হলমার্ক গ্রুপের কারখানা চালিয়ে বা হলমার্কের নামে ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই সম্ভব না। কারণ কারখানার বড় বড় মেশিনপত্র তানভীরের লোকেরা আগেই নিয়ে গেছে। এখন যেসব মেশিন আছে, সেগুলো অচল। ব্যাপক পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ লাগবে কারখানা চালু করতে। বরং তানভীরসহ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাবে না। তানভীরের আবদারে সাড়া দিলে অন্যরাও এ সুবিধা নিতে চাইবে।
|
https://samakal.com/bangladesh/article/19012085/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AD%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0
|
1/29/2019
|
Samakal
|
Govt critique
|
4
|
শাহবাগ আন্দোলন
|
শাহবাগের সেই ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ এখন কোথায়, কী করছে?
|
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ পাঁচ বছরপূর্তি হলো আজ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর পর একদল তরুণ শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাতে শুরু করেন, যা পরে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে আন্দোলনে রূপ নেয়।
এর পর একের পর এক শীর্ষস্থানীয় মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখন এই আন্দোলন তেমন করে আর চোখে পড়ে না।
নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের জের ধরে সরকারপন্থীদের একটি অংশ সরে দাঁড়ানোয় ভাঙনেরও মুখোমুখি হয়েছে এ আন্দোলনের সংগঠকদের মধ্যে।
এ প্রেক্ষাপটে এখন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকাণ্ড কী?
এমন প্রশ্নের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলছেন, অসাম্প্রদায়িক বৈষম্য মুক্ত সমাজ করতে মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা তার জন্য লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ধর্ষণ, শিশু হত্যা কিংবা অর্থকড়ি লুটপাটের প্রতিবাদ সবই অব্যাহত ছিল। কয়েক মাস আগে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা হয়। আরেকটি কর্মসূচি ঘিরে আমিসহ অনেকের নামে মামলা হয়েছে। এর পরই কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু এখন কি আর মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে? এর জবাবে ইমরান বলেন, ‘এটি স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের আন্দোলন। এখানে সবসময় যে সাড়া থাকে তা নয়। তবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে রোডমার্চ কিংবা কুমিল্লায় তনু ধর্ষণের প্রতিবাদের কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থন আমরা পেয়েছি।
২০১৩ সালে যে দৃশ্যমান সাড়া এসেছিল এখন কি ততটা সাড়া আছে কিংবা মানুষের সেই মনোভাব কি এখন আর অবশিষ্ট আছে?
জবাবে ইমরান এইচ সরকার বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিলও গণজাগরণ সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। সেটি হয়েছে। কারণ এখন যে কোনো অন্যায় হলে মানুষ গণজাগরণ মঞ্চের আদলে প্রতিবাদ করছে। ২০১৩ সালের পর অধিকাংশ আন্দোলনে সাধারণ জনগণই নেতৃত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে গাড়িতে আগুন দেয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ এসবই ছিলও রাজনৈতিক কর্মসূচি ।
ইমরান আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখিয়েছি কীভাবে রাস্তায় নীরবতা পালন করেও কর্মসূচি পালন করা যায়। কীভাবে মোমবাতি জ্বালিয়েও প্রতিবাদ করা যায়।
কিন্তু এখন আর গণজাগরণ মঞ্চের কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
জবাবে ইমরান এইচ সরকার বলেন, এখান থেকে সরে যাওয়া যে সহজ ব্যাপার তাও নয়, কিন্তু শুরুতে যে ধরনের কর্মসূচি হয়েছে সেখানে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে আন্দোলনের গতিতেও।
|
https://www.jugantor.com/capital/14589
|
2/5/2018
|
Jugantor
|
Neutral
|
5
|
শাহবাগ আন্দোলন
|
বাঙালির ঐক্যবদ্ধ জাগরণের নাম শাহবাগ
|
বাঙালির জাগরণ ঘটেছে যুগে যুগে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মহান ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সর্বশেষ ২০১৩-এর শাহবাগ আন্দোলন। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকে একত্রিত করার সফল প্রেক্ষাপট গণজাগরণ মঞ্চ।
শাহবাগের হাত ধরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, একে অপরের হাতে-হাত, কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে গানে-কবিতায়- স্লোগানে শাহবাগ হলো বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ হলো শাহবাগ। যে তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, সেই প্রজন্ম এগিয়ে এলো মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তঋণ শোধ করতে। জন্মযুদ্ধের পর দ্বিতীয়বারের মতো আশ্চর্য এক সূর্য হয়ে ফেটে পড়ল বাংলাদেশ তথা সমগ্র বাঙালি জাতি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল প্রকম্পিত হলো মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনিতে। একাত্তরের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ’৭১-এ ঝাঁপিয়ে পড়ে যেভাবে পরাধীন বাংলাকে মুক্ত করেছিল বাঙালি জাতি, ঠিক তেমনই জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ও শ্রেণিভেদ ভুলে আবার এক হয়ে দাঁড়াই আমরা। অনেকের মতে, রাজনীতিবিমুখ এই তরুণরা এক হয়েছিল শুধু ’৭১-এর ঘাতক-দালালদের ফাঁসির দাবিতে। তাদের সঙ্গে গর্জে উঠেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, কবি, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইমাম, শ্রমিক গৃহবধূ; শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নির্বিশেষ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
একাত্তরের মানবতাবিরধীদের বিচারের উদ্যোগের শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিএনপি- জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী দেশদ্রোহীরা দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিল। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছিল তারা। দেশের মধ্যে কিছু বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদকে কিনতেও অসুবিধা হয়নি তাদের। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক-দালাল, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করে-বাঙালি জাতির ৪২ বছরের কলঙ্কমোচন করা।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু আমাদের প্রেরণা ছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের লাখো শহিদের রক্তস্নাত স্বপ্ন, বিশ্বাস আর আত্মত্যাগ। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধিদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা ছিলাম ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুণদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তঋণ শোধাতে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধকরণ। যদিও এটি ছিল দেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত আকাঙ্ক্ষা।
শাহবাগ চত্বরে যে আকস্মিক, স্বতঃস্ফূর্ত গণজমায়েত ঘটেছিল সেটি প্রজন্ম চত্বরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাঙালির মধ্যে। প্রসারিত হয়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে। যার প্রধান ভূমিকায় ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নির্ভীক সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যম ও সাময়িকী প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশ-বিদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করে তরুণদের উজ্জীবিত ও গণজাগরণকে তীব্র করে তুলেছিল। তবে কয়েকটি জামায়াত আদর্শের গণমাধ্যম গণজাগরণ মঞ্চকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে মত্ত হয়ে ওঠে এবং প্রচুর মিথ্যাচার ও ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তারা আমাদের তথাকথিত তরুণ প্রজন্ম বলে সম্বোধন করে এবং বারবার দাবি করে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ও ব্যর্থতা, দুর্নীতিকে আড়াল করতে, মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে বামদের নিয়ে শাহবাগ চত্বরের জন্ম দেয়। গোয়েবলসের প্রোপাগান্ডার সূত্র অনুসরণ করে বিশাল বিশাল মিথ্যা নিয়ে হাজির হয়, যাতে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত করা যায়। ব্লগার ও শাহবাগের সংগঠক কর্মীদের নিয়ে মিথ্যা খবরের ঝুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে। শাহবাগের বিরুদ্ধে কলম ধরে কিছু পেইড বুদ্ধিজীবী-লেখক মনের মাধুরী মিশিয়ে গল্প-প্রবন্ধ লিখতে থাকে। তবে বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী-লেখক-কবি শাহবাগের বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন স্লোগান, গান, শপথ পাঠ, জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট, গণস্বাক্ষর, মোমবাতি প্রজ্বলন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহিদদের উদ্দেশে লেখা চিঠি ও তিন মিনিট নীরবতা নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, গান লেখেন। এইদিকে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজনৈতিক দল বিএনপি তিনবার তাদের অবস্থান পাল্টায়, যার কারণে তাদের অনেক সমর্থকও বিব্রত হন। শাহবাগে নষ্ট ছেলেরা অবস্থান নিয়েছে, তারা ইতিহাস জানে না এমন মন্তব্য করে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের তরুণ প্রজন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে যে স্ফুলিঙ্গের জন্ম দেয় তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। সারাদেশের মানুষ পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়, ১৯৭১-এর মতো সদর্পে আপসহীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। আমরা জয় বাংলা স্লোগানকে পুনর্জাগরণ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করি।
হাজারও ষড়যন্ত্রের পরে প্রজন্ম চত্বরের গর্জনে স্বাধীনতাবিরোধীদের কাঁপন ওঠে, একাত্তরের চেতনা ধারণ করে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা শাহবাগে প্রাণের টানে জড়ো হন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে পাকিস্তানমুখি যাত্রা করা বাংলাদেশে আমাদের প্রজন্মের কেউ এমনকি আমাদের পূর্ব বা পরবর্তী প্রজন্ম আর বিশ্বাস করতই না যে এদেশে আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হবে, গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী বা সাকাচৌদের কারাপ্রকোষ্ঠে আটকে রাখা সম্ভব হবে। বরং এ ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি ও বাংলাদেশের পাকিস্তানমুখি যাত্রাই একমাত্র সত্য। কিন্তু শাহবাগ প্রজন্ম এসব ভুল প্রমাণ করে রুখে দাঁড়ায় আপন শক্তিতে।
দেশ-বিদেশের নানা ষড়যন্ত্রের পরেও বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রতি রেখেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আপসহীন থেকে এক লৌহমানবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশ্বমোড়লদের রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ’৭১এর ঘাতক রাজাকারদের ফাঁসি বাস্তবায়ন করতে আদালতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জন কেরি, হিলারি ক্লিনটন, কিংবা ডেভিড ক্যামেরনদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় কার্যকর করা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। দেশের ভেতরে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা পুলিশ হত্যা থেকে শুরু করে কী নৃশংস তাণ্ডবই না চালিয়েছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, পেট্রোল-বোমায় পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, যা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি!
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত যখন শত ষড়যন্ত্র করেও তাদের পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী আদর্শিক পিতাদের, ’৭১এর ঘাতকদের বিচার বানচাল করতে পারছে না, তখন আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হেফাজতে ইসলামকে কাজে লাগিয়ে শুরু করল দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত। নাস্তিকতার ধোয়া তুলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন করা সরকারকে উৎখাত করা ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো বিএনপিসহ মুখোশধারিরাও। হাজার হাজার নিরীহ মাদরাসার ছাত্রদের কাজে লাগিয়ে কর্মসূচি দিল ঢাকা অচলের। ৫ মে ২০১৩, ভয়াল সেই রাত ঢাকার বুকে একে দিল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ক্ষতচিহ্ন। ধর্মের নামে এত জঘন্য ভয়াবহ তাণ্ডব, মানুষ খুন জাতি আর কখনও দেখেনি। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতর আগুন দিল, মুসলিমদের হাজার হাজার পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে দিল। মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে উঠল রণক্ষেত্র। বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নে এতদিন যারা বিভোর ছিল, আজ তারা আনন্দে আত্মহারা। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চেও আক্রমণ করা হলো, কিন্তু জাগরণ যোদ্ধারা সেই হামলা প্রতিহত করে দিল। ছাত্রলীগ ২৬ মার্চের পর থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে না আসলেও ওইদিন সবার আগে তারাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ছাত্রলীগ মৎস্য ভবনের সামনে প্রতিরোধের গড়ে তুললে হেফাজত শাহবাগে খুব বেশি আক্রমণ করতে পারেনি। তারপরও জামায়াত-হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু ক্যাডার রমনার ভেতর দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের দিকে আসতে চাইলে আমাদের সহযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম দেখেছে জয় বাংলা স্লোগানের শক্তি।
এইদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলেছিল তারা ভেতর থেকে ভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আর বাইরে বিএনপি জামাত-শিবির পাকিস্তানিদের দোসর। সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন ভিনদেশি এজেন্ট বাস্তবায়নকারী এনজিও নেতা ও সংগঠন। যে ব্যক্তি শুধু কর্মসূচি পাঠ করতো তাকে বানানো হলো আন্দোলনের নেতা, তাকে বোঝানো হলো, তোমার ডাকে লাখ লাখ মানুষ হয়েছে, তুমি এই প্রজন্মের ‘বঙ্গবন্ধু’! সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থেকে তাকে দূরে সরানো হলো। এই জাগরণকে সামনে রেখে কোনো কোনো রাজনৈতিক ক্ষুদ্র বাম দল ক্ষমতায় যাবার স্বপ্নে বিভোর। ক্ষমতার লোভ আর রাজনৈতিক অভিলাষে বিতর্কিত ও সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করল কর্মসূচি পাঠ করা মুখপাত্র। ‘জয় বাংলা’ পর ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলতে না দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফকে শাহবাগে অপমান করা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।
এখানে আরেকটি নির্মম সত্য হলো আন্দোলনের প্রথম থেকেই দেশের তথা কথিত প্রথম সারির কিছু সুবিধাভোগী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে না এমন কিছু আওয়ামী নেতা কর্মী শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াতে উঠে পড়ে লাগল। কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন আচরণ শুরু করল যা পরবর্তীতে শাহবাগের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে তাদের অপচেষ্টা সফল হয়েছিল।
অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে সকল আদর্শহীন, জামায়াত সংশ্লিষ্ট আওয়ামী নেতারা এতদিন ব্যবসা বাণিজ্য বিনা বাধায় করে আসছিল তাদের অস্বস্তিতে পড়তে হল। তাদের নিয়ে কথা উঠতে শুরু হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারাও পরবর্তীতে সুপরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত ছড়াতে কাজ করেছে। তারা চায়নি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান এই প্রজন্মের কেউ যেন রাজনীতি ও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তারা ভালো করে বুঝে গেল শাহবাগের জাগরণ যোদ্ধারা আর যাই করুক জামায়াত-শিবির-রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিষয়ে কখনো আপস করবে না।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তরুণ প্রজন্মের এক বিপুল সম্ভাবনাময় শক্তির অপমৃত্যু ঘটল। অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য যে শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারী মনোভাব আর অবিশ্বাসের খেলায় চুরমার হয়ে গেল। এমন ক্ষত তৈরি করল যা সারাতে আরও কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে। তবে বাঙালি সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বারংবার। শাহবাগ পেরেছে যে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি একটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সে জয় বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে সমগ্র বাঙালির কাছে, আগামী প্রজন্মের কাছে। যারা নির্মাণ করবে জাতির পিতার বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। শাহবাগ গণজাগরণ শক্তি যুগিয়েছে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাঁটবার। প্রজন্ম জেনেছে মুক্তিযুদ্ধে কারা গণহত্যা করেছে, কারা ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে।
’৭৫ পরবর্তী সময়ে আমরা ‘জয় বাংলা’ শব্দটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই শব্দটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে সমস্বরে উচ্চারিত হওয়া একটি বড় অর্জন। ’৭৫এর পরে জয় বাংলাকে শাহবাগের গণজাগরণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করি।
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে সফল প্রেক্ষাপট গণজাগরণ মঞ্চ। দীর্ঘ সময় ধরে একটি অহিংস আন্দোলন করতে পারা; বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। আন্দোলনের মাধ্যমে সংসদে আইন প্রণয়ন ও জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে আগামী প্রজন্মকে তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি সফল আন্দোলন।
মানবতার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য, প্রগতির জন্য একত্রিত হওয়ার যে বিকল্প নাই তার প্রমাণ গণজাগরণ মঞ্চ। ভুলে যাওয়া চলবে না, ভালো মানুষদের অনৈক্যের ফলাফলটা পাল্টে দিতে পারে সব ইতিহাস সব অর্জন। আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করে নিশ্চিত রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব।
|
https://www.dailyvorerpata.com/news/75783
|
2/5/2022
|
The Daily Vorer Pata
|
Neutral
|
6
|
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
|
হেফাজত নেতাদের নজরদারির পরামর্শ
একদফা আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনা চলছে * হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে
|
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের গতিবিধিসহ সব কার্যক্রম সরকারের নজরদারিতে আনার পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দারা। অরাজনৈতিক এ সংগঠন যেন বিএনপি-জামায়াতের দিকে ধাবিত হতে না পারে, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত বলেও মনে করেন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দিয়েছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজত ইসলামকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনা চলছে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মামলা আগামী নির্বাচনের আগেই প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ ঘটে। হেফাজতে ইসলাম কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সমমনা বিভিন্ন ইসলামি দল এতে অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণে হেফাজতে ইসলামকে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন বলা যায়। ২০২১ সালের ২৬, ২৭ এবং ২৮ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে দেশব্যাপী তারা তাণ্ডব চালিয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা এবং বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এর কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বর্তমানে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। এই সুযোগে সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা চালাবে হেফাজত। ইতোমধ্যে তারা নতুন কমিটি করেছে। ওই কমিটিতে আগের কমিটির বাদ পড়া নেতাদের পুনর্বহাল করেছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগের করা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে তারা সোচ্চার হচ্ছে।
প্রতিবেদনের ‘প্রেক্ষিত’ অংশে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে। ওই বছরের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটায়। ২০১৭ সালে সুপ্রিমকোর্ট প্রধান ভবনের সামনে ফোয়ারায় গ্রিক দেবী ‘থেমিস’-এর ভাস্কর্য স্থপনের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে। ২০২০ সালে রাজধানীর দোলাইরপাড় চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়। বর্তমানে ধর্মভিত্তিক এ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাছে। ২০২১ সালে দেশব্যাপী সহিংস কর্মকাণ্ড চালানো, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও অনেকে গ্রেফতার হওয়ার পর পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে ওই সময় (২৫ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তাদের কমিটি বিলুপ্ত করে। বিলুপ্ত কমিটির আমির ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি মারা যাওয়ার পর নতুন আমির হন মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি কমিটির কলেবর বাড়ান। তারপরও বাদপড়া নেতাদের অনেকেই ওই কমিটিতে স্থান পাননি। ৫ আগস্ট ঢাকার খিলগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় আল্লামা সাজিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়। ওই সভায় আগের বিলুপ্ত কমিটির প্রায় সব নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
হেফাজত নেতারা জানিয়েছে, খিলগাঁওয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলোচিত-সমালোচিত এবং বিতর্কিতদের পদায়ন করে গত ৩১ আগস্ট কার্যকরী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ২১১।
তবে ২০২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নয়টি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। মাওলানা মামুনুল হকসহ যারা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন, তারা মুক্তি পাওয়ার পর ওই নয়টি শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এছাড়া ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় বিষয়ে অধিকতর স্পর্শকাতর ইস্যুকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর মনোভাবে অভ্যস্ত। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী মহল যেন হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আরও বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই হেফাজতের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ মাদ্রাসায় শতাধিক শিক্ষক এবং ১২-১৩ হাজার ছাত্র আছে। ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এ মাদ্রাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে দেখা যায়। তাই এ মাদ্রাসার প্রতি সার্বক্ষণিক বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
|
https://www.jugantor.com/politics/721062
|
9/232023
|
Jugantor
|
Govt leaning
|
7
|
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
|
ঢাকা অবরোধ হেফাজতের: আশঙ্কা-আতঙ্ক
|
১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রোববার ভোর ৬টা থেকে অবরোধ শুরুর কথা থাকলেও ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকার প্রবেশমুখ নির্দিষ্ট ৬টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন হেফাজত নেতাকর্মীরা।
এ অবরোধ শেষ হওয়ার সময়সীমা না দিয়ে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নির্দেশে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তবে বিকেল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যদিও পুলিশ প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।
নেতারা জানান, রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে অবরোধ করছেন হেফাজত কর্মীরা। এগুলো হলো যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত এবং গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত। কর্মসূচি চলাকালে বাইরে থেকে কোনো যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং রাজধানী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তবে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
হেফাজতের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন এবং সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করবে তারা।
এদিকে এ অবরোধকে ঘিরে টান টান উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এ কর্মসূচি নিয়ে দারুণ উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে দেশবাসী।
হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী জানিয়েছেন, সাভার ট্র্যাজেডির সঙ্গে সম্পৃক্ত লাশবাহী গাড়ি, সংবাদপত্র, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যানবাহন, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
মহানবী (সা.), আল্লাহ ও ইসলামের অবমাননাকারী `নাস্তিক` ব্লগারদের শাস্তি, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন, ‘ইসলামবিরোধী’ নারীনীতি ও শিক্ষানীতি বাতিলসহ ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিল লংমার্চের পর মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজত নেতারা দাবি করেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক লাখ হেফাজত নেতাকর্মী অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। কালেমা খচিত পতাকাসহ চিঁড়া, মুড়ি, পানি, জায়নামাজ, তসবিহ, মেসওয়াক সঙ্গে নিয়ে হেফাজত সদস্যরা এতে অংশ নিচ্ছেন।
হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মুফতি আজহারুল ইসলাম ও মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, কাঁচপুর এলাকায় থাকবেন মাওলানা আজিজুল হক ও মাওলানা আবদুল কাদের, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় মধুপুরের পীর সাহেব মাওলানা আবদুল হামিদ ও মাওলানা আবু ইউসুফ, আমিনবাজার এলাকায় মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা লোকমান মাজহারী, গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত মাওলানা মোস্তফা আজাদ এবং উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত স্পটে মুফতি মাসুদুল করীম নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্পটে কেন্দ্রীয় নেতারা পৃথকভাবে নেতৃত্ব দেবেন।
আপাতত ছয়টি পয়েন্টের কথা ঘোষণা হলেও টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অবরোধ পয়েন্টের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও দাবি করছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন এমন নির্দেশনা থাকলেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
হেফাজত যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন রুহী জানিয়েছেন, “অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পয়েন্টে হেফাজত স্কোয়াডের ৫০ হাজার সদস্য অবস্থান নেবেন। যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে এ লক্ষ্যে এ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা-হেলমেট পরিহিত এসব সদস্য ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। এর মধ্যে গাবতলী-আমিনবাজার, টঙ্গী ব্রিজ এবং কাঁচপুর ব্রিজ পয়েন্টে ১০ হাজার করে এবং বাকি পয়েন্টগুলোতে ৫ হাজার করে হেফাজতে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। ”
তবে এ অবরোধে নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন পুলিশের ৩৫ হাজার ও র্যাবের ৫ হাজার সদস্যও। শনিবার রাত থেকেই টহল দিতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর ৪০ প্লাটুন। অরাজকতাসহ যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে কঠোর অবস্থানে। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যা ঢাকার আকাশজুড়ে পর্যবেক্ষণে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার। একই সঙ্গে বৃত্তাকার নৌপথে টহল দেবে পুলিশের একাধিক টিম। হেফাজতের ছয়টি অবস্থানের কাছেই থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতও। আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল কার (আরসিসি), সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামানসহ নাশকতা ঠেকানোর সরঞ্জাম থাকবে ঢাকার সব প্রবেশমুখে। আর কর্মসূচির বিষয়টি মনিটরিং করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সেল।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে, হেফাজতে ইসলাম রাজধানীর ছয় প্রবেশমুখে তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পুলিশ যে কোনো ভাবে তাদের সরিয়ে দেবে। তাতে যদি বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ দেখা দেয়- এ থেকেও পিছপা হবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম যদি শান্তিপূর্ণ তাদের কর্মসূচি পালন করে তা হলে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। তবে আজকের কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর হাতে তাদের দমন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া খবর রয়েছে- অবরোধে জঙ্গিবাদী শিবির কর্মীরা নাশকতার চেষ্টা চালাবে। ” সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “শনিবার রাতেই ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার আরও ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হবে। অবরোধের সময় যদি কোনো বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেজন্যে আরও সদস্যকে রাখা হয়েছে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যেসব স্থানে অবস্থান নেবেন হেফাজত কর্মীরা, সেসব স্থানগুলো পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়েছে বিজিবি। তিনি বলেন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ শহরে পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আগে থেকেই বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র না থাকলেও প্রয়োজনে তাদেরকেও ব্যবহার করা হবে। ”
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের লোকজন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে। কিন্তু তারা যেন কোনো ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র্যাব কাজ করছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও তার আশপাশ এলাকায় র্যাবের টহল চলছে। গোয়েন্দা ইউনিটও সন্দেহভাজন এলাকাগুলো নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ”
র্যাব সূত্র জানায়, অবরোধে র্যাবের ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া অবরোধ পর্যবেক্ষণে র্যাবের দুটি হেলিকপ্টার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে উড়বে। এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের ৫ শতাধিক ক্যাডার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ কিছু `ক্যাডার` হেফাজতে ইসলামের অবরোধে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির করার চেষ্টা করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজত কর্মীরা ফজরের নামাযের পরপরই মাঠে নেমেছেন। আর তারও এক ঘণ্টা আগেই সব স্পটে অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হেফাজত কর্মীরা যদি কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেবে।
সূত্রটি জানায়, পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় সকল কিছুই সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টি স্পটে কমপক্ষে দু’টি করে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে।
সূত্রটি বলেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে রাজধানীর প্রবেশমুখ গুলোতে। কিন্তু ডিএমপি’র কোনো এলাকায় তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। রাজধানীতে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে- এ কারণেই সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকের নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, যেন মাদ্রাসায় বহিরাগত কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া না হয়। এ অনুরোধের পাশাপাশি পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে মাদ্রাসাগুলোকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। তবে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে পারে শিবির। হেফাজতের সঙ্গে মিশে গিয়ে সকাল থেকে তারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এই কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে অবস্থান করছেন।
গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মতিঝিল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০ শিবির কর্মীকে আটক করে।
মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, “শিবির কর্মীদের গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করে ৩০ জনকে আটক করি। পাশাপাশি শিবিরের অতর্কিত হামলায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। শিবির কর্মীরা যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। “
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সুযোগ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে এসেছেন। অবরোধ কর্মসূচি হেফাজতের হলেও ওই কর্মসূচিতে নিজেদের শক্তি দেখাতে শিবিরের এই তৎপরতা। কর্মসূচিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যও শিবির তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরের পর ১৮ দলের সমাবেশে শিবির কর্মীদের সশস্ত্র অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। হাতে লাঠি নিয়ে সরকারবিরোধী অশ্লীল শ্লোগান থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে নানা শ্লোগান দেন তারা। সমাবেশের পুরোটা সময় মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এবং ফকিরাপুল এলাকা ছিল শিবিরের দখলে।
সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিবির কর্মীদের দেখা যায়। এতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, রোববার হেফাজতের কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে চাচ্ছে শিবির। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অবহিত করেছেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিবির কর্মীরা যেন হেফাজতে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। রাজধানীর ভেতরেও সুযোগ নিয়ে যেন কোনো প্রকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
তবে রাজধানীর কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি হেফাজতে ইসলাম। ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, সমাবেশের ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে একটি বিশেষ মহলের। সে কারণেই হেফাজতকে রাজধানীর ভেতরে কোথাও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। তারা অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার জমায়েতের চেষ্টা করলে পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।
|
https://www.banglanews24.com/national/news/bd/193905.details
|
5/5/2013
|
Bangla News24
|
Neutral
|
8
|
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
|
মিছিলে অবরোধে হেফাজত প্রতিহতের হরতাল
|
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে ২৪ ঘণ্টা। আর হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ঠেকাতে অবরোধ শেষ হবে শনিবার বিকাল ৪টায় শাহবাগের সমাবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে।
শাহবাগ ও রাজধানীর পাঁচটি প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। শাহবাগে রাতভর চলছে জামায়াত ও হেফাজতে প্রতিরোধের স্লোগান।
হরতালের সমর্থনে টিএসসি থেকে বিকাল ৫টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।এদিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে শাহবাগ এলাকায়ও।
পল্টন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের নেতাকর্মীরা।
হরতাল আহ্বানকারী সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল বের হয়।
একই সময় দেশের সব বিভাগীয় শহরসহ সাড়ে তিনশ’ উপজেলায় হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল হয় বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জানান।
হরতাল সমর্থকদের মিছিল থেকে ‘সাম্প্রদায়িকতার লং মার্চ মানি না’, ‘হেফাজতের লং মার্চ মানি না/জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, করতে হবে’- স্লোগান দেয়া হয়।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সন্ধ্যা ৬টার কয়েক মিনিট আগে জাগরণ মঞ্চ থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান। এরপর সেখানে সমবেত আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
হেফাজতে ইসলামীর লংমার্চ প্রতিরোধে সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, টঙ্গী চৌরাস্তা, আশুলিয়া ও কমলাপুর রেল স্টেশন অবরোধ করেছে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা।
বিকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘাট শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের একদল প্রতিনিধি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যান। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হেফাজত সমর্থকদের ঘাট থেকেই ফিরিয়ে দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য শুক্রবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামাবেশ করে।
শ্রমিকদের উদ্দেশে ইমরান বলেন, “যারা হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে আসবে তাদের আপনারা ঘাট থেকেই ফিরিয়ে দেবেন। কারণ হেফাজতে ইসলামের নামে তারা মূলত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য জামায়াত-শিবিরের হয়ে কাজ করছে।”
‘উগ্রপন্থী’ এই গোষ্ঠী জামায়াত-শিবিরকে রক্ষা করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক জানান, মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ প্রতিনিধিরা সদরঘাট ছাড়াও আব্দুল্লাহপুরে অবরোধস্থলে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অবরোধ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।
লংমার্চ এবং হরতাল-অবরোধের ঘোষণার মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কায় রাজধানীর সঙ্গে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। এতে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল এক প্রকার বন্ধ রয়েছে সকাল থেকেই। ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস রাজধানীতে আসেনি।
হরতাল ও অবরোধ শুরুর পর সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে গণপরিবহনের পাশাপাশি হালকা যানবাহন চলাচলও কমে আসে।
রাত ৭টার দিকেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে বেশ কিছু রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেলেও রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে আড্ডারত পরিবহন শ্রমিক মো. মফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য হরতালে গাড়ি কম ছাড়লে বা না ছাড়লেও টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় থাকে। কিন্তু আজ এখানে মাছিও নাই। বাস চালাবো কিভাবে?”
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিরোধে শুক্রবার শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ।
গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা যায়।
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও সন্ধ্যার পর কোনো ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার মো. খায়রুল বশীর।
রেলস্টেশনে কিছু যাত্রী থাকলেও কাউন্টারের সামনে টিকেট করতে আসা মানুষের পাশাপাশি টিকেট ফেরত দিতে আসা মানুষের সারিও দেখা যায়।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার ঢাকামুখী লংমার্চ এবং শনিবার রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের এই কর্মসূচি প্রতিহত ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার এই হরতাল করছে। বামপন্থী দলগুলোও এতে সমর্থন দিয়েছে।
আর হেফাজতের কর্মসূচি প্রতিহত করতে গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়ে বিকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকর্মীরা। সকাল থেকে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে যান চলাচলও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্বর থেকে মশাল মিছিল বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হরতালের সমর্থনে বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নগরীর সিটি গেইটে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
|
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article597933.bdnews
|
4/5/2013
|
Bdnews24
|
Govt leaning
|
9
|
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
|
হেফাজতে আল্লামা শফীর উত্তরসূরি হচ্ছেন কে?
|
প্রায় দুই মাস আগে মারা যাওয়া দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী যেসব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এর প্রায় সবগুলো পূরণ হলেও এখনো আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামে তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন হয়নি। নানা জল্পনার পর অবশেষে আগামী রবিবার নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সম্মেলন আহ্বান করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির আমির পদে থাকা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হচ্ছেন সেটা নিয়ে এখন সারাদেশের আলেম-উলামার মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব পদে আছেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তার ছেলে আনাস মাদানীর সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামে অনেকটা কোণঠাসা ছিলেন। তবে হাটহাজারীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে আনাস মাদানী বলয়ের পতনের পর এখন বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে আল্লামা বাবুনগরী বলয়। তারাই মূলত হেফাজতের নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে। যদিও এতে দাওয়াত দেয়া হয়নি আনাস মাদানী ও তার বলয়ের লোকদের।
রবিবার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে। এতে সারাদেশের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিনিধি সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শূরা কমিটি। এতে হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শূরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা।
হেফাজতের নতুন আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নাম জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে। আর মহাসচিব পদে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান নায়েবে আমির এবং ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম। এছাড়াও আমির পদে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা মামুনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচশজনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তারাই নির্ধারণ করবেন হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী নেতৃত্ব।
তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী এই কাউন্সিলকে অবৈধ দাবি করেছেন। তার দাবি, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, অথচ তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও অপর অংশের দাবি, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেননি।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের এক সময়ের নিয়ন্ত্রক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাঈনুদ্দিন রুহী এবং দপ্তর সম্পাদক আনাস মাদানীকে সম্মেলনে দাওয়াত দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামে তারা কর্তৃত্ব হারিয়েছেন। নতুন কমিটিতেও তাদের স্থান হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী ও ইসলামের বিভিন্ন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে হেফাজতে ইসলাম। তবে এর এক মাস পর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে বিপর্যয়ের পর হেফাজতে ইসলাম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলেন সরকারের সঙ্গে তার ও হেফাজতে ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আল্লামা শফীর নাম ব্যবহার করে তার ছেলে আনাস মাদানীসহ একটি চক্র সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করেছে। এজন্য ক্ষুব্ধ অংশটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আল্লামা শফীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় আনাস মাদানীকে।
এরপর থেকে হাটহাজারী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলয়ের। এবার তারা হেফাজতে ইসলামেও নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এই বলয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলাম কারও বলয়ের নয়, ইসলামবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
|
https://www.dhakatimes24.com/2020/11/13/191203/%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%AB%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%87
|
11/13/2020
|
Dhaka Times
|
Neutral
|
10
|
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
|
ফিরে দেখা: হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ
|
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গত বছর লংমার্চ, ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল। কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩দফা দাবি তুলে সংগঠনটি এ ধরণের কর্মসূচি নিয়েছিল।
গত বছরের আজকের এই দিনে ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম এর ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। ভোররাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অবস্থানকারীদের শাপলা চত্বর থেকে উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। ভোর পাঁচটা ৫ই মে ২০১৩, ফজরের নামাযের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়দাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক।বেলা বাড়ার সাথে সাথে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকলো, যখন এর নেতৃত্ব ঢাকার ভিতরে প্রবেশ করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান দাবি করেছেন,অনেকটা আকস্মিকভাবেই তারা ঢাকায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সাথে আলোচনা শুরু করেন।
সকালে দফায় দফায় তাদের অলোচনা চলে। সকাল সাড়ে ১১টা,অনুমতি মেলার আগেই কয়েকটি মিছিল ঢুকে পড়ে এবং সংঘর্ষ শুরু হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেছেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শাপলা চত্বরে এসে শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করার শর্তে।কিন্তু বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায় সহিংসতা চলেছিল সন্ধ্যার পরও।
বেলা বারটা, সংঘর্ষ হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে । সেখানে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের কার্যালয়ে হামলা হলে ,তখন সেখানে থাকা কিছু নেতাকর্মী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
দুপুর দেড়টা, ঢাকার প্রবেশপথগুলো থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান নেয় শাপলা চত্বরে।
কিন্তু অন্যদিকে, পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকারম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ ,সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় গুলি চালায়। যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল গোটা ঐ এলাকা।
দিনের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়। তবে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের বক্তব্যে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা আসতে থাকে। জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, অবস্থানের বিষয়টাও এসেছিল পরিস্থিতির কারণে।
রাত সাড়ে আটটা, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ঐ বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কও হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা হেফাজতের কর্মসূচির সাথে রাজনৈতিক কোন যোগসূত্র মানতে রাজি নন। তবে তারা বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, হেফাজতের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সে সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্ব্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে বড় ধরণের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল,তার পাল্টা হিসেবে হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা ছিল কোন মহল থেকে।
সেখানে জামায়াতে ইসলামীও কৌশলে সক্রিয় ছিল।
রাত সাড়ে দশটা, পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের প্রধান শাহ আহমদ শফিকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেয়।
কিন্তু কিছুটা পথ এসেই অসুস্থ এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে শাহ আহমদ শফি ফিরে যান। তিনি আর আসেননি শাপলা চত্বরে। রাতে অবশ্য জমায়েতও অনেকটা কমে গিয়েছিল।
রাত সোয়া একটা, আলোচিত সেই রাতের অভিযানের প্রস্তুতি। সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমিও সেসময় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
পুলিশ, র্যাব,বিজিবির হাজার হাজার সদস্য তখন দৈনিক বাংলার মোড়, দিলখুশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর ষ্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল।
অন্য তিন দিক থেকে র্যাব , বিজিবি পুলিশ সদস্যরা এগুনোর চেষ্টা করে এবং প্রথমে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলে। কিন্তু মঞ্চ থেকেও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টা দেড়েক এভাবে চলে।
রাত পৌনে তিনটা। শুরু হয় মুল অভিযান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ফাকা গুলি,আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত রাউন্ড গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল।
এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অন্যতম একজন পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে।
ট্রাকের উপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চও খালি হয়েছিল মুহূর্তেই। তবে সেই মঞ্চের পাশে একটি ভ্যানের উপর কাফনের কাপড় এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো চারটি মৃতদেহ ছিল।
আমরা সাংবাদিকরাও সেই মৃতদেহগুলো দেখেছি। এগুলো দিনে সংঘর্ষে নিহতদের মৃতদেহ বলে পুলিশের দাবি।
জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, অভিযান তারা যে যার মতো সরে পড়ায় নেতারা একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
অভিযানের সময় হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পুলিশ পুরো এলাকার দখল নেওয়ার পর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের বের করে এনে ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে সহায়তা করে।
আমরা সাংবাদিকরা সে সময় দেখছিলাম, হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মাথার উপর দু’হাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ঐ এলাকা ছেড়ে যান।
ভোর চারটা, তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে ফাঁকা গুলি করেছে এবং তল্লাশি চালিয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোতে।
রাতের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক দেখ দিয়েছিল।
আড়াই হাজারের মতো নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলছিল বিভিন্ন দল। পুলিশ বলেছিল, অভিযানের সময় আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা গিয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ই এবং ৬ই মে দু’দিনে সারাদেশে ২৮ জনের নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, তারা হেফাজতের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দিলেও তদন্ত করে দেখা হয়নি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির জানিয়েছেন, ছয় মাস সময় নিয়ে তারা তদন্ত করেছেন।
ভোর পাঁচটা,পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মতো মনে হয়েছিল। আগের দিনের সহিংস বিক্ষোভের অনেক চিহ্ন আশেপাশে ছড়িয়েছিল।
|
https://www.bbc.com/bengali/news/2014/05/140504_si_hefajote_islam_looking_back_5_may_dhaka
|
5/5/2024
|
BBC Bangla
|
Neutral
|
11
|
রানা প্লাজা ধস
|
টাইমলাইন রানা প্লাজা: যে ভবন ধসে এগারোশোর বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল
|
বাংলাদেশের সাভারে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের পর ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ওই ধসের ঘটনায় এগারোশোর বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক।
বিশ্বের ভয়াবহতম শিল্প দুর্যোগের একটি হিসেবে এরই মধ্যে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ওই ভবন-ধসের ঘটনা।
যেদিন রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ে তার আগের দিনই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল।
আর সেই ফাটল অগ্রাহ্য করেই পরের দিন ভবনটির পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়।
২৩শে এপ্রিল ২০১৩, মঙ্গলবার, সকাল আটটা
বাংলাদেশে ঘণ্টা দুয়েক আগেই শুরু হয়েছে বিরোধী জোটের টানা দুইদিনের হরতাল।
হরতালের আওতামুক্ত শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের পদচারণা শুরু হয়েছে সাভারে।
ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা।
এই ভবনটিতেও দলে দলে ঢুকছে শত-শত নারী পুরুষ।
ভবনটির তিন তলা থেকে শুরু হয়ে নয়-তলা পর্যন্ত রয়েছে পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানা।
নিচতলা ও দোতলায় শপিং মল, সেখানে রয়েছে মােট ২৭০টি দোকান।
সেই সাথে ভবনে আছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা।
তিন তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড।
আর সবার মতোই সেদিন এই ফ্লোরের কাটিং সেকশনে এসে কাজ শুরু করেছিলেন সুপারভাইজার নুরুল ইসলাম খান।
এই কারখানাটিতে তখন তৈরি হচ্ছিল ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য বাচ্চাদের প্যান্ট।
ঘটনার শুরু হয়েছিল এই তিন তলা থেকেই।
সকাল পৌনে ১০টা
তিন তলার একটি পিলারে হঠাৎ চড়চড় করে শব্দ হলো।
একটি সেলাই মেশিনের উপর সশব্দে খসে পড়লো দেয়ালের প্লাস্টার। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করলেন শ্রমিকেরা।
এভাবেই ফাটল আবিষ্কারের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন নুরুল ইসলাম খান।
"আমরা তখন কাউকে কিছু না বলে চেয়ারম্যানকে ফোন করি। তিনি আমাদের কারখানা ছুটি দিয়ে দিতে বলেন এবং তার সাথে দেখা করতে বলেন।"
মি. খান আরও বলেন, "পরে ম্যানেজার এসে আমাদের বলেন, এরকম দু-একটা পিলার না থাকলে কিছু হবে নাকি ব্যাটা! এখন কাজের যা চাপ!
আমরা নাইট করে কুলাতে পারছি না। ম্যানেজারের সাথে যখন কথা বলছিলাম তখনও আমি পিলারের ভেতর চড়চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।"
কিন্তু ফাটলের খবর চাপা থাকেনি।
বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সাভার সংবাদদাতা নাজমুল হুদা কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার ক্যামেরা নিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থল রানা প্লাজায়।
রানা প্লাজার ফাটলের সংবাদ সংগ্রহ ও চিত্রধারণ কিন্তু সেদিন সহজ ছিল না মি. হুদার জন্য।
ওই সময় তাকে বারবারই বাধা দেয় রানা প্লাজা নামে ভবনটির মালিক ও সাভার যুবলীগের নেতা সোহেল রানার সঙ্গী-সাথীরা।
এমনকি এক পর্যায়ে মি. হুদাকে বের করে দিয়ে ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।
এসময় তিনি কৌশলে সোহেল রানার একটা সাক্ষাৎকার নেন।
বেলা সাড়ে ১২টা
রানা প্লাজার ভেতরে নিজের কার্যালয়ে বসেই একুশে টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেন সোহেল রানা।
তার বক্তব্য ছিল, "পিলারের ওখান থেকে চুল পরিমাণ প্লাস্টার খুলে পড়েছে। মানুষ তিলকে তাল বানাচ্ছে।''
''আমরা ইঞ্জিনিয়ার সাথে নিয়ে দেখে এসেছি। ইঞ্জিনিয়ার বলেছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ না। দুয়েকদিনের মধ্যেই প্লাস্টার ঠিক করে ফেলা হবে।"
সাক্ষাৎকারে যে প্রকৌশলীর কথা উল্লেখ করেন মি. রানা, সংবাদদাতা নাজমুল হুদা জানান, ওই প্রকৌশলী ভবনটির কোনও কর্তৃপক্ষ নন।
তিনি মূলত রানা প্লাজা ভবন নির্মাণকালে সোহেল রানার নিয়োগ করা একজন বেসরকারি প্রকৌশলী, তার নাম আব্দুর রাজ্জাক।
|
https://www.bbc.com/bengali/articles/cvgqv0n97jeo
|
4/23/2025
|
BBC Bangla
|
Govt critique
|
12
|
রানা প্লাজা ধস
|
রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: বিচার-পুনর্বাসনের দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের
|
কালে কারখানায় এসেছিলেন পারুল বেগম। শুরু করেছিলেন কাজও, এরমধ্যে চলে যায় বিদ্যুৎ। জেনারেটর চালু হতেই বিকট আওয়াজে ধসে পড়ে ভবন। তিনি দৌড় দেন, তবে পড়ে জ্ঞান হারান। রাতে যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। পেট জুড়ে ব্যান্ডেজ। তার কিডনি ভেদ করে ঢুকে গিয়েছিল রড।
এক যুগ আগে ভাগ্যক্রমে বাঁচলেও এখনও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না, হারিয়েছেন কর্মক্ষমতাও। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে ভবনের পাঁচতলায় ফ্যান্টম টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন এই নারী। ওই ঘটনায় প্রাণ যায় ১,১৭৫ জন শ্রমিকের। আহত হন ২,০০০ এরও বেশি পোশাকশ্রমিক। বেঁচে যাওয়া বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। আর ওই ঘটনায় বিচার এখনও চলমান। এক যুগ পরে এসে এখনও রানা প্লাজার শ্রমিকদের চাওয়া সুষ্ঠু বিচার ও পুনর্বাসন।
অন্যদিকে ভয়ংকর ওই দুর্ঘটনার পরও রাজধানীর নিকটবর্তী সাভারে এখনও ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, রানা প্লাজার ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি এখনও রয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান তাদের।
ফিরে দেখা ২৪ এপ্রিল ২০১৩
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিল রানা প্লাজা। ভবনের প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায় দোকান ও ব্যাংকের শাখা। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলাতে ছিল পোশাক কারখানা। এরমধ্যে তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড এবং ফ্যান্টম টেক্স লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথার টেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস। অষ্টম ও নবম তলা ছিল ফাঁকা।
সেদিন সকালে ভবনে কাজ করছিল প্রায় ৩,০০০ শ্রমিক। আটটার দিকেই কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছিল। বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দে প্রথম তলার ওপরে পুরো ভবন ধসে পড়ে। এর পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। শুরুতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
এমন ইতিহাস তৈরি নাও হতে পারতো
২৪ এপ্রিল ধসের একদিন আগেই ওই ভবনের চার ও পাঁচ তলার কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এ কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে যান। তবে মালিক কর্তৃপক্ষ সংবাদকর্মীদের ভবনে প্রবেশ করতে দেননি। তারা যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে।
বিকেলের দিকে ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কবির হোসেন সরদার ভবনের ফাটল পরিদর্শন করেন। এরপর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের বলেন, “এ ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা নেই, বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই। সামান্য প্লাস্টার ওঠে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভবন ধসের সাক্ষী হয় বাংলাদেশসহ সাড়া বিশ্ব। প্রাণ হারায় হাজারো শ্রমিক। ওই ঘটনার পরে ওই ইউএনওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আহত শ্রমিক, শ্রমিক নেতা ও সুশীল সমাজের দাবি, প্রশাসন যথাযথ তৎপরতা দেখালে হয়তো এমন ঘটনা এড়ানো যেতো।
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, মৃত লাশের গন্ধ
ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে জীবিত, আহত, মৃত মানুষের দেহ। আহতদের নেওয়া হয় আশপাশের হাসপাতালে। আর মৃতদেহ নেওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে।
টানা ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে উদ্ধার হওয়া প্রতিটি মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হতো ওই মাঠে। লাশের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা ছুটে আসতেন সাইরেন শুনলেই। এই বুঝি স্বজনের মরদেহ এলো! স্বজনদের আহাজারিতে দিনরাত ভারী হয়ে থাকতো অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটা জুড়েই তখন কান্না আর সাইরেনের আওয়াজ। অধরচন্দ্রের ওই মাঠ এখনও বয়ে বেড়ায় সেই স্মৃতি।
ওই সময় স্কুলটিতে পড়তেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, “আগে ক্লাসের বাইরেও প্রচুর ঘুরাফেরা, খেলাধুলা করতাম এই মাঠে। কিন্তু রানা প্লাজার ধসে পড়ার পর মৃত লাশগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছিল এখানে। এখনও গা ছমছম করে।”
হতাহত যত
প্রায় ১৭ দিনের উদ্ধার অভিযানে রানা প্লাজার ভবন থেকে ১,১৩৬ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২,৪৩৮ জন শ্রমিককে। আহতদের অনেকেই এখনও দুর্বিষহ সেইদিনের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু। এখনও সেদিনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।
শহিদ বেদি এখন “প্রতিবাদের প্রতীক”
হতভাগ্য শ্রমিকদের স্মরণে ২০১৩ সালের ২৪ মে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে একটি শহিদ বেদি নির্মাণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। অস্থায়ী শহিদ বেদিটির নামকরণ করা হয় “প্রতিবাদ-প্রতিরোধ”। এ শহিদ বেদিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলনের কর্মসূচি। এটি এখন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের প্রতীক।
বর্তমানে রানা প্লাজার সেই স্থান
ধসের পরপরই প্রায় সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এরপর জমিটির চারপাশ কাটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই সময় প্রায় প্রতিদিনই রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজ স্বজনরা জায়গাটিতে আসতেন। তবে ধীরে ধীরে জায়গাটি পরিণত হয় পরিত্যক্ত ভূমিতে। বর্তমানে জায়গাটি নানা লতাপাতার দখলে। সামনে বেদি। ফুটপাত জুড়ে রাখা থাকে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি। তবে ২৪ এপ্রিল এলে নানা কর্মসূচিতে কিছুটা প্রাণ পায় জায়গাটি।
বিচার পাননি হতভাগ্যরা
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তিনটি মামলার কোনোটিই এখনও শেষ হয়নি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটি দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। এটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের করা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে হাজারো শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ওই ঘটনায় এখনও কোনো বিচার পাননি হতভাগ্যরা।
বাঁচার লড়াই আহতদের, পুনর্বাসনের দাবি
প্রায় ১২ বছর ধরেই পঙ্গুত্ব নিয়ে এখনও বাঁচার লড়াই করছেন অনেকেই। অসুস্থতা আর দারিদ্র্য নিয়ে দীর্ঘ দিন বসবাস করে আসলেও কেউ তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের শাস্তি ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবি করে আসছেন এতদিন।
রানা প্লাজার আহত শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, “আমি পেটে আঘাত পাই। এত বছর ধরে কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে আছি। রানা প্লাজা ধসের এতদিন হয়ে গেছে আমাদের কেউ খবর নেয় নাই। আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাই না। আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝায় দেওয়া হোক।”
তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের যারা ক্ষতি করেছে, এই ভবন মালিক রানা, গার্মেন্টস মালিকসহ জড়িত সবার ফাঁসি চাই। সরকার আমাদের সুষ্ঠু বিচার করে নাই যদি বিচার করতো তাইলে এক যুগ শেষ হতো না। আর সরকারের কাছে আমাদের অনেকদিন ধরেই দাবি রানা প্লাজা যেখানে ছিল সেখানে একটা মার্কেট করুক এবং রানা প্লাজার ভাই-বোনদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।”
রানা প্লাজার একটি কারখানার সুইং অপারেটর নীলুফা বেগম ধসে পড়ার ঘটনায় মারত্মক আহত হন। এক যুগ ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন পায়ের ক্ষত। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। নীলুফা বেগম বলেন, “রানা প্লাজা ধসে পড়ার ১২ বছর হয়ে যায় তারপরও আমাদের কোন খোঁজ কেউ নেয় না। আমার একটা পা মারাত্মক ভাবে আহত। এগারোটা অপারেশন করা লাগছে পায়ে। পা কেটে ফেলার জন্য অনেক জায়গায় গেছি। শেষ একটা অপারেশন আছে যার জন্য অনেক টাকা লাগবে। অপারেশনের আগে টাকা জমা দেওয়া লাগবে। কিন্তু ওই টাকা আমি কই পাব?”
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, “মিডিয়ার ভাইগো ধন্যবাদ দেই। তারাই মনে রাখে। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি কোনোদিন। ক্ষতিপূরণ পাই নাই, বিচার পাই নাই। এইখানে হাজারো লাশ ছিল। এখানে এখন সবাই পেশাব পায়খানা করে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করি, জায়গাটাতে একটা বিল্ডিং কইরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গু আহত ভিক্ষা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।”
যা বলছেন শ্রমিক নেতারা
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করে। নিহত ও আহতদের লস অব আর্নিং-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি তোলেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটারস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছরে এসেও আমাদের দাবি যেগুলো ছিল তার কিছুই পূরণ হয়নি। চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর দিন পার করছে। সরকার ও বিজিএমইএ’র প্রতি দাবি দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, “রানা প্লাজার সব দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা এক যুগ ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারকে পুনর্বাসন, সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা ও রানা প্লাজার সামনে একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।”
https://bangla.dhakatribune.com/95651
|
https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/95651/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%A7%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF
|
4/24/2025
|
Dhaka Tribune
|
Govt critique
|
13
|
রানা প্লাজা ধস
|
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শুধু রানার বিচার হলেই হবে: সৈয়দ সুলতান উদ্দিন
|
রানা প্লাজার ধসের ঘটনার বিচারের কথা উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় শুধু রানার বিচার হলেই আমি খুশি। যারা কারখানার ও বিল্ডিংয়ের পারমিশন দিয়েছে, কারও কিছু দরকার নাই।
শুধু রানার বিচার হলেই হবে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তন হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল কর্তৃক রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণমূলক দুই দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলতান উদ্দিন বলেন, আমরা একটা প্ল্যান করছি, সেখানে আইনি বিচারের দাবি থাকবে, রানা প্লাজার থেকে শিক্ষা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া পরিবর্তন হওয়া দরকার, সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমিট করতে হবে। আপনারা রিপোর্ট দিলে আইন সংশোধন হবে। রানা প্লাজাকে কেন্দ্র করে দেশে জাতীয় পর্যায়ে একটা নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি করার জন্য যে সংশোধনী আছে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সেগুলো সংশোধন করে আইন সংশোধন করব।
তিনি বলেন, একটি ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে আমরা এখানে একত্রিত হইনি। আমরা একত্রিত হয়েছি আমাদের দায়িত্ব চিন্তাভাবনাকে একত্রিত করার জন্য। ১২ বছর পরে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ নেই, বিচার দাবি করা এখন আমাদের দায়িত্ব হয়ে গেছে। রানা প্লাজা ধস একটা ট্র্যাজেডি ছিল না, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
গোল টেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য রাশেদুল আলম রাজু। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতারের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপ্ন, নারীবিষয়ক সম্পাদক চায়না রহমান, অর্থ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ও সদস্য আমিনুল হক আমিন।
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এক ট্রাজেডি ছিল সাভারের রানা প্লাজা ধস। যেই ঘটনায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও।
সেই ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হন বিদেশিরাও। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা, যাতে প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৬ জন। এরপর পেরিয়ে গেছে এক যুগ। এ সময়েও শেষ হয়নি ঘটনার বিচার।
|
https://banglanews24.com/national/news/bd/1506429.details
|
4/25/2025
|
Bangla News24
|
Govt critique
|
14
|
রানা প্লাজা ধস
|
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ, সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে বিচার
|
দেশের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধস একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। এই ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও। ২০১৩ সালের আজকের দিনে (২৪ এপ্রিল) আট তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার জন। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যর ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।
ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত। আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্য এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেন।
এক যুগ আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ৮৪৪টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। উদ্ধারকৃত জীবিতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।
ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খান খোকন।
মামলার বিচার কাজের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর উচ্চ আদালতের আদেশে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৯৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষী হাজির করতে ১৭ জনের বিরুদ্ধের সমন ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে নেওয়া হবে। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য রয়েছে।’
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা এই মামলার দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা ধারণা করছি তাদের অবহেলার কারণেই মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সাক্ষীদের হাজির হতে সমন জারি করেছি। আমরা দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন বলেন, ‘এ মামলায় রানার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১২ বছর কারাগারে রয়েছেন তিনি। এই যে এতগুলো বছর তার জীবন থেকে চলে গেলো, যদি তিনি খালাস পান কে তাকে এই সময়গুলো ফিরিয়ে দেবে। রানা প্লাজার ভবন ধস নিছক একটি দুর্ঘটনা। তাছাড়া ভবনটির প্রকৃত মালিক সোহেল রানা নয়, তার বাবা আব্দুল খালেক। এখানে রানার কোনও হাত নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার আদালতে সাক্ষী হাজির করতে তেমন সচেষ্ট হয়নি। তবে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে আদালতে সাক্ষী হাজির করছে। দেরিতে হলেও মামলাটি আলোর মুখ দেখছে।’
এ মামলায় বিচার বিলম্বিত হওয়ার জন্য কাউকে দায়ী করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রানার এই আইনজীবী বলেন, ‘কারও গাফিলতি আছে বলা যাবে না। বিগত সরকার সাক্ষী আনতে পারেনি, এই সরকার পারছে। আসামিপক্ষের একটাই প্রত্যাশা, সাক্ষী আসুক। আইনের ভাষায় একটি কথা আছে, বিলম্ব ন্যায় পরায়ণতা ব্যাহত করে। বিলম্বের কারণেই রানা জেলে আছে। আমরা আশা করছি বিচারে রানা খালাস পাবে।’
কবির মোল্লা নামে একজন সুপারভাইজার রানা প্লাজা ধসে আহত হন। তিনি বলেন, ‘আমি চার রাত চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছি। আমার আশেপাশে অনেকে পানির পিপাসায় মারা গেছে। কেউ নিজের প্রস্রাব খেয়ে বেঁচে ছিল। আমি উদ্ধারের পর ১৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। সেই মৃত্যুপুরীর এক যুগ হয়ে গেলো, মামলার বিচার পেলাম না। আমি ভবন মালিক রানাসহ জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। এখনও আমি মাথার চিকিৎসার জন্য ওষুধ খাই। কিন্তু আগের সরকারের সময় কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। বর্তমান ইউনূস সরকারের কাছে সব আহত-নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
ভবনের ছয় তলায় কাজ করতে গিয়ে আহত শিলা নামে একজন গার্মেন্টসকর্মী বলেন, ‘আমার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছি। কিন্তু দেখার কেউ নেই। আমাদের পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে আসামি সাইদুল ইসলাম ও ইউসুফ আলীর পক্ষের আইনজীবী শেখ আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার দুই আসামি নির্দোষ। এজাহারে তাদের নাম ছিল না। দ্রুত মামলার বিচার শেষ হলে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশাবাদী। এক যুগ ধরে তারা ভুগছেন। বর্তমানে জামিনে আছেন।’
|
https://www.banglatribune.com/others/895582/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A7%87
|
4/24/2025
|
BanglaTribune
|
Govt critique
|
Bangla Article Stance Detection Benchmark Dataset
Dataset Summary
The Bangla Article Stance Detection Benchmark Dataset is a comprehensive resource for detecting political bias and stance in Bengali (Bangla) news articles. This dataset features human-annotated labels for stance detection, enabling researchers to train and evaluate models for identifying political bias in Bengali journalism.
This dataset is part of the research paper "Read Between the Lines: A Benchmark for Uncovering Political Bias in Bangla News Articles" (Accepted to BLP at AACL 2025).
📄 Paper: arXiv:2510.03898
🌐 Project Website: https://nusrat-lia.github.io/BanglaBias/
Supported Tasks and Leaderboards
- Text Classification: Stance detection and political bias classification
- Sentiment Analysis: Analyzing the stance of news articles toward government actions
- Media Bias Analysis: Understanding bias patterns in Bengali journalism
Languages
The dataset is in Bengali (Bangla) (bn).
Dataset Structure
Data Instances
A typical data instance contains:
{
'id': 1,
'event': 'তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড',
'news_headline': 'তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: 'কেয়ামতের আগে আর মেয়েটাকে দেখতে পাবো না'',
'news_body': 'বাংলাদেশে তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও...',
'source_link': 'https://www.bbc.com/bengali/news-42103660',
'date': '2017-11-24',
'news_corpora_name': 'BBC Bangla',
'label': 'Govt critique'
}
Data Fields
id(int): Unique identifier for each articleevent(string): The event or topic the article discusses (in Bengali)news_headline(string): The headline of the news article in Bengalinews_body(string): The full text content of the news article in Bengalisource_link(string): URL to the original article sourcedate(string): Publication date of the articlenews_corpora_name(string): Source publication name (e.g., BBC Bangla, The Daily Star, Prothom Alo, etc.)label(string): Human-annotated stance label with three possible values:Govt critique: Articles critical of the governmentGovt leaning: Articles supportive or favorable toward the governmentNeutral: Articles maintaining a neutral stance
Usage Example
from datasets import load_dataset
# Load the dataset
dataset = load_dataset("dipta007/BanglaBias")
# Access the data
for example in dataset['train']:
print(f"ID: {example['id']}")
print(f"Event: {example['event']}")
print(f"Headline: {example['news_headline']}")
print(f"Source: {example['news_corpora_name']}")
print(f"Date: {example['date']}")
print(f"Label: {example['label']}")
print(f"Article preview: {example['news_body'][:100]}...")
print(f"Link: {example['source_link']}")
print("---")
Additional Information
Dataset Curators
This dataset was curated by researchers from the paper:
- Nusrat Jahan Lia
- Shubhashis Roy Dipta
- Abdullah Khan Zehady
- Naymul Islam
- Madhusodan Chakraborty
- Abdullah Al Wasif
Citation Information
If you use this dataset in your research, please cite:
@article{lia2025read,
title={Read Between the Lines: A Benchmark for Uncovering Political Bias in Bangla News Articles},
author={Lia, Nusrat Jahan and Dipta, Shubhashis Roy and Zehady, Abdullah Khan and Islam, Naymul and Chakraborty, Madhusodan and Wasif, Abdullah Al},
journal={arXiv preprint arXiv:2510.03898},
year={2025}
}
Contact
For questions or concerns about this dataset, please refer to the paper or contact the authors.
- Downloads last month
- 29