id
int64
1
200
event
stringlengths
14
51
news_headline
stringlengths
18
178
news_body
stringlengths
165
20.2k
source_link
stringlengths
36
542
date
stringlengths
8
10
news_corpora_name
stringlengths
2
24
label
stringclasses
3 values
1
তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড
তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: ‘কেয়ামতের আগে আর মেয়েটাকে দেখতে পাবো না’
বাংলাদেশে তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পরও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না বলে মামলায় অগ্রগতি নেই। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় করা মামলায় কয়েকদিন পর পর নতুন করে শুধু শুনানির দিনই ধার্য হচ্ছে। আহত শ্রমিক ও নিহতদের আত্মীয়রা আজ নতুন করে আবার বিচারের দাবি তুলেছেন। স্বজনদের বিচারের দাবি যেখানে তাজরীন গার্মেন্টটি অবস্থিত ছিল সেই জায়গাটির নাম নিশ্চিন্তপুর। কিন্তু ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলায় সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বহু মানুষের জীবন অনিশ্চিত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া শ্রমিকদের একজন সুমাইয়া খাতুন। তার মা আমিরন আক্তার বলছিলেন, "তখন আমরা ওই জায়গাতেই ছিলাম। আগুন নিজেরা দেখেছি। আমি ইটখোলায় কাজ করতে গেছিলাম। ইটখোলার উপর দিয়ে ধাউ ধাউ করে আগুন দেখা যাচ্ছিলো। দৌড়ে এসে দেখি কারখানা থেকে কেউ নামতে পারছে না।" তিনি বলছেন, তার মেয়েই তার সংসার চালাত। এখন মেয়ের ছবি দেখে মাঝে মাঝে চোখের পানি ফেলেন। তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সেই সন্ধ্যায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। যারা মারা গেছেন, তাদের অনেকেই আগুনে দগ্ধ হয়ে অথবা ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিচে মুল দরজায় তালা লাগানো ছিল বলে অনেকেই পালাতে পারেননি এমন অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সেদিন ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। যাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচেননি। পঙ্গুত্ব মেনে নিতে হয়েছে অনেককে। হাওয়া বেগম তাজরীন গার্মেন্টসে হেল্পারের কাজ করতেন। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সেদিন গুরুতর আহত হন। কিন্তু একই কারখানায় কর্মরত তার মেয়ে মেশিন অপারেটর মৌসুমি সেদিন ছাদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। মেয়ের সাথে তার শেষ সাক্ষাতের স্মৃতি মনে করে এই ঘটনার বিচারের দাবি করেছেন হাওয়া বেগম। তিনি বলছেন, "লাঞ্চে যখন ছুটি দেয় তখন বাসায় এসে মা-বেটি একসাথে খেয়ে অফিসে ঢুকছি। তারপর ওই ঘটনা যখন ঘটে আমার মেয়ে পাঁচতলায় কাজ করতো আর আমি ছয়তলায়। মেয়ের সাথে আমার আর দেখা হয় নাই। কেয়ামত পর্যন্ত তার সাথে আমার আর দেখা হবে না।" তিনি বলছেন, "যদি তালাটা না লাগানো থাকতো, অনেকেই হয়ত বাঁচত। আমার মেয়েটাও হয়ত যেকোনো প্রকারেই হোক বের হতে পারতো। একটা দুটো মানুষ না। অতগুলো মানুষ। চোর যদি চুরি করে তাকে তো সাজা-শাস্তি দেয়া হয়। আর এটাতো চুরি না। এটা মারাত্মক। আমার যেমন বুক খালি হইছে, আমার মতো আরও কত মানুষের স্বামী সন্তান গেছে।" সাক্ষী হাজির করা কেন সম্ভব হচ্ছে না? অগ্নিকাণ্ডের পর আশুলিয়া থানায় করা মামলার তদন্ত শেষে এর অভিযোগ পত্র দাখিল হয় পরের বছর ডিসেম্বরে। তারও প্রায় দুই বছর পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্যাক্টরির মালিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত চার বছরে ৩৫ বার মামলার শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মামলায় কোন অগ্রগতি নেই। তাদের বক্তব্য, সাক্ষীদের প্রতি পাঠানো সমন তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কী তার কারণ? সমন পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আশুলিয়া থানা পুলিশের। জানতে চেয়েছিলাম আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল হকের কাছে। তিনি বলছেন, "ধরেন এখানে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক ছিল। ঘটনার সেই সময় সে এইখানে চাকরী করতো। তখন সে এই মামলার সাক্ষী হয়েছে। এখন সে এখান থেকে চলে গেছে। তাদের বর্তমান ঠিকানা ধরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।" তিনি আরও বলছেন, "সেক্ষেত্রে তার স্থায়ী ঠিকানায় সমন জারী করার দায়িত্ব সেই এলাকার থানার। তারা স্থায়ী ঠিকানায় যখন সমন পাঠাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে দূরবর্তী স্থান হয়ত কেউ কুড়িগ্রাম, কেউ ঠাকুরগাঁও থেকে নাও আসতে পারে।" তিনি বলছেন, তাদের কাছে যেসব সমন এসেছে সেগুলো তারা ঠিকমতোই পাঠিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন কয়েকজন সাক্ষী তারা হাজিরও করেছেন। সমন পৌঁছানোর জটিলতা মানছেন না শ্রমিক নেতারা এই মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা মোট ১০৪ জন। যাদের বেশিরভাগই সেসময় তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিক। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জনকে হাজির করা সম্ভব হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিকদের সাথে তাদের যোগাযোগ থাকলে পুলিশ কেন সমন পৌছাতে পারছে না? তিনি বলছেন, "আজকেও অগ্নিকাণ্ডের বার্ষিকীতে বহু শ্রমিক এসেছিলো সেখানে। তাজরীনের শ্রমিকদের অনেকের সাথে আমাদেরও ভালো যোগাযোগ আছে। শুধু আমরা না আপনিও যদি চান আপনার পক্ষেও তাজরীনের একশ শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব। এখন কেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বা আশুলিয়ার পুলিশ সমন গুলো সাক্ষীদের পর্যন্ত পৌছাতে পারছে না, সেটা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হচ্ছে না।
https://www.bbc.com/bengali/news-50538572
11/24/2019
BBC Bangla
Govt critique
2
১৯৯৬ একতরফা নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন – বি এন পি যেভাবে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছিল
২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভভুত্থানের আগে ১৯৯০ সালে ছাত্র জনতার ত্যাগের বিনিময়ে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তাকে কবরস্থ করার কফিন তৈরি করেছিল বি এন পি, আওয়ামী লীগ সেটাকে পেরেক মেরে কবরস্ত করেছে। ভুলে গেলে চলবে না। গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি আওয়ামী লীগ একাই এই পথে আসেনি, বি এন পি’র দায়ও কম না, বি এন পি পথ তৈরি করে দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সেই পথে এগিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা ছেড়েছিল, এটাও ইতিহাসের অংশ। ২০০৬ সালেও বি এন পি পাতানো নির্বাচনের খেলা খেলতে চেয়েছিল। ২০০১-২০০৬ জামানায় তারাও মাঝারি মানের ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল, তাদের কত কুকীর্তি ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে; ২০০৯-২০২৪ এ আওয়ামী লীগ সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রমানিত ফ্যাসিস্ট, গনহত্যাকারী। তবে ২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পরেও বি এন পি চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজিতে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বি এন পি’র আমলনামাও মেলে ধরা জরূরী, তারা কারা, তারা কী করেছিল এবং এখন করছে। জনগণের সামনে সুযোগ এসেছে আওয়ামী লীগ ও বি এন পি’র বাইরে নতুন কিছু ভাবার। এই দুই দলই লুটেরা, বাটপাড়, লুম্পেন, গণতন্ত্রের শত্রু; কেউ মাঝারি আর কেউ চ্যাম্পিয়ন। সেজন্য সাধারন মানুষ আওয়ামী লীগের জামানায় দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হওয়ার পরেও বি এন পি’র ডাকে রাস্তায় নামেনি। ফিরে দেখা ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনঃ বিএনপি যেভাবে দলীয় সরকারের অধীনে জোরপূর্বক সব দলকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত ও একতরফা সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেছিল! গতকাল ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৬ সালের এইদিনে তথা ১৫ ফেব্রুয়ারি সকল বিরোধীদলের বর্জন ও প্রতিরোধের মুখে গায়ের জোরে লোক দেখানো নির্বাচন করে বিএনপি। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এই ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলনের আন্দোলনের পটভূমিতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করা, যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব রকমের সহায়তা দেবে। প্রতিচিন্তা ম্যাগাজিনে ৩রা এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান লিখেছিলেন যে প্রথমবারের মতো অনির্বাচিত ব্যক্তি সমন্বয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। দলটির মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, ১৯৮৩ সালে জামায়াত এক জনসভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ফর্মুলা দিয়েছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। দাবি আগে উঠলেও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের সকল সংসদ সদস্যরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে তীব্র এক আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন, সংঘাত এবং সহিংসতার ভেতর দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় তৎকালীন সরকার। প্রধান সব রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকারের অধীনে একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনটি কেবল একতরফাই ছিল না, সেটি বেশ সহিংসও ছিল। ১৯৯৬ সালের নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগের দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে বেশিরভাগই ভোট দেননি। নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের কম হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৪৮টি আসনে ভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ২৮৯টি আসন। ওই সংসদে আনুষ্ঠানিক কোন বিরোধীদল ছিল না, কিন্ত একটি আসন পেয়ে বিরোধী নেতার চেয়ারে বসেছিলেন ফ্রিডম পার্টির সৈয়দ ফারুক রহমান। বাকি ১০টি আসন পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সব সময়েই ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের রাজনৈতিক যুক্তি দেয়া হয়। ২০১২ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দলটির সিনিয়র নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছিলেন, এক রকম ঝুঁকি নিয়েই নির্বাচনের পথে এগিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং সংবিধান রক্ষা’ করেছিল বলে মনে করেন তিনি। বিএনপির এই স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনের সুযোগে নানা দিক থেকে আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিল তখন, এর ফলশ্রুতিতে মাত্র দেড় মাসের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৩০শে মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে সংসদ ভেঙ্গে দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। বর্তমান আম্লিক ও সেকাচিনার শত অপকর্ম, সমালোচনা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে তারাই একমাত্র ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল বা করতে পেরেছিল – এটাও ইতিহাসের অংশ।
https://smsaif.me/15-feb-1996-bnp-election/
2/15/2025
smsaif
Govt critique
3
সোনালী ব্যাংক হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি
হলমার্কের তানভীরের নতুন আবদার জেল থেকে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি
আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীর মাহমুদ বর্তমানে জেলখানায়। সেখান থেকে তিনি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে আবদার করেছেন, তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য মূলধন দিতে হবে। তাহলে তিনি খেলাপি ঋণ পরিশোধ করবেন। সরকারি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এমন খবর পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংকের এই ঋণখেলাপি হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ কাশিমপুর কারাগারে আছেন। এর আগে তানভীর মাহমুদের স্ত্রী হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের অঙ্গীকারে জামিন নেন। কিন্তু জামিনের পরে এ গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। পরে তার জামিন বাতিল হয় এবং পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারের ডেপুটি জেলারের সত্যায়িত ওই চিঠিতে হলমার্কের এমডি বলেছেন, গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ঋণের অর্থ পরিশোধ করেছেন। গ্রেফতারের পরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ও মেশিনপত্র নষ্ট হচ্ছে। এখন তাকে ও তার স্ত্রীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে এবং কারখানা চালানোর জন্য মূলধন (যা ব্যাংকে অবরুদ্ধ রয়েছে) ছাড় করা হলে ধাপে ধাপে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করবেন। এর আগে তানভীর সোনালী ব্যাংকের কাছে ঋণ পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ও কারখানা চালু করার প্রস্তাব করেন। তানভীর তার চিঠিতে বলেছেন, জামিনে মুক্তির পর প্রথম বছর ১২ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় বছর ২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করবেন। তৃতীয় বছর থেকে ১২০ কিস্তিতে বাকি অর্থ পরিশোধ করবেন। হলমার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংক ছিল 'সোনার ডিমপাড়া হাঁস'। ২০১২ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রুপটি। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর ব্যাপক হৈচৈইয়ের মধ্যে মাত্র ৫৬৯ কোটি টাকা ফেরত দেয় হলমার্ক গ্রুপ। আইন-আদালত সব করেও ২০১৩ সালের পর থেকে পাঁচ বছরে গ্রুপটির কাছ থেকে একটি কানাকড়িও ফেরত পায়নি ব্যাংক। বন্ধক রাখা সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বেচার অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি হচ্ছে না। আর সব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলেও কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে না। নিজের চিঠিতে তানভীর বলেছেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কারখানা বন্ধ রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান কারাগারে বন্দি। ফলে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার করতে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ও সময় দরকার। সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি হলমার্কের ঘটনা তদন্ত কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন- তিনি বলেন, হলমার্ক গ্রুপের কারখানা চালিয়ে বা হলমার্কের নামে ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই সম্ভব না। কারণ কারখানার বড় বড় মেশিনপত্র তানভীরের লোকেরা আগেই নিয়ে গেছে। এখন যেসব মেশিন আছে, সেগুলো অচল। ব্যাপক পরিমাণে নতুন বিনিয়োগ লাগবে কারখানা চালু করতে। বরং তানভীরসহ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাবে না। তানভীরের আবদারে সাড়া দিলে অন্যরাও এ সুবিধা নিতে চাইবে।
https://samakal.com/bangladesh/article/19012085/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AD%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0
1/29/2019
Samakal
Govt critique
4
শাহবাগ আন্দোলন
শাহবাগের সেই ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ এখন কোথায়, কী করছে?
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ পাঁচ বছরপূর্তি হলো আজ। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর পর একদল তরুণ শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাতে শুরু করেন, যা পরে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে আন্দোলনে রূপ নেয়। এর পর একের পর এক শীর্ষস্থানীয় মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখন এই আন্দোলন তেমন করে আর চোখে পড়ে না। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের জের ধরে সরকারপন্থীদের একটি অংশ সরে দাঁড়ানোয় ভাঙনেরও মুখোমুখি হয়েছে এ আন্দোলনের সংগঠকদের মধ্যে। এ প্রেক্ষাপটে এখন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকাণ্ড কী? এমন প্রশ্নের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলছেন, অসাম্প্রদায়িক বৈষম্য মুক্ত সমাজ করতে মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা তার জন্য লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণ, শিশু হত্যা কিংবা অর্থকড়ি লুটপাটের প্রতিবাদ সবই অব্যাহত ছিল। কয়েক মাস আগে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা হয়। আরেকটি কর্মসূচি ঘিরে আমিসহ অনেকের নামে মামলা হয়েছে। এর পরই কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এখন কি আর মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে? এর জবাবে ইমরান বলেন, ‘এটি স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের আন্দোলন। এখানে সবসময় যে সাড়া থাকে তা নয়। তবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে রোডমার্চ কিংবা কুমিল্লায় তনু ধর্ষণের প্রতিবাদের কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থন আমরা পেয়েছি। ২০১৩ সালে যে দৃশ্যমান সাড়া এসেছিল এখন কি ততটা সাড়া আছে কিংবা মানুষের সেই মনোভাব কি এখন আর অবশিষ্ট আছে? জবাবে ইমরান এইচ সরকার বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিলও গণজাগরণ সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। সেটি হয়েছে। কারণ এখন যে কোনো অন্যায় হলে মানুষ গণজাগরণ মঞ্চের আদলে প্রতিবাদ করছে। ২০১৩ সালের পর অধিকাংশ আন্দোলনে সাধারণ জনগণই নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে গাড়িতে আগুন দেয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ এসবই ছিলও রাজনৈতিক কর্মসূচি । ইমরান আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখিয়েছি কীভাবে রাস্তায় নীরবতা পালন করেও কর্মসূচি পালন করা যায়। কীভাবে মোমবাতি জ্বালিয়েও প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু এখন আর গণজাগরণ মঞ্চের কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? জবাবে ইমরান এইচ সরকার বলেন, এখান থেকে সরে যাওয়া যে সহজ ব্যাপার তাও নয়, কিন্তু শুরুতে যে ধরনের কর্মসূচি হয়েছে সেখানে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে আন্দোলনের গতিতেও।
https://www.jugantor.com/capital/14589
2/5/2018
Jugantor
Neutral
5
শাহবাগ আন্দোলন
বাঙালির ঐক্যবদ্ধ জাগরণের নাম শাহবাগ
বাঙালির জাগরণ ঘটেছে যুগে যুগে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মহান ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সর্বশেষ ২০১৩-এর শাহবাগ আন্দোলন। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকে একত্রিত করার সফল প্রেক্ষাপট গণজাগরণ মঞ্চ। শাহবাগের হাত ধরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, একে অপরের হাতে-হাত, কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে গানে-কবিতায়- স্লোগানে শাহবাগ হলো বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ হলো শাহবাগ। যে তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, সেই প্রজন্ম এগিয়ে এলো মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তঋণ শোধ করতে। জন্মযুদ্ধের পর দ্বিতীয়বারের মতো আশ্চর্য এক সূর্য হয়ে ফেটে পড়ল বাংলাদেশ তথা সমগ্র বাঙালি জাতি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল প্রকম্পিত হলো মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনিতে। একাত্তরের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ’৭১-এ ঝাঁপিয়ে পড়ে যেভাবে পরাধীন বাংলাকে মুক্ত করেছিল বাঙালি জাতি, ঠিক তেমনই জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ও শ্রেণিভেদ ভুলে আবার এক হয়ে দাঁড়াই আমরা। অনেকের মতে, রাজনীতিবিমুখ এই তরুণরা এক হয়েছিল শুধু ’৭১-এর ঘাতক-দালালদের ফাঁসির দাবিতে। তাদের সঙ্গে গর্জে উঠেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, কবি, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইমাম, শ্রমিক গৃহবধূ; শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নির্বিশেষ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। একাত্তরের মানবতাবিরধীদের বিচারের উদ্যোগের শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিএনপি- জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী দেশদ্রোহীরা দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র করে আসছিল। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছিল তারা। দেশের মধ্যে কিছু বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদকে কিনতেও অসুবিধা হয়নি তাদের। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক-দালাল, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করে-বাঙালি জাতির ৪২ বছরের কলঙ্কমোচন করা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু আমাদের প্রেরণা ছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের লাখো শহিদের রক্তস্নাত স্বপ্ন, বিশ্বাস আর আত্মত্যাগ। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধিদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা ছিলাম ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুণদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তঋণ শোধাতে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধকরণ। যদিও এটি ছিল দেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত আকাঙ্ক্ষা। শাহবাগ চত্বরে যে আকস্মিক, স্বতঃস্ফূর্ত গণজমায়েত ঘটেছিল সেটি প্রজন্ম চত্বরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাঙালির মধ্যে। প্রসারিত হয়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে। যার প্রধান ভূমিকায় ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নির্ভীক সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যম ও সাময়িকী প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশ-বিদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করে তরুণদের উজ্জীবিত ও গণজাগরণকে তীব্র করে তুলেছিল। তবে কয়েকটি জামায়াত আদর্শের গণমাধ্যম গণজাগরণ মঞ্চকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে মত্ত হয়ে ওঠে এবং প্রচুর মিথ্যাচার ও ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তারা আমাদের তথাকথিত তরুণ প্রজন্ম বলে সম্বোধন করে এবং বারবার দাবি করে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন ও ব্যর্থতা, দুর্নীতিকে আড়াল করতে, মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে বামদের নিয়ে শাহবাগ চত্বরের জন্ম দেয়। গোয়েবলসের প্রোপাগান্ডার সূত্র অনুসরণ করে বিশাল বিশাল মিথ্যা নিয়ে হাজির হয়, যাতে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত করা যায়। ব্লগার ও শাহবাগের সংগঠক কর্মীদের নিয়ে মিথ্যা খবরের ঝুলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে। শাহবাগের বিরুদ্ধে কলম ধরে কিছু পেইড বুদ্ধিজীবী-লেখক মনের মাধুরী মিশিয়ে গল্প-প্রবন্ধ লিখতে থাকে। তবে বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী-লেখক-কবি শাহবাগের বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন স্লোগান, গান, শপথ পাঠ, জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট, গণস্বাক্ষর, মোমবাতি প্রজ্বলন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহিদদের উদ্দেশে লেখা চিঠি ও তিন মিনিট নীরবতা নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, গান লেখেন। এইদিকে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজনৈতিক দল বিএনপি তিনবার তাদের অবস্থান পাল্টায়, যার কারণে তাদের অনেক সমর্থকও বিব্রত হন। শাহবাগে নষ্ট ছেলেরা অবস্থান নিয়েছে, তারা ইতিহাস জানে না এমন মন্তব্য করে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের তরুণ প্রজন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে যে স্ফুলিঙ্গের জন্ম দেয় তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। সারাদেশের মানুষ পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়, ১৯৭১-এর মতো সদর্পে আপসহীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। আমরা জয় বাংলা স্লোগানকে পুনর্জাগরণ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। হাজারও ষড়যন্ত্রের পরে প্রজন্ম চত্বরের গর্জনে স্বাধীনতাবিরোধীদের কাঁপন ওঠে, একাত্তরের চেতনা ধারণ করে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা শাহবাগে প্রাণের টানে জড়ো হন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে পাকিস্তানমুখি যাত্রা করা বাংলাদেশে আমাদের প্রজন্মের কেউ এমনকি আমাদের পূর্ব বা পরবর্তী প্রজন্ম আর বিশ্বাস করতই না যে এদেশে আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হবে, গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী বা সাকাচৌদের কারাপ্রকোষ্ঠে আটকে রাখা সম্ভব হবে। বরং এ ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি ও বাংলাদেশের পাকিস্তানমুখি যাত্রাই একমাত্র সত্য। কিন্তু শাহবাগ প্রজন্ম এসব ভুল প্রমাণ করে রুখে দাঁড়ায় আপন শক্তিতে। দেশ-বিদেশের নানা ষড়যন্ত্রের পরেও বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রতি রেখেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আপসহীন থেকে এক লৌহমানবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশ্বমোড়লদের রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ’৭১এর ঘাতক রাজাকারদের ফাঁসি বাস্তবায়ন করতে আদালতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জন কেরি, হিলারি ক্লিনটন, কিংবা ডেভিড ক্যামেরনদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় কার্যকর করা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। দেশের ভেতরে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা পুলিশ হত্যা থেকে শুরু করে কী নৃশংস তাণ্ডবই না চালিয়েছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, পেট্রোল-বোমায় পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, যা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি! একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত যখন শত ষড়যন্ত্র করেও তাদের পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী আদর্শিক পিতাদের, ’৭১এর ঘাতকদের বিচার বানচাল করতে পারছে না, তখন আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হেফাজতে ইসলামকে কাজে লাগিয়ে শুরু করল দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত। নাস্তিকতার ধোয়া তুলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন করা সরকারকে উৎখাত করা ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো বিএনপিসহ মুখোশধারিরাও। হাজার হাজার নিরীহ মাদরাসার ছাত্রদের কাজে লাগিয়ে কর্মসূচি দিল ঢাকা অচলের। ৫ মে ২০১৩, ভয়াল সেই রাত ঢাকার বুকে একে দিল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ক্ষতচিহ্ন। ধর্মের নামে এত জঘন্য ভয়াবহ তাণ্ডব, মানুষ খুন জাতি আর কখনও দেখেনি। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতর আগুন দিল, মুসলিমদের হাজার হাজার পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে দিল। মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে উঠল রণক্ষেত্র। বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নে এতদিন যারা বিভোর ছিল, আজ তারা আনন্দে আত্মহারা। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চেও আক্রমণ করা হলো, কিন্তু জাগরণ যোদ্ধারা সেই হামলা প্রতিহত করে দিল। ছাত্রলীগ ২৬ মার্চের পর থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে না আসলেও ওইদিন সবার আগে তারাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ছাত্রলীগ মৎস্য ভবনের সামনে প্রতিরোধের গড়ে তুললে হেফাজত শাহবাগে খুব বেশি আক্রমণ করতে পারেনি। তারপরও জামায়াত-হেফাজতে ইসলামের বেশ কিছু ক্যাডার রমনার ভেতর দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের দিকে আসতে চাইলে আমাদের সহযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম দেখেছে জয় বাংলা স্লোগানের শক্তি। এইদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলেছিল তারা ভেতর থেকে ভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আর বাইরে বিএনপি জামাত-শিবির পাকিস্তানিদের দোসর। সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন ভিনদেশি এজেন্ট বাস্তবায়নকারী এনজিও নেতা ও সংগঠন। যে ব্যক্তি শুধু কর্মসূচি পাঠ করতো তাকে বানানো হলো আন্দোলনের নেতা, তাকে বোঝানো হলো, তোমার ডাকে লাখ লাখ মানুষ হয়েছে, তুমি এই প্রজন্মের ‘বঙ্গবন্ধু’! সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থেকে তাকে দূরে সরানো হলো। এই জাগরণকে সামনে রেখে কোনো কোনো রাজনৈতিক ক্ষুদ্র বাম দল ক্ষমতায় যাবার স্বপ্নে বিভোর। ক্ষমতার লোভ আর রাজনৈতিক অভিলাষে বিতর্কিত ও সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করল কর্মসূচি পাঠ করা মুখপাত্র। ‘জয় বাংলা’ পর ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলতে না দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফকে শাহবাগে অপমান করা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। এখানে আরেকটি নির্মম সত্য হলো আন্দোলনের প্রথম থেকেই দেশের তথা কথিত প্রথম সারির কিছু সুবিধাভোগী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে না এমন কিছু আওয়ামী নেতা কর্মী শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াতে উঠে পড়ে লাগল। কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন আচরণ শুরু করল যা পরবর্তীতে শাহবাগের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে তাদের অপচেষ্টা সফল হয়েছিল। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে সকল আদর্শহীন, জামায়াত সংশ্লিষ্ট আওয়ামী নেতারা এতদিন ব্যবসা বাণিজ্য বিনা বাধায় করে আসছিল তাদের অস্বস্তিতে পড়তে হল। তাদের নিয়ে কথা উঠতে শুরু হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারাও পরবর্তীতে সুপরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত ছড়াতে কাজ করেছে। তারা চায়নি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান এই প্রজন্মের কেউ যেন রাজনীতি ও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তারা ভালো করে বুঝে গেল শাহবাগের জাগরণ যোদ্ধারা আর যাই করুক জামায়াত-শিবির-রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিষয়ে কখনো আপস করবে না। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তরুণ প্রজন্মের এক বিপুল সম্ভাবনাময় শক্তির অপমৃত্যু ঘটল। অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য যে শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারী মনোভাব আর অবিশ্বাসের খেলায় চুরমার হয়ে গেল। এমন ক্ষত তৈরি করল যা সারাতে আরও কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে। তবে বাঙালি সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বারংবার। শাহবাগ পেরেছে যে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি একটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সে জয় বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে সমগ্র বাঙালির কাছে, আগামী প্রজন্মের কাছে। যারা নির্মাণ করবে জাতির পিতার বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। শাহবাগ গণজাগরণ শক্তি যুগিয়েছে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাঁটবার। প্রজন্ম জেনেছে মুক্তিযুদ্ধে কারা গণহত্যা করেছে, কারা ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে আমরা ‘জয় বাংলা’ শব্দটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই শব্দটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে সমস্বরে উচ্চারিত হওয়া একটি বড় অর্জন। ’৭৫এর পরে জয় বাংলাকে শাহবাগের গণজাগরণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে সফল প্রেক্ষাপট গণজাগরণ মঞ্চ। দীর্ঘ সময় ধরে একটি অহিংস আন্দোলন করতে পারা; বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। আন্দোলনের মাধ্যমে সংসদে আইন প্রণয়ন ও জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে আগামী প্রজন্মকে তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি সফল আন্দোলন। মানবতার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য, প্রগতির জন্য একত্রিত হওয়ার যে বিকল্প নাই তার প্রমাণ গণজাগরণ মঞ্চ। ভুলে যাওয়া চলবে না, ভালো মানুষদের অনৈক্যের ফলাফলটা পাল্টে দিতে পারে সব ইতিহাস সব অর্জন। আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করে নিশ্চিত রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব।
https://www.dailyvorerpata.com/news/75783
2/5/2022
The Daily Vorer Pata
Neutral
6
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
হেফাজত নেতাদের নজরদারির পরামর্শ একদফা আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনা চলছে * হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের গতিবিধিসহ সব কার্যক্রম সরকারের নজরদারিতে আনার পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দারা। অরাজনৈতিক এ সংগঠন যেন বিএনপি-জামায়াতের দিকে ধাবিত হতে না পারে, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত বলেও মনে করেন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দিয়েছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজত ইসলামকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনে নামানোর পরিকল্পনা চলছে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মামলা আগামী নির্বাচনের আগেই প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ ঘটে। হেফাজতে ইসলাম কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সমমনা বিভিন্ন ইসলামি দল এতে অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণে হেফাজতে ইসলামকে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন বলা যায়। ২০২১ সালের ২৬, ২৭ এবং ২৮ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে দেশব্যাপী তারা তাণ্ডব চালিয়েছে। ওই ঘটনায় মামলা এবং বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এর কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বর্তমানে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। এই সুযোগে সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা চালাবে হেফাজত। ইতোমধ্যে তারা নতুন কমিটি করেছে। ওই কমিটিতে আগের কমিটির বাদ পড়া নেতাদের পুনর্বহাল করেছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগের করা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে তারা সোচ্চার হচ্ছে। প্রতিবেদনের ‘প্রেক্ষিত’ অংশে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে। ওই বছরের ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটায়। ২০১৭ সালে সুপ্রিমকোর্ট প্রধান ভবনের সামনে ফোয়ারায় গ্রিক দেবী ‘থেমিস’-এর ভাস্কর্য স্থপনের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে। ২০২০ সালে রাজধানীর দোলাইরপাড় চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়। বর্তমানে ধর্মভিত্তিক এ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাছে। ২০২১ সালে দেশব্যাপী সহিংস কর্মকাণ্ড চালানো, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও অনেকে গ্রেফতার হওয়ার পর পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে ওই সময় (২৫ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে তাদের কমিটি বিলুপ্ত করে। বিলুপ্ত কমিটির আমির ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি মারা যাওয়ার পর নতুন আমির হন মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি কমিটির কলেবর বাড়ান। তারপরও বাদপড়া নেতাদের অনেকেই ওই কমিটিতে স্থান পাননি। ৫ আগস্ট ঢাকার খিলগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় আল্লামা সাজিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়। ওই সভায় আগের বিলুপ্ত কমিটির প্রায় সব নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। হেফাজত নেতারা জানিয়েছে, খিলগাঁওয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলোচিত-সমালোচিত এবং বিতর্কিতদের পদায়ন করে গত ৩১ আগস্ট কার্যকরী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ২১১। তবে ২০২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নয়টি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। মাওলানা মামুনুল হকসহ যারা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন, তারা মুক্তি পাওয়ার পর ওই নয়টি শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এছাড়া ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় বিষয়ে অধিকতর স্পর্শকাতর ইস্যুকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর মনোভাবে অভ্যস্ত। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী মহল যেন হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আরও বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই হেফাজতের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ মাদ্রাসায় শতাধিক শিক্ষক এবং ১২-১৩ হাজার ছাত্র আছে। ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এ মাদ্রাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে দেখা যায়। তাই এ মাদ্রাসার প্রতি সার্বক্ষণিক বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
https://www.jugantor.com/politics/721062
9/232023
Jugantor
Govt leaning
7
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
ঢাকা অবরোধ হেফাজতের: আশঙ্কা-আতঙ্ক
১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রোববার ভোর ৬টা থেকে অবরোধ শুরুর কথা থাকলেও ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকার প্রবেশমুখ নির্দিষ্ট ৬টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন হেফাজত নেতাকর্মীরা। এ অবরোধ শেষ হওয়ার সময়সীমা না দিয়ে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নির্দেশে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তবে বিকেল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যদিও পুলিশ প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। নেতারা জানান, রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে অবরোধ করছেন হেফাজত কর্মীরা। এগুলো হলো যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত এবং গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত। কর্মসূচি চলাকালে বাইরে থেকে কোনো যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং রাজধানী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তবে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা। হেফাজতের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন এবং সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করবে তারা। এদিকে এ অবরোধকে ঘিরে টান টান উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এ কর্মসূচি নিয়ে দারুণ উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে দেশবাসী। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী জানিয়েছেন, সাভার ট্র্যাজেডির সঙ্গে সম্পৃক্ত লাশবাহী গাড়ি, সংবাদপত্র, অ্যাম্বুলেন্স, উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সব ধরনের যানবাহন, দেশি-বিদেশি পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে। মহানবী (সা.), আল্লাহ ও ইসলামের অবমাননাকারী `নাস্তিক` ব্লগারদের শাস্তি, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন, ‘ইসলামবিরোধী’ নারীনীতি ও শিক্ষানীতি বাতিলসহ ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিল লংমার্চের পর মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত নেতারা দাবি করেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক লাখ হেফাজত নেতাকর্মী অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। কালেমা খচিত পতাকাসহ চিঁড়া, মুড়ি, পানি, জায়নামাজ, তসবিহ, মেসওয়াক সঙ্গে নিয়ে হেফাজত সদস্যরা এতে অংশ নিচ্ছেন। হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মুফতি আজহারুল ইসলাম ও মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, কাঁচপুর এলাকায় থাকবেন মাওলানা আজিজুল হক ও মাওলানা আবদুল কাদের, বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় মধুপুরের পীর সাহেব মাওলানা আবদুল হামিদ ও মাওলানা আবু ইউসুফ, আমিনবাজার এলাকায় মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা লোকমান মাজহারী, গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত মাওলানা মোস্তফা আজাদ এবং উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত স্পটে মুফতি মাসুদুল করীম নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্পটে কেন্দ্রীয় নেতারা পৃথকভাবে নেতৃত্ব দেবেন। আপাতত ছয়টি পয়েন্টের কথা ঘোষণা হলেও টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে অবরোধ পয়েন্টের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও দাবি করছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা যার যার গন্তব্যে চলে যাবেন এমন নির্দেশনা থাকলেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা। হেফাজত যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন রুহী জানিয়েছেন, “অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন পয়েন্টে হেফাজত স্কোয়াডের ৫০ হাজার সদস্য অবস্থান নেবেন। যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে এ লক্ষ্যে এ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা-হেলমেট পরিহিত এসব সদস্য ঢাকার ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। এর মধ্যে গাবতলী-আমিনবাজার, টঙ্গী ব্রিজ এবং কাঁচপুর ব্রিজ পয়েন্টে ১০ হাজার করে এবং বাকি পয়েন্টগুলোতে ৫ হাজার করে হেফাজতে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। ” তবে এ অবরোধে নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন পুলিশের ৩৫ হাজার ও র‌্যাবের ৫ হাজার সদস্যও। শনিবার রাত থেকেই টহল দিতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর ৪০ প্লাটুন। অরাজকতাসহ যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে কঠোর অবস্থানে। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যা ঢাকার আকাশজুড়ে পর্যবেক্ষণে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার। একই সঙ্গে বৃত্তাকার নৌপথে টহল দেবে পুলিশের একাধিক টিম। হেফাজতের ছয়টি অবস্থানের কাছেই থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতও। আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল কার (আরসিসি), সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামানসহ নাশকতা ঠেকানোর সরঞ্জাম থাকবে ঢাকার সব প্রবেশমুখে। আর কর্মসূচির বিষয়টি মনিটরিং করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সেল। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে, হেফাজতে ইসলাম রাজধানীর ছয় প্রবেশমুখে তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পুলিশ যে কোনো ভাবে তাদের সরিয়ে দেবে। তাতে যদি বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ দেখা দেয়- এ থেকেও পিছপা হবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম যদি শান্তিপূর্ণ তাদের কর্মসূচি পালন করে তা হলে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। তবে আজকের কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর হাতে তাদের দমন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া খবর রয়েছে- অবরোধে জঙ্গিবাদী শিবির কর্মীরা নাশকতার চেষ্টা চালাবে। ” সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “শনিবার রাতেই ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার আরও ২০ প্লাটুন মোতায়েন করা হবে। অবরোধের সময় যদি কোনো বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেজন্যে আরও সদস্যকে রাখা হয়েছে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যেসব স্থানে অবস্থান নেবেন হেফাজত কর্মীরা, সেসব স্থানগুলো পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়েছে বিজিবি। তিনি বলেন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ শহরে পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আগে থেকেই বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র না থাকলেও প্রয়োজনে তাদেরকেও ব্যবহার করা হবে। ” র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, “হেফাজতে ইসলাম তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের লোকজন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে। কিন্তু তারা যেন কোনো ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র‌্যাব কাজ করছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও তার আশপাশ এলাকায় র‌্যাবের টহল চলছে। গোয়েন্দা ইউনিটও সন্দেহভাজন এলাকাগুলো নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ” র‌্যাব সূত্র জানায়, অবরোধে র‌্যাবের ৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া অবরোধ পর্যবেক্ষণে র‌্যাবের দুটি হেলিকপ্টার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে উড়বে। এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের ৫ শতাধিক ক্যাডার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ কিছু `ক্যাডার` হেফাজতে ইসলামের অবরোধে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির করার চেষ্টা করছে। পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজত কর্মীরা ফজরের নামাযের পরপরই মাঠে নেমেছেন। আর তারও এক ঘণ্টা আগেই সব স্পটে অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হেফাজত কর্মীরা যদি কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা চালান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেবে। সূত্রটি জানায়, পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় সকল কিছুই সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টি স্পটে কমপক্ষে দু’টি করে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে। সূত্রটি বলেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে রাজধানীর প্রবেশমুখ গুলোতে। কিন্তু ডিএমপি’র কোনো এলাকায় তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। রাজধানীতে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে- এ কারণেই সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকের নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, যেন মাদ্রাসায় বহিরাগত কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া না হয়। এ অনুরোধের পাশাপাশি পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে মাদ্রাসাগুলোকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। তবে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে পারে শিবির। হেফাজতের সঙ্গে মিশে গিয়ে সকাল থেকে তারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এই কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে অবস্থান করছেন। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মতিঝিল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০ শিবির কর্মীকে আটক করে। মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, “শিবির কর্মীদের গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করে ৩০ জনকে আটক করি। পাশাপাশি শিবিরের অতর্কিত হামলায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। শিবির কর্মীরা যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। “ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সুযোগ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিবির কর্মীরা রাজধানীতে এসেছেন। অবরোধ কর্মসূচি হেফাজতের হলেও ওই কর্মসূচিতে নিজেদের শক্তি দেখাতে শিবিরের এই তৎপরতা। কর্মসূচিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যও শিবির তৎপর রয়েছে বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে শনিবার দুপুরের পর ১৮ দলের সমাবেশে শিবির কর্মীদের সশস্ত্র অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। হাতে লাঠি নিয়ে সরকারবিরোধী অশ্লীল শ্লোগান থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে নানা শ্লোগান দেন তারা। সমাবেশের পুরোটা সময় মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এবং ফকিরাপুল এলাকা ছিল শিবিরের দখলে। সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিবির কর্মীদের দেখা যায়। এতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, রোববার হেফাজতের কর্মসূচিতে সুযোগ নিতে চাচ্ছে শিবির। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অবহিত করেছেন। উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিবির কর্মীরা যেন হেফাজতে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। রাজধানীর ভেতরেও সুযোগ নিয়ে যেন কোনো প্রকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। তবে রাজধানীর কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি হেফাজতে ইসলাম। ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, সমাবেশের ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে একটি বিশেষ মহলের। সে কারণেই হেফাজতকে রাজধানীর ভেতরে কোথাও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। তারা অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার জমায়েতের চেষ্টা করলে পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।
https://www.banglanews24.com/national/news/bd/193905.details
5/5/2013
Bangla News24
Neutral
8
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
মিছিলে অবরোধে হেফাজত প্রতিহতের হরতাল
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলবে ২৪ ঘণ্টা। আর হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ঠেকাতে অবরোধ শেষ হবে শনিবার বিকাল ৪টায় শাহবাগের সমাবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে। শাহবাগ ও রাজধানীর পাঁচটি প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। শাহবাগে রাতভর চলছে জামায়াত ও হেফাজতে প্রতিরোধের স্লোগান। হরতালের সমর্থনে টিএসসি থেকে বিকাল ৫টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।এদিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে শাহবাগ এলাকায়ও। পল্টন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের নেতাকর্মীরা। হরতাল আহ্বানকারী সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল বের হয়। একই সময় দেশের সব বিভাগীয় শহরসহ সাড়ে তিনশ’ উপজেলায় হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল হয় বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জানান। হরতাল সমর্থকদের মিছিল থেকে ‘সাম্প্রদায়িকতার লং মার্চ মানি না’, ‘হেফাজতের লং মার্চ মানি না/জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, করতে হবে’- স্লোগান দেয়া হয়। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সন্ধ্যা ৬টার কয়েক মিনিট আগে জাগরণ মঞ্চ থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান। এরপর সেখানে সমবেত আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। হেফাজতে ইসলামীর লংমার্চ প্রতিরোধে সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, টঙ্গী চৌরাস্তা, আশুলিয়া ও কমলাপুর রেল স্টেশন অবরোধ করেছে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। বিকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘাট শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের একদল প্রতিনিধি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যান। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হেফাজত সমর্থকদের ঘাট থেকেই ফিরিয়ে দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। লংমার্চ প্রতিহত করার জন্য শুক্রবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামাবেশ করে। শ্রমিকদের উদ্দেশে ইমরান বলেন, “যারা হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে আসবে তাদের আপনারা ঘাট থেকেই ফিরিয়ে দেবেন। কারণ হেফাজতে ইসলামের নামে তারা মূলত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য জামায়াত-শিবিরের হয়ে কাজ করছে।” ‘উগ্রপন্থী’ এই গোষ্ঠী জামায়াত-শিবিরকে রক্ষা করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক জানান, মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ প্রতিনিধিরা সদরঘাট ছাড়াও আব্দুল্লাহপুরে অবরোধস্থলে যান। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অবরোধ সফল করার আহ্বান জানানো হয়। লংমার্চ এবং হরতাল-অবরোধের ঘোষণার মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কায় রাজধানীর সঙ্গে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। এতে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল এক প্রকার বন্ধ রয়েছে সকাল থেকেই। ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস রাজধানীতে আসেনি। হরতাল ও অবরোধ শুরুর পর সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীতে গণপরিবহনের পাশাপাশি হালকা যানবাহন চলাচলও কমে আসে। রাত ৭টার দিকেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে বেশ কিছু রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেলেও রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকে। মহাখালী বাস টার্মিনালে আড্ডারত পরিবহন শ্রমিক মো. মফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য হরতালে গাড়ি কম ছাড়লে বা না ছাড়লেও টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় থাকে। কিন্তু আজ এখানে মাছিও নাই। বাস চালাবো কিভাবে?” হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিরোধে শুক্রবার শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা যায়। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও সন্ধ্যার পর কোনো ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার মো. খায়রুল বশীর। রেলস্টেশনে কিছু যাত্রী থাকলেও কাউন্টারের সামনে টিকেট করতে আসা মানুষের পাশাপাশি টিকেট ফেরত দিতে আসা মানুষের সারিও দেখা যায়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার ঢাকামুখী লংমার্চ এবং শনিবার রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের এই কর্মসূচি প্রতিহত ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার এই হরতাল করছে। বামপন্থী দলগুলোও এতে সমর্থন দিয়েছে। আর হেফাজতের কর্মসূচি প্রতিহত করতে গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়ে বিকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকর্মীরা। সকাল থেকে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে যান চলাচলও কার্যত বন্ধ রয়েছে। হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্বর থেকে মশাল মিছিল বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। হরতালের সমর্থনে বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নগরীর সিটি গেইটে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article597933.bdnews
4/5/2013
Bdnews24
Govt leaning
9
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
হেফাজতে আল্লামা শফীর উত্তরসূরি হচ্ছেন কে?
প্রায় দুই মাস আগে মারা যাওয়া দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী যেসব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এর প্রায় সবগুলো পূরণ হলেও এখনো আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামে তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন হয়নি। নানা জল্পনার পর অবশেষে আগামী রবিবার নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সম্মেলন আহ্বান করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির আমির পদে থাকা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হচ্ছেন সেটা নিয়ে এখন সারাদেশের আলেম-উলামার মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব পদে আছেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তার ছেলে আনাস মাদানীর সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামে অনেকটা কোণঠাসা ছিলেন। তবে হাটহাজারীতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে আনাস মাদানী বলয়ের পতনের পর এখন বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে আল্লামা বাবুনগরী বলয়। তারাই মূলত হেফাজতের নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে। যদিও এতে দাওয়াত দেয়া হয়নি আনাস মাদানী ও তার বলয়ের লোকদের। রবিবার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে। এতে সারাদেশের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিনিধি সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শূরা কমিটি। এতে হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শূরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। হেফাজতের নতুন আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নাম জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে। আর মহাসচিব পদে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান নায়েবে আমির এবং ২০ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম। এছাড়াও আমির পদে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা মামুনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচশজনকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তারাই নির্ধারণ করবেন হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী নেতৃত্ব। তবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী এই কাউন্সিলকে অবৈধ দাবি করেছেন। তার দাবি, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, অথচ তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও অপর অংশের দাবি, মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেননি। এদিকে হেফাজতে ইসলামের এক সময়ের নিয়ন্ত্রক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাঈনুদ্দিন রুহী এবং দপ্তর সম্পাদক আনাস মাদানীকে সম্মেলনে দাওয়াত দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামে তারা কর্তৃত্ব হারিয়েছেন। নতুন কমিটিতেও তাদের স্থান হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী ও ইসলামের বিভিন্ন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে হেফাজতে ইসলাম। তবে এর এক মাস পর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে বিপর্যয়ের পর হেফাজতে ইসলাম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলেন সরকারের সঙ্গে তার ও হেফাজতে ইসলামের সুসম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আল্লামা শফীর নাম ব্যবহার করে তার ছেলে আনাস মাদানীসহ একটি চক্র সরকারের কাছ থেকে ব্যাপক সুবিধা গ্রহণ করেছে। এজন্য ক্ষুব্ধ অংশটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আল্লামা শফীকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় আনাস মাদানীকে। এরপর থেকে হাটহাজারী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলয়ের। এবার তারা হেফাজতে ইসলামেও নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এই বলয়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তাদের দাবি, হেফাজতে ইসলাম কারও বলয়ের নয়, ইসলামবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
https://www.dhakatimes24.com/2020/11/13/191203/%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%AB%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%87
11/13/2020
Dhaka Times
Neutral
10
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ
ফিরে দেখা: হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গত বছর লংমার্চ, ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল। কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩দফা দাবি তুলে সংগঠনটি এ ধরণের কর্মসূচি নিয়েছিল। গত বছরের আজকের এই দিনে ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম এর ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। ভোররাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অবস্থানকারীদের শাপলা চত্বর থেকে উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। ভোর পাঁচটা ৫ই মে ২০১৩, ফজরের নামাযের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়দাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক।বেলা বাড়ার সাথে সাথে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকলো, যখন এর নেতৃত্ব ঢাকার ভিতরে প্রবেশ করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান দাবি করেছেন,অনেকটা আকস্মিকভাবেই তারা ঢাকায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সাথে আলোচনা শুরু করেন। সকালে দফায় দফায় তাদের অলোচনা চলে। সকাল সাড়ে ১১টা,অনুমতি মেলার আগেই কয়েকটি মিছিল ঢুকে পড়ে এবং সংঘর্ষ শুরু হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে । ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেছেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শাপলা চত্বরে এসে শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করার শর্তে।কিন্তু বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায় সহিংসতা চলেছিল সন্ধ্যার পরও। বেলা বারটা, সংঘর্ষ হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে । সেখানে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফের বক্তব্য হচ্ছে, তাদের কার্যালয়ে হামলা হলে ,তখন সেখানে থাকা কিছু নেতাকর্মী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। দুপুর দেড়টা, ঢাকার প্রবেশপথগুলো থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান নেয় শাপলা চত্বরে। কিন্তু অন্যদিকে, পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকারম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় বিভিন্ন ভবনে অগ্নিসংযোগ ,সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় গুলি চালায়। যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল গোটা ঐ এলাকা। দিনের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়। তবে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের বক্তব্যে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা আসতে থাকে। জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, অবস্থানের বিষয়টাও এসেছিল পরিস্থিতির কারণে। রাত সাড়ে আটটা, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ঐ বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কও হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা হেফাজতের কর্মসূচির সাথে রাজনৈতিক কোন যোগসূত্র মানতে রাজি নন। তবে তারা বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে, হেফাজতের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সে সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্ব্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে বড় ধরণের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল,তার পাল্টা হিসেবে হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা ছিল কোন মহল থেকে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীও কৌশলে সক্রিয় ছিল। রাত সাড়ে দশটা, পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের প্রধান শাহ আহমদ শফিকে লালবাগ মাদ্রাসা থেকে নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু কিছুটা পথ এসেই অসুস্থ এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে শাহ আহমদ শফি ফিরে যান। তিনি আর আসেননি শাপলা চত্বরে। রাতে অবশ্য জমায়েতও অনেকটা কমে গিয়েছিল। রাত সোয়া একটা, আলোচিত সেই রাতের অভিযানের প্রস্তুতি। সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমিও সেসময় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। পুলিশ, র‍্যাব,বিজিবির হাজার হাজার সদস্য তখন দৈনিক বাংলার মোড়, দিলখুশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর ষ্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল। অন্য তিন দিক থেকে র‍্যাব , বিজিবি পুলিশ সদস্যরা এগুনোর চেষ্টা করে এবং প্রথমে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলে। কিন্তু মঞ্চ থেকেও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টা দেড়েক এভাবে চলে। রাত পৌনে তিনটা। শুরু হয় মুল অভিযান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ফাকা গুলি,আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত রাউন্ড গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অন্যতম একজন পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে। ট্রাকের উপর ভ্রাম্যমাণ মঞ্চও খালি হয়েছিল মুহূর্তেই। তবে সেই মঞ্চের পাশে একটি ভ্যানের উপর কাফনের কাপড় এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো চারটি মৃতদেহ ছিল। আমরা সাংবাদিকরাও সেই মৃতদেহগুলো দেখেছি। এগুলো দিনে সংঘর্ষে নিহতদের মৃতদেহ বলে পুলিশের দাবি। জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, অভিযান তারা যে যার মতো সরে পড়ায় নেতারা একজন আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অভিযানের সময় হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ পুরো এলাকার দখল নেওয়ার পর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের বের করে এনে ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে সহায়তা করে। আমরা সাংবাদিকরা সে সময় দেখছিলাম, হেফাজতের শত শত কর্মী সমর্থক মাথার উপর দু’হাত তুলে লাইন ধরে পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ঐ এলাকা ছেড়ে যান। ভোর চারটা, তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে ফাঁকা গুলি করেছে এবং তল্লাশি চালিয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোতে। রাতের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক দেখ দিয়েছিল। আড়াই হাজারের মতো নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলছিল বিভিন্ন দল। পুলিশ বলেছিল, অভিযানের সময় আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা গিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ই এবং ৬ই মে দু’দিনে সারাদেশে ২৮ জনের নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। জাফরউল্লাহ খান বলেছেন, তারা হেফাজতের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দিলেও তদন্ত করে দেখা হয়নি। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির জানিয়েছেন, ছয় মাস সময় নিয়ে তারা তদন্ত করেছেন। ভোর পাঁচটা,পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মতো মনে হয়েছিল। আগের দিনের সহিংস বিক্ষোভের অনেক চিহ্ন আশেপাশে ছড়িয়েছিল।
https://www.bbc.com/bengali/news/2014/05/140504_si_hefajote_islam_looking_back_5_may_dhaka
5/5/2024
BBC Bangla
Neutral
11
রানা প্লাজা ধস
টাইমলাইন রানা প্লাজা: যে ভবন ধসে এগারোশোর বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল
বাংলাদেশের সাভারে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের পর ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ওই ধসের ঘটনায় এগারোশোর বেশি শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। বিশ্বের ভয়াবহতম শিল্প দুর্যোগের একটি হিসেবে এরই মধ্যে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ওই ভবন-ধসের ঘটনা। যেদিন রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ে তার আগের দিনই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। আর সেই ফাটল অগ্রাহ্য করেই পরের দিন ভবনটির পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। ২৩শে এপ্রিল ২০১৩, মঙ্গলবার, সকাল আটটা বাংলাদেশে ঘণ্টা দুয়েক আগেই শুরু হয়েছে বিরোধী জোটের টানা দুইদিনের হরতাল। হরতালের আওতামুক্ত শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের পদচারণা শুরু হয়েছে সাভারে। ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা। এই ভবনটিতেও দলে দলে ঢুকছে শত-শত নারী পুরুষ। ভবনটির তিন তলা থেকে শুরু হয়ে নয়-তলা পর্যন্ত রয়েছে পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানা। নিচতলা ও দোতলায় শপিং মল, সেখানে রয়েছে মােট ২৭০টি দোকান। সেই সাথে ভবনে আছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা। তিন তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড। আর সবার মতোই সেদিন এই ফ্লোরের কাটিং সেকশনে এসে কাজ শুরু করেছিলেন সুপারভাইজার নুরুল ইসলাম খান। এই কারখানাটিতে তখন তৈরি হচ্ছিল ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য বাচ্চাদের প্যান্ট। ঘটনার শুরু হয়েছিল এই তিন তলা থেকেই। সকাল পৌনে ১০টা তিন তলার একটি পিলারে হঠাৎ চড়চড় করে শব্দ হলো। একটি সেলাই মেশিনের উপর সশব্দে খসে পড়লো দেয়ালের প্লাস্টার। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করলেন শ্রমিকেরা। এভাবেই ফাটল আবিষ্কারের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন নুরুল ইসলাম খান। "আমরা তখন কাউকে কিছু না বলে চেয়ারম্যানকে ফোন করি। তিনি আমাদের কারখানা ছুটি দিয়ে দিতে বলেন এবং তার সাথে দেখা করতে বলেন।" মি. খান আরও বলেন, "পরে ম্যানেজার এসে আমাদের বলেন, এরকম দু-একটা পিলার না থাকলে কিছু হবে নাকি ব্যাটা! এখন কাজের যা চাপ! আমরা নাইট করে কুলাতে পারছি না। ম্যানেজারের সাথে যখন কথা বলছিলাম তখনও আমি পিলারের ভেতর চড়চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।" কিন্তু ফাটলের খবর চাপা থাকেনি। বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সাভার সংবাদদাতা নাজমুল হুদা কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার ক্যামেরা নিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থল রানা প্লাজায়। রানা প্লাজার ফাটলের সংবাদ সংগ্রহ ও চিত্রধারণ কিন্তু সেদিন সহজ ছিল না মি. হুদার জন্য। ওই সময় তাকে বারবারই বাধা দেয় রানা প্লাজা নামে ভবনটির মালিক ও সাভার যুবলীগের নেতা সোহেল রানার সঙ্গী-সাথীরা। এমনকি এক পর্যায়ে মি. হুদাকে বের করে দিয়ে ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। এসময় তিনি কৌশলে সোহেল রানার একটা সাক্ষাৎকার নেন। বেলা সাড়ে ১২টা রানা প্লাজার ভেতরে নিজের কার্যালয়ে বসেই একুশে টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেন সোহেল রানা। তার বক্তব্য ছিল, "পিলারের ওখান থেকে চুল পরিমাণ প্লাস্টার খুলে পড়েছে। মানুষ তিলকে তাল বানাচ্ছে।'' ''আমরা ইঞ্জিনিয়ার সাথে নিয়ে দেখে এসেছি। ইঞ্জিনিয়ার বলেছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ না। দুয়েকদিনের মধ্যেই প্লাস্টার ঠিক করে ফেলা হবে।" সাক্ষাৎকারে যে প্রকৌশলীর কথা উল্লেখ করেন মি. রানা, সংবাদদাতা নাজমুল হুদা জানান, ওই প্রকৌশলী ভবনটির কোনও কর্তৃপক্ষ নন। তিনি মূলত রানা প্লাজা ভবন নির্মাণকালে সোহেল রানার নিয়োগ করা একজন বেসরকারি প্রকৌশলী, তার নাম আব্দুর রাজ্জাক।
https://www.bbc.com/bengali/articles/cvgqv0n97jeo
4/23/2025
BBC Bangla
Govt critique
12
রানা প্লাজা ধস
রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: বিচার-পুনর্বাসনের দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের
কালে কারখানায় এসেছিলেন পারুল বেগম। শুরু করেছিলেন কাজও, এরমধ্যে চলে যায় বিদ্যুৎ। জেনারেটর চালু হতেই বিকট আওয়াজে ধসে পড়ে ভবন। তিনি দৌড় দেন, তবে পড়ে জ্ঞান হারান। রাতে যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। পেট জুড়ে ব্যান্ডেজ। তার কিডনি ভেদ করে ঢুকে গিয়েছিল রড। এক যুগ আগে ভাগ্যক্রমে বাঁচলেও এখনও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না, হারিয়েছেন কর্মক্ষমতাও। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে ভবনের পাঁচতলায় ফ্যান্টম টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন এই নারী। ওই ঘটনায় প্রাণ যায় ১,১৭৫ জন শ্রমিকের। আহত হন ২,০০০ এরও বেশি পোশাকশ্রমিক। বেঁচে যাওয়া বেশিরভাগ শ্রমিক এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। আর ওই ঘটনায় বিচার এখনও চলমান। এক যুগ পরে এসে এখনও রানা প্লাজার শ্রমিকদের চাওয়া সুষ্ঠু বিচার ও পুনর্বাসন। অন্যদিকে ভয়ংকর ওই দুর্ঘটনার পরও রাজধানীর নিকটবর্তী সাভারে এখনও ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, রানা প্লাজার ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি এখনও রয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান তাদের। ফিরে দেখা ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিল রানা প্লাজা। ভবনের প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায় দোকান ও ব্যাংকের শাখা। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলাতে ছিল পোশাক কারখানা। এরমধ্যে তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড এবং ফ্যান্টম টেক্স লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথার টেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস। অষ্টম ও নবম তলা ছিল ফাঁকা। সেদিন সকালে ভবনে কাজ করছিল প্রায় ৩,০০০ শ্রমিক। আটটার দিকেই কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছিল। বেলা সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দে প্রথম তলার ওপরে পুরো ভবন ধসে পড়ে। এর পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। শুরুতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এমন ইতিহাস তৈরি নাও হতে পারতো ২৪ এপ্রিল ধসের একদিন আগেই ওই ভবনের চার ও পাঁচ তলার কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এ কারণে শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে যান। তবে মালিক কর্তৃপক্ষ সংবাদকর্মীদের ভবনে প্রবেশ করতে দেননি। তারা যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। বিকেলের দিকে ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কবির হোসেন সরদার ভবনের ফাটল পরিদর্শন করেন। এরপর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের বলেন, “এ ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা নেই, বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই। সামান্য প্লাস্টার ওঠে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।” এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভবন ধসের সাক্ষী হয় বাংলাদেশসহ সাড়া বিশ্ব। প্রাণ হারায় হাজারো শ্রমিক। ওই ঘটনার পরে ওই ইউএনওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আহত শ্রমিক, শ্রমিক নেতা ও সুশীল সমাজের দাবি, প্রশাসন যথাযথ তৎপরতা দেখালে হয়তো এমন ঘটনা এড়ানো যেতো। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, মৃত লাশের গন্ধ ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে জীবিত, আহত, মৃত মানুষের দেহ। আহতদের নেওয়া হয় আশপাশের হাসপাতালে। আর মৃতদেহ নেওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। টানা ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে উদ্ধার হওয়া প্রতিটি মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হতো ওই মাঠে। লাশের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা ছুটে আসতেন সাইরেন শুনলেই। এই বুঝি স্বজনের মরদেহ এলো! স্বজনদের আহাজারিতে দিনরাত ভারী হয়ে থাকতো অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটা জুড়েই তখন কান্না আর সাইরেনের আওয়াজ। অধরচন্দ্রের ওই মাঠ এখনও বয়ে বেড়ায় সেই স্মৃতি। ওই সময় স্কুলটিতে পড়তেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, “আগে ক্লাসের বাইরেও প্রচুর ঘুরাফেরা, খেলাধুলা করতাম এই মাঠে। কিন্তু রানা প্লাজার ধসে পড়ার পর মৃত লাশগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছিল এখানে। এখনও গা ছমছম করে।” হতাহত যত প্রায় ১৭ দিনের উদ্ধার অভিযানে রানা প্লাজার ভবন থেকে ১,১৩৬ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২,৪৩৮ জন শ্রমিককে। আহতদের অনেকেই এখনও দুর্বিষহ সেইদিনের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু। এখনও সেদিনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের। শহিদ বেদি এখন “প্রতিবাদের প্রতীক” হতভাগ্য শ্রমিকদের স্মরণে ২০১৩ সালের ২৪ মে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে একটি শহিদ বেদি নির্মাণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। অস্থায়ী শহিদ বেদিটির নামকরণ করা হয় “প্রতিবাদ-প্রতিরোধ”। এ শহিদ বেদিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলনের কর্মসূচি। এটি এখন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের প্রতীক। বর্তমানে রানা প্লাজার সেই স্থান ধসের পরপরই প্রায় সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এরপর জমিটির চারপাশ কাটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই সময় প্রায় প্রতিদিনই রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজ স্বজনরা জায়গাটিতে আসতেন। তবে ধীরে ধীরে জায়গাটি পরিণত হয় পরিত্যক্ত ভূমিতে। বর্তমানে জায়গাটি নানা লতাপাতার দখলে। সামনে বেদি। ফুটপাত জুড়ে রাখা থাকে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি। তবে ২৪ এপ্রিল এলে নানা কর্মসূচিতে কিছুটা প্রাণ পায় জায়গাটি। বিচার পাননি হতভাগ্যরা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনটি মামলার কোনোটিই এখনও শেষ হয়নি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটি দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে। এটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের করা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে হাজারো শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ওই ঘটনায় এখনও কোনো বিচার পাননি হতভাগ্যরা। বাঁচার লড়াই আহতদের, পুনর্বাসনের দাবি প্রায় ১২ বছর ধরেই পঙ্গুত্ব নিয়ে এখনও বাঁচার লড়াই করছেন অনেকেই। অসুস্থতা আর দারিদ্র্য নিয়ে দীর্ঘ দিন বসবাস করে আসলেও কেউ তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের শাস্তি ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবি করে আসছেন এতদিন। রানা প্লাজার আহত শ্রমিক পারুল বেগম বলেন, “আমি পেটে আঘাত পাই। এত বছর ধরে কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে আছি। রানা প্লাজা ধসের এতদিন হয়ে গেছে আমাদের কেউ খবর নেয় নাই। আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাই না। আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝায় দেওয়া হোক।” তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের যারা ক্ষতি করেছে, এই ভবন মালিক রানা, গার্মেন্টস মালিকসহ জড়িত সবার ফাঁসি চাই। সরকার আমাদের সুষ্ঠু বিচার করে নাই যদি বিচার করতো তাইলে এক যুগ শেষ হতো না। আর সরকারের কাছে আমাদের অনেকদিন ধরেই দাবি রানা প্লাজা যেখানে ছিল সেখানে একটা মার্কেট করুক এবং রানা প্লাজার ভাই-বোনদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।” রানা প্লাজার একটি কারখানার সুইং অপারেটর নীলুফা বেগম ধসে পড়ার ঘটনায় মারত্মক আহত হন। এক যুগ ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন পায়ের ক্ষত। সুচিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। নীলুফা বেগম বলেন, “রানা প্লাজা ধসে পড়ার ১২ বছর হয়ে যায় তারপরও আমাদের কোন খোঁজ কেউ নেয় না। আমার একটা পা মারাত্মক ভাবে আহত। এগারোটা অপারেশন করা লাগছে পায়ে। পা কেটে ফেলার জন্য অনেক জায়গায় গেছি। শেষ একটা অপারেশন আছে যার জন্য অনেক টাকা লাগবে। অপারেশনের আগে টাকা জমা দেওয়া লাগবে। কিন্তু ওই টাকা আমি কই পাব?” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, “মিডিয়ার ভাইগো ধন্যবাদ দেই। তারাই মনে রাখে। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি কোনোদিন। ক্ষতিপূরণ পাই নাই, বিচার পাই নাই। এইখানে হাজারো লাশ ছিল। এখানে এখন সবাই পেশাব পায়খানা করে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করি, জায়গাটাতে একটা বিল্ডিং কইরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গু আহত ভিক্ষা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।” যা বলছেন শ্রমিক নেতারা রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করে। নিহত ও আহতদের লস অব আর্নিং-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি তোলেন তারা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটারস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছরে এসেও আমাদের দাবি যেগুলো ছিল তার কিছুই পূরণ হয়নি। চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর দিন পার করছে। সরকার ও বিজিএমইএ’র প্রতি দাবি দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, “রানা প্লাজার সব দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা এক যুগ ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারকে পুনর্বাসন, সুচিকিৎসা নিশ্চিত, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা ও রানা প্লাজার সামনে একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।” https://bangla.dhakatribune.com/95651
https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/95651/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%A7%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF
4/24/2025
Dhaka Tribune
Govt critique
13
রানা প্লাজা ধস
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শুধু রানার বিচার হলেই হবে: সৈয়দ সুলতান উদ্দিন
রানা প্লাজার ধসের ঘটনার বিচারের কথা উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেছেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় শুধু রানার বিচার হলেই আমি খুশি। যারা কারখানার ও বিল্ডিংয়ের পারমিশন দিয়েছে, কারও কিছু দরকার নাই। শুধু রানার বিচার হলেই হবে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তন হলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল কর্তৃক রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণমূলক দুই দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সুলতান উদ্দিন বলেন, আমরা একটা প্ল্যান করছি, সেখানে আইনি বিচারের দাবি থাকবে, রানা প্লাজার থেকে শিক্ষা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া পরিবর্তন হওয়া দরকার, সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমিট করতে হবে। আপনারা রিপোর্ট দিলে আইন সংশোধন হবে। রানা প্লাজাকে কেন্দ্র করে দেশে জাতীয় পর্যায়ে একটা নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি করার জন্য যে সংশোধনী আছে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সেগুলো সংশোধন করে আইন সংশোধন করব। তিনি বলেন, একটি ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে আমরা এখানে একত্রিত হইনি। আমরা একত্রিত হয়েছি আমাদের দায়িত্ব চিন্তাভাবনাকে একত্রিত করার জন্য। ১২ বছর পরে চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ নেই, বিচার দাবি করা এখন আমাদের দায়িত্ব হয়ে গেছে। রানা প্লাজা ধস একটা ট্র্যাজেডি ছিল না, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। গোল টেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য রাশেদুল আলম রাজু। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতারের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপ্ন, নারীবিষয়ক সম্পাদক চায়না রহমান, অর্থ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ও সদস্য আমিনুল হক আমিন। দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এক ট্রাজেডি ছিল সাভারের রানা প্লাজা ধস। যেই ঘটনায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও। সেই ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হন বিদেশিরাও। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা, যাতে প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৬ জন। এরপর পেরিয়ে গেছে এক যুগ। এ সময়েও শেষ হয়নি ঘটনার বিচার।
https://banglanews24.com/national/news/bd/1506429.details
4/25/2025
Bangla News24
Govt critique
14
রানা প্লাজা ধস
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ, সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে বিচার
দেশের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধস একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। এই ঘটনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকেও। ২০১৩ সালের আজকের দিনে (২৪ এপ্রিল) আট তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার জন। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যর ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত। আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্য এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেন। এক যুগ আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ৮৪৪টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। উদ্ধারকৃত জীবিতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন। ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খান খোকন। মামলার বিচার কাজের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর উচ্চ আদালতের আদেশে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৯৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষী হাজির করতে ১৭ জনের বিরুদ্ধের সমন ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে নেওয়া হবে। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য রয়েছে।’ মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা এই মামলার দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা ধারণা করছি তাদের অবহেলার কারণেই মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সাক্ষীদের হাজির হতে সমন জারি করেছি। আমরা দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন বলেন, ‘এ মামলায় রানার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১২ বছর কারাগারে রয়েছেন তিনি। এই যে এতগুলো বছর তার জীবন থেকে চলে গেলো, যদি তিনি খালাস পান কে তাকে এই সময়গুলো ফিরিয়ে দেবে। রানা প্লাজার ভবন ধস নিছক একটি দুর্ঘটনা। তাছাড়া ভবনটির প্রকৃত মালিক সোহেল রানা নয়, তার বাবা আব্দুল খালেক। এখানে রানার কোনও হাত নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার আদালতে সাক্ষী হাজির করতে তেমন সচেষ্ট হয়নি। তবে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে আদালতে সাক্ষী হাজির করছে। দেরিতে হলেও মামলাটি আলোর মুখ দেখছে।’ এ মামলায় বিচার বিলম্বিত হওয়ার জন্য কাউকে দায়ী করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রানার এই আইনজীবী বলেন, ‘কারও গাফিলতি আছে বলা যাবে না। বিগত সরকার সাক্ষী আনতে পারেনি, এই সরকার পারছে। আসামিপক্ষের একটাই প্রত্যাশা, সাক্ষী আসুক। আইনের ভাষায় একটি কথা আছে, বিলম্ব ন্যায় পরায়ণতা ব্যাহত করে। বিলম্বের কারণেই রানা জেলে আছে। আমরা আশা করছি বিচারে রানা খালাস পাবে।’ কবির মোল্লা নামে একজন সুপারভাইজার রানা প্লাজা ধসে আহত হন। তিনি বলেন, ‘আমি চার রাত চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছি। আমার আশেপাশে অনেকে পানির পিপাসায় মারা গেছে। কেউ নিজের প্রস্রাব খেয়ে বেঁচে ছিল। আমি উদ্ধারের পর ১৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। সেই মৃত্যুপুরীর এক যুগ হয়ে গেলো, মামলার বিচার পেলাম না। আমি ভবন মালিক রানাসহ জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। এখনও আমি মাথার চিকিৎসার জন্য ওষুধ খাই। কিন্তু আগের সরকারের সময় কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। বর্তমান ইউনূস সরকারের কাছে সব আহত-নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’ ভবনের ছয় তলায় কাজ করতে গিয়ে আহত শিলা নামে একজন গার্মেন্টসকর্মী বলেন, ‘আমার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছি। কিন্তু দেখার কেউ নেই। আমাদের পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি।’ এদিকে আসামি সাইদুল ইসলাম ও ইউসুফ আলীর পক্ষের আইনজীবী শেখ আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার দুই আসামি নির্দোষ। এজাহারে তাদের নাম ছিল না। দ্রুত মামলার বিচার শেষ হলে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশাবাদী। এক যুগ ধরে তারা ভুগছেন। বর্তমানে জামিনে আছেন।’
https://www.banglatribune.com/others/895582/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%9F%E0%A6%95%E0%A7%87
4/24/2025
BanglaTribune
Govt critique
15
রানা প্লাজা ধস
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ, সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে বিচার
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ (২৪ এপ্রিল)। ২০১৩ সালের এই দিনে ঘটে গিয়েছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা; ধসে পড়েছিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত রানা প্লাজা আর প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমজীবী। সেইসঙ্গে আহত হয়েছিলেন আরও প্রায় দুই হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রমের ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তা-ও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। যেদিন রানা প্লাজা ভেঙে পড়ে তার আগের দিনই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। আর সেই ফাটল অগ্রাহ্য করেই পরের দিন ভবনটির পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই শিল্প দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে ভবন মালিক সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপনসংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত। আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্য এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেন। ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। আর বাকিরা রয়েছেন জামিনে। বিশ্বের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনার একটি হিসেবে এরই মধ্যে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া ওই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সাভারে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
https://ajkalerkhobor.net/news/180299
4/24/2025
Ajkaler khobor
Govt critique
16
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন
ববি হাজ্জাজের নির্বাচনী ভাগ্য কোথায়- ঢাকা-৬ নাকি ঢাকা-১৮?
তিনি বেশ সুদর্শন। কথাও বলেন সুন্দর করে। তরুণ এই রাজনীতিকের বাবা বিপুল আলোচিত একজন মানুষ। দেশ-বিদেশে বিপুল ব্যবসার কথা একসময় প্রচলিত ছিল। ্একদল তরুণ-তরুণী নিরাপত্তারক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে পথ চলেন। রাজকীয় এই জীবনযাপন শুধু নয়, নামের আগে ‘প্রিন্স’ শব্দটিও বসে গেছে তার। সেই বাবার ছেলে ববি হাজ্জাজ, রাজনৈতিক দল 'জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন' বা এনডিএমের চেয়ারম্যান। বাবা রাজনীতিতে তেমন আগ্রহী না হলেও ববি হাজ্জাজ বিদেশি শিক্ষা নিয়ে দেশে এসে জড়িয়ে যান জাতীয় রাজনীতিতে। ইতিমধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে তার। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত। এ্ই আবহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন ড. ববি হাজ্জাজ। শোনা যাচ্ছে, ববি হাজ্জাজ রাজধানীর ঢাকা-৬ অথবা ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হিসেবে তিনি এই দুটি আসনের যেকোনো একটিতে ছাড় পাবেন বলেও আশা করছেন। ববি হাজ্জাজের পুরো নাম ইশতিয়াক সাদেক হাজ্জাজ। তার বাবা ‘প্রিন্স’ মুসা বিন শমসের, যিনি বাংলাদেশের একজন আলোচিত ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব। ববি হাজ্জাজের বোন ন্যান্সি জাহারা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বড় ছেলের স্ত্রী। ববি হাজ্জাজের শিক্ষাজীবনও বেশ বর্ণাঢ্য। ঢাকার ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি। দেশে ফিরে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন। ববি হাজ্জাজের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে। ২০১২ সালে তিনি এই পদে নিয়োগ পান। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় তার ভূমিকা তাকে জাতীয়ভাবে আলোচনায় নিয়ে আসে। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে তিনি তার নিজের রাজনৈতিক দল 'জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন' বা এনডিএম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এই দলের চেয়ারম্যান। আগামী দিনে তার নির্বাচনী পরিকল্পনা কী? জানা যায়, ববি হাজ্জাজ এবার ঢাকা-৬ অথবা ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এর আগেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তাই এই আসনটির প্রতি তার আগ্রহ পুরনো। অন্যদিকে, ঢাকা-১৮ আসনটিও রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ববি হাজ্জাজ আশা করছেন, বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে তিনি এই দুটি আসনের যেকোনো একটিতে ছাড় পাবেন। কিন্তু ববি হাজ্জাজের জন্য পথটি অত সহজ নয়। কারণ ঢাকা-৬ এবং ঢাকা-১৮, এই দুটি আসনেই বিএনপির একাধিক শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন এবং ২০২০ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এস এম জাহাঙ্গীর। ঢাকা-৬ আসনেও মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন বিএনপির একাধিক নেতা। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনা গণমাধ্যমে আসেনি, তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী থাকে। বিএনপি কি রাজধানীর এ দুটি আসনের কোনোটিতে ববি হাজ্জাজকে ছাড় দেবে? ববি হাজ্জাজের ইতিবাচক দিক হলো, তার উচ্চশিক্ষা, তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি। তিনি তার রাজনৈতিক দলকে একটি প্রগতিশীল ও আধুনিক দল হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তার পারিবারিক সংযোগও রাজনীতির মাঠে একটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। তবে তার বাবা মুসা বিন শমসেরের অতীত ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, যা নির্বাচনে প্রতিপক্ষরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে। ববি হাজ্জাজকে ছাড় দেয়ার বেলায় এসব বিবেচনায় নিতে পারে বিএনপির হাইকমান্ড। শেষ পর্যন্ত ববি হাজ্জাজ কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, আদৌ বিএনপির সঙ্গে তার জোট হবে কি না, এবং হলে তিনি মনোনয়ন পাবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তার এই নির্বাচনী আগ্রহ ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। (ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/মোআ) google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন মন্তব্য করুন
https://www.dhakatimes24.com/2025/08/22/392179
8/22/2025
Doinik Bangla
Neutral
17
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচন
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্যদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম৷ এরপর হাইকোর্ট এ নিয়ে রুল জারি করে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি৷ শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল বাতিল করে আদেন খারিজ করে দেন৷ আদালত তার আদেশে কোনো সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৯ ধারার বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দেয়ার পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ‘না ভোটের বিধান' সংযোজনের নির্দেশনা চেয়ে করা অপর রিটটিও খারিজ করে দেয়৷ রায়ে আদালত বলে, সংবিধানের সঙ্গে আরপিও-র সংশ্লিষ্ট ধারাটি সাংঘর্ষিক নয়৷ সংবিধানের সঙ্গে কোনো আইন সরাসরি সাংঘর্ষিক হলে, আদালত তা বাতিল করতে পারেন৷ বর্তমান আইনি কাঠামোতে ১৫৩ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই৷ আর ‘না ভোটের বিধান' নিয়ে আদালত বলে যে, না ভোটের বিধান আইনে নির্ধারণ করা সংসদের এখতিয়ার৷ রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই রায়ের মাধ্যমে একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়েছে বলে আমি মনে করছি৷ হাইকোর্টের এই রায়ের পর এখন ১৫৩ জনের নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও আর কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই৷'' তিনি বলেন, ‘‘আরপিও-তে কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করা সম্পূর্ণ পার্লামেন্টের এখতিয়ার৷ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ একমাত্র পার্লামেন্টই নিতে পারে৷'' রিটকারী আইনজীবী হাসান এম এস আজিম জানান, ‘‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷'' এই মামলার শুনানিতে আদালত মতামত নেয়ার জন্য ১২ই মার্চ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয় আইনজীবীসহ সাতজনের নাম ঘোষণা করে৷ তাঁদের মধ্যে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, আজমালুল হোসেন কিউসি, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল ইসলাম এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মতামত দেন৷ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা শুনানি করেন৷ এছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম এবং রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও রেদোয়ান আহমেদ অংশ নেন৷ রায়ে আদালত বলে, সংবিধানের সঙ্গে আরপিও-র সংশ্লিষ্ট ধারাটি সাংঘর্ষিক নয়৷ সংবিধানের সঙ্গে কোনো আইন সরাসরি সাংঘর্ষিক হলে, আদালত তা বাতিল করতে পারেন৷ বর্তমান আইনি কাঠামোতে ১৫৩ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই৷ আর ‘না ভোটের বিধান' নিয়ে আদালত বলে যে, না ভোটের বিধান আইনে নির্ধারণ করা সংসদের এখতিয়ার৷ রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই রায়ের মাধ্যমে একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়েছে বলে আমি মনে করছি৷ হাইকোর্টের এই রায়ের পর এখন ১৫৩ জনের নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও আর কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই৷'' তিনি বলেন, ‘‘আরপিও-তে কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করা সম্পূর্ণ পার্লামেন্টের এখতিয়ার৷ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ একমাত্র পার্লামেন্টই নিতে পারে৷'' রিটকারী আইনজীবী হাসান এম এস আজিম জানান, ‘‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷'' এই মামলার শুনানিতে আদালত মতামত নেয়ার জন্য ১২ই মার্চ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয় আইনজীবীসহ সাতজনের নাম ঘোষণা করে৷ তাঁদের মধ্যে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, আজমালুল হোসেন কিউসি, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল ইসলাম এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মতামত দেন৷ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা শুনানি করেন৷ এছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম এবং রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও রেদোয়ান আহমেদ অংশ নেন৷
https://www.dw.com/bn/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A7%A7%E0%A7%AB%E0%A7%A9-%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A6%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%A7/a-17720623
6/19/2014
DW
Govt leaning
18
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন
২০১৪'র আলোচিত ঘটনা
লাগাতার অবরোধ,নাশকতা,সহিংসতার মধ্যেই ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাধারণ নির্বাচন।এই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট।ভোট গ্রহণের আগের রাতেই সারাদেশে পাঁচশ’র মতো ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। আগের দিন থেকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। নির্বাচনের দিনে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন,প্রধান একটি জোটের নির্বাচন বয়কট এবং রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। অন্যদিকে, ৫ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাস দেড়েক পরই ফেব্রুয়ারিতে সরকার সারাদেশে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়েছিল। নেতা কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে বিএনপি এবং জামায়াত আলাদা আলাদাভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভাল ফল করেছিল। তবে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও সরগরম দেখা দেয় এপ্রিলের শেষে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের তিনদিন পর ৩০শে এপ্রিল তাদের মৃতদেহ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে। শেষপর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে র‍্যাবের সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নের প্রধান লে:কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ বাহিনীটির ১৭জন সদস্যকে চাকরীচ্যুত করে সাতখুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার কার্যক্রম এখন চলছে। নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়ায় সারাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল না।নির্বাচন প্রতিহত করতে না পেরে বিএনপি এবং জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪ সালে আরেকটি ঘটনা মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। সেটি হলো, হজ এবং তাবলীগ জামাত নিয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিতর্কিত মন্তব্য। সেপ্টেম্বরের শেষে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করার দু’দিন পর মেক্সিকো থেকে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। আলোড়ন তুলেছিল অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করার ঘটনা।জুন মাসের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে খেলতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি না নেয়ার অভিযোগ উঠলে সাকিব ফেরত আসেন।তখন তিনি বলেছিলেন, দেশের হয়েই খেলা চালিয়ে যেতে চান বলেই তিনি ফেরত এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সাকিবকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছ’মাসের জন্য এবং বিদেশী লিগে দেড় বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান। এই বিরুদ্ধে ঢাকায় ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল।অবশ্য কয়েক মাস পরই বিসিবি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ২০১৪ ক্রিকেটের পাশাপাশি কিন্তু তৈরি পোশাক খাতও আলোচনায় ছিল। আলোচনায় এসেছে সুন্দরবন। বছরের শেষের দিকে ট্যাংকার ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় বিপর্যয়য়ের মুখে পড়ে সুন্দরবন এবং ডলফিনসহ জলজপ্রানী। গ্রামবাসী এবং জেলেদের দিয়ে স্থানীয় পদ্ধতিতে সেই তেল সরানোর চেষ্টা করা হয়। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সহায়তা করতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় আসে। গ্রামবাসী বা জেলেরাও পরিস্থিতিটাকে মেনে নিতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বছর জুড়ে বেশ কয়েকটি মামলায় রায় এসেছে। কিন্তু মানুষের নজর ছিল জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার দিকে। সেই মামলায় মি: নিজামীর ফাঁসির রায় হয়েছে।আর ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম বিদায়ী বছরেই মারা গেছেন।
https://www.bbc.com/bengali/multimedia/2014/12/141231_rh_year_round_up_
12/31/2014
BBC Bangla
Govt critique
19
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন
শহরে ভোট কম, গ্রামে বেশি
শহরে ভোটের হার তুলনামূলক কম। ভোট বেশি পড়েছে গ্রামে। যেসব আসনে অন্তত দুজন প্রার্থী পরিচিতি ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে শক্ত অবস্থানে ছিলেন, সেখানে মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে এবং ভোট পড়েছে মাঝামাঝি হারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩৯ আসনের বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে এই চিত্র দাঁড়ায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে ১৮টি আসনে। এই আসনগুলো শহরের বাইরের। শতকরা ২৫ ভাগের কম ভোট পড়েছে ১৮টি আসনে। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন মহানগরে পড়েছে। বাকি আসনগুলো সহিংসতাপ্রবণ কয়েকটি এলাকার। তিন থেকে ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে এমন আসন পাওয়া গেছে অন্তত ২০টি। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, এই আসনগুলোতে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ১৩৯টি আসনের ভোটের হার চূড়ান্ত করেছে। ভোট গ্রহণের হার ৪০ দশমিক ৫৬। কমিশনের হিসাবে দেখা গেছে, মোট ভোটার ছিল চার কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৩৭১। ভোট দিয়েছেন এক কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৪ জন। ভোটারের বাস্তব উপস্থিতির সঙ্গে ঘোষিত ভোটের হারের সামঞ্জস্য আছে কি না জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন যে ফল ঘোষণা করেছে, সেটি বাক্সে পড়া ভোট হিসাব করে। কিন্তু ভোটগুলো বাক্সে কীভাবে এসেছে সেটা বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই। এবার সর্বাধিক ৯০ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে গোপালগঞ্জ-২ আসনে। ২০০৮ সালের উৎসবমুখর নির্বাচনে এ আসনে ৮২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ আসনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫৯১ ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির কাজী শাহীনকে পরাজিত করেন। শেখ সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন। পাশের গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনা প্রায় এক লাখ ৮৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির অপু শেখকে পরাজিত করেছেন। এই আসনে ভোট পড়েছে ৮৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে দেশের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট পড়ে রাজধানীর মিরপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসনে। এই আসনে বিজয়ী কামাল আহমেদ মজুমদারের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি অনেকটা নেতিবাচক। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও ছিলেন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এখলাস উদ্দিন মোল্লা। তিনি একসময় বিএনপির সাংসদ ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। তাতে দলটি সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সংখ্যায় এক কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ৩০৯ ভোট। জাতীয় পার্টি (জাপা) ৭ দশমিক ২১, ওয়ার্কার্স পার্টি ২ দশমিক ১৯ এবং জাসদ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট। বাকি ভোট জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বিএনএফ পেয়েছে। বেশি ভোট গ্রামে: ১৮টি আসনে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের ওপরে এবং এই আসনগুলো মহানগরের বাইরে। এই আসনগুলোতে গড়ে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এসব আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া আসনগুলোর মধ্যে চমক সৃষ্টি করেছে ভোলা-৩ আসনও। এখানে ভোটের হার ৭১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এই আসনে এবার যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। ঢাকায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, আওয়ামী লীগ কর্মী ইব্রাহীম হত্যার ঘটনায় তাঁর নাম আলোচিত। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন আসনও নজর কেড়েছে। লালমনিরহাটে দুটি আসনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। হেরেছেন জাসদের প্রার্থী। দুই আসনেই ভোট গড়হারে ব্যবধান অনেক। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংঘাত লেগে থাকা লালমনিরহাট-১ আসনে ভোট পড়েছে ৭০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর অপেক্ষাকৃত শান্ত লালমনিরহাট-২ (সদর) আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। কমিশনের হিসাবে ৬০ শতাংশের ওপর ভোট পড়া বাকি আসনগুলো হলো: গোপালগঞ্জ-১, ময়মনসিংহ-১০, নেত্রকোনা-৩, চট্টগ্রাম-১৩, ঝালকাঠি-১, পটুয়াখালী-৩, জাপালপুর-১, জামালপুর-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, কুমিল্লা-৫, চট্টগ্রাম-৩, ভোলা-২, বরিশাল-৪ ও শেরপুর-১। সবচেয়ে কম ভোট শহরে: ১৮টি আসনে ২৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। তবে এই আসনগুলোর গড় ভোট ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। কম ভোট পড়া আসনগুলোর মধ্যে আটটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর মহানগর এলাকার। বাকি ১০টির বেশির ভাগই জেলা শহরের আসন। কিছু আসন আছে বিএনপি ও জামায়াত-অধ্যুষিত সংঘাতপূর্ণ এলাকায়। এ ছাড়া নবাবগঞ্জ-দোহারসহ ঢাকার নয়টি আসনে পড়েছে গড়ে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট। চট্টগ্রাম-১১ আসনটি শ্রমিক-অধ্যুষিত বন্দর এলাকায় পড়েছে। সেখানকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফ পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সাবেক প্রভাবশালী মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির কামালউদ্দিনেরও শক্ত কোনো অবস্থান নেই। ফলে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল, ভোট পড়েছে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ঢাকা-৪ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচন করেও জিততে পারেননি জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের আওলাদ হোসেন এবারই প্রথম অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোট পড়েছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর বাইরে সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ ভোট পড়ার কারণ, এই আসনের সাবেক সাংসদ ছিলেন বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী। আসনটি এবার জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল (ইয়াহইয়া চৌধুরী) আওয়ামী লীগ। ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকাটি গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন জিতেছেন। জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারলেও ভোটাররা ঝুঁকির কারণে কেন্দ্রে যাননি। কম ভোট পড়া বাকি আসনগুলো হলো: ঢাকা-৬, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, চট্টগ্রাম-৯, মৌলভীবাজার-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, টাঙ্গাইল-৬, ফেনী-৩, ঠাকুরগাঁও-১, রংপুর-৩, গাইবান্ধা-২, ঝিনাইদহ-৩, সাতক্ষীরা-২। গ্রামে বেশি, শহরে কম ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, গ্রামে মানুষ নিজেকে সামাজিকভাবে নিরাপদ ভাবে। আর আতঙ্কের কারণে শহুরে লোকজন ভোট দিতে গেছেন কম। আরেকটি বিষয় হলো, এখন নির্বাচনে একধরনের ভোটার টানার ক্ষেত্রে টাকা একটা বড় বিষয়। এবার শহরে টাকা ছড়ানোর বিষয় সেভাবে ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে ভোট: প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোতে ভোটের হার ছিল মাঝামাঝি। নির্বাচন কমিশনের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তিন থেকে ১২ হাজারের মধ্যে এমন ২০টি আসনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব আসনের বেশির ভাগে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের হিসাবে এগুলো ছিল অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রত্যক্ষদর্শী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর প্রতিটি কেন্দ্রে বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীর এজেন্ট (প্রতিনিধি) ছিল। ফলে সেখানে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আর যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্বল, ঠিকমতো প্রার্থীর প্রতিনিধি ছিল না, পরিবেশ ভোটের অনুকূল ছিল না, সেসব আসনে ভোটের হার হয় বেশি ছিল, না হয় কম ছিল। ঢাকার উপকণ্ঠে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচন হয়েছে ঢাকা-১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ)। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে মাত্র চার হাজার ৬৫১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন জাপা প্রার্থী সালমা ইসলাম। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই আসনটিতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েছে। ভোট পড়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন পাশের উপজেলা শ্রীনগর-সিরাজদিখান নিয়ে গড়ে ওঠা মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সেখানকার সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ জাসদের নূর মোহাম্মদকে প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন। এই আসনটি দীর্ঘদিন বিএনপির সাবেক নেতা ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দখলে ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারটি আসনে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। অন্য তিনটি আসনের তুলনায় কম ভোট পড়েছে এ আসনে, ২৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এই আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা আওয়ামী লীগের নায়ার কবিরকে পরাজিত করেন। ভোটের ব্যবধান ছিল সাত হাজার ৪৬২। প্রায় সব কেন্দ্রেই জিয়াউল হক ও নায়ার কবিরের নির্বাচনী প্রতিনিধি ছিল। জিয়াউল হক মৃধা ২০০৮ সালের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। আর নায়ার কবিরের স্বামী হুমায়ুন কবির এরশাদ সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হুমায়ুন কবির আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এর পাশের সদর ও বিজয়নগর নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ভোট পড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জেপি) ফরিদ উদ্দিনের চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর র আ ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী দুই লাখ ৬১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ফরিদ নিজেই অন্নদা সরকারি স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর এজেন্টদেরও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা মৌলভীবাজারেও। মৌলভীবাজার-২ আসনে বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের পার্থক্য ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ৬৩০। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। অথচ অপেক্ষাকৃত কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মৌলভীবাজার-১ আসনে ভোটের হার প্রায় ৪৯ শতাংশ। মৌলভীবাজার-২ আসনে সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় পার্টির মহিবুল কাদের চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে এই আসনে জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে প্রায় সব কেন্দ্রেই দুই প্রার্থীর এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকেরা সক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে মৌলভীবাজার-১ আসনে নির্বাচন হয়েছে অনেকটা একতরফা। বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটের পার্থক্য প্রায় ৯৫ হাজার। জানতে চাইলে জানিপপ চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে ভারসাম্য রক্ষা করে (চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা। এবার অনেক স্থানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এর ফলে কী হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%8B%E0%A6%9F-%E0%A6%95%E0%A6%AE-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF
1/7/2014
Prothom Alo
Govt critique
20
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হলেন যারা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন তিনি। বাকি দুটি আসনে প্রার্থীর নাম পরে ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মাগুরা-১, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ঢাকা-১০, মাশরাফি বিন মোর্তুজা নড়াইল-২ এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার শুরুতে ওবায়দুল কাদের রংপুর বিভাগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন পঞ্চগড় জেলার আসনসমূহে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের নাম। পঞ্চগড়-১ আসনে নাইমুজ জামান ভুইয়া, পঞ্চগড়-২ আসনে নুরুল ইসলাম সুজন, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাজহারুল ইসলাম, দিনাজপুর-১ আসনে মনোরঞ্জন শীল গোপাল, দিনাজপুর-২ আসনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ আসনে ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৪ আসনে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর-৫ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, দিনাজপুর-৬ আসনে শিবলী সাদিক, নীলফামারী-১ আসনে আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, নীলফামারী-৩ আসনে গোলাম মোস্তফা, নীলফামারী-৪ আসনে জাকির হোসেন বাবু, লালমনিরহাট-১ আসনে মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-২ আসনে নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনে মতিয়ার রহমান, রংপুর-১ আসনে রেজাউল করিম, রংপুর-২ আসনে আহসানুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর আগে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বেশির ভাগ আসনের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হলেও কৌশলগত কারণে সে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছিল না। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে আজ সকাল ১০টার পর গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় শেখ হাসিনা মনোনয়প্রত্যাশীদের বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যদি কোনো আসনে জয়ী হন, তাহলে বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় প্রধান জানিয়েছেন। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন। চলতি বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৩ হাজার ৩৬২ জন। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আগের সংসদের ৫৬ জন এমপি দলীয় মনোনয়ন পাননি। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার আগের সংসদের ৪৯ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
https://www.somoynews.tv/news/2023-11-26/CYQV40LJ
11/26/2023
Somoy news
Govt leaning
21
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত ‘ক্রশফায়ার’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে কিন্তু বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু'
বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা কিছুটা কমে আসলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। বরং আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে পুলিশ, র‍্যাব ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা। বন্ধ হয়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও। সবমিলে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এসে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না, এমনটাই উঠে এসেছে আলাদা দুটি মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণে। শনিবার সকালে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে দুটি বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংবাদ সম্মেলনে তারা ২০২৩ সালে দেশের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরে। একইসাথে রিপোর্টে উঠে এসেছে নারী ও শিশু নির্যাতন, পোশাক শ্রমিক সংক্রান্ত তথ্য, সীমান্তে হত্যার পরিসংখ্যান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক নির্যাতন, সীমান্তে হত্যা এবং সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের চিত্রও। র‍্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর কিছুটা কমে এসেছে বন্দুকযুদ্ধ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন – এমএসএফ বলছে ২০২২ সালে যেখানে মোট ২২টি বন্দুকযুদ্ধে ১৫ জন মারা যায়, সেখানে এ বছর ১৫টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে, যাতে মারা গিয়েছে ৭ জন। কিন্তু আইন ও সালিশ কেন্দ্র – আসকের হিসেবে ২০২২ সালে ১৯ জন নাগরিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, বিপরীতে এ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২০ জন। তবে এই দুটি সংস্থার হিসেবেই বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা। আসক বলছে ২০২২ সালে যেখানে কারা হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন ৬৫ জন, সেখানে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে। এছাড়া পুলিশের হেফাজতে ১৩ জন, র‍্যাবের হেফাজতে ২ জন ও ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের হেফাজতে ৩ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে এমএসএফের হিসাবে, কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, ২০২২ সালে যেখানে কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৯৩টি, এক বছরের ব্যবধানে সেটি বেড়ে এখন ১৬২টি। এছাড়া ২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও ১৭ জন পুলিশ হেফাজতে মারা গিয়েছেন বলে তাদের রিপোর্টে উঠে আসে। সম্প্রতি কারা হেফাজতে একের পর এক বিএনপি নেতার মৃত্যুর ঘটনা আলোচনায় উঠে এসেছে। বিএনপির অভিযোগ ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে দলের অন্তত ৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার কারা হেফাজতে মৃত্যু ঘটেছে। বিএনপি এবং নিহতের পরিবারগুলো বলছে নির্যাতনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাদের। এসব মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে মানবাধিকার কমিশনও। অবশ্য কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যারা নিহত হয়েছেন তারা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও নেয়া হয়েছিলো। থেমে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা। বরং এমএসএফের হিসেবে ২০২৩ সালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অপহরণের অভিযোগ আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে এরকম অপহরণ ও নিখোঁজের অভিযোগ ছিল ৩০টি, সেখানে এ বছর এরকম ৮৯টি ঘটনার তথ্য তারা পেয়েছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, হুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছের নয় জন। যাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ছয় জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ফিরে এসেছেন তিন জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দুটি সংস্থা থেকেই বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে। যাতে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা যে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন- বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার বহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সাথে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।'' তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এটাও বলছে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তারা তাদের পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে, নিজ বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিজ বাহিনী কর্তৃক তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য কিংবা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে না। অনেকটা একই রকম সুপারিশ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনেরও। এছাড়া কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা কমাতে, কারাগারসমূহের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি যথাযথ তদন্ত করে তার পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচারিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তাদের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
https://www.bbc.com/bengali/articles/cmjrzg08lkeo
12/31/2025
BBC Bangla
Govt critique
22
বিএনপি পরিবহন অবরোধ
বিএনপির অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে (বুধবার) ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকার মুগদা, সাভার এবং চট্টগ্রামে অন্তত চারটি বাসে আগুন দেবার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সিলেট এবং বগুড়ায় অবরোধকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার বাস খুব একটা ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। যদিও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি। এদিকে, প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম দেখা করা গেছে। ফলে যানজটও ছিলো না।
https://www.bbc.com/bengali/articles/ck5x5pl80pwo
11/1/2023
BBC Bangla
Neutral
23
বিএনপি পরিবহন অবরোধ
অবরোধে সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলবে : এনায়েত উল্যাহ
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে দুপুরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। সভায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিন ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সারাদেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়। সভায় পরিবহন নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমাবেশ ও হরতাল কর্মসূচির নামে ঢাকাসহ সারাদেশে ১৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করেছে এবং শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এছাড়া ঢাকায় অছিম পরিবহনের গাড়িতে থাকা নাঈম নামে একজন শ্রমিককেও পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আন্দোলনের নামে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। নেতারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জরুরিভাবে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। এছাড়া সামনের অবরোধের দিনগুলোতে গাড়ি চলাচল যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য রাজধানীসহ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান, ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
https://dbcnews.tv/articles/%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A4-%E0%A6%89%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B9
10/30/2023
DBC news
Govt leaning
24
বিএনপি পরিবহন অবরোধ
পেট্রোল বোমা হামলা : দগ্ধ ১২ জন
বাংলাদেশে বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা অবরোধ ও হরতালের মধ্যে কিশোরগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাস ও ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় অন্তত পক্ষে ১২ জন দগ্ধ হওয়ার খবর জানাচ্ছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জের ভৈরব-কিশোরগঞ্জ সড়কে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় দগ্ধ হন ৯ জন। কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বী জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় ৯ জন যাত্রী দগ্ধ হন। আহতদেরকে কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর হামলাটি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে একটি ট্রাকে।
https://www.bbc.com/bengali/news/2015/03/150305_srr_petrol_bomb_attack
3/5/2015
BBC Bangla
Neutral
25
বিএনপি পরিবহন অবরোধ
বিএনপি’র ‘অসহযোগ আন্দোলন’
বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৩৯ দিন ছিল শুক্রবার৷ আর গত দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বাদে মোট ১০ দিন টানা হরতাল পালন করেছে তারা৷ রবিবার থেকে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে৷ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘অবৈধ, অনির্বাচিত, দখলবাজ আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রশক্তির চূড়ান্ত অপব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের এই জনপদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে৷ অবৈধ সরকারের এহেন শ্বেতসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জনগণ অচিরেই আইন অমান্য ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে৷'' বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘ইদানীং আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীরা প্রকাশ্য জনসমাবেশে আন্দোলনকারীদের এনকাউন্টার এবং ক্রসফায়ারে হত্যা করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কর্তারাও প্রকাশ্যে সভা-সমিতি করে ক্রসফায়ারে হত্যার কৃতিত্ব দাবি করে বেড়াচ্ছেন৷ এ সমস্ত বিকৃত মস্তিষ্কের নেতা-মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি গণকারফিউ এবং গণপিটুনিতে নির্ধারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না৷ এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকাশ্য দাম্ভিক ঘোষণা আগামীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে৷'' শনিবার ২০ দলীয় জোট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সাথে সরকারের কোন আলোচনা হবেনা, তাদের দমন করা হবে৷'' তিনি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ হবে না৷ সরকার কোনো ভাবেই সন্ত্রাসীদের সাথে আলোচনায় বসবে না৷ জাতিসংঘ এসে সমঝোতা করুক, বিএনপির এমন প্রত্যাশাও পূরণ হবে না৷'' রবিবার থেকে ২০ দলীয় জোটের হরতালসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টানা অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পোড়ানোর পর আরও কী কঠোর কর্মসূচি দেবেন সেটা মানুষ বুঝতে পেরেছে৷ বিএনপি-জামায়াত আরও বেশি করে মানুষ পোড়ানোর কর্মসূচি দিতে চান৷'' হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘বাস, ট্রেন, লঞ্চে আগুন দেয়া হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের জঙ্গি আন্দোলন৷ দেশের মানুষ ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিয়েছে৷'' আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘কার সঙ্গে সংলাপ হবে? আমাদের এখন সমস্যা হল পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা৷ সেটা দূর করতে হবে৷ বিএনপি বলছে তারা পেট্রোলবোমা মারছে না৷ তাহলে তো তাদের সঙ্গে সংলাপ করে লাভ নেই৷ তারা যদি মানুষ হত্যার দায় স্বীকার করতো, তাহলে তাদের সঙ্গে সংলাপ করলে সমাধান করা যেত৷ যেহেতু দায় স্বীকার করছে না, তাই তাদের সঙ্গে সংলাপ করে মানুষ পোড়ানো বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ এই সন্ত্রাসীদেরকে আইনি ব্যবস্থা দিয়ে দমন করতে হবে৷ সেটাই করছে সরকার৷'' খাবার সরবরাহে বাধা দেয়ার অভিযোগ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত তাঁর কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য শুক্রবার দুপুরের খাবার নিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার অভিযোগ করেন, শুক্রবার দুপুরে একটি ভ্যানে করে বাইরে থেকে দুপুরের খাবার আনা হয়৷ কিন্তু একজন পুলিশ কর্মকর্তা খাবারসহ ভ্যানটিকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন৷ তবে গুলশান থানা পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘বুধবার থেকেই গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের খাবার আনতে বাধা দেয়া হচ্ছে৷'' তবে খালেদা জিয়ার জন্য বাইরে থেকে খাবার আনায় কোন বাধা নেই৷
https://www.dw.com/bn/%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%A8%E0%A6%AA%E0%A6%BF/a-18256289
2/13/2015
DW
Neutral
26
বিএনপি পরিবহন অবরোধ
চোরাগোপ্তা হামলা, শঙ্কা নিয়ে পথচলা
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে চলছে। মাঠে কোনো নেতা-কর্মী নেই। তবে কোনো কোনো স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা, লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে বোমা নিক্ষেপ ও বিচ্ছিন্নভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ফলে চলাচলে গতি এলেও জনমনে শঙ্কা কাটছে না। গতকাল শনিবার ছিল অবরোধের পঞ্চম দিন। গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শুক্রবার বনানীতে আইনমন্ত্রীর বাসার সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বোমা ফাটানো হয় কানাডা ও সৌদি দূতাবাসের সামনেও। ফেনীতে এক বিচারপতির গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার আগুন দেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে বগুড়া বাইপাস সড়কের চারমাথা নিশিন্দারা এলাকায় আলু বহনকারী ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় চলা মালবাহী ট্রাকবহরে হামলা হয়েছে। বোমা-আগুনের কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিক কর্মচঞ্চল হয়নি নগর-মহানগর। পুলিশ বলছে, সরকারি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলার মূল কারণ আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২০-দলীয় জোট টানা অবরোধ ডেকেছে ৬ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু সংঘাতের শুরু ৪ জানুয়ারি থেকে। অবরোধে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধায় আরও তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে একজন। অন্য দুজন শুক্রবার আহত হয়ে গতকাল মারা যান। সব মিলিয়ে ৪ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১ জন। পুলিশের হিসাবে ৪ জানুয়ারি থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সহিংসতায় আটজন নিহত হয়েছেন। আহত ২৫০ জন। এর মধ্যে ৮৬ জন পুলিশ সদস্য। গত সাত দিনে ৯৫টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ২৬৯টি। যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে ৬৭টি। বোমা ও ককটেল উদ্ধার হয়েছে ৬২টি। এ সময় ঢাকা মহানগরে ১১টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩ সালের অবরোধে বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ছিল ঢাকার বাইরে। এবার ঢাকায়ও হচ্ছে। বিশেষ করে ককটেল ছোড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে রাজধানীতেই। জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, অপরাধীকে দেখা মাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশনা রয়েছে। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে কোনো ছাড় নয়। গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা: গতকাল দুপুর একটার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সীমানাদেয়ালের ভেতরে একটি ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। বেলা সোয়া দুইটার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ঘটনায় হাবিব নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। রমনা থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, পর পর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতা-কর্মীরা এক যুবককে ধরে ফেলেন। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পুলিশ-বিজিপির ১০টি গাড়ির পাহারায় ১১টি মালবাহী ট্রাক যাত্রা করে। কড়া পাহারা সত্ত্বেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে বহরে। এতে দুই পরিবহনশ্রমিক আহত হন। চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে ক্ষমতা পাচ্ছে পুলিশ শঙ্কা নিয়ে চলছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ: অবরোধের শুরু থেকেই নৌপথ ও রেলপথ স্বাভাবিক ছিল। তবে শনিবার ভোরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলার কারণে একটি ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে কয়েকজন আহত হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট পথে ছয় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে সারা দেশের রেলসূচিতে বিপর্যয় নেমে আসে। দুর্ঘটনাকবলিত মহানগর প্রভাতী ট্রেনটির চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী যাত্রা বাতিল করা হয়। ঢাকা-সিলেট পথের পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সাড়ে ১৩ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। সাত থেকে নয় ঘণ্টা দেরিতে চলেছে পাহাড়িকা, উপবন, জয়ন্তিকা, নীলসাগরসহ বেশির ভাগ ট্রেন। দেরিতে ট্রেন আসা-যাওয়ার কারণে ইজতেমার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। দূরপাল্লার পথে বাস চলাচল ছিল সীমিত। পণ্যবাহী যান চলছে পুলিশ-বিজিবির পাহারায়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ২০ মিনিটের ব্যবধানে রাজশাহী, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা পথে অন্তত তিনটি বাস চলতে দেখা যায়। নামীদামি পরিবহনের বিলাসবহুল বাস চলছে না। মহাখালী টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ ও সিলেট পথের বাস চলেছে। সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনীসহ আশপাশের জেলার বাসও চলেছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কক্সবাজার পথে বাস চলেছে হাতে গোনা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, দূরপাল্লার পথে বাস চলছে। তবে যাত্রী কম। এ জন্য বেশি বাস চলছে না। গতকাল ভোর থেকে ৬৩টি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনালে এসেছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ছেড়ে যায় আরও ১৯টি লঞ্চ। ঢাকায় আসা লঞ্চগুলোতে যাত্রীর পরিমাণ বেশি ছিল। সে তুলনায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, লঞ্চে আগত যাত্রীদের বেশির ভাগই ইজতেমায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছেন। রাজপথে বোমা-আগুন আতঙ্ক: গতকাল রাজধানী ঢাকায় সংখ্যায় কম হলেও প্রায় সব পথেই বাস চলেছে। শঙ্কা ঠেলে ব্যক্তিগত গাড়ি নেমেছে প্রচুর। ফলে ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সকালে ফার্মগেটে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করা হলে অমূল্য বর্মণ (৪৫) নামের এক যাত্রী দগ্ধ হন। পেশায় রিকশাচালক অমূল্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই দুর্বৃত্ত তেজগাঁও মহিলা কলেজের কাছে ৮ নম্বর পথের বাসটির পেছনে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। হুড়মুড় করে অন্য যাত্রীরা নামতে পারলেও অমূল্য বর্মণের দুই হাত ও মুখমণ্ডল পুড়ে যায়। পরে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসকেরা জানান, অমূল্যের শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তেজগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খোরশেদ আলম বলেন, বাসে ১০-১৫ জন যাত্রী ছিল। যাত্রী নেওয়ার জন্য সেখানে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। আহত অমূল্য সাংবাদিকদের বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে রিকশা চালান। তিনিসহ পাঁচজন রিকশাচালকের বাড়ি পঞ্চগড়ে। তাঁরা গাবতলী থেকে পঞ্চগড়ের বাস ধরার জন্য যাচ্ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যায় শাহবাগে ও ডেমরার সাইনবোর্ডে দুটি যাত্রীবাহী বাসে, কাকরাইলে একটি কাভার্ড ভ্যানে এবং মধ্যবাড্ডায় একটি লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়। রাত সোয়া আটটার দিকে শনির আখড়ার রায়েরবাগে একটি বাসে, রাত সাড়ে আটটার দিকে বারিধারায় একটি বাসে এবং পৌনে নয়টার দিকে মিরপুর-১-এ একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। রাত নয়টার দিকে মিরপুরের কালশীতে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা ছুড়লে কাজী শফিউল আলম (৩৫) নামের এক যাত্রী আহত হন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া রাত ১০টার দিকে বংশালের আলু বাজারে ককটেল বিস্ফোরণে সেখানে টহলরত রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের কনস্টেবল আবুল কালামসহ দুজন আহত হন। রাত সাড়ে নয়টায় গুলশানে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে কয়েকজন যুবকের ঝটিকা মিছিলে শটগানের গুলি ছোড়ার সময় একটি স্প্লিন্টার পায়ে বিদ্ধ হয়ে আহত হন গুলশান থানার এসআই খালিদ হোসেন।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/%E0%A6%9A%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%A5%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%BE
1/10/2015
Prothom Alo
Govt leaning
27
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি
কয়লা সংকটে রামপালে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ
এর আগে কয়লা সংকটের কারণে চলতি বছর ১৪ জানুয়ারি রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ১৫ আগস্ট রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছর ১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু করে রামপাল। ২৩ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু হয়। তবে এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, কারিগরি ত্রুটি বলা হলেও মূলত কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই সংকট কেটে গেলে ফের উৎপাদনে ফিরবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের আওতায় ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখতে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে। রামপালে আমদানিকৃত কয়লার শিপিং এজেন্ট মেসার্স টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের খুলনার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক বলেন, শেষ ১৩ মার্চ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৩৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আমদানি হয়েছে। এরপর আর কয়লা আসেনি। তবে কয়লা সংকটের কারণে রামপাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ কিনা সেটি না বললেও আগামী ১০ মার্চ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আরও ৪৯ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আসার খবর জানান তিনি। এদিকে হঠাৎ করে রামপাল তাপবিদ্যুৎ বেন্দ্র হওয়ার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। ফলে মোংলা, বাগেরহাট, খুলনা, যশোরসহ পুরো দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর মোংলা অঞ্চলের আবাসিক প্রকৌশলী এইচ এম ফরহাদ হোসেন বলেন, উৎপাদনে আসার পর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে খুলনাসহ এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরাবরাহ করা হতো। কিন্তু হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তুলনামূলক মোংলায় লোডশেডিং নেই।
https://www.ittefaq.com.bd/641605/%E0%A6%95%E0%A7%9F%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A7%8E-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7
4/29/2023
Daily Ittefaq
Govt critique
28
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প: লাভ-ক্ষতির হিসাব
আমরা যখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আলোচনা জল্পনা-কল্পনা ও প্রশ্ন-উত্তরে মুখর, তখন খুবই নীরবে সরকার ভারতের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র/প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশ ও জনপদে এই প্রকল্পের ঋণাত্মক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। বাস্তবতা হলো- ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন ও বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর জন্য আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ দরকার। এই দেশে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন না থাকা অনেকটা স্বপ্নতুল্য। ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত, যা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনেকাংশে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া নদীর গতিপথ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর চক্রের উলটপালটের কারণে যথেষ্ট বৃষ্টি ও বর্ষা না হওয়া এবং ভারত-কর্তৃক বাঁধ দিয়ে দেশে নদীগুলোতে পানি প্রবাহের তারতম্যের কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনও যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ ক্রয় না করলে অথবা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করলে দেশ জ্বালানি-বিপর্যয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ ক্রয় দীর্ঘমেয়াদিভাবে লাভজনক নয়, তাই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে। কী ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন দেশের জন্য লাভজনক ও নিরাপদ? কোথায় সেই কেন্দ্র হওয়া উচিত? রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক এই সুবিধাগুলো প্রদান করবে? দুই. রামপাল প্রকল্পের জন্য বাগেরহাটে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে (অনেক পরিবারকে উচ্ছেদ করে) বালু ভরাটের মাধ্যমে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি হয় বাংলাদেশ (বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড; পিডিবি) ও ভারতের (ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশন; এনটিপিসি) মধ্যে। এই প্রকল্প হবে বাংলাদেশের পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মাত্র ৯-১৩ কিলোমিটারের মধ্যেই (যদি সরকারিভাবে দাবি হচ্ছে যে এটি সুন্দরবনের বাফারজোনের ১৪ কিলোমিটার দূরে), যা সুন্দরবনের বনাঞ্চল, পরিবেশ ও জীবসম্পদের জন্য বিপদজনক, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের টিকে থাকার জন্য আশংকাজনক। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এই প্রকল্প হবে কয়লাভিত্তিক, যার নির্মাণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরুৎসাহিত করা হয় অথবা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর আইন, যেহেতু এটি পরিবেশবান্ধব নয় এবং মানুষ ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর। যেমন, কানাডা ও ফ্রান্সে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর আইন (প্রমাণ করতে হবে যে এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, যথেষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তা অনুমোদিত হবে না) ও জনমত। তিন. প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কোনও প্রকার পরিবেশ বিপর্যয় বিষয়ক যাচাই ও গবেষণা না করে সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে সরকারি সমীক্ষাতেই (প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ সমীক্ষা) দেখা যায় যে এটি পরিবেশ, বিশেষ করে সুন্দরবনের সংরক্ষিত জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি হবে বিভিন্ন দেশ থেকে, যেহেতু সুন্দরবন-সংলগ্ন নদীপথ জাহাজ চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয় এই কয়লা ছোট ছোট নৌকা ও লঞ্চের মাধ্যমে বহন করে নিয়ে যেতে হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, এই মালামাল ওঠানামা ও চলাচলে (কয়লা-ভর্তি নৌকা ডুবি) রয়েছে কয়লা পানি ও পরিবেশে নিঃসৃত হওয়ার ঝুঁকি। ফলে আবর্জনা, তেল, জাহাজ-লঞ্চ-নৌকা চলাচলে জলদূষণ ইত্যাদিতে সুন্দরবন ও সংলগ্ন পরিবেশের জল ও বায়ু দূষণ। শুধু তাই নয়, এই চলাচলে সৃষ্ট ঢেউয়ে প্লাবিত হবে আশপাশের জমি এবং ক্ষয় হবে সুন্দরবনের ভূমি যা সুন্দরবনের গাছগাছালির জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া রয়েছে নির্মাণকাজ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর ফলে সৃষ্ট শব্দ দূষণ ও আলো-দূষণ, যা সুন্দরবন ও আশপাশের জনপদের মানুষ ও প্রাণীদের জীবনচক্রে বিশেষ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। শুধু সুন্দরবন নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের মানুষ ও জনপদের জন্য ব্যাপারটি ক্ষতিকর হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের পাশে বসবাসকারী মানুষজন দীর্ঘমেয়াদে ৩-৬ গুণ বেশি আক্রান্ত হন ক্যানসার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও নিউরোডিজেনারিটিভ স্নায়ুরোগে, যেহেতু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট বায়ু ও জল দূষণ মানুষকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সরকার বলছে যে এই প্রকল্পের ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অথচ এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে, যারা এখন ভূমি ও কর্মহীন। এই জনপদের মানুষের প্রধান জীবিকা মাছ আহরণ, সুন্দরবন থেকে গাছগাছালি মধু ইত্যাদি আহরণ ও কৃষিকাজ; বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট দূষণে দীর্ঘমেয়াদে যখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবন বিনষ্ট হবে তখন আরও অধিক মানুষ ভূমি ও জীবিকাহীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ অল্প কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের বিনিময়ে নষ্ট হচ্ছে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা। এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য লাভজনক নয়। মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে ভারতীয় এনটিপিসি ৫০ শতাংশ মালিকানা পাবে এবং পিডিবিকে এনটিপিসি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। অর্থাৎ আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমাদের পরিবেশ ও জনপদ নষ্ট করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যের কাছ থেকে আমাদের কিনতে হবে! ধারণা করা হচ্ছে- এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম হবে স্বাভাবিক বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি, অর্থাৎ পিডিবিকে লোকসানজনক ভর্তুকি দিতে হবে অথবা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তাছাড়া রয়েছে এই প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণ ও এর সুদের হারের লোকসান। এনটিপিসি যদি এই প্রকল্প ভারতের অংশের সুন্দরবনের আশপাশে করতে চাইতো তবে অনুমতি পেতো না, ভারতীয় আইন মতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জনবসতির ১৫-২৫ কিলোমিটারের মধ্যে এই ধরনের প্রকল্পের অনুমোদন নেই। তবে এনটিপিসি কেন বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে এসে ৯-১৩ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আগ্রহী। উল্লেখ্য, ভারতের মধ্যপ্রদেশে এই এনটিপিসি আরেকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন পায়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে। তাজমহলের সৌন্দর্যহানি যেন না হয় পরিবেশ দূষণের কারণে যেজন্য ভারতীয় সরকার এর আশপাশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ধরনের বিশাল কারখানা (যা পরিবেশ দূষণ করতে পারে), বিমানবন্দর স্থাপন কিংবা বিশাল প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে, আমাদের দেশে সুন্দরবন সংরক্ষণে এমন আইন তো নেই, বরং আমরা উঠেপড়ে লেগেছি সুন্দরবনের কাছাকাছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে! কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্যান্য ধরনের যেকোনও ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়ে পরিবেশে। এছাড়া রয়েছে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, ক্যাডমিয়াম, লেড, ছাই ইত্যাদি গ্যাস ও ভারী ধাতুর পরিবেশে নির্গমন, ফলে এসিড-বৃষ্টি অবধারিত, ফলে অনায়সে ধসে পড়বে সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছগাছালি ও প্রাণীদের জীবনচক্র, যেহেতু তাদের খাদ্য ও বায়ু বিষাক্ত হয়ে পড়বে। মানুষের জন্যও এই প্রভাব প্রযোজ্য। সর্বোপরি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ, বিশেষ করে সুন্দরবন ও সংলগ্ন মানুষ, জনপদ ও বনাঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর এবং ভৌগলিকভাবে বেমানান ও অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক। চার. বাংলাদেশে একেকটি প্রকল্প মানে হচ্ছে একেকটি দুর্নীতির উৎসব। পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির জন্য কানাডার আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। খটকা লাগে পিডিবি ও বাংলাদেশ সরকার এতোসব জনমত, গবেষণা, সমীক্ষা ইত্যাদি উপেক্ষা করে কার স্বার্থে কী লোভে সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এতো মরিয়া? অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি স্থাপন করতেই হবে এমন নীতিতে অটল থাকে সরকার এই প্রকল্প হতে পারতো উত্তরাঞ্চলের যেকোনও জেলায়, কিংবা অন্যান্য নদীসংলগ্ন অববাহিকায়। কেন সুন্দরবন? আমাদের গর্ব করার মতো একটি সম্পদকে কেন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া? পাঁচ. কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে সরকার নজর দিতে পারতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে। প্রথমে মাথায় আসে সৌরশক্তি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উত্তম জায়গা। এখানে বছরের পাঁচ থেকে সাত মাস মাঝারি থেকে প্রখর রোদ থাকে, ফলে বছর দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাঁধা নেই। সৌরশক্তি ও নবায়নযোগ্য অন্যান্য শক্তি (যেমন, বায়ু, জল ইত্যাদি) ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে এর সঞ্চয় ও পরিবহনে। কিন্তু আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তিতে যে অগ্রগতি হচ্ছে (যেমন, টেসলার পাওয়ারওয়াল ব্যাটারির প্রযুক্তি) তাতে এটি এখন বড় সমস্যা নয় এবং আগামী পাঁচ বছর নাগাদ প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য ও সস্তা হয়ে ঊঠবে। এছাড়া বর্তমানে সৌর প্যানেলের কর্মদক্ষতা ২৫-৪০%, কিন্তু বিজ্ঞানিরা ধারণা করছে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এই কর্মদক্ষতা ৬০-৮০% শতাংশে উন্নত হবে, ফলে সাধারণ জ্বালানি ব্যবহার (যেমন, গ্যাস, তেল ইত্যাদি) করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সস্তা, টেকসই, ও সহজলভ্য হয়ে উঠবে। এছাড়া, বাংলাদেশে যে ধরনের ভবননির্মাণ হয় (যেমন টিনের চাল, কংক্রিটের ছাদ) ইত্যাদিতে সৌর প্যানেল বসানো এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ, অনেক দেশের মতো তুষারপাত (ও বছরের ছয় থেকে আট মাস শীতকাল) ও দীর্ঘ শীতের ভয় নেই। পর্তুগাল সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নবানয়নশক্তি ব্যবহার করে ৪ দিন ধরে সারাদেশের জ্বালানি সরবরাহ মিটিয়েছে সম্প্রতি, এবং এখনও ৮৫-৯০% জ্বালানি (বিদ্যুৎ) হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে। নেদারল্যান্ডস অনেকদিন ধরে সমুদ্রে টার্বাইন স্থাপন করে সমুদ্রের ঢেউ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ স্থাপন করছে অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির পাশাপাশি, পারমাণবিক-নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র বিপর্যয়ের পরে জাপান-ও মনোযোগ দিচ্ছে এই প্রযুক্তিতে এবং তারা তাদের সমুদ্রপৃষ্ঠ কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ সামুদ্রিক সীমানা। এখানে জাপান ও নেদারল্যান্ডসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে, যা হবে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও স্থাপন করতে পারে বাংলাদেশ। রাশিয়া এই ব্যাপারে সহযোগিতার ও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। যদিও ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা হিসেবে এই ব্যাপারে বাংলাদেশকে সর্তক হতে হবে তারপরও সাম্প্রতিককালে রাশিয়া ও জাপান পোর্টেবল পারমাণবিক চুল্লি বিষয়ক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে অনেক, এইসব চুল্লি সহজে বহনযোগ্য, সহজে শাট-ডাউন করে দেওয়া যায় বিপর্যয়ের সময়ে এবং তেজস্ক্রিয়-বর্জ্যের পরিমাণ কম। ফ্রান্সের বিদ্যুৎ চাহিদার ৭১% আসে পারমাণবিক উৎস থেকে এবং ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে (প্রায় ৩০ বছর ধরে) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে কোনও বড় দুর্ঘটনা ছাড়াই, পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের অহেতুক ভীতি আছে, এই যা। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কাঠামোগত স্থাপনার জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা। আজকে যে প্রযুক্তি লাভজনক নাও মনে হতে পারে (স্থাপনের খরচের কথা চিন্তা করে) দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে তা অনেক লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮০ সালে দুটো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনের জন্য কাজে লাগলেও পরে স্থগিত করে লাভ হবে না ভেবে, কিন্তু সম্প্রতি এই কাজ শেষ করতে যাচ্ছে যেহেতু এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কমে গেছে। সুতরাং বাংলাদেশকে বরণ করে নিতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (তা যেখানেই হোক না কেনো) পরিবেশের জন্য বাজে, মানুষ ও প্রাণীদের জন্য দুর্বিষহ। ছয়. সরকার যেহেতু চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে আমাদের লড়তে হবে প্রতিবাদ করতে হবে এই চুক্তি বাতিলের জন্য। এটি সহজ হবে না, কিন্তু অকল্পনীয়ও নয়। কারণ, আমরা এর আগেও অনেক রাজনৈতিক ক্ষতিকে থামিয়ে দিতে পেরেছি। যদি সবকিছু উপেক্ষা করে সরকার এই প্রকল্প চালু রাখতেই চায় আমাদের উচিত কিভাবে ক্ষতি মিনিমাইজ করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া (জিরো নির্গমন, গ্যাস ও বিষাক্ত ধাতুর নির্গমনের জন্য ফিল্টার ব্যবহার, পানি ও বায়ু দূষণ না করার জন্য চাপ দেওয়া ও নজরের ব্যবস্থা করা, সার্বিক তদারকি করা)। তা না হলে আমাদের জাতীয় প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ কেবলই হবে স্মৃতি, যেনো ‘পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।’
https://www.banglatribune.com/columns/121999/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A7%8E-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AD-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC
7/15/2016
Bangla Tribune
Govt critique
29
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশই ক্যাপাসিটি চার্জ
বিপরীতে কেন্দ্রটি আয় করে ৫ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনার্জি চার্জ (জ্বালানি ও আনুষঙ্গিক) হিসেবে পায় ২ হাজার ১৪২ কোটি টাকা, আর ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে আসে ৩ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ওই অর্থবছরে যে আয় করেছে তার প্রায় ৬৪ শতাংশই এসেছে ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) পরিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্বাভাবিক উৎপাদনে থাকলে ক্যাপাসিটি চার্জ কোনোভাবেই এত বেশি হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কেন্দ্রটির প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যাচাইসহ আর্থিক নানা অসংগতি খতিয়ে দেখার আহ্বান তাদের। কেননা ক্যাপাসিটি চার্জ এখন বিদ্যুৎ খাতের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে বিতর্ক। বিশেষ করে সুন্দরবনের কোলঘেঁষে এ ধরনের প্রকল্প নির্মাণ পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে পরিবেশবাদীদের বড় রকমের আশঙ্কা। সেই সঙ্গে এর অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয়, ব্যবহৃত কয়লার দামসহ নানা বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ভারতকে আর্থিকভাবে সুবিধা দেয়ার অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিপিডিবিকে বেশি দামেই বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। উচ্চমাত্রায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে পিডিবি কী পরিমাণ আর্থিকভাবে পঙ্গু হচ্ছে সেটি আমরা দেখেছি। এর পরও রামপালের মতো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে যাচ্ছে।’ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেয়া এ প্রকল্প অলাভজনক ও অর্থনৈতিকভাবে অগুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে শুরু থেকেই পরিবেশগত আপত্তি রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রটির ব্যয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক কিছুতেই অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ চুক্তিতে আসলে কী আছে সেটিও আমরা জানি না। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর্থিকভাবে কোনো সুবিধাই দিচ্ছে না বাংলাদেশকে। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে এ কেন্দ্র বাতিলের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’ বিআইএফপিসিএলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গত অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি ইউনিট (৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে আয় করেছে ১৪ টাকা ৮৯ পয়সা। আর প্রতি ইউনিটের বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ এসেছে ৯ টাকা ৪৯ পয়সার মতো। সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই পেয়েছে ৩ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই সময় মোট ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা নিট আয় করে কেন্দ্রটি, যার মধ্যে এনার্জি চার্জ হিসেবে পায় ১ হাজার ৫ কোটি টাকা আর ক্যাপাসিটি চার্জ ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ না হওয়ায় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চলতি অর্থবছরের আর্থিক হিসাব এখনো প্রকাশ হয়নি। এ সময় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ কিংবা ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে তারও তাৎক্ষণিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে। বিদ্যুৎ বিক্রি ও ক্যাপাসিটি চার্জের আদর্শিক হিসাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্ল্যাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিপুল বিনিয়োগে কেন্দ্র নির্মাণ করে তাতে চাহিদা অনুযায়ী যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন না করা যায় কিংবা ক্যাপাসিটি চার্জ অন্য কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি হয়, তাহলে এ কেন্দ্র বসানোর কোনো অর্থই নেই। এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিপিডিবির আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতি মাসে গড়ে ৭৫ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। সে হিসাবে বছরে গড়ে ৯০০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা। অথচ রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন করছে তার অর্ধেকেরও কম, ৩৪৫ কোটি ইউনিট। ওই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেছে গত বছরের ১২ মার্চ। রামপালের মতো একই সক্ষমতা পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পায়রা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে মোট ৭৫৪ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট। কোম্পানিটি ওই অর্থবছরে আয় করে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যার মধ্যে এনার্জি চার্জ থেকে আসে ৪ হাজার ৮৪২ কোটি এবং ক্যাপাসিটি চার্জ ৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। বিসিপিসিএলের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পায়রা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করেছে ১৩ টাকা ১৪ পয়সা, যেখানে প্রতি ইউনিটে কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৬ টাকা ৫৪ পয়সা। পায়রার প্রতি ইউনিট জেনারেশন ব্যয় ১০ টাকা ৪৩ পয়সা। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিপুল সক্ষমতা বিবেচনায় ক্যাপাসিটি চার্জ অনেক বেশি পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় বেশি। এমনকি নানান ত্রুটি ও কয়লা সংকটের কারণে কেন্দ্রটি বারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। বিশেষ করে এটি চালু হওয়ার পর ২০২৩ সালে যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লা সংকটের কারণে সাত দফায় বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘন ঘন বন্ধ হলে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে বড় ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রসংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিআইএফপিসিএল ও বিপিডিবির আয়-ব্যয়ের হিসাবে পার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে এসব মতপার্থক্য নিয়ে নির্দেশনা ও সংশোধনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বিআইএফপিসিএলকে।’ রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় সময়ই নানা কারণে বসে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপরীতে বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় বলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিপিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান। বণিক বার্তাকে তিনি আরো বলেন, ‘কখনো কেন্দ্রের জ্বালানি না থাকার কারণেও বসিয়ে রাখতে হয়। গত অর্থবছরে জ্বালানি সংকটের কারণে কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হয়েছিল।’ যৌথভাবে নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সমান অংশীদারত্ব রয়েছে বিপিডিবি ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি)। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (তৎকালীন প্রতি ডলারের বিনিয়ম হার ৮০ টাকা ধরে)। তবে বিআইএফপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় ২৩ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইকুইটি ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ইসিএ ঋণের অংশ ১৭ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্বাভাবিকের চেয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি হওয়ার প্রধান কারণ মূলত কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো সাধারণত ৮৫ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে সারা বছর কেন্দ্র চলবে এমন শর্তেই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়া হয়। সাধারণভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সার্বক্ষণিক চালু থাকলে এনার্জি কম্পোনেন্টের চেয়ে কোনোভাবেই ক্যাপাসিটি কম্পোনেন্ট বেশি হওয়ার কথা নয়।’ ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে ২০১০ সালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে বিআইএফপিসিএল ও বিপিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই হয়। ওই বছরই কেন্দ্রটির জন্য জমি অধিগ্রহণ, জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রায় নয় বছর পর ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। রামপালের ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ সম্পৃক্ত। এটি শুধু রামপালের ক্ষেত্রে নয়। তবে ওদের বিদ্যুতের দামটা কয়লাভিত্তিক অন্য কেন্দ্রের চেয়ে বেশি। মাতারবাড়ীতে বিদ্যুতের বেঞ্চমার্ক করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। রামপালের বিদ্যুৎ পড়ছে ১৩-১৪ টাকা (ইউনিটপ্রতি)। আমরা এ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ, এনার্জি চার্জসহ নানা বিষয় রিভিউ করছি। এগুলো সংশোধন করা হবে।’
https://bonikbarta.com/bangladesh/CTY5pGDeDeYGWiW9
6/29/2025
Banik Barta
Govt critique
30
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের খুটির জোর এতোদিন পাওয়া যায়নি। এবার আন্দোলনের খুটির জোর পাওয়া গেছে। বিএনপি নেত্রী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসেছেন। আমার মনে হয় এটার মধ্যে ষড়যন্ত্র আছে। তাহলে এতোদিন বিএনপি নেত্রী বিরোধীতা করেননি কেন। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করত। বিরোধীতাকারীরা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে নাকি সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আসলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। রামপাল বিদ‌্যুৎকেন্দ্র যে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না_তা জোরালোভাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প সরানোর দাবি প্রত‌্যাখ‌্যান করেন। প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব‌্যে বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে, আমি সেগুলো করব। আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোনো কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে। শেখ হাসিনা বলেন, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে সর্বাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে এতে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং এই প্রকল্প থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে; যা এলাকার মানুষের উন্নয়নে ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এখানে যে কয়লা ব্যবহার করা হবে তার গুণগত মান অনেক উন্নত। এসব কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। রামপাল নিয়ে আন্দোলনে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, এই যে শত শত মানুষ একখানে করে রোডমার্চ করে। বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের জন‌্য ফুয়েল লাগে, উনারা ফুয়েল কোথা থেকে পাচ্ছেন? পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭৭টি সংগঠন ভারতের এক্সিম ব্যাংককে বলেছে, রামপালে অর্থায়ন না করতে। এ প্রসঙ্গ জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ অর্থ না দিলে নিজেদের টাকায় করা হবে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজও নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, সেখানকার জমি তিন ফসলি। খালেদা জিয়ার দেওয়া অন্যান্য তথ্য যেমন ঘনত্ব, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা, জমির পরিমাণ সবই ভুল। তিনি কোথা থেকে, কার কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন, তা বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনে আছে, বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রকল্প নির্মাণ করা যাবে না। আমরা সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। তবুও বলা হয়, ভারত কেন ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে তাদের দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়নি। আমি বলবো, ভারতের মতো বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের তুলনা করা ঠিক না। এখানকার লোকের বিদ্যুতের চাহিদা এবং রিসোর্স অনেক কম। প্রধানমন্ত্রীর পুরো বক্তব্য ১২ ভাদ্র ১৪২৩ ২৭ আগস্ট ২০১৬ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম এবং শুভ অপরাহ্ন। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আর গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে বিচার করলে কয়লা-ই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। তাই উন্নত দেশগুলো যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। বাংলাদেশে কয়লা দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি (১.৩৩%)। দেশের অব্যাহত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ এবং যৌক্তিক মূল্যে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য সরকার দেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রামপালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দেশের উন্নয়ন-বিরোধী একটি মহল বেশ কিছুদিন যাবত ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য এবং তথ্য দিয়ে এ প্রকল্প সম্পর্কে মানুষের মনে এক ধরণের নেতিবাচক মনোভাব এবং ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে গত ২৪ আগস্ট থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এতদিন অন্তরালে থেকে ইন্ধন যোগালেও, ঐদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্স করে এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে সামিল হয়েছেন। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে বিএনপি’র এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে যোগ দেওয়ার পিছনে গভীর কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। তা নাহলে এ কেন্দ্রটির কাজ শুরু করার এতদিন পর এ ধরণের প্রতিক্রিয়া কেন আসবে? এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করত। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতাকারীরা বলতে চাচ্ছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে নাকি সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আজকে আমি আপনাদের সামনে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিব, বাস্তবায়নাধীন রামপাল-বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, প্রথমেই আমাদের ঐক্যমতে আসতে হবে আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কি না। আমার মনে হয় না, দেশের কোন নাগরিকই এক মিনিট বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় থাকতে চাইবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকার এসেছে, সরকার গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন টেকসই পরিকল্পনা কেউ গ্রহণ করেনি। আর আমাদের প্রাক্তন বিরোধীদল বিএনপি’র তো কোন কথাই নেই। ১৯৯১ সালের পর দু’দুবার সরকারে থেকেছে, কিন্তু এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। বরং ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে শুধুমাত্র খাম্বা কেনা-বেচার ব্যবসা করেছে। খাম্বা বেচাকেনায় নাকি লাভের পরিমাণ বেশি ছিল। ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। ৫ বছর পর দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৩০০ মেগাওয়াট। এরপর আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ২ বছর সামরিক-বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা পেলাম মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সাত বছরে ১১০০ মেগাওয়াট নেই। চারদিকে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, অসহ্য লোডশেডিং। কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ। বিদ্যুতের অভাবে নতুন কলকারখানা স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেই। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া চাপাইনওয়াবগঞ্জে বিদ্যুতের জন্য আন্দোলনরত গ্রামবাসীর উপর গুলি চালিয়ে ১৪ জন মানুষকে হত্যা করে। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা ধরে স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী পথনকশা তৈরি করি। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় আমরা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেই। কারণ একটি বড় প্লান্ট তৈরি করতে ৯/১০ বছর সময় লেগে যায়। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সে সময়ও একদল মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। বিগত সাড়ে সাত বছরে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। ১০৫টির মত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৭৮ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ১ কোটি ১২ লাখ নতুন গ্রাহকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কুইক-রেন্টাল কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় কয়লার ব্যবহার ছাড়া কোন উপায় নেই। অন্য বিকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমরা সেদিকেও অগ্রসর হচ্ছি। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা যখন স্থায়ী এবং টেকসই পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের দিকে যাচ্ছি, আবারও সেই মহল এর বিরোধিতা শুরু করেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজন সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। সেজন্য কয়লা খনির কাছাকাছি অথবা সমুদ্র উপকূল বা গভীরতা-সম্পন্ন নদীর তীরে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আরেকটি বিবেচ্য দিক হচ্ছে যতদূর সম্ভব কম সংখ্যক মানুষের স্থানান্তর করা। আমরা প্রাথমিকভাবে যেসব কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি সেগুলোর স্থাপিত হবে রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা, আনোয়ারা, খুলনা এবং মুন্সিগঞ্জে। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন এবং সিঙ্গাপুর এসব বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা করছে। বিএনপি নেত্রীর বৃহস্পতিবারের বক্তব্য অনেকটা ‘মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি’-এর মত। ১৯৯৭ সালে আমাদের সরকারের উদ্যোগে সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করি। আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন আছে। আমাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের বিপরীত দিকে। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থও যদি নিঃসরণ হয়, তবে তা সুন্দরবনের দিকে নয়, উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে। বিএনপি নেত্রী তাঁর পুরো বক্তব্যে উদ্ভট, বানোয়াট এবং অসত্য উপাত্ত পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। আমি কতগুলো উদাহরণ দিচ্ছি: # উনি বলেছেন ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে। আসলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জায়গা নেওয়া হয়েছে ৯১৫ একর। এর মধ্যে ৪৬৫ একরে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে। বাদ বাকী জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে এবং সবুজায়ন (Green Belt) করা হবে। # তিনি বলেছেন, যে স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে নাকি জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৮২ জন। আট হাজারের বেশি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি তিন ফসলী। প্রকৃতপক্ষে এলাকাটিতে মানুষের কোন স্থায়ী বসতি ছিল না। কোন বসতি উচ্ছেদ করা হয়নি। নীচু, পতিত জমি মাটিভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। # তিনি বলেছেন: রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পশুর নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় ১৪৪ কিউসেক পানি নেওয়া হবে। ব্যবহারের পর সেই পানি নাকি পরিবশে দূষণ করবে। তাঁর এই বক্তব্য সঠিক নয়। পশুর নদীর পানিতে লবন আছে। সেই পানি শোধন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। ব্যবহৃত পানি শীতল করে পুনরায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। কোন দূষিত বা গরম পানি পশুর নদীতে ফেলা হবে না। যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তা অত্যন্ত নগণ্য। শুষ্ক মওসুমে পশুর নদীর প্রবাহের মাত্র (০.০৫%) দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ভাগের এক ভাগ পানির প্রয়োজন হবে। # এই পশুর নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে। পানি চলাচল বাড়বে। নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে মংলা বন্দরে নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে। আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। # উনি ভারতে বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আইনী বাধার কথা বলেছেন। ভারত একটি বিশাল আয়তনের দেশ। বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশের সঙ্গে তুলনা সঠিক নয়। # কয়লা পরিবহনের সময় সুন্দরবন এলাকায় শব্দ দূষণ, আলো দূষণ ইত্যাদির কথা তুলে ধরেছেন। আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সজাগ। শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছি। গভীর সমুদ্র হতে কাভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহৃত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শব্দ দুষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৪ কিলোমিটার দূরে শব্দ যাবেনা। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। # উনি আমেরিকার টেক্সাসে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের কথা বলেছেন। কিন্তু কত সংখ্যক কয়লাভিত্তিক প্লান্ট চালু আছে তা কি তাঁর জানা আছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। সেখানে ৭ হাজারের বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু আছে। # তিনি বলেছেন বিদ্যুতের দাম নাকি ৮.৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অসত্য কথন। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে কয়লার দামের উপর ভিত্তি করে। # ভারতের NTPCএবং আমাদের পিডিবি’র সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। উভয় সংস্থা ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করবে। বাকী ৭০ শতাংশ দিবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এই ৭০ শতাংশ অর্থায়নের ব্যাংক গ্যারান্টর থাকবে বাংলাদেশ। অজ্ঞাতবশতঃ কেউ কেউ এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। গ্যারান্টর হওয়া মানে তো বিনিয়োগ করা নয়। কোন কারণে যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে। সে রকম হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। একটা ব্যক্তিগত লোন নিতে গেলেও তো গ্যারান্টর লাগে। আর স্থাপনা যেহেতু বাংলাদেশে, গ্যারান্টর হতে তো কোন দোষ দেখি না। বাংলাদেশের স্থাপনায় ভারত কেন গ্যারান্টর হতে যাবে? # রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য আমরা বিশ্বের প্রথিতযশা ফার্ম জার্মানীর ফিশনার (Fichtner) গ্রুপকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। কাজেই কাজের মান নিয়ে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। আমরা এ বিষয়ে কোন আপোষ করব না। # তিনি বলেছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করবে। এ কথা মোটেই সত্য নয়। বরং, এটি নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না। এলাকার লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে। প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, একটা কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে উন্নত প্রযুক্তি অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছে। রামপালে আমরা আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছি। একটি সাধারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮%, সেখানে আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্টের দক্ষতা ৪২-৪৩%। অর্থাৎ একই পরিমাণ কয়লা পুড়িয়ে আমরা দেড়গুণ বিদ্যুৎ পাব। সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা এখানে ব্যবহার করা হবে। কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। দূষণ প্রতিরোধে সর্বাধুনিক যত ধরণের প্রযুক্তি পাওয়া যায় সেগুলো আমরা ব্যবহার নিশ্চিত করব। ফ্লু গ্যাস টেম্পারেচার, নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদির নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম (CEMS) থাকবে। যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি বসানো হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইএসপি (Electro-static Precipitator) থাকবে যা উদগীরণকৃত ফ্লাই অ্যাসের ৯৯.৯৯ শতাংশ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। এই ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে এফজিডি (Flue gas desulphurization) স্থাপনের ফলে ৯৬ শতাংশ সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই সালফার গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনীর উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য যে সমস্ত গ্যাস সামান্য পরিমাণে বের হবে সেগুলোর ঘনত্ব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকবে। যারা বলেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি করে, তাদের একটু বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে আসতে বলছি। বড়পুকুরিয়া একটি সাব-ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট। সাব-ক্রিটিক্যাল এবং আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সাব-ক্রিটিক্যালের তুলনায় সুপারক্রিটিক্যালে ৪০ শতাংশ কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টে যে কোন দূষণের মাত্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করি ২০০০ সালে। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করেনি। তখন পরিবেশের জন্য তো মায়াকান্না করেননি। বরং ফুলবাড়িতে ওপেনপিট কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মানুষের উপর গুলি করে আধা ডজন মানুষ হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া। সাব-ক্রিটিক্যাল প্লান্ট ব্যবহার করলেও ঘনবসতি এবং সবুজে ঘেরা বড়পুকুরিয়া এলাকায় বিগত দশ বছরে পরিবেশ এবং জনজীবনে কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি। উল্টো সেখানকার জমি আরও ঊর্বর হয়েছে। ফসল ভালো হচ্ছে। (ছবি) বিশ্বের বহুদেশে বনভূমির মাঝখানে, শহরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আমি কিছু দেশের বনভূমির কাছাকাছি এবং ঘনবসতি এলাকায় স্থাপিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ এবং ছবি আপনাদের দেখাতে চাই। -যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া কোল পাওয়ার প্লান্ট, ক্ষমতা ১৩০০ মেগাওয়াট। ন্যাশনাল পার্কের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মোট বিদ্যুতের ৯৪ শতাংশ কয়লা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। -কুয়াং নিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভিয়েতনাম, ১২০০ মে.ওয়াট। হ্যালং বে (উইনেস্কো ঐতিহ্য) এর মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে। -ইসোগো বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইওকোহোমা, জাপান, ১২০০ মেগাওয়াট। আবাসিক এলাকার সন্নিকটে। -তাইচুং বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাইওয়ান, ৫৫০০ মেগাওয়াট। শহরের প্রাণকেন্দ্রে। -জলিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জার্মানি, ৫০০ মেগাওয়াট। অ্যামপার নাটুরা ২০০০ এর বিশেষায়িত সংরক্ষিত এলাকা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। -হেইলব্রোন হ্যাফেন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জার্মানি, ৭৫০ মেগাওয়াট। শহর সংলগ্ন এবং নদী তীরবর্তী। -ক্রাফটওয়ার্ক-মুরবার্গ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জার্মানি, ১৬০০ মেগাওয়াট। শহর সংলগ্ন এবং নদীর তীরে। -রেইনহফেন ড্যাম্ফক্রাফট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জার্মানি, ১৪৬২ মেগাওয়াট। শহর সংলগ্ন এবং নদীর তীরবর্তী। এরকম শত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ দেওয়া যাবে যেগুলো বনাঞ্চলে বা ঘন বসতি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। কোন দেশে কেউ এসব নিয়ে এমন হৈচৈ করে না। কিন্তু আমাদের দেশের জ্ঞানপাপীরা হৈচৈ করছে। এরা কারা? এরা নিজেরা ভালো কিছু করতে পারে না, আবার কেউ ভালো কিছু করতে গেলে তাতে বাধা দেয়। রামপালে সুন্দরবনের কথা বলে বিরোধিতা করছে, কিন্তু আনোয়ারায় সে সুন্দরবন নেই। কিন্তু সেখানেও বিরোধিতা করছে কেন? এদের কথা শুনতে গেলে তো কোন উন্নয়ন কাজেই হাতে নেওয়া যাবে না। কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট যদি এতই দূষণ সৃষ্টি করত, তাহলে জাপানের মত দেশ নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিত না। ক’দিন আগে জাপান সরকার ৭০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। চীনে প্রায় ৩০০ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজ চলছে। আরেকটা কথা বলি। এই যে শত শত মানুষ জড় করে রোডমার্চ করে, সমাবেশ করে, এগুলো করতে টাকা কে দেয়? পকেটের পয়সা থেকে কেউ নিশ্চয়ই খরচ করে না। এরা বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির দাবার ঘুটি। তাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করে। এসি-লাগানো বাড়িতে থেকে, এসি গাড়িতে ঘুরে মানুষকে হয়ত সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু মানুষ ঠিকই এসব মতলববাজদের এজেন্ডা বুঝতে পারে। আপনারাই দেশপ্রেমিক, সুন্দরবন প্রেমিক; আপনারাই শুধু পরিবেশ বোঝেন আর আমরা কিছুই বুঝি না! একটা কথা বলে রাখি, যদি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দবনের সামান্যতম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকত, তাহলে আমিই হতাম প্রথম ব্যক্তি যে এটা স্থাপনের বিরোধিতা করত। সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য আমিই প্রথম ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে যে সুন্দরবন আমরা দেখছি ১০০ বছর আগেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল। ছোট হতে হতে আজকে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সুন্দরবন কি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে? বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা দূষণ ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কোন কারণ সুদূর আমেরিকায় ঘটলে, তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। তাহলে আমেরিকা, জাপান, চীন, ভারতকে বলুন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে। সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ মরে গেছে। মানুষ গাছপালা কেটে সাবাড় করেছে। মানুষের যাতে সুন্দরবনের উপর নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য আমরা তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। সুন্দরবনে নতুন করে বৃক্ষরোপনের ব্যবস্থা করেছি। গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবনের আয়তন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছের ঘনত্ব বাড়ছে। উপকূল এলাকায় সবুজবেস্টনী সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন জেগে উঠা চরে বৃক্ষ রোপন করে সেগুলোর ভূমিক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমরা আইন তৈরি করেছি। বাঘ সংরক্ষণে টাইগার অ্যাকশন প্লান গ্রহণ করেছি। আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দেশে বনভূমির পরিমাণ ২০০৫-০৬ সালের ৭-৮ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ সালে ১৭.০৮ শতাংশ হয়েছে। পরিবশে সংরক্ষণে আধা ডজনের বেশি আইন করেছি। পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য আমরা সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন এনেছি। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে ১৮ ক নামে একটি নতুন সংযোজন করেছি। গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়ায় মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিএনপি সরকার এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করি। ফলে ঐ অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। আমরা গড়াই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করেছিলাম ২০০১ সালে। বিএনপি এসে তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার তা শুরু করেছি। পরিবেশের নাজুকতা সম্পর্কে সামান্য হলেও আমার যেমন ধারণা আছে, তেমনি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষমতার উপরও আমার পূর্ণ আস্থা আছে। প্রযুক্তিকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। আগে কলেরায়, কালাজ্বরে, গুটি বসন্তে হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। মানুষের আবিষ্কৃত ওষুধে জীবনহানি বন্ধ হয়েছে। কয়লা পোড়ালে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ হবে- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা এমন সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেগুলো ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে পরিবেশে ছড়াতে দিবে না। উল্টো সেগুলোর কোন কোনটিকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে মানুষের উপকারি বস্তুতে পরিণত করা হবে। প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। বাংলাদেশ কেন এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ কেন স্বনির্ভর হবে, মানুষ কেন ভালো থাকবে - এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। এজন্যই একটা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। যারা নিজেদের পরিবেশবাদী হিসেবে জাহির করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন: পরিবেশ সংরক্ষণে একটা গাছ লাগিয়েছেন জীবনে? নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, যা করছেন সেগুলো কি মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে? ভুল, মনগড়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। আপনারা যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করছেন, সেগুলো ৬০’র দশকের। বিশ্ব অনেক বদলে গেছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। এসব মান্ধাতা আমলের তথ্য দিয়ে জনগণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ২০১৩-১৫ সালে পেট্রোল বোমা মেরে একশোর বেশি মানুষ হত্যা করে, জঙ্গিদের মদদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ মেরে, হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে, ফায়দা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেত্রী এবার ভাবছেন, একটা মওকা পাওয়া গেছে! রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন। জনগণকে অত বোকা ভাববেন না। জনগণ আপনার দুরভিসন্ধি বোঝে। একটা নন-ইস্যুকে ইস্যু করে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে চায়, তাহলে তা কঠোর হাতে দমন করতে আমরা পিছ পা হব না। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে, আমি সেগুলো করবই। দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ, আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোন কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না, যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াদের অপপ্রচারে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। সবাইকে ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
https://samakal.com/bangladesh/article/1608233424/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A7%8E%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80
8/27/2016
Samakal
Govt leaning
31
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি
রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে কাল ঢাকায় মহাসমাবেশ
রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প বাতিল ও সাত দফা দাবিতে ডাকা মহাসমাবেশে দেশবাসীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। কাল শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ হবে। মহাসমাবেশ সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় কমিটি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার বিকেলে দেশের সাতটি বিভাগে সমাবেশ হবে। আগামীকালের মহাসমাবেশ হবে শুধু রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, বেলা দুইটায়। বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে জাতীয় কমিটিসহ পরিবেশবাদীদের অনেকেই। তারা বলছে, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের পরিবেশের ক্ষতি হবে। আর সরকার বলছে, এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। মহাসমাবেশের কর্মসূচির বিষয়ে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ মানুষ সুন্দরবন রক্ষার এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। বিভিন্ন জরিপেও তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করি জনসমর্থনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকার আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।’ জাতীয় কমিটির মহাসমাবেশ সফল করতে গতকাল মশাল মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ। সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে তা গুলিস্তান থেকে দৈনিক বাংলা মোড় দিয়ে পল্টনে এসে শেষ হয়। ছাত্র ইউনিয়নের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল দেশব্যাপী সুন্দরবন সপ্তাহের সমাপনী কর্মসূচি হিসেবে সিলেট, কক্সবাজার, লালমনিরহাট, জামালপুর, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। জাতীয় কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, আজ সকাল থেকে খুলনা বিভাগের চারারহাট ও বাগেরহাটের রামপাল, রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা, বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, রাজশাহী বিভাগের কাটঘাট, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলা থেকে চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি শুরু হবে। বিকেলে বিভাগীয় সদরগুলোতে সমাবেশ হবে।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6
11/24/2016
Prothom Alo
Neutral
32
টাঙ্গাইল ইউনিয়ন পৌর সংঘর্ষ
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদে নির্বাচিত হলেন যারা
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ফজলুর রহমান খান ফারুক। এ কারণে এ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৯জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে যারা নির্বাচিত হলেন- চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়)। ১ নম্বর (টাঙ্গাইল পৌরসভা, করটিয়া, ঘারিন্দা ও গালা ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আহমদ সুমন মজিদ (ঘুড়ি)। প্রাপ্ত ভোট ২৮। ২ নম্বর (মগড়া, বাঘিল, দাইন্যা, পোড়াবাড়ী, ছিলিমপুর, কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী এবং মাহমুদনগর ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আমিরুল ইসলাম খান (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৬৮। ৩ নম্বর (আটিয়া, দেলদুয়ার, ডুবাইল, ফাজিলহাটি, লাউহাটি, এলাসিন, দেউলী, পাথরাইল, ভারড়া ও সহবতপুরে ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে হামিম কায়েছ বিপ্লব (টিউবওয়েল)। প্রাপ্ত ভোট ৫২। ৪ নম্বর (ভাদ্রা, দপ্তিয়র, ধুবড়িয়া, গয়হাটা, মাহমুদনগর, বেকড়া আটগ্রাম, সলিমাবাদ, নাগরপুর সদর, মোকনা ও পাকুটিয়া ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ কামাল হোসেন (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৪৫। ৫ নম্বর (আনাইতারা, বানাইল, ভাওড়া, ভাতগ্রাম, ফতেপুর, জামুর্কী, লতিফপুর, মহেড়া, উয়ার্শি, কাঞ্চনপুর ও হাবলা ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে মোস্তফা হোসেন চৌধুরী (টিউবওয়েল)। প্রাপ্ত ভোট ৫৫। ৬ নম্বর (মির্জাপুর, বহুরিয়া, বাঁশতৈল, গোড়াই, তরফপুর, আজগানা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে ছাইদুর রহমান খান (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৫৯। ৭ নম্বর (বাসাইল পৌরসভা, বাসাইল, কাশিল, ফুলকী, কাউলজানী, যাদবপুর, দাড়িয়াপুর, সখিপুর, গজারিয়া ও বহুরিয়া ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খন্দকার কামরুল হাসান (হাতি)। প্রাপ্ত ভোট ৬৭। ৮ নম্বর (বল্লা, নাগবাড়ী, পারখী, বীরবাসিন্দা, পাইকড়া, সহদেবপুর, কোকডহরা, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান ও কালিয়া ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া বাদল (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৭৫। ৯ নম্বর (কালিহাতী, এলেঙ্গা পৌরসভা, বাংড়া, নারান্দিয়া, সল্লা, দশকিয়া, দূর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে লিয়াকত আলী (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৯২। ১০ নম্বর (ভূঞাপুর পৌরসভা, অলোয়া, গোবিন্দাসী, নিকরাইল, অর্জুনা, ফলদা, গাবসারা, লোকেরপাড়া ও আনেহলা ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভোলা (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৬৮। ১১ নম্বর (ঘাটাইল পৌরসভা, ঘাটাইল, দেউলাবাড়ি, দেওপাড়া, দিঘলকান্দি, দিগড়, জামুরিয়া, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শাহানশাহ সিদ্দিকী মিন্টু (তালা)। প্রাপ্ত ভোট ৬৭। ১২ নম্বর (রসুলপুর, লক্ষিন্দর, সন্ধানপুর, সংগ্রামপুর, আলোকদিয়া, আউশনারা, কুড়ালিয়া ও মহিষমারা ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে সুলতান মাহমুদ (হাতি)। প্রাপ্ত ভোট ৩৫। ১৩ নম্বর (অরণখোলা, শোলাকুড়ী, ফুলবাগচালা, গোলাবাড়ি, কুড়াগাছা, বেরীবাইদ, মধুপুর ও মধুপুর পৌরসভা) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত খন্দকার শফিউদ্দিন মনি। ১৪ নম্বর (ধনবাড়ী পৌরসভা, বানিয়াজান, ধোপাখালী, বীরতারা, বলিভদ্র, যদুনাথপুর, পাইস্কা, মুশুদ্দি ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বদিউল আলম মঞ্জু। ১৫ নম্বর (গোপালপুর পৌরসভা, ধোপাকান্দি, হাদিরা, ঝাওয়াইল, নগদাশিমলা, হেমনগর, আলমনগর ও মির্জাপুর ইউনিয়ন) সাধারণ ওয়ার্ডে আব্দুল কাদের তালুকদার (হাতি)। প্রাপ্ত ভোট ৫৯। এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বিজয়ীরা হলেন- ১, ২, ৩ নং (টাঙ্গাইল পৌরসভা, করটিয়া, ঘারিন্দা ও গালা ইউনিয়ন। মগড়া, বাঘিল, দাইন্যা, পোড়াবাড়ী, ছিলিমপুর, কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মাহমুদনগর আটিয়া, দেলদুয়ার, ডুবাইল, ফাজিলহাটি, লাউহাটি, এলাসিন, দেউলী, পাথরাইল, ভারড়া ও সহবতপুরে ইউনিয়ন) ওয়ার্ডে নাসিমা আক্তার (টেবিল ঘড়ি)। প্রাপ্ত ভোট ১৪৫। ৪, ৫, ৬ নং (ভাদ্রা, দপ্তিয়র, ধুবড়িয়া, গয়হাটা, মাহমুদনগর, বেকড়া আটগ্রাম, সলিমাবাদ, নাগরপুর সদর, মোকনা, পাকুটিয়া ইউনিয়ন। আনাইতারা, বানাইল, ভাওড়া, ভাতগ্রাম, ফতেপুর, জামুর্কী, লতিফপুর, মহেড়া, উয়ার্শি, কাঞ্চনপুর, হাবলা ইউনিয়ন। মির্জাপুর, বহুরিয়া, বাঁশতৈল, গোড়াই, তরফপুর, আজগানা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়ন) ওয়ার্ডে ছাইদা ইয়াসমিন (দোয়াত কলম)। প্রাপ্ত ভোট ২১৮। ৭, ৮, ৯ নং (বাসাইল পৌরসভা, বাসাইল, কাশিল, ফুলকী, কাউলজানী, যাদবপুর, দাড়িয়াপুর, সখিপুর, গজারিয়া, বহুরিয়া ইউনিয়ন। বল্লা, নাগবাড়ী, পারখী, বীরবাসিন্দা, পাইকড়া, সহদেবপুর, কোকডহরা, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান, কালিয়া ইউনিয়ন। কালিহাতী, এলেঙ্গা পৌরসভা, বাংড়া, নারান্দিয়া, সল্লা, দশকিয়া, দূর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন) ওয়ার্ডে রুমা খান (হরিণ)। প্রাপ্ত ভোট ২০৩। ১০, ১১, ১২ নং (ভূঞাপুর পৌরসভা, অলোয়া, গোবিন্দাসী, নিকরাইল, অর্জুনা, ফলদা, গাবসারা, লোকেরপাড়া, আনেহলা ইউনিয়ন। ঘাটাইল পৌরসভা, ঘাটাইল, দেউলাবাড়ি, দেওপাড়া, দিঘলকান্দি, দিগড়, জামুরিয়া, ধলাপাড়া, সাগরদিঘী ইউনিয়ন। রসুলপুর, লক্ষিন্দর, সন্ধানপুর, সংগ্রামপুর, আলোকদিয়া, আউশনারা, কুড়ালিয়া ও মহিষমারা ইউনিয়ন) ওয়ার্ডে রাজিয়া হোসেন (টেবিল ঘড়ি)। প্রাপ্ত ভোট ১৭২। ১৩, ১৪, ১৫ নং (অরণখোলা, শোলাকুড়ী, ফুলবাগচালা, গোলাবাড়ি, কুড়াগাছা, বেরীবাইদ, মধুপুর, মধুপুর পৌরসভা। ধনবাড়ী পৌরসভা, বানিয়াজান, ধোপাখালী, বীরতারা, বলিভদ্র, যদুনাথপুর, পাইস্কা, মুশুদ্দি ইউনিয়ন। গোপালপুর পৌরসভা, ধোপাকান্দি, হাদিরা, ঝাওয়াইল, নগদাশিমলা, হেমনগর, আলমনগর ও মির্জাপুর ইউনিয়ন) ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মাহমুদা খাতুন (হরিণ)। প্রাপ্ত ভোট ১৯৬। (ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)
https://www.dhakatimes24.com/2016/12/29/13994/%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2-%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE
12/29/2016
Dhaka Times
Neutral
33
টাঙ্গাইল ইউনিয়ন পৌর সংঘর্ষ
টাঙ্গাইল উপ নির্বাচনে আ’লীগ মনোনিত প্রার্থী
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেন কালিহাতি উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংসদীয় বোর্ডের সভায় এই মনোনয়ন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি ও দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারী কালিহাতী উপজেলার ছাতীহাটিতে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত সামছুল হুদা খান । সোহেল হাজারী ১৯৮৫ সালে গোপালদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে ১৯৮৬ সালে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের এরশাদ সরকার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দেলনের পর ১৯৯১ সালে সরকারী এম. এম. আলী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এম.এম আলী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতা পরবর্তী ছাত্রলীগের প্রথম ভি,পি নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৪ সালে ৫ জুন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে বি.এন.পি সমর্থীত সন্ত্রাসী দের হামলার স্বিকার হন সোহেল হাজারী ও তার বড় ভাই জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাহেদ হাজারী। সে সময় তিনি প্রানে রক্ষা পেলেও সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলায় নিহত হন ছাত্রনেতা সাহেদ হাজারী।এর পর টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে শাহেদ হাজারী হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত জনসভায় যোগদিয়ে সোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন করে সোহেল হাজারীর সার্বিক দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা । পরে ১৯৯৬ সালে বাংলার আলীগড় নামে খ্যাত করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদের ভি,পি নির্বাচিত হন সোহেল হাজারী এবং সেখান থেকেই ¯œাতক পাশ করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে নির্বাচিত হন জেলা ছাত্রলীগের আহŸায়ক। এরপর নানা ধরনের রাজনৈতিক মামলা হামলার ঝুকি মাথায় নিয়ে দলীয় চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন তিনি। ২০০২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০০৯ সালে কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি মনোনিত প্রার্থীকে ৬১ হাজার ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনীত হন সোহেল হাজারী। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সমাজ সেবায় বিশেষ ভূমিকা ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য স্থানীয় সরকার মনোনীত দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৩ সালে মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, মহানগর পার্সোনালিটি এ্যাওয়ার্ড, মহাত্মা গান্ধী শান্তি পদক ও চিত্তরঞ্জন দাশ পদক অর্জণ করেন সোহেল হাজারী। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন সোহেল হাজারী। কালিহাতীর ছাতিহাটীতে নিজ এলাকায় শহীদ শাহেদ হাজারীর নামে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন তিনি। উল্লেখ্য, হজ্ব ও তাবলিগ নিয়ে বিতর্কের জেরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মšী¿সভা থেকে বহিস্কারের পর এই আসনের সাংসদ আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে দশম জাতীয় সংসদের ১৩৩ নম্বর (টাঙ্গাইল-৪) কালিহাতী আসনটি শূন্য হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-৪ শূন্য আসনে ১০ নভেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কালিহাতী উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন, কালিহাতী পৌরসভা এবং এলেঙ্গা পৌরসভা নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯২ জন।
https://timetouchnews.com/news/news-details/5859
9/10/2015
Timetouch news
Govt leaning
34
টাঙ্গাইল ইউনিয়ন পৌর সংঘর্ষ
টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জে সংঘর্ষ গুলি, নিহত ১ আহত ২২
দেশের ১২৯টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, গুলি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন। জাল ভোট দেয়াসহ নানা অপরাধে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া খবরে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ২৪, বিএনপির ১০ ও মেয়র পদে ২টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের ৭ বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। Advertisement টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের সাগরদিঘি ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আ. মালেক (৪৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রাত ৩টার দিকে কেন্দ্রে ঢুকে ‘ডিবি পুলিশের সামনে’ সন্ত্রাসীরা ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারতে থাকলে তিনি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা জানালা দিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ সময় আরও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- টাঙ্গাইল ও ঘাটাইল : সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আ. মালেক গুপ্তবৃন্দাবন গ্রামের মৃত মেছের আলীর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শী লালন স্বেচ্ছাসেবক মালেক ফকির জানান, রাত তখন ৩টা। প্রথমে ডিবি পুলিশের পোশাকে কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সাদা রঙের একটি হাইয়েস গাড়ি আসে। গাড়ি থেকে ‘ডিবি সদস্যরা’ কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করে। এর পিছু পিছু আরেকটি কালো রঙের হাইয়েস গাড়ি আসে। সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকে। এ সময় নিহত ওই যুবক দৌড়ে গিয়ে ভোট কেন্দ্রের ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন। ভেতর থেকে সন্ত্রাসীরা দরজা খুলতে বললেও তিনি খোলেননি। এ সময় জানালা দিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে আ. মালেক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দু’জন। তারা হলেন- একই গ্রামের মৃত চান মাহমুদের ছেলে ফারুক ও হক মিয়ার ছেলে জলিল। এদের মধ্যে ফারুককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জলিলকে টাঙ্গাইল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এসআই শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা কেন্দ্রের ভেতরে একটি রুমে অবরুদ্ধ ছিলাম। কিছু বুঝতেও পারিনি, দেখতেও পাইনি। আমাদের রুম বাইরে থেকে তালা দেয়া ছিল। এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। মনে হচ্ছে এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। নির্বাচনে ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সংগ্রামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আ. রহিম মিয়া, সন্ধানপুর ইউনিয়নে বিএনপির শহিদুল ইসলাম শহীদ, ধলাপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির এজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, রসুলপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল হক সরকার, লক্ষিন্দর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী একাব্বর আলী বিজয়ী হয়েছেন। সাগরদিঘি ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ ইউনিয়নে ফল ঘোষণা হয়নি। সুনামগঞ্জ : যুগান্তর প্রতিনিধি ইয়াহ্ইয়া মারুফ ও মাহবুবুর রহমান পীর জানান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নাদের বখত। এর আগে ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, দফায় দফায় সংঘর্ষ ও দুই প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পৌরসভার উপনির্বাচন। সকাল থেকেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল দেয়ার অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ভোটারদের বক্তব্যে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গনিউল সালাদিন বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেন তিনি। একই অভিযোগ ও দাবিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। ভোট শুরুর পরপরই বৃষ্টির মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে শহরের সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ছোটভাই নোমান বখত পলিন ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল দেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। বেলা ১১টার মধ্যেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায় আরপিননগর কেবি মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের। দুপুর ২টায় উত্তর আরপিননগর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের কেন্দ্র দখল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের ঘণ্টাব্যাপী ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন। কুমিল্লা, বরুড়া ও বুড়িচং : বরুড়ার ৩টি ইউনিয়নে নৌকার কর্মীদের কেন্দ্র দখল, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, বিএনপি সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টি ও জাল ভোটের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ভোট বর্জনসহ ওই ৩টি ইউনিয়নে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী। খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এ ইউনিয়নের হরিপুর কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী তৈয়ব আলীকে কেন্দ্র দখলে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। নির্বাচনে চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বুড়িচং উপজেলার বাকশীমুল ইউনিয়নে মো. আবদুল করিম, শিলমুড়ি দক্ষিণ ইউনিয়নে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ভূঁইয়া, শিলমুড়ি উত্তর ইউনিয়নে আবু ইসহাক, খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নে আবদুর রব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম : বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল একবারে কম। ভোট কেন্দ্রের ভেতরের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। তবে বাইরে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মোহনগঞ্জ : তেঁতুলিয়া ইউপিতে উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তালতলী (বরগুনা) : শারিকখালী ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল বাশার ওরফে বাদশা তালুকদার নৌকা প্রতীকে ২৬২৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নরসিংদী : শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেরাজুল হক মেরাজ বিজয়ী হন। মাগুরা : মহম্মদপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাবেয়া বেগম নির্বাচিত হয়েছেন। দুমকি (পটুয়াখালী) : দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে ৪৫৪০ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শাহ আলম আকন এবং শ্রীরামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম ছালাম ৪১৩৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বেনাপোল : যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আনোয়ারা খাতুন চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। কলাপাড়া : পাঁচ ইউপির চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে কাজী হেমায়েত উদ্দীন হিরন (নৌকা), বালিয়াতলী এবিএম হুমায়ুন কবির (নৌকা), ডালবুগঞ্জ আবদুস সালাম সিকদার (নৌকা), চম্পাপুর রিন্টু তালুকদার (নৌকা) এবং ধানখালীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রিয়াজ তালুকদার (ঘোড়া) জয়ী হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা : আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক নির্বাচিত হয়েছেন। নাগদাহ ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন। কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) : মেয়র পদে মাত্র একজন প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ কামাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) : জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আবদুল কাদের প্রধান ৬ হাজার ২৪১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হাসাদাহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রবিউল ইসলাম বিশ্বাস ৫ হাজার ১৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রায়পুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুর রশীদ শাহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যশোর : শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছা. আনোয়ারা খাতুন। ফেঞ্চুগঞ্জ : সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নতুন-পুরানোসহ সব ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন শেষ হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১ জন, বিএনপির ৩ জন ও স্বতন্ত্র ১ জন বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বদরুদ্দোজা, ২নং মাইজগাঁও ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী সুফিয়ানুল করিম চৌধুরী, ৩নং ঘিলাছড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের লেইছ চৌধুরী, ৪নং উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আহমদ জিলু, ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপির মো. এমরান উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। ময়মনসিংহ : সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে ফলকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ৪টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। শেরপুর : নকলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী একেএম মাহবুবুল আলম সোহাগ বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হালুয়াঘাট : হালুয়াঘাট পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে খাইরুল আলম ভূঁইয়া ৩৮৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। শ্রীপুর (গাজীপুর) : পিরুজালী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের মঞ্জু সরকার নির্বাচিত হয়েছেন। খাগড়াছড়ি : দীঘিনালার বাবুছড়া ও দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই ইউনিয়নে জয়লাভ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা হলেন- দীঘিনালায় প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা ও বাবুছড়ায় সন্তোষ জীবন চাকমা। ফরিদপুর : ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ৭টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে বিএনপি ও ১টিতে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে কানাইপুর ইউনিয়নে বেলায়েত ফকির (আ’লীগ), গেরদা ইউনিয়নে জাহিদুর রহমান জাহিদ (আ’লীগ), নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক (বিএনপি), চরমাধবদিয়া ইউনিয়নে সাইফুল ইসলাম আজম (বিএনপি), ডিক্রিরচর ইউনিয়নে মেহেদী হাসান মিন্টু (স্বতন্ত্র), অম্বিকাপুর ইউনিয়নে আবু সাইদ চৌধুরী বারী (আ’লীগ), ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম মজনু (আ’লীগ), কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে গোলাম মোস্তফা (বিএনপি), কৈজুরী ইউনিয়নে ইফতেখার হোসেন ইকু (আ’লীগ), আলিয়াবাদ ইউনিয়নে ওমর ফারুখ ডাবলু (আ’লীগ)। গাজীপুর : সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মো. ফজলুল হক মুসুল্লী, ভাওয়ালগড় ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আবু বকর ছিদ্দিক, পিরুজালী ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল্লাহ সরকার মনজু। গ্রেফতার : এদিকে নির্বাচনে জাল ভোট দেয়াসহ নানা অপরাধে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ৩, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ১ এবং কলাপাড়ায় একটি রাইফেল ও ৫২ রাউন্ড গুলিসহ ব্যবসায়ী রফিক গাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
https://www.jugantor.com/tp-firstpage/33056
3/30/2018
Jugantor
Govt critique
35
টাঙ্গাইল ইউনিয়ন পৌর সংঘর্ষ
টাঙ্গাইলে র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত
টাঙ্গাইলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) জানিয়েছে, বুধবার ভোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন দুজন, যার মধ্যে একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হওয়া সদর উপজেলার যুগরা ইউনিয়নের ঘটনা স্থল থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। র‍্যাব জানিয়েছে, এরা সবাই একটি ‘চরমপন্থী সংগঠনের’ সঙ্গে জড়িত ছিল, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। নিহতদের পরিচয় টাঙ্গাইল-ভিত্তিক র‍্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন ফারুকী নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন – বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আকবর হোসেন এবং মনু মিয়া। তিনি জানান, অন্য তিন ‘চরমপন্থীকে’ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। র‍্যাব কর্মকর্তা ফারুকী বলেন, চরমপন্থীরা ওই এলাকায় সমবেত হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব যুগরা ইউনিয়নের মাইশা গ্রামে অভিযান চালায়। ফারুকী bdnews24.com-কে বলেন, “রেইড হওয়ার আঁচ পেয়ে ১০ থেকে ১২ জন চরমপন্থী গ্রামের শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং র‍্যাবের উপর গুলি চালায়। তখন আমরাও গুলি চালাই।” ফারুকী বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনাস্থলেই হোসেন ও মিয়া মারা যান। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। টাঙ্গাইলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) জানিয়েছে, বুধবার ভোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন দুজন, যার মধ্যে একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হওয়া সদর উপজেলার যুগরা ইউনিয়নের ঘটনা স্থল থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। র‍্যাব জানিয়েছে, এরা সবাই একটি ‘চরমপন্থী সংগঠনের’ সঙ্গে জড়িত ছিল, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। নিহতদের পরিচয় টাঙ্গাইল-ভিত্তিক র‍্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন ফারুকী নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন – বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আকবর হোসেন এবং মনু মিয়া। তিনি জানান, অন্য তিন ‘চরমপন্থীকে’ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। র‍্যাব কর্মকর্তা ফারুকী বলেন, চরমপন্থীরা ওই এলাকায় সমবেত হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব যুগরা ইউনিয়নের মাইশা গ্রামে অভিযান চালায়। ফারুকী bdnews24.com-কে বলেন, “রেইড হওয়ার আঁচ পেয়ে ১০ থেকে ১২ জন চরমপন্থী গ্রামের শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং র‍্যাবের উপর গুলি চালায়। তখন আমরাও গুলি চালাই।” ফারুকী বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনাস্থলেই হোসেন ও মিয়া মারা যান। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
https://bdnews24.com/bangladesh/shootout-with-rab-in-tangail-leaves-two-dead
10/21/2015
Bdnews24
Neutral
36
টাঙ্গাইল ইউনিয়ন পৌর সংঘর্ষ
বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ গোলাগুলি নিহত ১ আহত অর্ধশত
ভোটকেন্দ্র দখল, গোলাগুলি, হত্যা ও নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চতুর্থ ধাপের ৫৫ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। চার দফা ভোটে এবারই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন পৌরসভা থেকে। এর মধ্যে পটিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের মধ্যে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে একজন গুলিবিদ্ধ ও একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এসব পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতরা ঢুকে ভোটারদের হাতের ছাপ নিয়ে তাদের ভোট দিতে না দিয়ে বের করে দিয়েছে। এর আগে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় রোববার সকাল ৮টায়। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৯ পৌরসভায় ভোট হয়েছে ইভিএমে, বাকি ২৬টি পৌরসভায় পুরনো পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হয়। সময়ের আলোর ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ চট্টগ্রাম : পটিয়া পৌরসভার নির্বাচন চলাকালে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন আবদুল মাবুদ (৫০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল মান্নানের বড়ভাই। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ গোবিন্দারখিল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সরওয়ার কামাল রাজীবকে দায়ী করেছে নিহতের পরিবার। পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিনহাজ উদ্দীন জানান, কেন্দ্রের বাইরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে আবদুল মাবুদ গুলিবিদ্ধ হলে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে মাবুদের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ লোকজন গোবিন্দারখিল কেন্দ্রে আনসার ভিডিপি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। টাঙ্গাইল : কালিহাতী পৌরসভায় ভোট চলাকালে দুপুরে হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের চার ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আহতরা হচ্ছেনÑ কালিহাতী উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন (৩৮) ও পৌরসভার চামুরিয়া গ্রামের বিএনপি কর্মী ইদ্রিস আলী (৪৫)। নোয়াখালী : সোনাইমুড়ী পৌর নির্বাচনে বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংসতায় মোহন (১৮) নামে এক গুলিবিদ্ধ যুবকসহ দুজন আহত হয়েছে। বেলা ১১টায় পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আলোকপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ একজনসহ তিনজনকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলোÑ সোনাইমুড়ীর বাহারকুট গ্রামের আবদুল হকের ছেলে মোহন (১৮), আমিরাবাদ এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে সালাউদ্দিন (২৭) ও উলুপাড়া এলাকার স্বপনের ছেলে মনির (২২)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৬নং বাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা একটি ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলিবর্ষণ করে। এ সময় মোহন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। সাতক্ষীরা : সকালে শহরের রসুলপুর কেন্দ্রে দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি। তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে নবনূর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফিরোজ আহমেদ ও আবদুস সালামসহ চারজন। তাদেরও সাতক্ষীরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বাগেরহাট : বিএনপিদলীয় প্রার্থীর ভোটবর্জন ও চরমভাবে ভোটার অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাচন শেষ হয়। নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট থাকতে না দেওয়া এবং বৃদ্ধ মা, বোন ও স্বজনদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধাদানের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন সাইদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল। বরিশাল : জেলার বানারীপাড়া পৌরসভায় অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী এবং বিএনপির প্রার্থী। বিভিন্ন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দিয়ে নৌকায় একতরফা সিল দেওয়ার প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটবর্জনের ঘোষণা দেন দুই প্রার্থী বিএনপির রিয়াজ আহমেদ মৃধা এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জিয়াউল হক মিন্টু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচন বর্জন করেছেন মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। রোববার দুপুরে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে তার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে। অন্যদিকে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. জিসানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন অন্য এক কাউন্সিলর প্রার্থী আতিকুর রহমান। এ সময় বিক্ষুব্ধরা বিভিন্নভাবে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করে। নরসিংদী : বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন ও বিভিন্নভাবে জাল-জালিয়াতির অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নরসিংদী সদর ও মাধবদী পৌরসভা নির্বাচন। পৌর এলাকার নাগরিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৌয়াকুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউএমসি জুটমিল কেন্দ্রে জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে ভোট মারাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির জেরে সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখেন প্রিজাইডিং অফিসার। এ ছাড়া ভোটে ব্যাপক জালিয়াতি হচ্ছে অভিযোগ এনে বিএনপি প্রার্থী ভোটবর্জন করেন। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা অনিয়মের অভিযোগে ভোটবর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, দেশে ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার পাঁচ ধাপে এসব পৌরসভায় ভোট করছে ইসি। প্রথম দফায় গত ২৮ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম ধাপে ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
https://www.shomoyeralo.com/news/133286
2/15/2021
Somoyer Alo
Govt critique
37
হলি আর্টিজান হামলা
হোলি আর্টিজান হামলার আট বছর পরে দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কী অবস্থা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আট বছর পর এসে এখন দেশের কথিত ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব, নেটওয়ার্ক এবং পুনর্গঠিত হবার শক্তি অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে গেছে বলে বলছেন পুলিশ ও গবেষকরা। তবে জঙ্গি তৎপরতা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে বেশ কিছু জঙ্গি নেতার মৃত্যু, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গিকে আটক, বৈশ্বিক জঙ্গি তৎপরতা কমে আসা এবং বিচারে অনেকের শাস্তি হওয়ায় জঙ্গি সংগঠনগুলো আর পুনর্গঠিত হবার সুযোগ পায়নি বলে কর্মকর্তাদের দাবি। বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গি হামলা হচ্ছে না বলে জঙ্গি তৎপরতা নেই-এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। যদিও এর মাঝেই ঢাকার আদালত থেকে পরিকল্পিতভাবে দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, যাদের এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠনের তৎপরতা এখনো মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালের ৬ই মার্চ যশোরের টাউন হল ময়দানে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর সম্মেলনে বোমা হামলার ঘটনা জঙ্গিদের বড় উত্থান হিসেবে বিবেচনা করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এরপর ২০০১ সালে ঢাকায় রমনার বটমূলে ও সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনাগুলোতেও জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার খবর উঠে এসেছিলো। এরপর সিনেমা হল, গির্জায় অনেকগুলো হামলার ঘটনা ঘটে। ২০০৫ সালের অগাস্টে সিরিজ বোমা হামলায় আবারো জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এক পর্যায়ে উঠে আসে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি বা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের নাম। এক পর্যায় তাদের আটক করা হয় এবং জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলাভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামসহ সাত জনের ফাঁসি হয় ২০০৭ সালে। এরপরেও বিভিন্ন সময়ে বিদেশী নাগরিক হত্যাসহ নানা ঘটনায় জঙ্গিদের নাম আসে। তবে ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান হামলায় বহু বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ায় সেই ঘটনাটি বিশ্ব জুড়ে খবরের শিরোনাম হয়। ওই ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী করে নতুন ভাবে গড়ে ওঠা জেএমবি অর্থাৎ নিউ জেএমবি হিসেবে পরিচিত সংগঠনকে।
https://www.bbc.com/bengali/articles/ce58dyzepk2o
7/1/2024
BBC Bangla
Neutral
38
হলি আর্টিজান হামলা
হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল আইএস
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল আইএস, দেশীয় জঙ্গিরা নয়। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব হামলাকারীদের প্রসঙ্গে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। ঢাকায় পুলিশপ্রধানদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে জঙ্গিবাদ নিয়ে এক উপস্থাপনায় এসব কথা বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চের (আইসিপিভিটিআর) পরিচালক রোহান গুণারত্নে। গতকাল রোববার সকাল থেকে তিন দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে। বাংলাদেশ পুলিশ ও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করেছে। এতে ১৪টি দেশের পুলিশের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ফেসবুক, ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন (আইজিসিআই), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), আসিয়ানাপোল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামসহ (আইসিআইটিএপি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ‘ডির্যাকডিকালাইজেশন অব মিলিট্যান্টস: অ্যান অ্যাপ্রোচ ফর ডিজএনগেজমেন্ট অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন ইনটু সোসাইটি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ রোহান গুণারত্নে। তাঁর প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরভিত্তিক আইসিপিভিটিআর গত বছরের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনা ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। হামলাকারীদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগের বিষয়টিও তখনই নজরে আসে বলে জানান রোহান। রোহান গুণারত্নে বলেন, সন্ত্রাস দমনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলিষ্ঠভাবে সেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটেছে। তবে হলি আর্টিজানে হামলা কারা করেছিল, তা নিয়ে তাঁর ভিন্নমত আছে। তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজানে যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা জেএমবি নয়, তারা আইএস। এটি সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা নিজেদের ইসলামিক স্টেট বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ওই হামলা সম্পর্কে সত্য বলেননি।’ রোহান তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে বলেন, বাংলাদেশে আইএসের উত্থান হয়েছে জেএমবি থেকে। কিন্তু জঙ্গিগোষ্ঠীটি আর নিজেদের জেএমবি বলছে না। গোষ্ঠীটি নিজেদের আইএস বলছে এবং সিরিয়া ও ইরাকের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের প্রভাবিত করেছে। আইএস তাদের প্রকাশনা ‘দাবিক’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংঘটিত হামলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই হামলাকারী দলটিকে জেএমবি বলা এবং তাদের ‘হোম গ্রোন’ বা দেশীয় বলা ভুল। যে গোষ্ঠীটি হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছে, তারাই ইতালি ও জাপানের নাগরিককে হত্যা করেছে। এই মতাদর্শের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। এই মতাদর্শ বিদেশি। তারা হলি আর্টিজানে হামলার ধরন দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এই গবেষণা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ হলো হলি আর্টিজানে হামলার তিনটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্বে কিছু মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করা হয়, ঠিক যেভাবে পশুদের গাদাগাদি করে রাখা হয়। তারপর তাদের জবাই করা হয়। জিম্মিদশা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে যায়। দ্বিতীয় পর্যায় ছিল প্রচারণার। এ সময় হামলাকারীরা এ দেশে যারা আইএসের সদস্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও হত্যাকাণ্ডের ছবি পাঠায়। তৃতীয় পর্ব ছিল ‘শোডাউন’ পর্ব। রোহান গুণারত্নের বক্তব্যের পরপরই গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলি আর্টিজানে আইএস হামলা চালিয়েছে বলে রোহান গুণারত্নে যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁর নিজস্ব মত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের বক্তব্য হলো, হামলা চালিয়েছিল নব্য জেএমবির সদস্যরা। তারা ‘হোম গ্রোন’। গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’কিচেন রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা হয়। জঙ্গিরা ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গেলে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর এক পাচক নিহত হন। হামলার রাতেই অনলাইনে নৃশংসতার ছবি প্রকাশ করে ঘটনার দায় স্বীকার করে আইএস। যদিও বাংলাদেশ সরকার তা নাকচ করে দেয়। তবে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১২ জুন পর্যন্ত পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আইএস-সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে এবং তদন্ত শেষে মামলার অভিযোগপত্রও দেয় আদালতে। ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যার পর প্রথম আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর বের হয়। তখন থেকেই সরকার ও পুলিশ এই দাবি নাকচ করে আসছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’। গতকাল পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে রোহান গুণারত্নে বলেন, ‘আইএসের জঙ্গিদের মতো বাংলাদেশের জঙ্গিরাও পাঁচটি জিনিসে বিশ্বাস করে। তারা যদি হামলার সময় মারা যায় তাহলে তারা সরাসরি বেহেশতে যেতে পারবে, আল্লাহকে দেখতে পাবে, তাদের সমস্ত পাপ ধুয়েমুছে যাবে, তারা ৭০ জন আত্মীয়কে বেহেশতে নিতে পারবে এবং ৭০ জন সুন্দরী নারী পাবে বলে বিশ্বাস করে।’ জঙ্গিবাদের সমস্যা মোকাবিলা করতে সমস্যার মূলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সমস্যার মূলে যেতে হবে। উটপাখির মতো বালুতে মাথা গুঁজে থাকার কোনো মানে হয় না। কমান্ডোর জন্য অপেক্ষা করা ছিল ভুল রোহান গুণারত্নে মনে করেন, হলি আর্টিজানে উদ্ধার অভিযান শুরু করতে ১২ ঘণ্টা সময় নেওয়া ছিল ভুল। তিনি বলেন, সাধারণ অপরাধী ও জঙ্গিদের দমনের পদ্ধতি আলাদা। একজন জঙ্গি তার গল্প বলতে চায়। কোন বিশ্বাস থেকে সে এ পথে এসেছে, তা-ও বলতে চায়। একজন সাধারণ অপরাধীকে যখন পুলিশ ধরার চেষ্টা করে, তখন সে পালানোর চেষ্টা করে। কারণ সে বাঁচতে চায়। কিন্তু একজন জঙ্গি বাঁচতে চায় না। জঙ্গিবাদ হলো আদর্শিক চরমপন্থার সহিংস প্রকাশ। ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের উপস্থিতি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের অভিযান চালানো প্রয়োজন ছিল। রোহান বলেন, এখনকার দিনের জঙ্গিদের কাজের ধরন আগেকার চেয়ে আলাদা। আগে জঙ্গিরা জিম্মি করত, তারপর দাবিদাওয়া আদায় করত। হলি আর্টিজানের জঙ্গিরা কি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোনো দাবি জানিয়েছিল? তাহলে কেন কমান্ডো বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করা হলো? এটা ছিল ভুল কৌশল। পুনর্বাসনে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে ভালো করলেও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন রোহান গুণারত্নে। তিনি বলেন, কারাগারগুলোতে ডির্যােডিকালাইজেশন বা জঙ্গি মতাদর্শ থেকে ফিরিয়ে আনার কাজটি করতে হবে। প্রথমে ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো যাঁরা, তাঁদের যুক্ত করতে হবে। পুলিশের মধ্যেও অনেকে আছেন, যাঁরা ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান রাখেন। তাঁদের কাজে লাগানো যেতে পারে। সবচেয়ে বড় ১০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তাদের কর্মমুখী শিক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তাদের এদেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। নইলে কারাগার থেকে ফিরে এই জঙ্গিরা নতুন করে আরও জঙ্গি তৈরি করবে। মাদ্রাসাশিক্ষার দিকে নজর দেওয়ার কথাও বলেন রোহান। তাঁর পরামর্শ হলো, যারা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে, তাদের জাতীয় জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া যায়। তারা দেখুক বাংলাদেশের সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ। বাহিনীগুলোর মধ্যে সহযোগিতার যে সম্পর্ক, তা জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন রোহান গুণারত্নে। অসংগতির জায়গাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ জঙ্গিদের জন্য আলাদা তথ্যভান্ডার গড়েছে, ডিজিএফআই (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) আলাদা আলাদা তথ্যভান্ডার। সবার জন্য অভিন্ন তথ্যভান্ডার থাকা দরকার এবং সব বাহিনী যেন সেই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে একসঙ্গে এবং প্রেষণে এক বিভাগের কর্মকর্তাদের অন্য বিভাগে চাকরির ব্যবস্থা থাকা জরুরি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের অবস্থান কেন গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যাখ্যায় মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো অমুসলিম জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুটি দেশ ভারত ও মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী প্রধানত অমুসলিম। এ ছাড়া আইএস-অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে যারা ফিরে আসবে, তারাও এখানে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%8F%E0%A6%B8
3/13/2017
Prothom Alo
Govt critique
39
হলি আর্টিজান হামলা
হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?
একসঙ্গে বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। তারা এমন একটি জায়গা খুঁজছিল, যেখানে একই সময় একইসঙ্গে অনেক বিদেশি অবস্থান করেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। হামলার দুইমাস আগে থেকেই রেকি করে এমন জায়গা খুঁজে পায় জঙ্গিরা। সেটি হলো গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার ‘হলি আর্টিজান বেকারি’। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামলার আগে তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা রেকি করে হলি আর্টিজান। সবকিছু দেখেশুনে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হামলা চালায় তারা। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তা ও কয়েকজন জঙ্গির জবানবন্দি থেকে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। ১৩ জানুয়ারি নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (৩৩) কে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুই দফায় রিমান্ড শেষে আদালতের কাছে দোষ ও হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে সে। তার জবানবন্দিতে গুলশান হামলার পুরো পরিকল্পনা ও হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। রাজীব গান্ধী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়া বাজারস্থ কলেজ মোড় সংলগ্ন সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও বাইক হাসানের ভাড়াটিয়া বাসায় তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, সারোয়ার জাহান মানিক, তারেক, মারজান, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও আমি মিলে হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করি। ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি হত্যার মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে তামিম চৌধুরী ওরফে তালহা।’ তিনি আরও জানান, ‘বিদেশি হত্যার জন্য একাধিক স্পটের মধ্য থেকে হলি আর্টিজান বেকারিকে নির্বাচন করা হয়। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল দুর্বল।’ এ বিষয়ে পুলিশের সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গিরা রেকি করার সময় জানতে পারে হলি আর্টিজানে প্রতিদিন অনেক বিদেশির সমাগম হয়। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। এ রেস্টুরেন্টটির অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে হামলা চালানো জঙ্গিদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। বেকারির একপাশে লেক হওয়ায় পুলিশ সহজে সেখানে যেতে পারতো না। তাই জঙ্গিরা হামলার জন্য এই স্পটটিকে বেছে নেয়।’ প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ২ পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিক ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। নিহত বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। নিহত ৭ জাপানির মধ্যে ৬ জন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন থান্ডার বোল্ট-এ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। তারা হলো, মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনির্ভাসিটির ছাত্র নিবরাস ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, বগুড়ার বিগিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র খায়রুল ইসলাম পায়েল, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এছাড়া, হলি আর্টিজানের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম চৌকিদারও নিহত হয়। এরই মধ্যে এ হামলার সঙ্গে জড়িত শীর্ষ জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী, মারজানসহ অনেকেই পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অনেকে।
https://www.banglatribune.com/others/219873/%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%9C%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE
7/1/2017
Bangla Tribune
Neutral
40
হলি আর্টিজান হামলা
অবশেষে হোলি আর্টিজান হামলার অভিযোগপত্র
দুই বছরের তদন্ত শেষে হোলি আর্টিজান হামলা মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ৷ ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও অভিযোগ আনা হয়েছে আট জনের বিরুদ্ধে৷ বাদ দেয়া হয়েছে হাসনাত করিমের নাম৷ দুই বছরের তদন্ত শেষে হোলি আর্টিজান হামলা মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ৷ ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও অভিযোগ আনা হয়েছে আট জনের বিরুদ্ধে৷ বাদ দেয়া হয়েছে হাসনাত করিমের নাম৷
https://www.dw.com/bn/%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BF%E0%A6%B2/a-44786673
7/23/2018
DW
Neutral
41
হলি আর্টিজান হামলা
হলি আর্টিজান হামলার জঙ্গিদের দাফন হল জুরাই
ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাবিদারহীন হিসেবে ছয়টি লাশ আঞ্জুমানকে দেওয়া হয়েছে। ওই লাশগুলোর দাবি নিয়ে স্বজনদের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।” দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে লাশ বুঝে পাওয়ার পর বিকালের মধ‌্যেই জুরাইন কবরস্থানে ছয়জনকে দাফন করা হয় বলে আঞ্জুমানের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন। গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের ওই ক্যাফেতে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সশস্ত্র বাহিনী অভিযান চালিয়ে ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সে সময় নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে জেএমবি সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। হামলাকারী পাঁচ তরুণ- নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল ওই ছয়জনের মধ্যে শরীয়তপুরের সাইফুল চৌকিদার নামে একজন ছিলেন ওই বেকারির পাচক। তিনিও ‘হামলাকারীদের সঙ্গে থেকে তাদের সহায়তা করেন’ বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। নিহত পাঁচ জঙ্গির মধ‌্যে নিবরাজ ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আর রোহান ইবনে ইমতিয়াজ পড়তেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মীর সামিহ মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার ছাত্র। এছাড়া বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৈয়াগাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং শাহজাহানপুর উপজেলার খায়েরুজ্জামান মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখা তাদের মরদেহ থেকে দুই দফা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ওই জঙ্গিরা হামলার আগে কোনো ধরনের মাদক নিয়েছিলেন কি না জানতে যুক্তরাষ্ট্রেও পাঠানো হয় সেই নমুনা। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান গত ২৩ অগাস্ট জানান, নিহত ছয়জনের ডিএনএর সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ মিলিয়ে তারা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে পরিবারের কেউ লাশ চেয়ে লিখিত আবেদন করেননি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক রাশিদুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আঞ্জুমানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিএমএইচের হিমঘর থেকে কফিনগুলো পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরও সেসময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি। হলি আর্টিজানের জঙ্গিদের দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুমানের নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস আহমেদ বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের লাশ আমাদের দেয়, আমরা দাফন করি। আজও দিয়েছে। তারা হলি আর্টিজানের কি না- তা আমাদের জানা নেই।” তবে আঞ্জুমান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ছয়জন ক‌্যারিয়ার ও দুটি পিকআপ নিয়ে কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। সিএমএইচ থেকে লাশ পাওয়ার পর বিকালের মধ‌্যেই জুরাইনে দাফন করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “লাশের শরীরের চিহ্ন দেখে আমরা তার ধর্ম বোঝার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও ধর্মীয় নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হয়েছে।” নিহত তরুণদের মধ‌্যে একজনের বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পুলিশ তাদের খবর না দিলেও ‘আঞ্জুমানের একজনের কাছ থেকে’ তিনি জুরাইনে ছয়জনকে দাফনের বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1216891.bdnews
9/22/2016
Bdnews24
Neutral
42
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আন্দোলন
বেসরকারি বিশ্ববিদ‌্যালয় থেকে আয়কর নেওয়া অবৈধ: হাই কোর্ট
পাশাপাশি ওই দুই প্রজ্ঞাপনের আওতায় যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬টি রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেয়। এর মধ‌্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক; ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজি; আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি; ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ‌্যান্ড টেকনোলজি, চিটাগাংয়ের ২৫টি রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, শাহ মোহাম্মদ আশিকুল মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস; ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ; ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি; সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি; ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির পক্ষে বাকি রিট আবেদনগুলো করা হয়। ২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বল হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন‌্যান‌্য বিশ্ববিদ্যালয়, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করা হল। “মেডিকেল, ডেন্টাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্য শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রাইভেট কলেজসমূহের আয় করমুক্ত হইবে। কিন্তু ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যথারীতি নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।” ২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কেবলমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হল। আইনজীবী সাখাওয়াত বলেন, দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে কর কমানোর কথা বললেও মূলত এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক কলেজের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। “আদালত এই দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি এই দুই প্রজ্ঞাপনে দেওয়া ক্ষমতায় যে অর্থ আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে বলেছে।” ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর বলেন, “দুটি প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। প্রথম আদালত ওই দুই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে রুল দেয়। আজ সেই রুল এবসোলিউট করে দিয়েছে।” রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে বিস্তারিত বোঝা যাবে বলে জানান তিনি। এই রায়ের বিষয়ে সাখাওয়াত অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদালত তার পর্যবেক্ষণে সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে জীবনের অধিকারের কথা বলেছে, যার মধ্যে শিক্ষার অধিকারও পড়ে। “গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার উঠতি নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এখন সরকার যদি এই সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্যাক্স আরোপ করে, তাহলে তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দেবে। “এটা সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের চূড়ান্ত ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এটা অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।” সরকার এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ‌্যাট আরোপ করলেও গতবছর টানা কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তা প্রত‌্যাহার করে নেয়।
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1209596.bdnews
9/5/2016
Bdnews24
Govt critique
43
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আন্দোলন
তিনটি প্রাইভেট ভার্সিটির ছুটি প্রসঙ্গে কিছু কথা!
আজ বিকেলেই ঢাকার তিনটা প্রাইভেট ভার্সিটি তাদের ঈদের ছুটি ঘোষনা করেছে। অনেকে ভাবতেছে এবার বুঝি আন্দোলন কিছুটা হলে জিমিয়ে পড়বে! কিন্তু না আন্দোলন আগের থেকে কয়েক গুন উৎসাহের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। আর ভার্সিটি বন্ধ বা খোলা এটা নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের বিন্দুমাত্র ভাবার সময় নাই। ছাত্ররা যখন রাস্তায় থাকে তখন সব ভার্সিটিই অঘোষিত ভাবে বন্ধ থাকে। ছাত্ররাই যখন রাস্তায় তখন ক্লাস করবে কারা? কেউ ক্লাস করে না। তিনটা ভার্সিটি বন্ধ ঘোষনায় সেই সব ভার্সিটির ছাত্ররা এখন আরও স্বাধীন এবং নিশ্চিন্তে আন্দোলন করতে পারবে,এটাতে হতাশ হওয়ার কোন কারন আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেকটা প্রইভেট ভার্সিটির মালিক,চেয়ারম্যান,ট্রাষ্টিবোর্ডের মেম্বাররা একএকজন সরকারেরই লোক। কারন সরকারের কোন মন্ত্রী-মিনিষ্টারের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলে আমাদের দেশে বড় কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়া যায় না। আর সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়!! মালিক পক্ষ যে দিকেই যায় তাদের লাভ। সরকারের ভ্যাট মেনে নিলে তারা ছাত্রদের টিউশান ফি বাড়িয়ে তা পরিশোধ করবে আর না দিলে ত জামেলা থেকে বাঁচল। তাদের নীরব দর্শক বা লোক দেখানো কিছু করা ছাড়া কিছুই দেখছি না। দু দিকেই তাদের মাথা নাড়াতে হয়। একবার সরকারের পক্ষে আরেকবার ছাত্রদের পক্ষে। তাদের অবস্থা আমার দেশের একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যের মত "" দেশে হিন্দুরা থাকলে ভোট আমাদের,দেশ ছেড়ে চলেগেলে জমি আমাদের"" মানে লাভ দু দিকেই আছে। তাই ভার্সিটি কি করল না করল তা ভেবে লাভ নাই। আমরা চাই শিক্ষার সাথে ভ্যাট কথাটা থাকবেই না। ভ্যাট মুক্ত শিক্ষা ব্যাবস্থা চাই।
https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/madhob1/30070373
9/15/2015
somewhereinblog
Govt critique
44
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আন্দোলন
আবার 'উই আর লুকিং ফর শত্রুজ'?
বাংলাদেশের এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদা বলে উঠেছিলেন, ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।’ এই উক্তি সেই জঙ্গি উপদ্রুত মন্ত্রীকে উপহাসের পাত্র করে তুলেছিল। হলি আর্টিজানে হামলার পরও অনেকের মধ্যেই আদাড়ে-বাদাড়ে ‘শত্রু’ খোঁজার মানসিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনলাইন-ফেসবুকে যাকে-তাকে জঙ্গি আখ্যা দেওয়াও চলছে। নির্বিচার পুলিশি হয়রানির তলায় পড়ছে অনেক তরুণ, ভাড়াটে আর ব্যাচেলর। অনেকের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও মনে হচ্ছে ‘শত্রু’ এলাকা। সম্প্রতি জঙ্গি হিসেবে ধৃত ও নিহত বেশ কয়েকজনকে পাওয়া গেছে, যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ থেকেই সমাজে একটা মত দাঁড়িয়ে গেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গি তৈরির কারখানা! অতি সরলীকরণ। সরলীকরণে কিছু একটাকে সত্য বলে ধরে নেওয়ার আরাম আছে, বেশি চিন্তা করতে হয় না। পাশ্চাত্যেও অনেকের মধ্যে এ রকম চিন্তাহীন বিশ্বাস আছে। তারা মনে করে, মুসলমানমাত্রই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী। মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবাদও চালান হচ্ছে ইউরোপে। এসব চিন্তার পেছনে যুক্তি নেই, তথ্য-প্রমাণও নেই। এফবিআইয়ের হিসাবে, ১৯৮০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঘটনা সব সন্ত্রাসী ঘটনার মাত্র ৬ শতাংশ ছিল ইসলামি চরমপন্থীদের কাজ। বাকি ৭ শতাংশ ইহুদি চরমপন্থী এবং ৬৭ শতাংশ বাম ও লাতিনোদের কাজ। ইউরোপোল রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৫ সালে ইউরোপে ২১১টি সন্ত্রাসী ঘটনার মাত্র ১৭টিতে জিহাদিরা জড়িত, বাকিগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অন্যদের কাজ। একটা ঘটনার জন্য একটি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর সবাইকে দোষী ভাবা চিন্তার হঠকারিতা। তেমনি অনেকের বিশ্বাস, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জঙ্গিবান্ধব প্রতিষ্ঠান। ব্যাপারটা যেন ‘লাখে লাখে সৈন্য চলে কাতারে কাতার/ গনিয়া দেখিল মর্দ চল্লিশ হাজার’। ‘এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন জঙ্গি ১৬ জন তরুণ নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল আর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আছেন। পাঁচজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) পড়তেন।’ (প্রথম আলো, ১০ আগস্ট)। দেখা যাচ্ছে, সমাজের সব স্তর থেকেই উগ্রপন্থী তরুণেরা আসছেন। তারপরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে আলাদা করে ‘সন্দেহভাজনে’র কাতারে ফেলা হচ্ছে! এতে করে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাজে স্বাভাবিক চলাফেরার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা হয়ে পড়বেন জঙ্গি-আতঙ্কের সহজ টার্গেট। মাথা নিচু করে চলতে হবে তাঁদের। বন্ধু অবিশ্বাস করবেন বন্ধুকে। সন্দেহের বশে অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন তাঁদেরই আতঙ্কিত সহপাঠীরা। অনেকেই সামাজিক-রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হবেন। এ রকম ঢালাও অভিযোগ ও নিন্দামন্দের চাপে একজন তরুণও যদি সমাজের প্রতি আস্থা হারিয়ে জঙ্গিবাদের দিকে ঝোঁকেন, অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন, অথবা কঠিন শাস্তির মুখে পড়েন; সেই দায় কি আমরা নিতে রাজি? একটা সময় ছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘কোথায় পড়ো’ জিজ্ঞেস করলে থতমত উত্তর আসত: ‘একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও বুয়েটে পড়াকে তখন গর্বের বিষয় ভাবা হতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবা হতো বড়লোকের সন্তান। ভাবা হতো, তাঁরা আত্মকেন্দ্রিক, রাজনীতিবিমুখ ও ভোগবাদী। তারপর নো ভ্যাট আন্দোলন হলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ভ্যাট বসানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন কাঁপিয়ে দিল রাজধানীসহ বড় বড় শহরকে। বহুদিনের মধ্যে কোনো আন্দোলন সমাজের সব অংশের সমর্থন পেল। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা এবং জয় পাওয়া পর্যন্ত একটানা লেগে থাকার সংকল্প দেখালেন ওই শিক্ষার্থীরা। দেশের মানুষের ভালোবাসাও তাঁরা পেলেন। এই প্রথম তাঁরা গর্বের সঙ্গে বলা শুরু করলেন, আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। কিন্তু জঙ্গিবাদী হাওয়া এসে তাঁদের সেই স্বস্তি ও গর্ব মুছে দিল। দুদিন আগে যাঁরা ছিলেন নায়ক, জঙ্গি ঘটনা তাঁদের বানিয়ে দিল ভিলেন। গণমাধ্যমে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন ও মন্তব্য প্রকাশিত হতে থাকল। লজ্জা ও সংকোচ দেখা গেল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ায়। কিন্তু আমরা কি এ প্রশ্ন করেছি, গুটিকয়েক জঙ্গি হওয়া দিয়ে লাখো শিক্ষার্থীকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কতটা যৌক্তিক? সমাজের অন্যান্য অংশ থেকে, এমনকি সরকারদলীয় নেতার ঘর থেকেও তো জঙ্গি আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদের কাছে সমর্পিত হননি, তাঁদের কথা আমরা ভুলে গেলাম। তাঁদের নিয়ে যে গর্বিত হওয়া যায়, সেই চিন্তাও আমাদের মাথায় এল না। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা চলে, বিখ্যাত শিক্ষকেরা যে সেখানে ক্লাস নেন, তা আমরা ভুলে গেলাম। এসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে না উঠলে দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ ভারতমুখী হতেন, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যেত। মনের দুরবিন আরও জুম করে আনলে দেখতে পাব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে লাখো তরুণের জীবনগঠনের সংগ্রাম। দেখতে পাব, সেখানে এখন ধনীর দুলাল-দুলালীদের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই উঠতি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আর ধনী পরিবারের সন্তান মানেই সমাজবিচ্ছিন্ন কেউ নন। অনেকেই জেলা শহর ও গ্রাম-মফস্বল থেকে এসে সেখানে ভর্তি হন। কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার চাহিদা মেটাতে পারছে না। রাষ্ট্রও তাঁদের জন্য তেমন কিছু করছে না। কাজে কাজেই তাঁদের পরিবার নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছে। এই জনসংখ্যা ভারাক্রান্ত দেশে তরুণেরাই সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। এঁদের ভবিষ্যৎটাই বাংলাদেশ। এঁরা সেই বয়সী, যখন সম্ভাবনা নামক শক্তি, আশা নামক আশ্বাসে ভর করে অনেক অসাধ্যসাধন করা যায়। দেশ এঁদের বুদ্ধি, মেধা, শ্রম, স্বপ্ন ও নেতৃত্ব চায়। তার জন্য অভিযোগ নয়, সহানুভূতি প্রয়োজন। তরুণদের অভিযুক্ত না করে, তাঁদের জন্য মানবিক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করা চাই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ-ইতিহাস-দর্শনের পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা দরকার। কেবল এমবিএ-ধারী আর প্রযুক্তিবিদ দিয়ে উন্নত ও মানবিক সমাজ তৈরি করা যায় না। উচ্চশিক্ষাকে বাজারি চাহিদার হাত থেকে যেমন বাঁচাতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ক্রেতা বানানোর শিক্ষা-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম আরও মানবিক এবং পরিবেশ আরও গণতান্ত্রিক করার আলোচনাও ওঠানো দরকার। বেসরকারি বা সরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই করপোরেট কায়দায় চালানো যাবে না। এসব না করে, তাঁদের ভিলেন হিসেবে দাগিয়ে দিলে তাঁদের ভিক্টিমাইজেশনই কেবল বাড়বে। আর ভিক্টিম মানসিকতা থেকেই কেউ কেউ বিগড়ে গিয়ে জঙ্গি হয়ে উঠতে পারেন। এমন উদাহরণ অজস্র রয়েছে। আমরা এক চরমভাবাপন্ন জাতি। আজ আমাদের কাছে যিনি নায়ক, কালই তাঁকে আমরা ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা করি না। আমাদের ভক্তি ও ঘৃণা দুই-ই প্রায়শ অন্ধ। আমাদের বরং উচিত ছিল, তরুণদের সন্দেহভাজনের কোটাভুক্ত না করে তাঁদের মন খুলে কথা বলতে দেওয়া। কোন হতাশা, কোন সংকট কিংবা কোন প্রলোভনে পড়ে কেউ সমাজবিরোধী হয়ে ওঠে, তা জানতে উচিত ছিল তাঁদের কাছে যাওয়া। তাঁদের মনের খবর না জেনে কীভাবে আমরা জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে নিজেদের ও তরুণদের রক্ষা করব? আজ যে আমরা কতিপয় তরুণের ভয়ংকর নিষ্ঠুর ঘাতক হয়ে ওঠা দেখে হতবাক হচ্ছি, তার কারণ এত দিন আমরা বেহুঁশ ছিলাম। আর যে-ই আমাদের হুঁশ হলো, অমনি আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে চারদিকে ‘শত্রু’ খুঁজতে লাগলাম। সর্বত্র শত্রু খোঁজার মানসিকতায় মজে থাকলে এমনই হয়। আমাদের সমাজে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অথবা পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বগুলোকে হাড্ডাহাড্ডি শত্রুতাই পর্যবসিত করার চল আছে। ‘আমি’ ও ‘আমরা’ ছাড়া বাকি সবাই শত্রু; এমন চিন্তা সুস্থতার পরিচয় দেয় না। আমাদের শত্রুভাবাপন্নতার চাপে সত্যি সত্যিই যদি অনেক ‘শত্রু’ সৃষ্টি হয়ে যায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দায়িত্বহীন সমালোচনায় উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশি।
https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E2%80%98%E0%A6%89%E0%A6%87-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%AB%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%9C%E2%80%99
8/10/2016
Prothom Alo
Govt critique
45
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আন্দোলন
এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট ও আয়কর দিতে হবে
এখন থেকে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উৎসে মূসক ও আয়কর দিতেই হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা (পরিপত্র) জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। মাউশির পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) প্রফেসর জুলফিকার রহমান গত ৪ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পত্র জারি করে। দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক খবরে এ তথ্য জানা গেছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ সারাদেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রধানকে অবহিত করবেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন পরিচালক এবং মাধ্যমিক শাখার পরিচালক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমরা যেসব প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোন কেনাকাটা করি যেসব প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট বা এ জাতীয় সরকারি প্রাপ্য কেটে রাখে। এখন নতুন করে আমাদের ওপর হয়রানিমূলক আর্থিক ব্যয় চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী উৎসে মূসক কর্তন ও আয়কর কর্তন হচ্ছে না। উৎসে মূসক কর্তন না করায় ২০১৩-১৪ আর্থিক সালে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকারের ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৬০৭ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ ও ডেকোরেট কাজ, আপ্যায়ন আসবাবপত্র তৈরি ও সরবরাহ, পূর্ত ব্যয়, সাধারণ সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট কর্তন না করায়ও সরকারের বিপুল অংকের টাকা ক্ষতি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলার শিক্ষা অফিসের ৯৫টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষাকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের (৯৫টি) বিভিন্ন খাতে ব্যয়িত টাকার ওপর উৎসে আয়কর কর্তন না করায় সরকারের নয় লাখ ৭১ হাজার ৩১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এনবিআরের ২০১৩ সালের ৬ জুন জারি করা এক সাধারণ আদেশে বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ ও ডেকোরেট কাজের ওপর ১৫ শতাংশ, আপ্যায়নের ওপর ৬ শতাংশ, আসবাবপত্র তৈরি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ, পূর্ত/উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ, সাধারণ ক্রয়/যোগানদার সেবার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) কর্তনের বিধান থাকলেও আলোচ্য ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৫২ এর মাধ্যমে ঠিকাদারী চুক্তির মাধ্যমে সরবরাহ গ্রহণ এবং বিধি ১৬ এর মোতাবেক নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাযোগ্য। এ ব্যাপারে প্রফেসর জুলফিকার রহমানের পত্রে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর কর্তৃক ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নিরীক্ষা কার্য সম্পাদনপূর্বক বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজসমূহের ভ্যাট বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ও উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়নি মর্মে অডিট আপত্তি উত্থাপন করে। এই অডিট আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি’র আওতাধীন এমপিওভুক্ত স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজসমূহে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মূসক কর্তন ও বিভিন্ন খাতে ব্যয়িত টাকার ওপর উৎসে আয়কর এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তন করার নির্দেশনা প্রদান করে পত্র জারি করতে অনুরোধ করা হলো। মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে এ পত্র জারি করা হলো।’মাউশির অধীনে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার। আর কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এছাড়াও মাউশি’র অধীনে সারাদেশে দেশে নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দশ হাজার। তবে সরকারি হাই স্কুল ও কলেজগুলো এনবিআরের নিয়মানুযায়ী উৎসে মূসক ও আয়কর কর্তন করছে। এখন থেকে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উৎসে মূসক ও আয়কর দিতেই হবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা (পরিপত্র) জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। মাউশির পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) প্রফেসর জুলফিকার রহমান গত ৪ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পত্র জারি করে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ সারাদেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রধানকে অবহিত করবেন মাউশির কলেজ ও প্রশাসন পরিচালক এবং মাধ্যমিক শাখার পরিচালক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমরা যেসব প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোন কেনাকাটা করি যেসব প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট বা এ জাতীয় সরকারি প্রাপ্য কেটে রাখে। এখন নতুন করে আমাদের ওপর হয়রানিমূলক আর্থিক ব্যয় চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী উৎসে মূসক কর্তন ও আয়কর কর্তন হচ্ছে না। উৎসে মূসক কর্তন না করায় ২০১৩-১৪ আর্থিক সালে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকারের ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৬০৭ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ ও ডেকোরেট কাজ, আপ্যায়ন আসবাবপত্র তৈরি ও সরবরাহ, পূর্ত ব্যয়, সাধারণ সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট কর্তন না করায়ও সরকারের বিপুল অংকের টাকা ক্ষতি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলার শিক্ষা অফিসের ৯৫টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষাকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের (৯৫টি) বিভিন্ন খাতে ব্যয়িত টাকার ওপর উৎসে আয়কর কর্তন না করায় সরকারের নয় লাখ ৭১ হাজার ৩১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এনবিআরের ২০১৩ সালের ৬ জুন জারি করা এক সাধারণ আদেশে বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ ও ডেকোরেট কাজের ওপর ১৫ শতাংশ, আপ্যায়নের ওপর ৬ শতাংশ, আসবাবপত্র তৈরি ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ, পূর্ত/উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ, সাধারণ ক্রয়/যোগানদার সেবার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) কর্তনের বিধান থাকলেও আলোচ্য ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৫২ এর মাধ্যমে ঠিকাদারী চুক্তির মাধ্যমে সরবরাহ গ্রহণ এবং বিধি ১৬ এর মোতাবেক নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাযোগ্য। এ ব্যাপারে প্রফেসর জুলফিকার রহমানের পত্রে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর কর্তৃক ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নিরীক্ষা কার্য সম্পাদনপূর্বক বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজসমূহের ভ্যাট বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ও উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়নি মর্মে অডিট আপত্তি উত্থাপন করে। এই অডিট আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি’র আওতাধীন এমপিওভুক্ত স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজসমূহে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মূসক কর্তন ও বিভিন্ন খাতে ব্যয়িত টাকার ওপর উৎসে আয়কর এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তন করার নির্দেশনা প্রদান করে পত্র জারি করতে অনুরোধ করা হলো। মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে এ পত্র জারি করা হলো।’মাউশির অধীনে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার। আর কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এছাড়াও মাউশি’র অধীনে সারাদেশে দেশে নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দশ হাজার। তবে সরকারি হাই স্কুল ও কলেজগুলো এনবিআরের নিয়মানুযায়ী উৎসে মূসক ও আয়কর কর্তন করছে।
https://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%8F%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%93%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0/55736/
10/3/2016
Dainik Shiksha
Neutral
46
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আন্দোলন
আধা সরকারি হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়!
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি আধা সরকারি হয়ে যাচ্ছে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের পরিপ্রে​ক্ষিতে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এমন প্রশ্নই তুলছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি ঢোকানোর প্রক্রিয়া শুরু করা এবং শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সরকার ঠিক করে দেওয়ার কথা বলায় এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, আমলারা নানাভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান দেখভালের পরিবর্তে বা এগুলোর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক ভূমিকার বদলে নিয়ন্ত্রণের দিকেই আমলাদের ঝোঁক। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯১টি। এগুলোতে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বেসরকারি পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সরকার, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একবাক্যে শিকার করেন যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। তা ছাড়া আগে যেখানে হাতেগোনা দুচারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা দিতে, এখন ওই সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। আইন সংশোধনে কমিটি সর্বশেষ ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন হয়, যেটির মূল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠকে আইনটি সংশোধনে পাঁচ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ইউজিসি চেয়ারম্যান নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এসব উদ্যোগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা বা মালিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, এ ধরনের সংশোধনী আনা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। ফলে কার্যত এগুলো আধা সরকারি হয়ে যাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সালে সংশোধন করার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি পাস হয়। কিন্তু উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এ বিষয়টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। তাদের সেই সুপারিশ বহাল রেখে আইনটি পাস হয়। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি আছেন, যাদের অনেকেই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে উপস্থিত হলেও ভূমিকা রাখতে পারেন না। কেউবা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণাই রাখেন না। আবার কিছু কর্মকর্তা স্রেফ সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার সম্মানী পেয়েই সন্তুষ্ট থাকেন বলে অভিযোগ আছে। সিন্ডিকেটে প্রতিনিধি দিয়ে যখন এই অবস্থা, তার মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতারা বলছেন, তারা নানারকম আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে এবং বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারও কোনও সহায়তা দেয় না। কিন্তু নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এতে সভাপতিত্ব করেন। ইউজিসির কর্মকর্তারা ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। আইন সংশোধনী কমিটির বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইনে নানা বিধিবিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়। কেবল ট্রাস্টি বোর্ডেই নয়, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি, শৃঙ্খলা কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করারও প্রস্তাব করা হয়। জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধনের দাবি উঠেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সংশোধনী চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হবে। জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আইনে যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা চলছে। তবে ইউজিসি কেবল সুপারিশ করতে পারে, চূড়ান্ত করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে। টিউশন ফি নির্ধারণের চিন্তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি নিজেরাই নির্ধারণ করে। সরকার বলছে, টিউশন ফি নির্ধারণের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো অভিযোগ উঠেছে-কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গলাকাটা হারে টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় টিউশন ফি যৌক্তিক করতে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ সংসদ সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুসকে আহ্বায়ক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ওই কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন; ঢাকা-১৩ আসনের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী। বৈঠকে সদস্যরা জানান, এ আইন সংশোধন করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ফি আদায় করতে পারবে না। প্রয়োজন ছাড়া ফি বাড়াতে পারবে না। ফলে একই বিষয়ে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির ব্যবধান কমে আসবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আফছারুল আমীন বলেন, ‘কমিটির ১২ ও ১৩তম বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির বিষয়টি এসেছে। আমরা বলেছি, টিউশন ফি কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়, তা কারও জানা নেই। এর একটা নীতিমালা থাকা দরকার। তাই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে কাজ করবে।’ উল্লেখ্য, চলতি বছর বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট বসানোর পর ব্যাপক আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এর পরই টিউশন ফির লাগাম টানার উদ্যোগ নেয় সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সরকারের প্রতিনিধি তো আছেনই। এখন ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দিতে হবে কেন? তার মতে, এটা করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র পরিচিতি আর থাকবে না। শেখ কবির মনে করেন, টিউশন ফি নির্ধারণের বিষয়টি আইনে রাখার মানে নেই। বরং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে বড়জোর একটি নীতিমালা হতে পারে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় এক বছর আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চতুর্থবারের মতো সময় দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি স্বাক্ষর করা ওই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তা পেয়েছে। এর পাশাপাশি ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যারা গেছে তাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। তবে যেগুলো একেবারেই শর্ত মানবে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
https://www.banglatribune.com/national/72353/%E0%A6%86%E0%A6%A7%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F
1/25/2016
Bangla Tribune
Govt critique
47
রামপাল পরিবেশ আন্দোলন বৃদ্ধি
রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী
রামপালে তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি যে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না, তার ‘প্রমাণ’ দিয়ে এই প্রকল্প সরানোর দাবি প্রত‌্যাখ‌্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে একদল পরিবেশবাদী এবং বাম দলের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের বক্তব‌্য নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকার প্রধান। বঙ্গবন্ধুকন‌্যা হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকদের তার উপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বিরোধিতাকারীদের ‘অপপ্রচারে’ কান না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। গণভবনে বিকালে সরকার প্রধানের এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর স্বাগত বক্তব‌্যের পর পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন একটি ‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনা দেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বনের কাছে বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের নজির দেখানোর পাশাপাশি সুন্দরবনে যে কোনো দূষণ এড়াতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। এরপর রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে একটি প্রামাণ‌্যচিত্র দেখানো হয়। ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ‌্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, যা বিশ্ব ঐতিহ‌্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে দাবি করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বাম দলগুলো। তেল-গ‌্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ‌্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পর সুন্দরবন রক্ষা কমিটির ব‌্যানারে আরেকটি নাগরিক কমিটি আন্দোলন করছে। তারা বলছে, কয়লাভিত্তিক এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ‌্য সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমি আপনাদের সামনে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিব, বাস্তবায়নাধীন রামপাল-বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।” কেন রামপালে বিদ‌্যুতের অব‌্যাহত চাহিদা মেটাতে উৎপাদন এখনকার প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২০২১ সালের মধ‌্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি হচ্ছে। রামপালের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ স্বল্প মেয়াদে কুইক রেন্টাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কিন্তু কুইক রেন্টাল কোনো স্থায়ী ব‌্যবস্থা নয়। দীর্ঘস্থায়ী বিদ‌্যুৎ ব‌্যবস্থায় কয়লার ব‌্যবহার বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি। স্থান হিসেবে রামপালকে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজন সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। সেজন্য কয়লা খনির কাছাকাছি অথবা সমুদ্র উপকূল বা গভীরতা-সম্পন্ন নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আরেকটি বিবেচ্য দিক হচ্ছে যতদূর সম্ভব কম সংখ্যক মানুষের স্থানান্তর করা। স্থানীয়দের উপর প্রভাব ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করলেও তা নাকচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। “আসলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জায়গা নেওয়া হয়েছে ৯১৫ একর। এর মধ্যে ৪৬৫ একরে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে। বাদবাকি জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে এবং সবুজায়ন করা হবে।” আট হাজারের বেশি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে খালেদার দাবি নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রকৃতপক্ষে এলাকাটিতে মানুষের কোনো স্থায়ী বসতি ছিল না। কোনো বসতি উচ্ছেদ করা হয়নি। নিচু, পতিত জমি মাটিভরাট করে উঁচু করা হয়েছে।” এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন আর থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। “কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে। লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।” বন থেকে কত দূরে সুন্দরবনের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে রামপাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি হচ্ছে বলে জানান। সুন্দরবন তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন আছে। আমাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।” ভারতে বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ‘আইনি বাধা’ থাকার বিষয়ে খালেদার বক্তব‌্যের জবাবে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের সঙ্গে ভারতের ওই রকম নীতিমালার তুলনা সঠিক নয়। দূষণ প্রতিরোধে ব‌্যবস্থা বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র থেকে বায়ু, শব্দ দূষণ; কয়লা পরিবহনের কারণ নদী দূষণ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। গভীর সমুদ্র হতে কভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহৃত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। “বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৪ কিলোমিটার দূরে শব্দ যাবে না। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশুর নদী থেকে পানি নিয়ে ব্যবহারের পর তা শীতল করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। কোনো দূষিত বা গরম পানি নদীতে ফেলা হবে না। যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তা অত্যন্ত নগণ্য। “শুষ্ক মওসুমে পশুর নদীর প্রবাহের মাত্র দশমিক শূন‌্য ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ভাগের এক ভাগ পানির প্রয়োজন হবে। এই পশুর নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে।” সর্বাধুনিক পদ্ধতি বড়পুকুরিয়ায় সাব ক্রিটিকাল তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের পর রামপালে অত‌্যাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিরোধিতাকারীদের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বড়পুকুরিয়া একটি সাব-ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট। সাব-ক্রিটিক্যাল এবং আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে।” প্রস্তাবিত নকশা তিনি বলেন, সাধারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮ শতাংশ, সেখানে আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্টের দক্ষতা ৪২ থেকে ৪৩ শতাংশ। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকালে দূষণের মাত্রা শূন‌্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। “একই পরিমাণ কয়লা পুড়িয়ে আমরা দেড়গুণ বিদ্যুৎ পাব। সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা এখানে ব্যবহার করা হবে। কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।” দূষণ প্রতিরোধে সর্বাধুনিক যত ধরনের প্রযুক্তি পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহারের নিশ্চায়তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্লু গ্যাস টেম্পারেচার, নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন‌্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম (CEMS) থাকবে। অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতিও বসানো হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইএসপি (Electro-static Precipitator) থাকবে যা উদগীরণকৃত ফ্লাই অ্যাশের ৯৯.৯৯ শতাংশ ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। “এই ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে এফজিডি (Flue gas desulphurization) স্থাপনের ফলে ৯৬ শতাংশ সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই সালফার গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে।” রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনীর উচ্চতা ২৭৫ মিটার হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। “এই এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের বিপরীত দিকে। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থও যদি নিঃসরণ হয়, তবে তা সুন্দরবনের দিকে নয়, উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে।” যুক্তরাষ্ট্রেও বনের কাছে বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বনভূমির মাঝখানে, কাছে এমনকি শহরের মধ্যেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকার তথ‌্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তার দেওয়া তথ‌্য অনুসারে- যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি ন্যাশনাল পার্কের এক কিলোমিটারের মধ্যে, ভিয়েতনামের কুয়াং নিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্ব ঐতিহ‌্য হ্যা লং বে ৬ কিলোমিটার দূরে, জাপানের ইয়কোহোমায় ইসোগো বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবাসিক এলাকার কাছে, তাইওয়ানের তাইচুং বিদ্যুৎ কেন্দ্র শহরের প্রাণকেন্দ্রে, জার্মানির ক্রাফটওয়ার্ক-মুরবার্গ এবং রেইনহফেন ড্যাম্ফক্রাফট বিদ্যুৎ কেন্দ্র শহর সংলগ্ন ও নদীর তীরে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে এবং সেখানে কয়লাভিত্তিক ৭ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু থাকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য জার্মানির ফিশনার গ্রুপকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, “কাজের মান নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। আমরা এ বিষয়ে কোনো আপস করব না।” এক্সিম ব‌্যাংক না এলে ‘নিজস্ব অর্থায়নে’ ভারতের এনটিপিসি ও বাংলাদেশের পিডিবির সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে, যে কোম্পানি এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রটি করছে।
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1205020.bdnews
8/27/2016
Bdnews24
Govt leaning
48
রামপাল পরিবেশ আন্দোলন বৃদ্ধি
‘উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের মহোৎসব’
বাংলাদেশ সরকার উন্নয়নের নামের প্রকৃতি ধ্বংসের মহোৎসবে নেমেছে, এমনটাই দাবি একজন অ্যাক্টিভিস্ট৷ সুন্দরনের কাছে রামপালে এবং বাঁশখালিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাই চলছে আন্দোলন৷ ভারতের সহায়তায় সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ ক্ষমতাসীনরা মনে করে, মুসলিম প্রধান দেশটির উন্নয়নে অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন৷ তাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তৈরির প্রাথমিক উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে৷ যদিও এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, তাসত্ত্বেও সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রামপালে যে প্রযুক্তিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে ভারতের তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ এবং উড়িষ্যায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় জনগণের বাধার মুখে সেসব উদ্যোগের একটিও সফলতার মুখ দেখেনি৷ বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্ট্যাডিসের প্রধান নির্বাহী আতিক রহমান মনে করেন, সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইস্যুতে জনগণের উদ্বেগকে উপেক্ষা করছেন৷ এমনকি সরকারের পরিবেশ বিভাগও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, জানান তিনি৷ রাজপথে সক্রিয় অ্যাক্টিভিস্টরা পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগকে আমলে নিয়ে আন্দোলনরত অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা পানি ও বায়ু দূষণ এবং বনের মধ্য দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে৷ আর তাই রামপালের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারা৷ এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট লাকি আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ব্যানারে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে একমাত্র ছাত্র সংগঠন হিসেবে বরাবরই ছাত্র ইউনিয়নের সরব উপস্থিতি আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় কমিটির ব্যানারে এ পর্যন্ত দুটি লংমার্চের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি – সাধারণ মানুষ প্রকৃতি বিনাশী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷ ২০১৩ সালের লংমার্চের সময় দেখেছি, বাগেরহাটের দ্বিগরাজে সমাবেশস্থলে আগে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে তবে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সেভাবে সম্পৃক্ত করছে না বলে জানিয়েছেন লাকি৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে দু-একটি বক্তৃতা-বিবৃতি শোনা গেলেও এ বিষয়ে তাদের কোনো কর্মসূচি নেই৷ তারা ক্ষমতায় থাকাকালেও এধরনের জনবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল৷'' লাকি আক্তার মনে করেন, ‘‘উন্নয়নে নামে প্রকৃতি ধ্বংসের মহোৎসবে নেমে পড়েছে সরকার৷ রামপাল কিংবা বাঁশখালীর মতো জনবিরোধী প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করাকেই নিজেদের ব্রত হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা৷'' অনলাইনেও চলছে প্রতিবাদ লাকি আক্তারদের রাজপথের আন্দোলনকে অনলাইনে সহায়তা করছে একটি ফেসবুক পাতা৷ ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয় ‘‘সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না'' পাতাটিতে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে৷ এই পাতার মডারেটর অনিরুদ্ধ কিরন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত আমার কাছে মনে হয়েছে রীতিমত নিজের পেটে নিজে ছুরি চালানোর সামিল৷'' সাধারণ মানুষ রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানিয়েছিল৷'' মূলত দু'টি উদ্দেশ্য নিয়ে পাতাটি পরিচালনা করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ কিরন৷ প্রথমত, সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলনকে অনলাইনে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা৷ আর দ্বিতীয়ত এ বিষয়ে অনলাইনে যত ডকুমেন্ট তৈরি হচ্ছে তা এক জায়গায় করে রাখা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আরেকটা বড় উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি মানুষকে বিষয়টা জানিয়ে মাঠের আন্দোলনে মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়৷'' দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন' ডয়চে ভেলের ‘‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম'' প্রতিযোগিতার সামাজিক পরিবর্তন বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘‘সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন''৷ অনিরুদ্ধ কিরন এ জন্য ডয়চে ভেলের প্রতি কৃতজ্ঞ৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম এই আন্দোলনকে যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধকারে রেখেছে, সেখানে জার্মান আর্ন্তজাতিক রেডিও যখন বিশ্বপরিমণ্ডলে এ রকম একটি জায়গায় আমাদের তুলে ধরেছে, তখন আসলেই আমরা হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞ৷'' দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনকে ভোট দিতে ক্লিক করুন এখানে৷ খেয়াল রাখবেন, ভোট দেয়ার আগে প্রথমে ওয়েবসাইটটিতে ‘লগ-ইন' করতে হবে৷ আর ‘লগ-ইন' অপশন পাবেন সাইটটির উপরের দিকে৷ সেখানে থাকা ফেসবুক বা টুইটার বাটনে ক্লিক করে লগ-ইন করুন৷ এরপর ‘সামাজিক পরিবর্তন' বিভাগ এবং ‘সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন' বাছাই করে টিপে দিন ভোট বাটন৷ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ভোট দেয়া যায়৷
https://www.dw.com/bn/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97/a-19195176
6/18/2016
DW
Govt critique
49
রামপাল পরিবেশ আন্দোলন বৃদ্ধি
আধা সরকারি হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়!
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি আধা সরকারি হয়ে যাচ্ছে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের পরিপ্রে​ক্ষিতে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এমন প্রশ্নই তুলছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি ঢোকানোর প্রক্রিয়া শুরু করা এবং শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সরকার ঠিক করে দেওয়ার কথা বলায় এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, আমলারা নানাভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান দেখভালের পরিবর্তে বা এগুলোর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক ভূমিকার বদলে নিয়ন্ত্রণের দিকেই আমলাদের ঝোঁক। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯১টি। এগুলোতে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বেসরকারি পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সরকার, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একবাক্যে শিকার করেন যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। তা ছাড়া আগে যেখানে হাতেগোনা দুচারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা দিতে, এখন ওই সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। আইন সংশোধনে কমিটি সর্বশেষ ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন হয়, যেটির মূল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠকে আইনটি সংশোধনে পাঁচ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ইউজিসি চেয়ারম্যান নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এসব উদ্যোগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা বা মালিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, এ ধরনের সংশোধনী আনা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। ফলে কার্যত এগুলো আধা সরকারি হয়ে যাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ সালে সংশোধন করার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি পাস হয়। কিন্তু উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এ বিষয়টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। তাদের সেই সুপারিশ বহাল রেখে আইনটি পাস হয়। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি আছেন, যাদের অনেকেই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে উপস্থিত হলেও ভূমিকা রাখতে পারেন না। কেউবা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণাই রাখেন না। আবার কিছু কর্মকর্তা স্রেফ সিন্ডিকেটে যোগ দেওয়ার সম্মানী পেয়েই সন্তুষ্ট থাকেন বলে অভিযোগ আছে। সিন্ডিকেটে প্রতিনিধি দিয়ে যখন এই অবস্থা, তার মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতারা বলছেন, তারা নানারকম আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে এবং বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারও কোনও সহায়তা দেয় না। কিন্তু নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এতে সভাপতিত্ব করেন। ইউজিসির কর্মকর্তারা ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। আইন সংশোধনী কমিটির বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইনে নানা বিধিবিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়। কেবল ট্রাস্টি বোর্ডেই নয়, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি, শৃঙ্খলা কমিটি, শিক্ষক নিয়োগ কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করারও প্রস্তাব করা হয়। জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধনের দাবি উঠেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সংশোধনী চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হবে। জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আইনে যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা চলছে। তবে ইউজিসি কেবল সুপারিশ করতে পারে, চূড়ান্ত করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে। টিউশন ফি নির্ধারণের চিন্তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি নিজেরাই নির্ধারণ করে। সরকার বলছে, টিউশন ফি নির্ধারণের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো অভিযোগ উঠেছে-কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গলাকাটা হারে টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় টিউশন ফি যৌক্তিক করতে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ সংসদ সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুসকে আহ্বায়ক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ওই কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন; ঢাকা-১৩ আসনের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী। বৈঠকে সদস্যরা জানান, এ আইন সংশোধন করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ফি আদায় করতে পারবে না। প্রয়োজন ছাড়া ফি বাড়াতে পারবে না। ফলে একই বিষয়ে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির ব্যবধান কমে আসবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আফছারুল আমীন বলেন, ‘কমিটির ১২ ও ১৩তম বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির বিষয়টি এসেছে। আমরা বলেছি, টিউশন ফি কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়, তা কারও জানা নেই। এর একটা নীতিমালা থাকা দরকার। তাই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে কাজ করবে।’ উল্লেখ্য, চলতি বছর বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট বসানোর পর ব্যাপক আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এর পরই টিউশন ফির লাগাম টানার উদ্যোগ নেয় সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সরকারের প্রতিনিধি তো আছেনই। এখন ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দিতে হবে কেন? তার মতে, এটা করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র পরিচিতি আর থাকবে না। শেখ কবির মনে করেন, টিউশন ফি নির্ধারণের বিষয়টি আইনে রাখার মানে নেই। বরং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে বড়জোর একটি নীতিমালা হতে পারে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় এক বছর আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চতুর্থবারের মতো সময় দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি স্বাক্ষর করা ওই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তা পেয়েছে। এর পাশাপাশি ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যারা গেছে তাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। তবে যেগুলো একেবারেই শর্ত মানবে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
https://www.banglatribune.com/national/72353/%E0%A6%86%E0%A6%A7%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F
1/25/2016
Bangla Tribune
Govt critique
50
রামপাল পরিবেশ আন্দোলন বৃদ্ধি
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল ভারতের পরিবেশবাদীরা
পরিবেশ এবং প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করা অন্তত কুড়িটি ভারতীয় সংগঠন বলছে বাংলাদেশের রামপাল প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসা উচিত ভারতের। তাদের কথায় এর ফলে শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়, ভারতীয় সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূল অঞ্চলেও পরিবেশ ও মানুষের জীবিকার ওপর এর প্রভাব পড়বে। এই নিয়ে ভারত সরকারের ওপরে চাপ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনগুলি। ভারতীয় সংগঠনগুলি বলছে, বাংলাদেশে যেভাবে রামপাল বিরোধী আন্দোলন চলছে, তারপরেও ভারতের ওই প্রকল্পে জড়িত থাকা কখনই উচিত হবে না। প্রকল্পটি সুন্দরবনের কিছুটা বাইরে তৈরী হলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব গোটা সুন্দরবন এবং তার বাইরের এলাকাতেও পড়তে বাধ্য বলেই মনে করছে পরিবেশবাদী এবং বনাঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কাজ করা এইসব সংগঠনগুলি। বনাঞ্চল বা পরিবেশ যেহেতু কোনও ভৌগলিক সীমারেখা মানে না, তাই ভারতের সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূলীয় এলাকাগুলিতেও রামপাল প্রকল্পের প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে মনে করছে এই সংগঠনগুলো।
https://www.bbc.com/bengali/news-37707412
10/19/2016
BBC Bangla
Govt critique
51
রামপাল পরিবেশ আন্দোলন বৃদ্ধি
জঙ্গিবাদের দিনে রামপাল কেন?
দেশ একটা ভয়াবহ সঙ্কটে আর আপনারা আছেন তেল গ্যাস রামপাল নিয়ে। এমন প্রশ্ন উঠেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আন্দোলনের কর্মী হিসাবে কিছুটা উত্তর দেবার চেষ্টা করছি। এখানে বলে রাখি, যারা জঙ্গিবাদ/সাম্প্রদায়িকতা/ধর্মীয় গোড়ামি নিয়ে নিয়মিত লিখছেন, গবেষণা করছেন, নিউজ করছেন, আপনাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আপনাদের কাজের সঙ্গে আমাদের কাজ সাংঘর্ষিক-তো নয়ই, বরং একটা আরেকটার পরিপূরক। আপনারা বলছেন এই মুহূর্তে দেশে দরকার একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এই বিষয়ে আমাদেরও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু রামপালের আন্দোলন কি একটা পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়? এই আন্দোলনে গান আছে, নাটক আছে, ফটোগ্রাফি আছে, ফিল্ম আছে, এনিমেশন আছে, কার্টুন আছে, স্যাটায়ার আছে, পড়াশুনা আছে, একটা বিকল্প উন্নয়নের দর্শন আছে, যুক্তির চর্চা আছে, বিজ্ঞানকে জানার বোঝার চেষ্টা আছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে বিস্তর পড়াশুনা আছে। এখানে মিছিল আছে, আবার মিছিলের পথে পথে গান, নাটক, কবিতা আছে। এখানে গ্রাম বাংলার পালস আছে, বাঘ পাখি হরিণ আছে, সুন্দরী, কেওড়া, গজারি আছে, সুন্দরবনের গভীর ইকোলজিকে বোঝার চেষ্টা আছে, পশুর নদীকে সালফারের বিষ থেকে বাঁচানোর আকুতি আছে, চার লক্ষ প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকার চিন্তা আছে। তরুণদের অংশগ্রহণ আছে। ক্ষমতাকে এবং গণবিরোধী প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো তথ্য আছে, সাহসও আছে। তুমি কয়লার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারো, মন্ত্রী মিনিস্টার হতে পারো, বিশেষজ্ঞও হতে পারো, কিন্তু আমি পাবলিক, এবং সংবিধান অনুযায়ী এই দেশের মালিক, তাই আমার কনসার্ন আমলে নিয়েই তুমি পলিসি বানাবা, এই গভীর রাজনৈতিক উপলব্ধি আছে। মা মাটি মোহনা ধ্বংস হতে দেবোনা -এমন স্লোগান আছে। এটা আমার সংস্কৃতি না? এটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন না? তাহলে কোনটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন! আমরা সবাই বলছি আমাদের তরুণদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। স্বপ্ন নাই। এই ভ্যাকুয়েমে জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়েছে। তাই সামনে আদর্শ লাগবে। কিন্তু এই আদর্শটা, এই স্বপ্নটা কেমনে তৈরী হবে? এটা তো আকাশ থেকে পড়বেনা। এর জন্যে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন দরকার সেটা কেমনে হবে? স্টেইটের স্পন্সরশীপে? ট্রেইনিং দিয়ে? মানব বন্ধন করে? বিচ্ছিন্নভাবে গান বাজনা করে? কর্মসূচি দিয়ে? ধর্মকে গালমন্দ করে? এই দেশের মাটির সঙ্গে, ফসলের সঙ্গে, নদনদীর সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে, মানুষের ঘামের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরী হলেই না হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। গত কয়েক সপ্তাহে রামপাল প্ল্যান্টের ক্ষতি নিয়ে লেখাগুলো ভাইরাল হয়েছে। প্ল্যান্টের অর্থনৈতিক ক্ষতি, কয়লার বিষ, সুন্দরবনের ক্ষতি, এই আলোচনাগুলো কিন্তু খুব সহজ না, কিন্তু তবু ছেলেমেয়েরা পড়ছে, হাজারে হাজার শেয়ার হচ্ছে। যে ছেলেটা সুন্দরবনকে বোঝার চেষ্টা করছে, কয়লার ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছে, পশুর নদীর জন্যে যার মন কেমন করছে, একটা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাংলার রূপ রস গন্ধ যার কাছে কিছুটা হলেও পৌঁছেছে, সে হতে পারবে জঙ্গি? ধর্মান্ধ? কেউ বলছে এই আন্দোলন ভারত বিরোধী। তাই এতো পপুলার। কিছুটা সত্যতা এখানে হয়তো আছে। কিন্তু আন্দোলনের প্রতিটা পর্যায়ে একটা কথা বারবার প্রচার করা হয়েছে। আর সেটা হলো, এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা আছে। ভারতের বিভিন্ন ফরেস্ট ইউনিয়ন, ট্রেইড ইউনিয়ন, সাইন্স ক্যাম্পেইন বরাবরই এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েচে। লং মার্চে তাদের ১২ জন হেঁটেছেন আমাদের সঙ্গে। পথে পথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে, ভারত রাষ্ট্র আর ভারতের গণমানুষ এক না। এনটিপিসি আর আদানির কয়লা প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে সারা ভারত জুড়ে কত যে গৌরবময় আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। ২৮ তারিখের পুলিশি হামলার পর এই বন্ধুরাই একের পর এক সলিডারিটি মেসেজ পাঠিয়েছে। কলকাতায় পর পর কয়েক দফায় গান হয়েছে, প্রতিবাদ হয়েছে, মুম্বাইয়ের আইআইটিতে ‘সেইভ সুন্দরবন’ ফটো ক্যাম্পেইন চলছে। আমাদের বন্ধু তারিণী একটা ছবি তৈরী করেছে এই আন্দোলন নিয়ে। ছবির নাম, এক হও লড়াই করো। নিজ নিজ রাষ্ট্রের গণবিরোধী প্রকল্পগুলোর সামনে ভারত বাংলাদেশের মানুষ যে এক হতে পারে, একটা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই বুঝটাও যদি তৈরী হয় সেটা বড় অর্জন নয়? আরো কথা আছে। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাঁশখালীতে চায়নার প্রজেক্ট, রূপপুরে রাশিয়ার প্রজেক্ট, আর বঙ্গোপসাগরে আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তিগুলো বাতিলেরও দাবি উঠেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতা বিকাশের কথা উঠেছে বারবার। এই আন্দোলন তাই সবগুলো বিদেশী কোম্পানির হরিলুটের বিপক্ষে। এই আন্দোলন শুধুই বাংলাদেশ রক্ষার। সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক চেতনা এগুলোতো দীর্ঘদিনের চর্চার বিষয়। দুদিনে অর্জনের বিষয় না। এই মুহূর্তে আমরা আছি অন্ধকারে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, দিনে দিনে আমরা সাম্প্রদায়িক হয়েছি, ধর্মের নাম অসহিষ্ণু হয়েছি, যুক্তিহীন হয়েছি, বিবেকহীনও হয়েছি। কোথাও কোনো স্বপ্ন নেই। আলো নেই। এই সময়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এটা একটা আলোর জায়গা। সুন্দরবনকে বাঁচানোর এই আন্দোলনেই আছে আবহমান বাংলা। বাংলার নদী, মাটি, শিকড়, ফুল আর ফসল। ধর্মের নামে খুন খারাবি আর অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা ছড়ানোর দিনে এখানেই তৈরী হয়েছে একটা সিস্টেমেটিক বিজ্ঞান আর যুক্তি চর্চার প্ল্যাটফর্ম। এই আন্দোলনে অসংখ্য তরুনের সাপোর্ট, সুন্দরবনকে নিয়ে তাদের উচ্ছাস, বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের স্বপ্নেরই প্রকাশ। রামপালের আন্দোলন তাই গুটিকয়েক পরিবেশবাদীর রোমান্টিক আন্দোলন নয়। এটা একটা পূর্ণাঙ্গ সাংকৃতিক আন্দোলন। এটা একটা বিজ্ঞানমনস্ক আন্দোলনও। এটুকু বিশ্বাস করি, এমন একটা আন্দোলনের স্পিরিট এবং এনার্জি যত ছড়াবে, এই দেশে তরুণদের জঙ্গি হবার সম্ভাবনা ততই মলিন হবে।
https://www.bagerhatinfo.com/blog/22582/
8/2/2016
Bagerhatinfo
Govt critique
52
রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা
বাংলাদেশে ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ
ডিসেম্বর ১৩, ২০২২: বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)-এর সহযোগিতায় ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত। এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রেফিউজি অ্যাডমিশন প্রোগ্রামের অংশ হবে এবং এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর সমন্বিত উদ্যোগের অন্যতম উপাদান যার মূল লক্ষ্য হল রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাধীন, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা। যুক্তরাষ্ট্র পুনর্বাসনের জন্য ইউএনএইচসিআরের জমা দেওয়া সুপারিশ বিবেচনা করবে। বার্মার সামরিক বাহিনীর হাতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত এবং আমরা চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বার্মা থেকে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বার্মা থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য ১.৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি। তাৎক্ষণিক মৌলিক চাহিদাগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগের উন্নতির মাধ্যমে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে শক্তিশালী করে আমাদের মানবিক সহায়তা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং এই নৃশংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন, একটি অভূতপূর্ব বাস্তুচ্যুতি-সংকটের মুখে শরণার্থী পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নেতৃত্বকে প্রতিফলিত করে; কারণ বিশ্বজুড়ে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অস্থিতিশীলতা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। শরণার্থীদের উদার আশ্রয়দাতা হিসাবে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বাসন উদ্যোগে সমর্থনের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
https://bd.usembassy.gov/bn/28983-bn/
12/13/2022
USEmbassy
Neutral
53
রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা
রোহিঙ্গা' ও 'শরণার্থী' বলবে না বাংলাদেশ সরকার
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কী নামে অভিহিত করা হবে সেটি নিয়ে সরকারের মাঝে এক ধরনের দোদুল্যমানতা ছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের 'শরণার্থী' হিসেবে বিবেচনা করতে চায় না সরকার। সেজন্য বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' হিসেবে অভিহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব সেদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শরণার্থীর মর্যাদা দিলে সেটি দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলছেন, 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' বলার ক্ষেত্রে কিছু যুক্তি আছে। মি ইমাম বলেন, " আমরা সরকারের তরফ থেকে বলছি এরা মিয়ানমারেরই নাগরিক। মিয়ানমারের সরকার এবং মিলিটারি এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। অতএব এর সমাধান তাদেরকেই করতে হবে। অর্থাৎ তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঐ দিক থেকে আমাদের যুক্তিটা জোরালো হয়।" বাংলাদেশ সরকার মনে করে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিলে সেটি তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হবে। তাছাড়া শরণার্থী হিসেবে থাকলে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য থাকবে। শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরেও এ দফায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর তাদের থাকার জন্য সরকার বনভূমির প্রায় তিন হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য দেশি বিদেশী ত্রাণ গ্রহণ করছে সরকার। ত্রাণ কাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাদের শরণার্থীর মর্যাদা না দিয়ে ভিন্ন কোন নামে অভিহিত করলে বাংলাদেশের কতটা লাভ হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন। মি: হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী শরণার্থী। কারণ রোহিঙ্গারা অত্যাচারিত হয়ে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে এসেছে। "তাদেরকে কেন অন্য নামে ডাকা হচ্ছে আমি তো বুঝতে পারছি না। আমি তো মনে করি তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করা উচিত। কারণ শরণার্থীদেরই অধিকার আছে নিজ দেশে ফিরে যাবার, সেটা যতো সময় লাগুক না কেন," বলছিলেন সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করছে না। কারণ তারা মনে করেন মিয়ানমার যেহেতু রোহিঙ্গা শব্দটি স্বীকার করে না সেজন্য বাংলাদেশও এ শব্দটি ব্যবহার না করলে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। শরণার্থী বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরুর সি আর আবরার মনে করেন, রোহিঙ্গাদের 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' বললে পরিস্থিতির কোন তফাৎ হবে না। মি: আবরার মনে করেন, শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার কিছু সুবিধা আছে। কারণ শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব শুধু আশ্রয় দানকারী দেশের উপর নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপরও বর্তায়। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে সেটি অনেকটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়মুক্তি দেবার মতো হবে বলে মনে করেন মি: আবরার। তিনি বলেন, " ১৯৯২ সালের মার্চ মাসের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন, তাদেরকে সরকার শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। তাদেরকে কি সরকার ফেরত পাঠাতে পেরেছেন? পারেন নি।" তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' হিসেবে বর্ণনা করলেও বাস্তব পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন,'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' নামটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবহার করতে চায়। তবে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর এনিয়ে আরো আলোচনা হবে।
https://www.bbc.com/bengali/41531494
10/6/2017
BBC Bangla
Govt leaning
54
রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় কি স্থায়ী হবে?
১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশের ওপর বেশ আন্তর্জাতিক চাপ আসে প্রথম রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এবং পরে আশ্রয়প্রার্থীদের অমতে প্রত্যাবাসন না করানোর জন্য। নিজ গৃহ থেকে উৎপাটিত হাজার হাজার নরনারী সীমান্তে পৌঁছালে তাদের ঠেকানো সীমান্তরক্ষীদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলত দুই মাসের মাথায় দুই লাখ শরণার্থী কক্সবাজার-বার্মা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এদের রাখা হয় প্রথমে সীমান্তসংলগ্ন কয়েকটি অস্থায়ী শিবিরে। শিবিরগুলো বিস্তৃত ছিল নাফ নদীর তীর থেকে কক্সবাজার হয়ে বান্দরবান এলাকার নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের বয়স মাত্র সাত, দেশ কিছুদিন আগে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে গেছে। দেশে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সদ্য শেষ হয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশ তখন নাজুক। এই পরিস্থিতে দুই লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় ও ত্রাণ দেওয়া ছিল আয়ত্তের বাইরে। প্রথম এক মাস আমরা ধাক্কাটা সামলে ছিলাম জেলার ত্রাণসামগ্রী দিয়ে। এরপর অন্যান্য জেলা থেকে পাঠানো সরঞ্জাম দিয়ে। কয়েক দিন পর আসতে শুরু করে বিদেশি সাহায্য, প্রথম আন্তর্জাতিক রেডক্রস, পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসে। এর ওপর ছিল আন্তর্জাতিক শরণার্থী সাহায্য সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান বাংলাদেশের জন্য যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল, তেমনি ছিল নিরাপত্তার হুমকি। কারণ, রোহিঙ্গারা সবাই নিরীহ ছিল না, এদের মধ্যে ছিল কিছু ব্যক্তি, যারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে আরাকান রাজ্যে পৃথক রোহিঙ্গা ভূমির চিন্তা করত। এদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র ধারণ করে আরাকানে গোপনে হামলা চালাত। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা শিবির থাকলে এখান থেকেও তারা এই গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে আমাদের কাছে (স্থানীয় প্রশাসন) খবর ছিল। এসব কারণে জেলা প্রশাসন থেকে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করি, যাতে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘকালীন আশ্রয়ের চিন্তা না করে তাদের প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়। আর এ প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে শুধু বর্মি (বর্তমানে মিয়ানমার) সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। সুখের বিষয়, এ সুপারিশ সরকার গ্রহণ করে এবং বর্মি সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় ১৯৭৮-এর শেষ দিকে। প্রথমে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা হয় ঢাকায়। পরেরটি ঠিক আলোচনা নয়, এটি ছিল বার্মার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর দলের কক্সবাজার সীমান্তে চাক্ষুষ রোহিঙ্গা শিবির দর্শন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে কথাবার্তা। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে সে দলকে স্বাগত জানাই এবং তাদের নিয়ে শিবিরে শিবিরে ঘুরি। তৃতীয় ও শেষ আলোচনা হয় আরাকান রাজ্যের মংগদু শহরে, যা সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। আমিও দলে ছিলাম। আলোচনায় শরণার্থীদের বিনা প্রতিবন্ধকতায় বার্মা সরকার ফিরিয়ে নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিতে কিস্তিতে কিস্তিতে শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়ার স্থান ও সময়সীমা স্থির হয়। স্থান নির্ধারিত হয় ঘুনধুম সীমান্ত পোস্ট। প্রথম শরণার্থী দল ফেরত যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয় ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও দুটি সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমটি হলো রোহিঙ্গাদের নিজেদের থেকে, আর দ্বিতীয় হলো আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর উত্থাপিত। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত ব্যক্তি প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণা চালাতে শুরু করে যে শরণার্থীরা আরাকানে ফিরে গেলে তাদের ওপর নির্যাতন হবে। তারা দাবি করে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদত্ত নিরাপত্তার আশ্বাস এবং পুনর্বাসনে সাহায্য। এদিকে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে থাকে যে রোহিঙ্গাদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরাকানে ফিরতে বাধ্য না করা হয়। প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণা শরণার্থী প্রত্যাবাসনকাজে বেশ বাধা সৃষ্টি করে এবং এর সমাধান করতে প্রশাসনকে বেশ বেগ পেতে হয়। একপর্যায়ে কক্সবাজারের একটি শিবিরে যখন শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য নাম নিবন্ধনের কাজ চলছিল, তখন রোহিঙ্গাদের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টিকারী কিছু ব্যক্তি সরকারি কর্মচারীদের ওপর আক্রমণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় এবং তাতে কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মারা যায়। এ ঘটনায় কিছু হতাহত হলেও প্রত্যাবাসন নিবন্ধনের কাজে পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গা গোলযোগকারীরা বাধা দেয়নি। বাধা আসে আরও পরে, যখন প্রত্যাবাসনের প্রথম দফার শরণার্থীদের ঘুনধুম সীমান্তবর্তী শিবিরে জড়ো করা হয় আরাকানে প্রত্যাবাসনের জন্য। প্রত্যাবাসনের আগের রাতে বেশ কিছু রোহিঙ্গা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শিবিরের পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায় এবং তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। তারা সম্পূর্ণ শিবিরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং দাবি জানায় যে প্রত্যাবাসনের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তারা এ দাবি তাদের এক মুখপাত্রের মাধ্যমে স্থানীয় উখিয়া থানায় জানায়। আমি ঘটনার রাতে কক্সবাজারে ছিলাম। খবর পেয়ে আমি ও জেলা পুলিশ সুপার উখিয়ায় পৌঁছে যাই। তখন মধ্যরাত। সারা কক্সবাজার মহকুমায় তখন ছিল পুরো একটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, তার এক অংশ ছিল উখিয়া থানায়। আমরা আর্মড পুলিশের একটি প্লাটুন নিয়ে ঘুনধুম শিবিরে পৌঁছে প্রথমে যাই বাইরের পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে কয়েকজন পুলিশ অস্ত্রবিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে। আমাদের দেখে তাঁরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে থাকেন কীভাবে তাঁরা এক অতর্কিত আক্রমণের শিকার হন। আমাদের সঙ্গে ছিল রোহিঙ্গাদের তথাকথিত মুখপাত্র। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কীভাবে তাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যোগাযোগ করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল ক্যাম্পে আবদ্ধ রিফিউজি কমিশনারের অবস্থা জানতে। মুখপাত্রটি জানালেন যে পুলিশ ক্যাম্প, যা এখন তাদের দখলে, সেখানে বেতার টেলিফোন আছে, আমরা তার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব। আমরা তা-ই করলাম। প্রায় দুই ঘণ্টার আলাপ-আলোচনার পর বিদ্রোহীরা রাজি হলো আমাকে ও আমার মহকুমা প্রশাসককে শিবিরে ঢুকতে দিতে এবং রিফিউজি কমিশনারকে বের করে নিয়ে আসতে। আরও রাজি হলো পুলিশের অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে, তবে তাদের শর্ত হলো, এক, প্রত্যাবাসন বন্ধ করতে হবে এবং যেসব শরণার্থীকে ঘুনধুুমে জড়ো করা হয়েছে, তাদের নিজের শিবিরে ফিরিয়ে নিতে হবে। পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আমি শর্তে রাজি হলাম। কারণ, আমার প্রধান চিন্তা ছিল রিফিউজি কমিশনারের নিরাপত্তা। তাঁকে উদ্ধার ও অস্ত্র ফেরত খুব জরুরি ছিল। ভোররাতে শিবিরে ঢুকে প্রথমে উদ্ধার করি রিফিউজি কমিশনারকে। তারা তাঁকে একটি ক্ষুদ্র কুটিরে আটকে রেখেছিল। রিফিউজি কমিশনার উষ্মা প্রকাশ করলেন শরণার্থী প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার ওপর। তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের অমতে কোনো প্রত্যাবাসন হওয়া উচিত নয়। আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করতে করতে তাঁকে নিয়ে বাইরে এলাম। এসে দেখলাম, বিদ্রোহীরা অস্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ক্যাম্প পুলিশ আবার ফেরত পেয়েছে। আমি আমার পরবর্তী শর্ত অনুযায়ী নেতাদের বললাম, যেসব শরণার্থী পরিবার প্রত্যাবাসনের জন্য জড়ো হয়েছিল, তাদের নিয়ে আমি কক্সবাজারে চলে যাচ্ছি। এই বলে আমি শিবিরের কর্মকর্তাদের সে পরিবারগুলোকে বাসে তুলে দিতে বলি। প্রায় ৪০ জন শরণার্থী নিয়ে আমি কক্সবাজার অভিমুখে রওনা হই। বাসের সামনে ও পেছনে ছিল দুই ট্রাকভর্তি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সেপাই। কক্সবাজার অভিমুখে শরণার্থীদের নিয়ে যাওয়া ছিল একটি পুরো ভাঁওতা, আসলে আমার উদ্দেশ্য ছিল কোনোমতে তাদের বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের হাত থেকে বের করে এনে ঘুনধুম সীমান্ত দিয়ে তাদের আরাকানে প্রত্যাবাসন করা। মাইল পাঁচেক যাওয়ার পর আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস ঘোরাতে বলি। ঘুনধুম শরণার্থী শিবির সীমান্ত থেকে কয়েক মাইল ভেতরে, তাই বাস ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় শিবিরের সামনে দিয়ে যেতে হলো না। আগে থেকেই সীমান্তে খবর দেওয়া ছিল শরণার্থীদের নিয়ে পৌঁছানোর কথা। এবার শুধু বলে দেওয়া হলো সময়। দুপুরের কিছু পর সীমান্তে পৌঁছে দেখি সেখানে আমাদের সীমান্ত কর্মচারীদের সঙ্গে মহকুমা প্রশাসক, আর কিছু সাংবাদিক। ঘুনধুম সীমান্ত নাফ নদীর পাড়ে, কিন্তু নদীটি সেখানে খুব সরু। দেখলাম শরণার্থী পারাপার হওয়ার জন্য বর্মি কর্তৃপক্ষ একটি কাঠের পুল বানিয়েছে। আমরা ৪০ জন শরণার্থী নিয়ে কয়েকজন করে পুল পার হলাম। ওপারে গিয়ে বর্মি কর্তৃপক্ষের কাছে শরণার্থীদের পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে আসি। সম্পূর্ণ ঘটনা শেষ হতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে। সেদিনের প্রত্যাবাসনের পর এ প্রক্রিয়া চলে কয়েক মাস। প্রায় চার মাসে দুই লাখ শরণার্থীর প্রায় সবাই ফিরে যায়। বর্মি সরকার কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি কিংবা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধীরাও। আজ প্রায় চার দশক পর আমরা আবার সম্মুখীন হচ্ছি আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থীপ্রবাহের। এর মধ্যে চার লাখ লোক ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। তারা আসতে থাকবে যত দিন না বার্মা (মিয়ানমার) সরকার নিজেদের উদ্যোগে এ প্রবাহ বন্ধ করে। চার দশকের আগের পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পার্থক্য। রোহিঙ্গাদের উৎপীড়নের সূত্র শুধু মিয়ানমার সরকারই নয়, আরাকানের বৌদ্ধ সমাজও। এর ওপর রয়েছে রোহিঙ্গাদের নিজস্ব সৃষ্ট সশস্ত্র বাহিনী, যারা সরকারি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল কিছুদিন আগে। দুঃখের বিষয়, এত দিন যে গোষ্ঠী পৃথিবীর কাছে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হিসেবে পরিগণিত ছিল, আজ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগের দোহাই দিয়ে অনেক দেশ (যেমন ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র) রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে দ্বিধাবোধ করবে। তাই, আজ আমাদের কাজ হবে প্রথমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসা, আর সঙ্গে ভারতকে এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানানো। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাইরের দুনিয়ায় বাহবা পাব, অনেক ত্রাণসামগ্রীও পাব। যেটা পাব না তা হচ্ছে এই লাখ লাখ লোকের আশ্রয়ের স্থান। এ স্থান বাংলাদেশকেই দিতে হবে, যত দিন না মিয়ানমার সরকার এদের দেশে ফিরে যেতে দেয়। আর তারা ফিরে যাবে তখনই, যখন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করবে।
https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%80%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87
9/16/2017
Prothom Alo
Neutral
55
রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা
রোহিঙ্গাদের নিয়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু এই মানবিকতার কারণেই এখন নানা ঝুঁকিতে পড়েছে দেশটি৷ খুব সহসাই এ সংকটের সমাধান হবে না৷ ফলে সারাদেশে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, আছে নানা চ্যালেঞ্জও৷ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আছে এইডস আক্রান্ত মানুষ৷ বাংলাদেশে এখন কলেরা না থাকলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে সেই সমস্যাও৷ বন উজার হচ্ছে, পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে তারা৷ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ঝুঁকিও আছে এর সঙ্গে৷ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাও প্রকট হতে পারে, বাড়তে পারে নিরাপত্তা ঝুঁকিও৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলো কীভাবে মোকাবেলা করবে সেটা ঠিক করাই এখন একটা চ্যালেঞ্জ৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারকে এবার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে৷ না হলে দেশকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে৷ রয়েছে এইডস, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৯৭ জন এইচআইভি পজেটিভ৷ ফলে ওই অঞ্চলে এইডস-এর ঝুঁকি বাড়ছে৷ তাই এইচআইভি ছড়ানো ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার৷ গত ২৫ আগস্ট থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা৷ নতুন আর পুরোনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস৷ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘‘এইডস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ প্রতিদিনই এইডস-এ আক্রান্ত তিন-চারজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন৷'' তাঁর কথায়, ‘‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯২ জন আগে থেকেই আক্রান্ত ছিলেন৷ নতুন করে চিহ্নিত হয়েছেন পাঁচজন৷ এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে টেকনাফ ও উখিয়ায় দু'টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে৷ সাধারণ রোগের চিকিৎসায় রক্ত পরীক্ষা করিয়ে অনেকের শরীরে এইডস পাওয়া গেছে৷ তবে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকের রক্ত পরীক্ষা করা যাচ্ছে না৷'' জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ ফলে স্থানীয় লোকজনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷ তার ওপর রোহিঙ্গারা যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন৷ ফলে পানিবাহিত রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে৷ আসলে এখনও তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ করা যায়নি৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে৷ আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে এসেছেন৷ রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ কারণ দুই লাখ মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি, সেখানে ৭ থেকে ৯ লাখ মানুষের সেবা দিতে হচ্ছে৷ আমরা এটাও জানতে পেরেছি যে, পোলিও টিকা ছাড়া তাঁরা কোনো ধরনের টিকা পাননি৷ তাই আমাদের শিশুদের জন্য রাখা হাম-রুবেলার টিকা রোহিঙ্গা শিশুদের দেয়া হয়েছে৷ কারণ হাম একবার দেখা দিলে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাছাড়া মিয়ানমারে কলেরা সমস্যা রয়েছে৷ তাই সংকটকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মজুদ ১০ লাখ টিকার ৯ লাখই রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছে৷ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক চাপে পড়বে বাংলাদেশ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুসারে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার৷ সেই হিসাবে এই ৭ লাখ রোহিঙ্গার মাথাপিছু আয় হওয়ার কথা ১১২ কোটি ডলার বা ৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা৷ কিন্তু আশ্রিত হিসেবে রোহিঙ্গাদের আয়ের কোনো উৎস নেই৷ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ব্যয় প্রায় ৭০০ ডলার৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যয় থাকলেও বৈধপথে আয়ের কোনো উৎস নেই৷ সেই হিসাবে এই ৭ লাখ রোহিঙ্গার পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হবে প্রায় ৪৯ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা৷ বর্তমানে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি এই সাহায্য অব্যহত থাকবে সেটা বলা মুশকিল৷ যখন পাওয়া যাবে না তখন বাংলাদেশকেই এই টাকা খরচ করতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়তে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পেছনে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়৷ সেজন্য সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন নিয়োগ করতে হয়েছে৷ এর ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে৷ আর এই ব্যয়টা খরচ হচ্ছে বাজেট থেকে৷ অথচ রোহিঙ্গা সমস্যা না থাকলে এই টাকা অন্য জায়গায় ব্যয় করা যেত৷ সেটা করা গেলে দেশের কিছু মানুষ তো অন্তত ভালো থাকত!'' তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ খুব বড় ধরনের চাপে পড়বে না বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ওই এলাকা থেকে বাইরে আসতে না দিলে ভালো হবে৷ তাঁদের জন্য আমাদের বড় আকারে সাহায্য দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেই আমরা এই খরচগুলো পাব৷ তবে তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতসহ অন্যান্য কাজে আমাদের কিছু লোকবল ওখানে দেয়া লেগেছে৷ সেজন্য প্রশাসনিক ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে৷'' আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এখন স্থানীয় নাগরিকরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন৷ দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জরুরি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে৷ সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসময় এ সব ভুলে যাবে৷ অন্য সমস্যার ভিড়ে তখন এটা ক্ষুদ্র ইস্যুতে পরিণত হবে৷ জানা গেছে, ওই এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে৷ ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ নিয়ম অনুযায়ী আশ্রিতরা কোনো কাজে নিয়োজিত হতে পারবে না, কিন্তু তারা অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লবণ মাঠ, চিংড়ি হ্যাচারি, চাষাবাদের কাজসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়েছে৷ এতে স্থানীয় দরিদ্র শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে৷ উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে শিক্ষাব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে৷ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন৷ সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অর্ধেকেরও কম৷ স্থানীয় কট্টরপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মী যোগাতে অনেক রোহিঙ্গা যুবককে কাছে টানছে বলেও অভিযোগ আছে৷ রোহিঙ্গারা যদি রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ তাছাড়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এর জন্য তাঁরা দেশীয় দালালদের সহায়তায় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছেন৷ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জানান, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, মাত্র ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) পাচ্ছে রোহিঙ্গারা৷ এভাবে এনআইডি নিয়ে তারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে৷'' তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়কে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দীর্ঘদিন আটকে রাখা যায় না৷ ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা তরুণরা সপ্তাহে একদিন রেশন তুলবে আর বাকি দিনগুলো বসে থাকবে, তা হবে না৷ তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দেখা দেবে৷ তারা ক্যাম্প থেকে গোপনে বেরিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে৷ কক্সবাজারে পর্যটনে ধস নামার আশঙ্কা রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা আছে৷ এখনই রোহিঙ্গা নারীদের কক্সবাজারে অবাধে চলাফেরা করতে দেখেছেন অনেকে৷ দেহ ব্যবসায়ও অনেক নারীকে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে৷ এ নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন, উদ্বিগ্ন প্রশাসনও৷ এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারকে অনেকেই পাশ কাটিয়ে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন৷ এমনটা হলে কক্সবাজারের পর্যটনে ভয়াবহ ধস নামতে পারে৷ কক্সবাজারের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে সাড়ে তিনশ' হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে৷ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের অনেককেই হোটেল-মোটেলে দেহব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে৷ এঁদের মধ্যে এইডস আক্রান্তরাও রয়েছেন৷ তাঁদের সঙ্গে পর্যটকসহ হোটেল-মোটেল শ্রমিকদের শারীরিক মেলামেশায় বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অনেকে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় দেশে এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা আছে৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলায় তাঁরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন৷ এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের কাছেও তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন৷ পুরনো রোহিঙ্গারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ' করে নানা রকম অবৈধ ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছেন৷ কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ৷ অভাব অনটনে পড়া রোহিঙ্গা নারীরা যদি কক্সবাজারে অবাধে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে অনেকেই সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন৷ এমনকি দেশের মানুষও পরিবার নিয়ে সেখানে যেতে অনাগ্রহ দেখাবেন৷ রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে কট্টরপন্থি মনোভাবাপন্ন যুবকদের কাছে টানার চেষ্টা করছে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন৷ এত বেকার যুবকের মধ্যে হতাশা কাজ করা স্বাভাবিক৷ জঙ্গি সংগঠনগুলো এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে৷ মৌলবাদী দলগুলোও যে এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, এমন তথ্যের কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দারা৷ রোহিঙ্গা যুবকরা মাদক পাচারে আগে থেকেই জড়িত৷ বাংলাদেশে ইয়াবা যা ঢোকে তার ৯০ ভাগই মিয়ানমার থেকে৷ ইয়াবা এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা৷ তাঁদের এ সব কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে এ দেশের কিছু মানুষ৷ অভিযোগ রয়েছে, এবারও পালিয়ে আসার সময় অনেক রোহিঙ্গা সঙ্গে করে কিছু ইয়াবাও এনেছেন৷ তাঁরা যখন দলে দলে এখানে ঢোকেন, তখন তাঁদের তল্লাশি করে ঢোকানোর কোনো সুযোগ ছিল না৷ নিরাপত্তা বিশেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বলা হচ্ছে আরসার ২০০ সদস্য দা-কুড়াল এবং কিছু ছোট অস্ত্র নিয়ে একই সময়ে সেনা ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারসহ ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে৷ আমার যতটুকু সামরিক জ্ঞান আছে, তাতে মনে হচ্ছে, অত অল্পসংখ্যক মানুষের, এত কম সময়ে একটা নিয়মিত বাহিনীর পক্ষে এ ধরনের হামলা চালানো কিছুতেই সম্ভব নয়৷ বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দিতে তারা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) তাদের লোক দিয়ে এ হামলা করিয়েছে কিনা, সেটা চিন্তা করতে হবে৷'' তিনি বলেন, প্রচুরসংখ্যক ৯-১০ বছরের শিশু কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে৷ যাদের সামনে বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে এবং বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ তারা এক সময়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে৷ তেমনটা হলে এটা শুধু মিয়ানমারের জন্যই নয়, আশ্রয়দাতা দেশের জন্যও নেতিবাচক হতে পারে৷ তাই ওইসব শিশুর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে৷ পাহাড়-বনের অপূরণীয় ক্ষতি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কের দু'পাশে কালো রঙের পলিথিন দিয়ে বানানো হয়েছে শত শত ঝুপড়িঘর৷ যতদূর চোখ যায় একই চিত্র৷ পাহাড়-বনাঞ্চল এখন আর কিছুই চোখে পড়ে না৷ পাহাড়গুলো কেটে এই ঝুপড়িঘরগুলো বানানো হয়েছে৷ বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার হাজার একর পাহাড় কেটে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি করা হয়েছে৷ এই ঝুপড়িঘরগুলো রোহিঙ্গারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷ ফলে ওই এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ধসে পড়তে পারে পাহাড়৷ এতে বহু মানুষ হতাহতের আশঙ্কাও করা হচ্ছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘‘মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি৷ কিন্তু পাহাড়গুলো কেটে তারা যে আবাসস্থল বানাচ্ছে, তাতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল৷ এক সময় হয়ত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে, নতুন করে হয়ত গাছও লাগানো যাবে, কিন্তু পাহাড়গুলোর ক্ষতি আর পূরণ করা যাবে না৷ অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে তো আর পাহাড়ের কাটা জায়গা পূরণ করা যাবে না৷ এই পাহাড়গুলো ১৫-২০ মিলিয়ন বছরের (দেড় থেকে দু'কোটি বছর) পুরনো৷ পাহাড়গুলো কাটার ফলে এখন বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মধ্যে পানি ঢুকে পড়বে৷ এতে যে কোনো সময় পাহাড় ধসে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে৷ ফলে ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছেই৷ আর যাতে ক্ষতি না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে৷ এখনই ব্যবস্থা না নিলে আমাদের এই ক্ষতি আর পূরণ করা সম্ভব হবে না৷ কক্সবাজার জেলা বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির জানান, উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী ও আশপাশের পাহাড়ের প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে৷ এছাড়া টেকনাফ রেঞ্জে ৪৫০ একর, পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর এবং শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গা বসতি করা হয়েছে৷ কক্সবাজার এলাকার পাহাড় ও বন নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়া৷ এই অধ্যাপক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরিবেশ এবং বনভূমির কথা চিন্তা করলে রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷ সবাইকে রান্না করে খেতে হচ্ছে৷ এক লক্ষ চুলা যদি থাকে, সেই এক লক্ষ চুলার জন্য প্রতিদিন যদি ন্যূনতম পাঁচ কেজি জ্বালানি ধরি, তাহলে প্রতিদিন পাঁচ লক্ষ কেজি কাঠ পুড়ছে৷ এগুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের উখিয়া টেকনাফের জঙ্গল থেকে যাচ্ছে৷ এই অবস্থা অব্যহত থাকলে বনভূমির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে৷'' স্থানীয় পরিবেশবাদীদের হিসাব অনুসারে, পাহাড়ের আশেপাশের জায়গা ধরলে রোহিঙ্গাদের বস্তির জায়গার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর৷ এই বিপুল পরিমাণে পাহাড় কাটায় এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা৷ যে কোনো সময় বড় রকমের পাহাড়ধস ঘটার আশঙ্কায় তাঁরা উদ্বিগ্ন৷
https://www.dw.com/bn/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6/a-40749406
9/29/2017
DW
Govt critique
56
রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা
ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা
ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়। বিষয়টি সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। মিয়ানমারে ফিরে আবার নির্যাতনের মুখে পড়ার ভয়ে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সরেজমিন গিয়ে এবং টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা মিলেছে। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল করিম ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা ৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরও ১৮ জন রোহিঙ্গা ভারত থেকে এসেছে। তাদের যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে। শুনেছি অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত ১০ দিনে ১১১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৬৮ জন সদস্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের কাছের স্থাপিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এরা সবাই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। নতুন আসা এসব সদস্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, গত কয়েক দিনে ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের কেরাইনটেলা এলাকা থেকে পালিয়ে তিন পরিবারের ১২ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে (শূন্যরেখা) ঠাঁই নিয়েছেন। এদের মধ্যে সাত শিশু, দুই নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছেন। এরমধ্যে টেকনাফের হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরের নুর আলম ও সানজিদাসহ এক পরিবারের পাঁচজন এবং বাহারছড়া শামলপুর রোহিঙ্গা শিবিরে আজিজ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক ভারতের জম্মু-কাশ্মির থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বলে জানিয়েছেন উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউছুফ ও টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘তিন দিন আগে জোহর আহম্মদ ও তার স্ত্রীসহ এক পরিবারের ছয়জন রোহিঙ্গা ভারতের কাশ্মির থেকে পালিয়ে এসে আমার শিবিরে পৌঁছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তবে বর্তমানে তারা শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে।’ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, ‘সম্প্রতি ভারত সরকার সে দেশে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়। এই ভয়ে তারা সে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। তাদের কাছে ভারত ও ইউএনএইচসিআর-এর দেওয়া আইডি কার্ডও রয়েছে।’ ভারতে কাশ্মির থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের বাহারছড়া শামলপুর রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবক আজিজ উল্লাহ জানান, তিনি চারদিন আগে ভারত থেকে পালিয়ে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের আইয়ুবের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারের মংডু হাসসুরাতা গ্রামের আজিম উল্লাহর ছেলে। আজিম উল্লাহ পরিবার নিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের কেরাইনটেলা এলাকায় বসবাস করতেন। আজিজ উল্লাহ বলেন, ‘ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে টেকনাফের শামলাপুর হাতকুলা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখানে দীর্ঘ ১২ বছর শৈশব জীবন কাটিয়ে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে ভারতের কাশ্মিরের কেরানিটেলাই এলাকায় চলে যাই।’ সেখানে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসতি রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, ‘ভারতের কাশ্মিরে লোহার দোকানে দিনমজুরি করে সংসার চলতো। তবে অনেক সময় কাজের টাকা মিলতো না। ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাছাড়া সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেই ভয় সব সময় কাজ করছিল।’ আজিজ উল্লাহর বর্ণনা মতে, ভারতের কাশ্মির থেকে কলকাতা পৌঁছাতে তিন দিন সময় লেগেছে। সেখান থেকে রাতে দালালের মাধ্যমে সাতক্ষীরা এলাকার একটি ছোট খাল পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে চট্টগ্রামের গাড়িতে করে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছে মামা মোহাম্মদ আইয়ুবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভারতে স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে এসেছেন তিনি। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচাজ্ বদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের কাশ্মির থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে এক যুবক আশ্রয় নেওয়ার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’ টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, চারদিন আগে ভারত থেকে এক রোহিঙ্গা যুবক পালিয়ে এসে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তার কাছে সে দেশের ইউএনএইচসিআর কর্তৃক প্রদত্ত কার্ড রয়েছে। তিনি বলেন, এই রোহিঙ্গা শিবিরে ২ হাজার ৬২৫ পরিবারে ১৩ হাজার ৭০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও নারী। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, চলতি মাসে ভারত থেকে পালিয়ে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এসব রোহিঙ্গাকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। পরে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
https://www.banglatribune.com/country/chitagong/406641/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE
1/11/2019
Bangla Tribune
Govt critique
57
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে তথ্যগুলো জানা দরকার
বাংলাদেশের পার্লামেন্টে বুধবার পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, যে আইনের প্রস্তাবের পর থেকেই উদ্বেগ, বিতর্ক আর সমালোচনা চলছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়। আইনটি প্রস্তাবের পর থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, আইনটির অনেক ধারায় হয়রানি ও অপব্যবহার হতে পারে। তবে মি. জব্বার সংসদে দাবী করেছেন, সংবাদকর্মীরা যেসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা সংশোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কি রয়েছে? • ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশ পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। আইনে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সহায়তা করে ওই আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে এবং এজন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। • ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার এরকম অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। • ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে। • কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম. কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা এনধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। • ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। • কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। • বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এর মধ্যে করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
https://www.bbc.com/bengali/news-45585202
9/20/2018
BBC Bangla
Govt critique
58
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি ৫৭ ধারার নতুন সংস্করণ?
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই আইনের ধারার অপপ্রয়োগে সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ ক্রমাগত হয়রানির শিকার হতে থাকলে ধারাটি বাতিলের দাবি ওঠে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই ৫৭ ধারা বাতিল করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন আইন পাস হলে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বাতিলের অপেক্ষায় থাকা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় রয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে। ৫৭ ধারা বাতিল হলে ওইসব কঠোর সাজা থাকবে না বলে মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ২৫, ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারায় ওই অপরাধের বিষয়গুলো ভাগ করে রাখা হয়েছে। অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান ও জামিনযোগ্য-জামিন অযোগ্য বেশ কিছু ধারা রাখা হচ্ছে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ঘুরে ফিরে সেই ৫৭ ধারাই আবার আসতে পারে। রাষ্ট্রের, জনগণের নিরাপত্তা, জঙ্গি তৎরপতা দমনের জন্যে আধুনিক প্রযুক্তিগত নিরাপত্তাসহ যেকোন আইন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে মুক্তচিন্তা ও অবাধ তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো অংশে দুর্নীতি ও পেশীশক্তির প্রদর্শন হতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে। নতুন এই আইনের উপযোগিতা এবং প্রয়োগ কীভাবে হয়, তা দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
https://www.channelionline.com/%e0%a6%a1%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%87%e0%a6%a8/
1/29/2018
Channel online
Govt critique
59
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করবে
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-বাক-স্বাধীনতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে আগের আইনের মতোই এ আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আইনটিতে যেসব ধারা ও শাস্তি রাখা হয়েছে তা গণতন্ত্রের সঙ্গেও সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইন শুধু গণমাধ্যম কর্মীদের জন্যই বৈরী হবে না, অন্য পেশার মানুষরাও এর অপপ্রয়োগের শিকার হতে পারেন। ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধেও এ আইন একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এ আইনের বিষয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সোয়া দুইশ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৯১ সালে বিধান করা হয়েছিল কংগ্রেস বা তাদের সংসদ বাকস্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন পাস করতে পারবে না। যেকোনো কারণেই বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অর্থ গণতন্ত্রকে খর্ব করা। নতুন আইনের ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ধারায় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের জন্য দীর্ঘ কারাদণ্ডের যে ব্যবস্থা সেটা গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাকস্বাধীনতার ওপর এত বিধিনিষেধ থাকার অর্থই হলো আমরা গণতন্ত্র বিসর্জন দিতে চলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার আগের ৫৭ ধারার মতোই অপপ্রয়োগ হতে পারে। বিতর্কিত ৫৭ বাতিল হলেও নতুন কিছু ধারায় ৫৭ ধারার বিষয়বস্তু রাখা হয়েছে। যেটা হয়েছে আগে কিছু ধারার শাস্তি জামিন অযোগ্য ছিল, তা এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর আইনমন্ত্রী বলেছেন, গোপনীয় বা অতি গোপনীয় নথি প্রকাশ গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পড়বে। এখন কোনটি গোপনীয় আর কোনটি গোপনীয় নয় তা ঠিক করতে হবে। এর ব্যাখ্যা পরিষ্কার করতে হবে। আগে ৫৭ ধারা নিয়ে অপপ্রয়োগের যে অভিযোগ ছিল এখানেও সেটি হয় কিনা তা দেখতে হবে। যদি অপপ্রয়োগ হয় তাহলে এটিও নিবর্তনমূলক আইন হবে। তিনি বলেন, এটাও সত্য যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তাদের নিরাপত্তাও থাকতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এটি আইনের মাধ্যমেই নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আইনটি কিভাবে প্রয়োগ হয় সেটি দেখেই চূড়ান্ত বলা যাবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. ফাহমিদুল হক বলেন, আগের ৫৭ ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার বাধার বিষয়ে আপত্তি ছিল। এখন ৫৭ ভেঙে এর বিষয়গুলো নতুন ধারায় এসেছে। নতুন যে ৩২ ধারা যুক্ত হয়েছে তা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মতো। এই আইনের মাধ্যমে সিরিয়াস সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আগের আইনে কিছু ধারার শাস্তি ছিল জামিন অযোগ্য। তা এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এটি এ আইনের ভালো দিক। তিনি বলেন, নতুন আইনের কিছু ধারায় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বা হবে। ডিজিটাল মাধ্যমের অপরাধ এর শাস্তি নিশ্চিত করতে গিয়ে আমাদের মৌলিক পুরনো অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হিসেবে প্রকাশে প্রতিবাদের সুযোগ এখন কমে গেছে। মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সরব। হয়তো তা দমানোর জন্যই এমন আইন। এটি অগণতান্ত্রিক আচরণ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সন্ত্রাস দমনের জন্য একটা আইন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে রকম অপরাধ হয় সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য এরকম একটা আইন করা দরকার। কাজেই যারা রাষ্ট্রের, সমাজের, মানুষের ক্ষতি করতে চায় তাদের দমনের জন্য এরকম একটা আইন থাকা দরকার। আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে অপরাধীদের জন্য প্রণীত আইনটা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় কিনা। তিনি আরো বলেন, যখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা করা হয়েছিল তখনও বলা হয়েছিল যে এটা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হবে। পরবর্তীকালে দেখা গেল যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সেটার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। কাজেই সেটার আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। স্বাভাবিকভাবে এই আইনে অনেক অপরাধের চেহারা দেখতে পাচ্ছি। যেগুলোর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে। এরকম আইন পাস হলে যারা আইন প্রয়োগ করবেন তারা সাংবাদিকদের ওপর অপপ্রয়োগ করতে পারেন। আমাদের দাবি শুধু খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংবাদিকদের যুক্ত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, অনেক সময় মন্ত্রীরা এটা স্বীকারও করেছিলেন যে আইসিটি অ্যাক্টে যে ৫৭ ধারা এটা অত্যন্ত গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক একটা আইন। কারণ এটা আইনের শাসনের জন্য খারাপ। এটা কেউ কেউ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এটা এক ধরনের প্রতিশ্রুতি ছিল যে ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে। কিন্তু আজ ৫৭ ধারার বাতিল না করে বরং ৫৭ ধারার চেয়ে আরো খারাপ বিধান ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ঢুকানো হয়েছে। এটা পুরা জাতিকে ধোঁকা দেয়া, ধাপ্পা দেয়া ছাড়া আর কিছু না। ড. আসিফ নজরুল বলেন, সমস্যা হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিভিন্ন অপরাধকে অত্যন্ত অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই অস্পষ্ট সংজ্ঞায়নের সুযোগ নিয়ে যেকোনো ব্যক্তির পক্ষে বিশেষ করে যারা সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারী রয়েছে বা যারা সৎ সাংবাদিকতা করছেন বা যারা কোনো মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি তুলে ধরছেন, কুশাসন তুলে ধরছেন বা নিপীড়ক কোনো সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরছেন সমস্ত কিছুতে শাস্তি দেয়ার সুযোগ এই আইনে রয়েছে। এই আইনে কতটা কঠোরভাবে প্রয়োগ হবে জানি না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন শুধু গণমাধ্যম নয়, অন্য পেশার লোকদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, একটা আইনে যখন এ ধরনের সুযোগ রাখা হয় বিরোধীদল বা সরকারের সঙ্গে ভিন্নমতপোষণকারী, সরকারের সমালোচক শুধুমাত্র না যেকোনো গণমাধ্যমকর্মী, এনজিও, সিভিল সোসাইটি যে কাউকে এই আইনের অধীনে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার করা এবং অনির্দিষ্টকাল যাবৎ বিচারের যে ভোগান্তি, অনিশ্চিয়তা, শাস্তিদানের যে বিধান রয়েছে এটা এমন ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করবে বাংলাদেশের ভিন্ন মতের চর্চা করা, সৎ সাংবাদিকতা করা, সরকারের অন্যায় অবিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আরো বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এই আইন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এটা ৫৭ ধারা এবং আইসিটি অ্যাক্টের চেয়েও খারাপ একটা আইন। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এটাতে তো উদ্বেগ আরো বাড়ছে। যে বিষয়গুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারার উদ্বেগ ছিল এটার ধারার এদিক ওদিক করা হয়েছে। কিন্তু একই উদ্বেগ রয়ে গেছে। এটা কোনো অংশেই ভালো আইন না। আরো কঠোর কিছু বিষয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন কোনো একটা অফিসের ঘটনা গোপনে ধারণ করি সেটা তো জনস্বার্থে করি। নিজেদের স্বার্থে করি না। এটা তো কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যেগুলো আমাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টকে অনুৎসাহিত করবে এবং যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এটা নিবর্তনমূলক একটা আইনে পরিণত হয়েছে। আমরা যে আশা করেছিলাম তথ্যপ্রযুক্তি আইন বাতিল করে নতুন একটি আইন করা হবে যেটি গণমাধ্যমসহ আরো অনেক বিষয়কে মুক্ত চিন্তার বিকাশে সহায়তা করবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। দুঃখজনকভাবে দেখছি আরো কঠোর আইনের দিকে গিয়েছে সরকার। এটা আমাদের আরো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মিডিয়ার সকল পক্ষের মানুষ চিন্তিত। এ ধরনের আইন কেন করা হলো কি কারণে করা হলো বুঝতে পারলাম না আমরা। আশা করি চূড়ান্তভাবে এটা আইন হিসেবে সংসদে অনুমোদন হওয়ার আগে সকল পক্ষের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করবেন। প্রকৃত উদ্বেগুলো চিহ্নিত করে তারা এটা সংশোধনের ব্যবস্থা করবেন। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যে বিকাশ এবং বিস্তৃতি হচ্ছিল সে জায়গায় অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ চলছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভেতরে এমন এমন বিধান, নিয়মকানুন সংযুক্ত করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতা বলতে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতা খুব বড়ভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়ন হলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে একটি দুর্নীতির রিপোর্ট যদি করতে হয় তাহলে দুর্নীতিবাজের কাছে একজন সাংবাদিককে যেতে হবে এবং তাকে গিয়ে বলতে হবে যে আপনি দুর্নীতি করেছেন এবং আপনার দুর্নীতির রিপোর্ট আমাদের দেন। যদি দুর্নীতিবাজ সাংবাদিককে তথ্য-প্রমাণ দেয়, তাও শুধু মৌখিকভাবে দিলে হবে না। লিখিতভাবে দিতে হবে। যদি দেয় তাহলে সাংবাদিক সেই রিপোর্টটা করতে পারবেন। যদি সে লিখিতভাবে অনুমতি না দেয়, শুধু মৌখিকভাবে অনুমতি দেয় তারপর কোনো সাংবাদিক তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসে লেখেন, তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা হতে পারে। তার জন্য ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। গোলাম মোর্তোজা আরো বলেন, এটা ৫৭ ধারার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর এবং নিপীড়নমূলক। অর্থাৎ সাংবাদিকতার নিজস্বতা, অনুসন্ধান, স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না যদি এখন পর্যন্ত যেভাবে আমরা দেখছি, মন্ত্রিসভায় যেভাবে দেখছি এভাবেই যদি আইন পাস করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আগের ৫৭ ধারা থেকেও নিকৃষ্ট। শুধু সাংবাদিকতা নয় দেশের গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি নিবর্তনমূলক আইন। যার সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্র এখানেও মানুষের যে তথ্য পাওয়ার ও প্রচার করার অধিকার কিংবা বাক স্বাধীনতা রয়েছে তাকে হরণ করার অপপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারি কর্মচারীদের নানারকম অপকর্ম, দুর্নীতি ঠেকানোর একটি হাতিয়ার হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
https://www.jamaat-e-islami.org/news-details.php?category=5&news=6287
1/31/2018
Bangladesh Jamate Islam
Govt critique
60
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে
যেকোনও অনিয়ম-অসদাচরণ তুলে ধরতে সাংবাদিকরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে থাকেন। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’তে সংযোজিত ৩২ ধারা সাংবদিকদের সেই জায়গা সংকুচিত করে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাংবাদিক নেতা, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, আইনজীবীরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় কোনও অনিয়ম তুলে ধরার জন্য এই আইনের ৩২ ধারা ব্যবহার করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনার সুযোগ আছে। সেটি সাংবাদিকের কাজের জায়গা সংকুচিত করে তুলবে। যদিও সোমবার আইনটি পাস হওয়ার পর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটিই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘না। এ আইনে কোথাও কোনও ধারায় সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়নি।’ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশ ও জাতির নিরাপত্তা এবং জঙ্গি দমনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের যুগোপযোগী আইন দরকার ছিল আমাদের। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই পেশাদার সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী হতে পারবে না। আইনের কোনও ধারা যদি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধতা হয়ে দাঁড়ায়, আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’ এই সাংবাদিক নেতা আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত কোনও আইন চূড়ান্ত করার আগে গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, গণমাধ্যমের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কোনও আইন যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘার্ষিক হয়, সেটি চূড়ান্তভাবে সংসদে পাস হওয়ার আগেই আমাদের আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ অপরাধগুলোকে আলাদা আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে আলাদা আলাদা ধারায় সন্নিবেশিত করে সাজার পরিমাণ কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, নতুন আইনের ধারাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে ৩২ নম্বর ধারা। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে।’ আইনটিতে এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি মূলত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে ভেঙে একাধিক ধারা তৈরি করে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরিফ জেবতিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি উঠলো, তখন ওই ধারা বাতিল না করে নতুন আইন করা ধোঁকাবাজি। এ থেকে বোঝা যায়, অনলাইন মাধ্যমের বিস্তার নিয়ে সরকার ভয় পাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আইনের ৩২ নম্বর ধারাটি সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের রক্ষা করার জন্য সংযোজন করা হয়েছে। এমন একটি ধারা সংযুক্ত হলে সাংবাদিক বা সাধারণ নাগরিক— কেউই তাদের হয়রানির বিষয়গুলো তুলে আনতে পারবে না।’ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করছেন, সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মধ্যে পড়া ৩২ নম্বর ধারার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা অনেক সহজ হয়ে গেল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে ঘুষ চাইলে যদি আমি তাকে ধরতে চাই, আমি তার অপরাধের চিত্র তুলছি। যিনি অপরাধ তুলে ধরতে চাইছেন, তিনি অপরাধী হবেন কেন? সরকারি গোপন রেকর্ড কপি করার চেষ্টা যদি করি, তার জন্য তো অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট আছে।’ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘আমি অন্যায় দেখে সেটা রেকর্ড করতে পারব না কেন? তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য। আর সুশাসনই রাষ্ট্র পরিচালনার বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে আমার কাজের জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত করে, নিয়ন্ত্রণ করে কোনও আইন প্রণয়ন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করবে।’
https://www.banglatribune.com/national/288091/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%97%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4
1/30/2018
Bangla Tribune
Govt critique
61
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হবে
আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে ওই ধারার বিষয়গুলো প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রেখে দেয়া এবং এর পাশাপাশি আরো নতুন কয়েকটি কঠোর ধারা তাতে সংযোজন করায় সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২০০৬ সালে প্রণীত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে শুরুতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০১০ সালে এ আইনের আওতায় ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হলে ফেসবুক বন্ধ করা এবং ৫৭ ও ৪৬ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। আবেদনে ধারা দু’টিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ৫৭ ও ৪৬ ধারা কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, তথ্য সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে জবাব দিতে বলা হয়। ২০১৩ সালে যখন আইসিটি আইন সংশোধন করা হয়, তখন স্বভাবতই আশা করা হয়েছিল, ৫৭ ধারার যথাযথ সংশোধন হবে। বাস্তবে সংশোধন হয় বটে তবে সেই সংশোধনীতে ধারাটিকে আরো কঠোর ও শক্ত করা হয়। পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। সন্দেহভাজন যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ক্ষমতা দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এই আইনের আওতায় অপরাধকে জামিনের অযোগ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, এ ধারায় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ কারাদÐ ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর করা হয়। একই সঙ্গে এক কোটি টাকার অর্থদÐের বিধান করা হয়। সঙ্গতকারণেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ উচ্চারিত হয়। অবিলম্বে ধারাটি বাতিলের দাবি জানানো হয়। কিন্তু সরকার তাদের প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও দাবি উপেক্ষা করে ধারাটি বহাল ও কার্যকর রাখে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪১৭টি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই হয়েছে ৫৭ ধারায়। এ ধারায় দায়েরকৃত কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। কয়েকটি মামলায় আসামীদের শাস্তি হয়েছে। কয়েকটি মামলায় আসামীরা খালাস পেয়েছে। বাকী মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ধারাটি এখন ওই আইন থেকে বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হলেও বলা হয়েছে, ৫৭ ধারায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচার এ ধারার ভিত্তিতেই চলতে থাকবে। আলোচনার সুবিধার জন্য ধারাটি উল্লেখ করা প্রয়োজন। ধারাটি এই ‘(১) কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যাহা মিথ্যা, অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়িলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃংখলার অবনতি ঘটে বা ঘটিবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীনে অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদÐে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদÐে দÐিত হইবেন।’ ধারাটি সম্পর্কে একটি বড় অভিযোগ ছিল, এটি অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক। একে ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে যাতে এর অপব্যবহারের সমুহ আশংকা বিদ্যমান। উল্লেখ আবশ্যক, এধারায় দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রেই ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ উঠেছে। মামলা ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকদের যে রূপ নিরংকুশ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তাতেই এই অপব্যবহারে সংঘটিত হয়েছে। ধারাটি সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এই যে, এটি সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষিক। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্যসব আইনে যাই থাক, সংবিধানের আইনই অগ্রাধিকার পাবে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ২ নম্বর ধারায় কিছু বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ৫৭ ধারা এই অনুচ্ছেদ ও ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। স্মর্তব্য, ভারতের আইসিটি আইনে প্রায় অনুরূপ একটি ধারা ছিল যা সেই আইনের ৬৬ ধারা হিসাবে চিহ্নিত ছিল। সেখানে ধারাটির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ উঠলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ধারাটি সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা দিয়ে বাতিল করে দেন। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন, ধারাটি তথ্য অধিকারের ওপর বিরাট এক হুমকি। আইনবিদদের অভিমত: ভারতের আইসিটি আইনের ৬৬ ধারার চেয়ে বাংলাদেশের আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা আরো কঠোর। অত্যন্ত দু:খজনক হলো, ধারাটি সুগ্রন্থিত নয়, অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, অপব্যবহারযোগ্য, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং সর্বোপরি সংবিধানিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রতিভাত হলেও সরকারের তরফ থেকে ধারাটির পক্ষে বরাবরই সাফাই গাওয়া হয়েছে। তাকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করা হয়েছে। বহুল আলোচিত প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় যখন দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠে তখন আইনমন্ত্রী এই মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন যে, অচিরেই ধারাটির সংশোধন অথবা বাতিল করা হবে। এতে সবাই আশ্বাস্থ হয় ও অপেক্ষায় থাকে। সেই অপেক্ষার ফল যে এমন মর্মান্তিক বাস্তবতার মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ক’দিন আগে আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, ৫৭ ধারার অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তখনই তিনি এ সত্য স্বীকার করলেন, যখন ধারাটির বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। সঙ্গতভাবেই এ প্রশ্ন ওঠে, অপব্যবহারের সুযোগ ছিল যে ধারাটির, সেটি আরও শক্ত করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো কেন? এটি কি গণইচ্ছা বা গণদাবির প্রতি উপহাস নয়? এক্ষেত্রে একটি কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। ৫৭ ধারায় বিষয়বস্তুকে চারটি ধারায় বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারার তা সন্নিবেশিত হয়েছে। যারা এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তারা কি মনে করেন, কেউ এটি ধরতে বা বুঝতে পারবেনা? নিজেদের এতটা চালক-চতুর ভাবা তাদের উচিৎ হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও ভয়ংকর ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এটি ৩২ ধারা, যাতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্ত¡শাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার কোনো ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করিতে সহায়তা করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে কম্পিউটার গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের ৩ ধারার গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধের শাস্তির বিভিন্ন বিধানকে ভিন্ন মোড়কে খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গুপ্তচর বৃত্তির অজুহাতে গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার অভিপ্রায়নির্ভর করায় প্রস্তাবিত আইনটি ক্ষেত্র বিশেষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে এবং ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘন সুরক্ষিত হয়ে এরূপ অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটাবে। মানবাধিকার লংঘন মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ সংক্রান্ত যে সমস্ত তথ্যাবলী মানুষের জানার কথা বা জানার অধিকার রয়েছে, এমনকি প্রকাশের অধিকার রয়েছে সাংবাদিকসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীদের তা খর্ব হবে। বলা বাহুল্য, এ ধারা আইনটিতে থাকলে আমলা বা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ছাড়া অন্য যে কারো পক্ষে সরকারি, অধাসরকারি, স্বায়ত্ত¡শাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার দফতরে ক্যামেরা, মোবাইল ফোন বা পেনড্রাইভের মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বিপদজ্জনক হয়ে পড়বে। এমন কি ওই সব দফতরের ই-মেইল বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কাউকে কোনো তথ্য বা নথির কপি পাঠানোও অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। এটা দুর্নীতিবাজ আমলা ও সরকারি দলের লোকজনদের সুরক্ষা দেবে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতির কোনো তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ সংবাদকর্মীদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাংবাদিকতা গুপ্তচরবৃত্তি নয়, তবে এই ধারার সুবাদে সাংবাদিকদের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার সমূহ আশংকা থাকবে। এ প্রসঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি প্রসঙ্গে অপরাধের ধরন ও শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনা ও বাক স্বাধীনতায় আঘাত হানবে। এই সঙ্গে তা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আস্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ধারাটি নিয়ে সংবাদকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবধি নেই। তাদের মতে, এ ধারার কারণে সাংবাদিকতা বলে কিছু থাকবে না। বিশেষ করে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। কে না জানে, অনুসন্ধানী রিপোর্টের কারণেই সাম্প্রতিক বছর গুলোতে দুর্নীতি-দুষ্কৃতির অনেক তথ্য দেশবাসী জানতে পেরেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে নথিতথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে হলে হলমার্ক, ইউনিপে টু, ডেসটিনির লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ কেলেংকারির কথা দেশের মানুষ হয়তো কখনোই জানতে পারতো না। জানতে পারতো না ভুয়া মুক্তিযোদ্ধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে প্রমোশন হাতিয়ে নেয়া, গুনে গুনে ঘুষ খাওয়া কর্মকর্তার হদিস বা স্বর্ণের ক্রেস্টে স্বর্ণ কম থাকার কথা। সরকারি দলের বহু নেতা-এমপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, ক্ষমতার অপব্যহার, মাদক ব্যবসা, মানবপাচার ইত্যাদির যে কথা-কাহিনী মানুষ জানতে পেরেছে, তাও হয়তো তাদের পক্ষে জানা সম্ভব হতো না। একজন মন্ত্রী তো রাখ ঢাক না করেই বলেছেন, ‘আপনারা গণমাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, তাতে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। তাদের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। তারা তো জনপ্রতিনিধি। এ আইনের বলে এখন হয়তো এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।’ প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২ ধারা ছাড়াও আরো কিছু ধারা রয়েছে যেগুলো তেমনভাবে আলোচনায় আসেনি। অথচ সেগুলোও কম বিপদজ্জনক নয়। মোটকথা, এই আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সরকারের ইচ্ছা ও স্বার্থের বাইরে গিয়ে কি-ও করা যাবেনা। সরকার একে তার মর্জি অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বিবেচনায়, আইনটি আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর। আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে। বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন নির্যাতন, জুলুম ও অবিচার করতেই এটি করা হয়েছে। যে কোনো আইনের লক্ষ্য জনকল্যাণ। পরিবর্তিত বাস্তবতায় জনচাহিদার নিরিখে নতুন নতুন আইন প্রণীত হয় কিংবা পুরানো আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার-সংশোধন সাধিত হয়। এটা সবদেশে সবকালেরই সাধারণ রেওয়াজ। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে কোনো আইন হতে পারে না। এ ধরনের আইন নিবর্তনমূলকই হয়ে থাকে। অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে আরেকটি ‘কালো আইন’ বা ‘নির্বতনমূলক’ আইন হিসাবে অভিহিত করেছেন। যে আইন গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী, মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি স্বরূপ সে আইন কীভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে! ক্ষমতাধীনরা তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন দৃঢ় ও নিরংকুশ করতে নিবর্তনমূলক আইন করে থাকে। আমাদের দেশও এ ধরনের আইন অতীতে বেশ কিছু হয়েছে। এসব আইন ক্ষমতাসীন ও দেশবাসী-কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনেনি। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে সংসদে সেটি পাস হবে। আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োযোজন ও সংযোজনের সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক আলোচনা করতে পারেন, পরামর্শ ও সুপারিশ পেশ করতে পারেন। সম্পাদক পরিষদ আইনটির ব্যাপারে অংশীজনদের সংশ্লিষ্ট করার তাকিদ দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, অংশীজনদের সংশ্লিষ্টতা ও পরামর্শ এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
https://m.dailyinqilab.com/article/116768/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%80%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87
2/11/2018
Daily Inqilab
Govt critique
62
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা আন্দোলনের নেতা থেকে ডাকসুর ভিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সদ্য নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের জন্ম পটুয়াখালীর গলাচিপার এক প্রত্যন্ত চরে। শৈশব কেটেছে সেখানেই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। গত বছর কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে প্রথম সারির নেতা ছিলেন নুরুল। ছাত্রলীগের হাতে বেধড়ক পিটুনির পরও আন্দোলনে অনড় থাকায় ছাত্রদের নজর কাড়েন তিনি। তবে মামলা-হামলা এখনো পিছু ছাড়েনি নুরুল হকের। ডাকসুর নির্বাচনের দিনও একটি মামলার আসামি হয়েছেন। এদিন রোকেয়া হলে ভোটের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। আর নির্বাচিত হওয়ার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়েছেন। নুরুলের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপার এক প্রত্যন্ত চর বিশ্বাস গ্রামে। তাঁর বাবা ইদ্রিস হাওলাদার চর বিশ্বাস বাজারে একটি খাবারের দোকান চালান। মা নিলুফা বেগম ১৯৯৩ সালে মারা যান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর বড় ভাই ঢাকায় ব্যবসা করেন, ছোট ভাইও সেই ব্যবসায় যুক্ত। বিয়ে হয়েছে দুই বোনের। নুরুলও বিবাহিত। স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ঢাকার কবি নজরুল কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। পাশাপাশি তিনি উত্তর চর বিশ্বাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। গতকাল কথা হয় নুরুলের বাবা মো. ইদ্রিস হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন নুরুল। পরিবারের টানাপোড়েনের কারণে নুরুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক চাচাতো বোনের কাছে। গাজীপুর থেকে নুরুল এসএসসি এবং ঢাকার উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। মুহসীন হল ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার পর মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদকের পদ পান। মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল প্রথম বর্ষের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। স্পষ্টভাষী হওয়ায় তিনি জ্যেষ্ঠদের নজর কাড়েন। সবকিছু যাচাই–বাছাই করেই তাঁকে পদ দেওয়া হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের একাধিক হামলার শিকার হন নুরুল হক। গত বছরের ৩০ জুন ছাত্রলীগের হাতেই বেদম মার খেয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন এক শিক্ষকের পা। সেই চরম পরিস্থিতিতে অসহায় নুরুলের ছবি সারা দেশে আলোচিত হয়। গত বছরের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়। এরপর সেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহযোগীদের নিয়েই ডাকসুতে লড়তে আসেন নুরুলেরা। চর বিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার পর এলাকায় নুরুলের খুব একটা যাতায়াত ছিল না। তবে তিনি ভিপি হওয়ায় তাঁর জন্য গ্রামবাসীও সম্মানিত বোধ করছে। মামলার প্রতিবাদ ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ গত সোমবার ডাকসু নির্বাচন চলাকালে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষকে লাঞ্ছনা ও হলের ভেতর নির্বাচন ব্যাহত করার অভিযোগে মারজুকা রায়না নামে হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী নুরুলসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য ছয় আসামিরা হলেন লিটন নন্দী, খন্দকার আনিসুর রহমান, উম্মে হাবীবা বেনজির, শেখ মৌসুমী, শ্রবনা শফিক ও আকতার হোসেন। তাঁরা সবাই ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। মামলায় দণ্ডবিধির যেসব ধারার উল্লেখ রয়েছে, তাতে কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা, নির্বাচনে অযৌক্তিক প্রভাব প্রয়োগ, নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতিদানের কথা উল্লেখ আছে। মামলার বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আসামিদের পুলিশ খুঁজছে বা পেলেই গ্রেপ্তার করবে এমন কিছু না। এখন সেই মামলার তদন্ত চলছে।’ রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল ও অন্য প্রার্থীরা হঠাৎ করে রোকেয়া হলে ঢুকে অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে ও তাঁর অন্য নারী সহকর্মীদের গালিগালাজ করেন। হলের ২৫ জন আবাসিক শিক্ষক ওই লাঞ্ছনার প্রতিকার চেয়ে তাঁর কাছে চিঠি দিয়েছেন। প্রতিকার না পেলে তাঁরা একযোগে পদত্যাগ করবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি নুরুলদের বিরুদ্ধে ব্যালট ছিনতাইয়েরও অভিযোগ আনেন। যদিও এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ব্যালট ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ উল্লেখ করা হয়নি। মামলার বাদী মারজুকা রায়না প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা (নুরুলসহ অন্যরা) হলের প্রাধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের উদ্দেশ করে প্রচুর বাজে কথা বলছিলেন। বিষয়টি তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত দিয়েছে বলে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেছেন। তবে নুরুল হক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা একটা মিথ্যা মামলা। এটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে জনপ্রিয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন।’ নুরুল হকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল রাতে বিক্ষোভ করেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘ছাত্রলীগের ইন্ধনেই’ ওই মামলা করা হয়েছে। বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদাকে ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি৷
https://www.prothomalo.com/politics/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%BF
3/13/2019
Prothom Alo
Govt critique
63
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিভক্তি
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি গ্রুপকে আন্দোলনের মাঠে দেখা দেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। মূল গ্রুপ ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একটি পক্ষ। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনাকারীদের দালাল বলে অভিহিত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছেন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে কোটাবিরোধী চাকরিপ্রার্থীরা। এরপর বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি করলেও রোববার থেকে তাদের আন্দোলন জোরদার করা হয়। এর মধ্যে সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এমনকি রোববার গভীর রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান আন্দোলনকারীরা। পরে বাসভবনের সামনে রাখা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। এসব ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার বিকালে সচিবালয়ে বৈঠকে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের এ সিদ্ধান্তের পর বিভক্ত হয়ে পড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। একটি পক্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার কথা বলে। অপর পক্ষ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ দুটি গ্রুপের পাশাপাশি আরও একটি গ্রুপকে আন্দোলনের মাঠে দেখা গেছে। যারা সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাকারীদের দালাল আখ্যা দিয়েছে। যদিও মঙ্গলবার এই গ্রুপকে মাঠে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের উত্তেজনা শুরু হয়। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ‘অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়েছে। অপর অংশটি ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে’ ছাত্রদের ওপর হামলা এবং কোটা সংস্কার নিয়ে সংসদে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর সেখানে বলেন, আমরা আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সরকার আমাদের বলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোটা নিয়ে কী করা যায় জানাবেন। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের আন্দোলন বন্ধ থাকবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। মূল কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা খুবই দুঃখজনক। আমাদের হাত দিয়েই এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। যারা আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে, তারাই ভিসির বাসায় হামলা চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এদিকে বিপাশা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থীকে আন্দোলনরতদের ‘নতুন মুখপাত্র’ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তিনি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক দেন। এর ধারাবাহিকতায় আন্দোলনরতদের ওই অংশটির শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এছাড়া অপর একটি বিদ্রোহী গ্রুপের এক আন্দোলনকারী জানান, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল কমিটির সঙ্গে একমত। তবে সরকারের মুখের কথা বিশ্বাস করি না। তিন দিনের মধ্যে সংস্কারের বিষয়ে লিখিত দেয়ার আহ্বান জানান। বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থা কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর সহিংস হয়ে ওঠে এবং ভিসির বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
https://www.jugantor.com/national/37143
4/10/2018
Jugantor
Govt critique
64
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন, টার্গেট কারা?
যেকোন আন্দোলনের একটা টার্গেট বা উদ্দেশ্য থাকে। শুধু গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছিল কোনো টার্গেট ছাড়া। ক্ষোভের জায়গা থেকে জাতির বহু কষ্ট-বেদনা আর আশা-প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর মঞ্চ হিসেবে গণজারণের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথম দুইদিন সিদ্ধান্তহীনতার মাঝে থাকলেও আস্তে-আস্তে সেটি দীর্ঘদিন ধরে চলে। দেশে-বিদেশেও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। সাম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকারসহ পুরো জাতিকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে। দেশের নির্বাচনকালীন এই সময়ে এসে কোটা সংস্কারের দাবি, না হয় সরকার পতনের দাবি-তোলা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ করা হয়। আর সে সাথে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, প্লে-কার্ডের স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে অহিংসভাবে দাবিপূরণের আন্দোলন কীভাবে সহিংস হয়ে পড়ে সেটা ধীরে-ধীরে প্রকাশ পেয়েছে। শাহবাগ মোড়ে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আটকে রেখে জনসাধারণের দুভোর্গের চিন্তা আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাথায় ততটা অনুধাবন না হলেও, যারা পর্দার আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা সুকৌশলে এই ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করেছে। রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা জিম্মি করার অপকৌশল নিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বার বার বলার চেষ্টা করেছে। বুঝিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা থেকে তুলে দিতেও চেয়েছে। একপর্যায়ে আন্দোলনরত কিছু শিক্ষার্থী ফুল নিয়ে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুলিশ অন্যত্র চলে যায়। ভেবেছিল, হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা চলে যাবে। তারা অপরের ক্ষতিসাধন করবে না। কিন্তু পুলিশের এই চিন্তাধারার বিপরীত ঘটনার অঘটন যা হলো এটা উভয়ের জন্য লজ্জার এবং বিপদজনক। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর রীতিমতো রণক্ষেত্র হয়েছে। অল্প বয়সের এই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ভেতরের ষড়যন্ত্র কী হতে পারে, তা কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে বা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। আর বই-কলম আর কম্পিউটারে সময় ব্যয় করা শিক্ষার্থীরা অতোটা বুঝে উঠার কথাও নয়। আবার শিক্ষার্থীরা বুঝে করেছে-এটা বলার পক্ষে আমি নই। তবে তারা ব্যবহার হয়েছে। টার্গেটকারীরা এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেছে নিয়েছে কেন সেটাও বিচার-বিশ্লেষণ করলে বেরিয়ে আসে- ভ্যাট নিয়ে আন্দোলনের পটভূমি। কারণ ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনও সবার নজর কেড়েছিল। ভ্যাটের বিরুদ্ধে এক ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছিল আন্দোলরত শিক্ষার্থী। অবশেষে শেখ হাসিনার আশ্বাসের কারণে ওই আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা মাঠ ছেড়ে শিক্ষালয়ে ফিরে যায়। তাই সুকৌশলে এবারও এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়েছে। আর এটা যে রাতারাতির পরিকল্পনা, তাও কিন্তু নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছে। অনলাইনে গ্রুপ তৈরি করা, সেখানে সবাইকে অ্যাক্টিভ করা, পক্ষের জনমত তৈরি করা। কীভাবে অর্গানাইজড করা হবে, অনলাইন কীভাবে ব্যবহার হবে, কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, কী ধরনের কোড ব্যবহার করে মোবাইলফোন কলে স্থান এবং আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার নিদের্শনার বিষয়াদি; কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর কাজ নয়। এই আন্দোলনকে আতঙ্কিত করা, আন্দোলনকর্মীদের উস্কে দেওয়া, আন্দোলনে সম্পৃক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিক দিকটি জঙ্গি মনোবলে রূপান্তর করার কৌশল ছিল গুজব বা অপপ্রচার ভাইরাল করার মাধ্যমে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবিত শিক্ষার্থী এবি সিদ্দিকের আঘাত পাওয়া ব্যান্ডেজের ছবি নিয়ে ভাইরাল করে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে রটানোর পটভূমিগুলো। তাৎক্ষণিকভাবে গুজবের সফলতা হিসেবে সুফিয়া কামাল হলের গেটের তালা ভেঙ্গে রাতের অন্ধকারে ছাত্রীদের বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। জেলা পর্যায়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। জেলা-উপজেলার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকে ঢাকার বন্ধুদের পাশে থাকার আহ্বান-অনুরোধ জানিয়ে স্ট্যাটাসও ভাইরাল করেছে। ছাত্রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে রণক্ষেত্র তৈরি করতেও তারা সক্ষম হয়েছে। আর এই গুজব বা অপকৌশল তাদের নতুন নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে বেরিয়ে আসবে। তখনও টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা। একদিকে পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়ে-দেখিয়ে কবর খোলা হয়েছিল অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে-বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ করেছে। আর এইসবের ছবি তুলে মিথ্যাচার করে প্রচার-প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলকে ভিন্ন বার্তা দিতে গুজব রটানোর চেষ্টাও হয়েছে। আর এই গুজব রটানো চলতে থাকে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়গুলোতেও। তারা জানে কোথায় আঘাত করতে হয়। তাই বার-বার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো, প্রকৃত ইতিহাস পাল্টানো, স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে জাতির সামনে মিথ্যাচার করা, শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; ২০০৪ সালে ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে করা জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুড়ে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যার পরে সংসদে এবং সংসদের বাইরে গুজব রটানো হয়, শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড ছিল! শেখ হাসিনা গ্রেনেড নিয়ে জনসভায় গিয়েছে-এই গুজব ধোপে না টেকার কারণে পরে জজ মিয়ার নাটক সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বাদাম বিক্রেতা জজ মিয়ার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে। লোভ দেখানো হয়, পরিবারের ভরণ-পোষণ করা হবে। মাসে-মাসে টাকা দেওয়া হবে। শেখ হাসিনাকে প্রায় ২০ বার হত্যাচেষ্টা করেছে। কারণ তারা জানে একমাত্র শেখ হাসিনার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। শুধু এখানেই নয়, পাকিস্তানী ছায়া রাষ্ট্র থেকে মুল ধারার বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য-আদর্শের বাংলাদেশ তিনিই বিনির্মাণ করতে পারবে। তাই পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনা এবং তার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড খ্যাত নেতাকর্মী ও ফলোয়ারদের একের পর এক হত্যা ও বিতর্কিত করার কৌশলও নানা সময়ে দেখা যায়। আর সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হলে। যখন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, কিশোর-নারী এক-কাতারে, যখন নতুন প্রজন্মের সূর্য সন্তান এই আন্দোলনে; তখন পরিকল্পিতভাবে আস্তিক-নাস্তিকের আন্দোলন বলে অপপ্রচার চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী জোট। ফটোশপে কাজ করা ছবি-ভিডিও, মেয়েদের পতিতা বলে গালাগালি এবং মেধাবীদের ধরে-ধরে হত্যার লিষ্ট তৈরি করা, হত্যা করা। যা আজও চাপাতি হাতে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবার আসুন কোটা প্রথা নিয়ে- সংবিধানের আলোকে শুরু থেকেই বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা প্রথা ছিল। সংবিধানের ২৯ এর ৩(ক) উপধারায় বলা আছে, ‘নাগরিকদের যেকোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন উপহার হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়। পরবর্তী ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেওয়া হয়নি। কেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা দেওয়া হয়নি, কারা দেয়নি এগুলো আজকের কোটা প্রথা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জানে কিনা আমার জানা নেই। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালেই এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করেন। নতুন করে যোগ করেন এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। বর্তমানে দেশে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। প্রতিবন্ধী এক শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ। আর এর কোনো শ্রেণিতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য। সরকারি পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং ২০ লাখ ১৬ হাজার ৬১২ জন প্রতিবন্ধী। আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এই তথ্য মতে, মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১০ শতাংশ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষিত থাকছে পাঁচ শতাংশ, ১ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর জন্য এক শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত যেখানে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার শুরু থেকেই কোটার সুযোগ নিশ্চিত করে সেখানে বাংলাদেশ করছে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, কোটাধারীরা কীভাবে মেধাহীন হয়? যারা সকল পরীক্ষায় পাশ করে শুধু মৌখিক পরীক্ষায় কোটার সুযোগ গ্রহণ করে আদতে কী তারা কোটা কার্যকরের মধ্যে পড়ে(?)-এটাও চিন্তা-ভাবনার বিষয় হয়ে পড়েছে। আবার গত তিনটি বিসিএসের নিয়োগে, যেমন- ৩৩তম বিসিএসের ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পদ মেধা কোটা দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। আর ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ পদ মেধা থেকে পূরণ হয়েছে। আর মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে যে ধরনের স্লোগান তুলে ধরা হয়েছে, তাও যৌক্তিক কিনা সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করার আগে আদালত রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন বলেন,‘যারা রিট করেছেন, তারা কি কোটা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী রিট করেছেন, তিনি কি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পাননি? আর অন্যরাও এই কোটার বিষয়ে সংক্ষুব্ধ কিনা?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘রিটকারী এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্য দুজন রিটকারী সাংবাদিক। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী সামনে চাকরির পরীক্ষা দেবেন।’ তখন ওই আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আপনি বলতে চান, আমি আইনে পাস করেছি, এখন ডাক্তার হতে চাই? তিনি তো এখনও সংক্ষুব্ধ হননি। এটা ভবিষ্যতের বিষয়। এখনও তিনি পরীক্ষা দেননি। তার আগেই তিনি রিট করেছেন? কোটা আছে কী আছে না, সেটা সরকারের পলিসি। আপনি সংক্ষুব্ধ কিনা, ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, তা হওয়ার আগেই আদালতে এসেছেন? আপনি তো সাংঘাতিক লোক।’ এখানে বিজ্ঞ আদালতের কথাগুলো পর্যবেক্ষণ করলেই স্পষ্ট বেরিয়ে আসে-আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছে-তারা কখনো, কোনো চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কোটা প্রথার কারণে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে মর্মে আন্দোলন করছে না। বরং লঙ্ঘন হওয়ার সম্ভাবনার বার্তা থেকে আন্দোলন করছে। তাহলে কারা এই ভয়ঙ্কর মিথ্যা, অযৌক্তিক বার্তা দিয়েছে? কোটা প্রথার কারণে মেধাহীনরা এগিয়ে যাচ্ছে আর মেধাবীরা অসহায় আর দুর্বল হয়ে পড়ছে বা হবে-এই দুশ্চিন্তার সফটওয়্যার শিক্ষার্থীদের মাথায় সুকৌশলে কারা ঢুকিয়ে দিয়েছে-এই ধরনের প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। আর ষড়যন্ত্র কতটুকু গভীরে গেছে-এটি বেরিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান সাহেবের বাসভবনের ধ্বংসযজ্ঞ পর্যবেক্ষণ করলে! হামলাকারীরা পরিকল্পিতভাবে মাথায় হেলমেট পড়ে ও মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রুমে-রুমে তল্লাশী করে সকল কিছু চুর্ণবিচুর্ণ করে দিয়েছে। তারও আগে চারুকলার ভিতরে বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভা যাত্রার সকল আয়োজনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সকল কিছু ধ্বংস করেছে। হিন্দুদের বৈশাখ কোনও মুসলমান করতে পারে না বলে মঙ্গল শোভা যাত্রার ও পয়লা বৈশাখ বয়কটের ডাক দিয়েছে, আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। উপস্থিত চারুকলার কিছু শিক্ষার্থী অনুরোধ করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের দালাল বলে বিষোদগার করে। কিছু আন্দোলনকারীর ফেসবুক জুড়ে বৈশাখে কালো শাড়ী আর কালো পাঞ্জাবী পড়ারও জনমত তৈরির কাজ করেছে। সেটি তাদের নির্দিষ্ট গ্রুপেও ভাইরাল করেছে। এই আন্দোলনের মুল টার্গেট ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-সন্ততির কোটা। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও তাদের নাতি-পুতি নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় যে হারে ট্রল করা হয়েছে, কোটা প্রথায় মেধার মূল্যায়ন হয় না বলে যেভাবে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া মিথ্যাচার করেছে-এগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে ঘুরে-ফিরে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটাকেই টার্গেট করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। শুধু স্লোগান ধরা হয়েছে কোটা সংস্কার করতে হবে। কোটা সংস্কারের ৫ দফা দাবি সরকার অনেক আগ থেকেই পুরণ করে আসছে। আন্দোলনরত প্রতিনিধির সাথে আলোচনার পর নতুনভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাসে সরকারের সাথে বসা প্রতিনিধি এক মাসের জন্য সময় মেনে নিলেও পরে ছাত্রশিবিরের গ্রুপটি মাঠে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৬ এপ্রিল ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকারের আশ্বাস পাওয়ার পরেও শিবিরের নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচীর ঘোষণা এবং দিন-রাত মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যুক্তি আন্দোলনকারী শিক্ষাথীদের খুঁজে বের করার অনুরোধ করব। কোটা সংস্কারের দাবির ব্যাপারে এখনি, এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে, নয়তো সরকার পতনের ১ দফা আন্দোলন করার হুমকি প্রদান-এগুলো পুরো আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আর সরকারের ঘোষণার সাথে-সাথে আন্দোলরত সকল শিক্ষার্থীর চাকরি যেহেতু নিশ্চিত না, সেহেতু এই আন্দোলনে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর গভীর ষড়যন্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে লুকানো সম্ভব হলেও-এটি জাতির সত্যিকারের মেধাবীদের বুঝতে অসুবিধে হয়নি। স্বাধনিতাবিরোধীচক্র জানে কোথায় আঘাত করলে তাদের হীন উদ্দেশ্য হাসিল হবে। আর কীভাবে করলে সেটা জনগণ লুফে নিবে। তাই গুজব রটানো তাদের কৌশলের অংশ হয়ে পড়েছে। যেমনি করে যুদ্ধাপরাধী দোলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদের দেখার গুজব, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেয়ে শিশু মরার গুজব, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে তার গুজবের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবি সিদ্দিকির মুত্যুর গুজব ছড়ানো হয়। মৃত এবি সিদ্দিক জীবিত অবস্থায় মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হলে তখন এক ছাত্রলীগের নেত্রী আন্দোলনরত এক মেয়ের পায়ের রগ কাটার গুজব সৃষ্টি হয়। এই গুজবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার কৌশলে ছাত্রলীগ নেত্রীকে জুতার মালা পড়িয়েছে। তাকে অর্ধউলঙ্গ করেছে। সেই ভিডিও ভাইরালও করেছে। অন্য ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার গুজবের রটনায় সে অপরাধী না হলেও অন্যান্য ছাত্রীদের মারধর করার অপরাধের জন্য আইন আছে, আদালত আছে। আর বিশেষ করে দেশের যে সাংবাদিক সমাজের প্রচার-প্রকাশের কারণে আন্দোলন রাজধানীর বাইরে ছড়িয়েছে, সেসকল গণমাধ্যমকে ইঙ্গিত করে ‘চুতিয়া মিডিয়া’ লেখা প্লে-কার্ড তুলে ধরেছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট লাইভ কাভারের সময় বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের গাল টেনে ধরার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এখানেও নয়। পরিকল্পিতভাবে কিছু সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আঘাতসহ মানসিকভাবেও অপমান করেছে। ঠিক যেভাবে হেফাজতের আন্দোলনের সময় করেছিল। তবে দুঃখজনক হলো, এই গুজবে আমাদের অনেক সচেতন ব্যক্তিবর্গও যুক্ত হয়ে পড়ে অনেক সময়। যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই ধরনের অপপ্রচারে নিজের কান অপরের পিছনে খুঁজতে থাকে। আর তখন তাদের ফলোয়ার, ভাই-বোন, বন্ধুও সেটাকে সত্য বলে নিজেরাও যুক্ত হয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার ও আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার মতন তারা কিছু শিক্ষক পেয়েছে। কিছু সাংবাদিক পেয়েছে। কিছু কলামিষ্ট বা বুদ্ধিজীবী পেয়েছে। আইনজীবী পেয়েছে। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ পদ-পদবী ব্যবহার করা কেন্দ্রীয়-জেলা পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীও পেয়েছে। তারা প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-পুতি নিয়ে ট্রল করেছে। মন গড়া গল্প আর গাল ভরা তথ্য উপস্থাপন করে বলেছেন, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান। নাতি-নাতনীরা দেশের জন্য কী করেছে? তাদের টানতে হবে কেন? এটা বাড়াবাড়ি-বলে মতামত তুলে ধরেছে। কোটা প্রথা সংস্কারের আড়ালে মুলত মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে টার্গেট করা হয়েছে। এই টার্গেট মুক্তিযুদ্ধ সময়কার থেকেই চলে আসছে। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনে এটা স্পষ্ট হয় ১২ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক কোটা প্রথা বাতিল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আন্দোলন প্রত্যাহার বা বাতিল নয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হলো’। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, আন্দোলনকারীরা কোটা প্রথা সংস্কার চেয়েছে, বাতিল নয়। তাহলে বাতিল করা নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই কেন? বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের ব্যাপারে তাদের কোনো অনুযোগ, অভিযোগ বা আবদার নেই কেন-এটা আশা করি, নিজ গুণেই বুঝে নিবেন। আবার তাদের দেওয়া ৬ দফা দাবির মধ্যে কথাও নেই যে সেখানে বলা আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা কোটা সংস্কার চেয়েছি; বাতিল নয়। প্লীজ! মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিল করবেন না। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর রাজাকার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সকল ধন-সম্পদ লুট করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তারা যেভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে, তাদের ধরে রাখা, তাদের জীবনমান উন্নত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আমাদের দায়িত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে, অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র কাজে লাগাতে পারেনি। সরকার পতনের আন্দোলন করে শত-শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেও শেখ হাসিনার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে বিচার-আচার দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে থামানো যায়নি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির গুজব তুলেও কিছু করতে পারেনি। রাজনৈতিক অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ভিন্ন-ভিন্ন গ্রুপ বা জোট করেও কিছু করার সম্ভাবনা দেখছে না। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এখানে ব্যবহার হয়েছে। কেউ জেনে। আবার কেউ না জেনেই। সাধারণ শিক্ষার্থী নিজেরা সকল ষড়যন্ত্রের বাইরে না থাকলে কিংবা সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে বড় ধরনের অঘটন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
https://www.channelionline.com/%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%9f%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8b%e0%a6%b2%e0%a6%a8-%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0/
5/6/2018
Channel online
Govt leaning
65
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা কী, আন্দোলন কেন?
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে সারা দুনিয়ায় কোটা সংরক্ষণ করা হয়। সমতার ভিত্তিতে কোনও দেশকে উন্নত করতে কোটা জরুরি। বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা থাকা স্বাভাবিক। তাহলে কোটা নিয়ে এতো বিতর্ক কেন, কেন আন্দোলন? সংশ্লিষ্টদের মতে, কোটা নিয়ে বিতর্ক থাকার কোনও কারণ নেই। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে কারা কতটুকু পিছিয়ে রয়েছে, কত শতাংশ কোটা রাখা প্রয়োজন, তার কোনও হিসাব নেই সরকারের কাছে। সে কারণেই সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। শুধু যথাযথ সংস্কার না হওয়াতেই যত বিপত্তি দেখা দিয়েছে। কোটা সংস্কারে বিগত সব সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই বারবার আন্দোলন হচ্ছে। কোটা নিয়ে বিতর্ক ও আন্দোলন প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটা কখনোই পার্মানেন্ট নয়। দেশে কোটা সংস্কার হয় না। চার-পাঁচ বছর পর পর কোটা সংস্কার হওয়া দরকার। কয়েক বছর পর পর দেখতে হয় কোটা কতটা কার্যকর আছে। কোটা সব সময় পঞ্চাশ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। ৫০ শতাংশের বেশি সংবিধানসম্মত নয়। এসব কারণেই আন্দোলন হচ্ছে। আর আন্দোলনও যৌক্তিক।’ আকবর আলী খান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, সব মুক্তিযোদ্ধা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে না। তাই সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটা প্রয়োজন নেই। এটা থাকলে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুবিধা নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলবে। তবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখতে হবে।’ কোটা সংস্কার না করার কারণেই বারবার দাবি উঠেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটা সংস্কারে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কার জন্য কত শতাংশ কোটা প্রয়োজন, তা পরিসংখ্যানসহ বণ্টন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তা না হলে বারবার আন্দোলন হতে পারে।’ জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে উপহার হিসেবে কোটা চালু করেছিলেন। যদিও এই উপহারকে সরাসরি কোটা বলার সুযোগ কম। ওই সময় সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মাত্র ২০ শতাংশ নেওয়া হয়েছিল মেধায় (সাধারণ), ৪০ শতাংশ জেলা কোটা আর ১০ শতাংশ ছিল নারী কোটা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার হিসেবে কোটা সংরক্ষণ করা ছিল ৩০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ জেলা কোটা থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে সাধারণদের জন্য ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের সমান ৩০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থেকে যায়। আন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কোনও ধরনের পরিসংখ্যান ছাড়াই ১৯৭৬ সালের পর আবারও ১৯৮৫ সালে কোটা সংস্কার করা হয়। ওই বছর কোটা সংস্কার করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে সাধারণদের জন্য ৪৫ শতাংশ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতোই ৩০ শতাংশ রাখা হয়। এছাড়া জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয় আগের মতোই। আর প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়। কিন্তু কোনও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কোটা ব্যবস্থার এ বিভাজন হয়নি। শুধু তাই নয়, কোটায় প্রার্থী না থাকলেও কোটার বাইরে শূন্যপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়াও হয়নি। উল্টো অবৈধ সুযোগ নিয়ে অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার অভিযোগও এসেছে অনেকবার। পরে, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নতুনভাবে কোটা ব্যবস্থা চালু করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে দেশের সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা বিদ্যমান। বর্তমানে সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটার বিন্যাস হচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এর বাইরে বাকি ৪৫ শতাংশ সাধারণদের জন্য বরাদ্দ। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা ঠিক করে সরকার। ২০১০ সালের ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্রে বলা হয়, জেলা কোটার (১০ শতাংশ) সব পদ জেলার প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জেলা কোটা জাতীয় মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। বিভিন্ন জেলার জন্য বরাদ্দ কোটায় যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত না হলে, নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশেষ কোটার প্রার্থীদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও উপজাতীয়দের জন্য জাতীয় মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর বিশেষ কোটার অধীন স্ব-স্ব কোটার প্রার্থীদের তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এক্ষেত্রে জেলার কোটাও চলে যাচ্ছে অন্য কোটায়, ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে দুর্নীতির। এসব কারণেই কোটার বিরুদ্ধে বারবার আন্দোলন হতে দেখা গেছে।
https://www.banglatribune.com/national/323773/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8
5/13/2018
Bangla Tribune
Neutral
66
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন: দূতাবাসগুলোর বিবৃতির অর্থ কী?
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনকারীদের মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে সেটি নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোটা-বিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দেবার একদিন পরেই সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ে দূতাবাসও বিবৃতি দিয়েছে। এসব বিবৃতি তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে। নরওয়ে দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের অধিকারের উপর ধারাবাহিক হামলার বিষয়টি নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। "সকল বাংলাদেশীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ করার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার অধিকার রয়েছে, " এমন কথা উল্লেখ করেছে নরওয়ের দূতাবাস।
https://www.bbc.com/bengali/news-44790226
7/11/2018
BBC Bangla
Govt critique
67
ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
নিরাপদ সড়কের দাবিতে এসে ট্রাক চাপা
রাজধানীর অন্যান্য জায়গার মতো শনির আখড়ায়ও বুধবার (১ আগস্ট) আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান করছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বাস আটকে চালকদের লাইসেন্স দেখছিল। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই তাদের গাড়ি সাইড করে রাখতে বলছিল শিক্ষার্থীরা। এসময় রাস্তা ফাঁকা পেয়ে উল্টোপথ দিয়ে একটি পিকআপ দ্রুত গতিতে চলে আসে। শিক্ষার্থীরা সেটিকে আটকানোর চেষ্টা করে। পিকআপ চালক গাড়ি না থামিয়ে গতি বাড়িয়ে শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের যাত্রাবাড়ী জোনের এসি ইফতেখায়রুল ইসলামের বরাতে জানা যায়, ‘আমরা এরকম একটি ঘটনা শুনেছি। পিকআপের নম্বরটি সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’ শনির আখড়ার ডিউটি অফিসার নাজনীন আকতার জানান, ‘আমার এমন একটি ঘটনা শুনেছি। তবে ছেলেটিকে কোনও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তা জানা নেই।’ জানা গেছে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোন রিপোর্ট করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যের ভিত্তিতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়া শিক্ষার্থীর নাম জানা গেছে এবং বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিক্ষার্থীর নাম ফয়সাল। ফেসবুকে ফয়সালের বন্ধুরা তার ছবি দিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। তারা বলছে 'ফয়সাল ভালো আছে, আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন'।
https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/1725/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A7%9C%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%95-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE
8/1/2018
Dhaka Tribune
Neutral
68
ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
নিরাপদ সড়ক: ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কোন পরিবর্তন এসেছে?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন এবং একে ঘিরে গত কয়েকদিনের সংঘাত সহিংসতার পর ঢাকার পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। সপ্তাহের কর্মদিবস হলেও মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। সড়কে বাস না থাকলেও অন্যান্য যানবাহন ছিল আগের মতোই। রাস্তায় যে সীমিত সংখ্যক যানবাহন রয়েছে তার বেশিরভাগকে দেখা যায় সতর্ক অবস্থায় চলাচল করতে। কারণ চলমান ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ছিল পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যের পাশাপাশি আনসার এবং রোভার স্কাউটসের সদস্যরা। সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে এবং সড়কে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যেই চলছে তাদের কার্যক্রম। ট্রাফিক সপ্তাহের কার্যক্রম সফল করতে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ি মাঠে নামার কথা জানান সিনিয়র রোভার স্কাউট ফারজানা আক্তার ঝর্ণা। তিনি বলেন, "আমরা মানুষকে বলছি তারা যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হন। যেন ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করেন। আমরা মানুষকে সচেতন করছি, কেন এই সচেতনতা প্রয়োজন সে বিষয়ে তাদের বুঝিয়ে বলছি।" নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন, ট্রাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করে পুলিশ। তবে আদৌ কতোটা আইন মানছে মানুষ? সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিক্সা চালকের লাইসেন্স থাকলেও যে গুটিকয়েক বাস চলছে সেগুলোর বেশিরভাগের নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। বিশেষ করে সরকারি স্টাফবাসগুলো চলছে কোন নিয়মনীতি না মেনেই। এরইমধ্যে পাঁচজন বাস চালককে বনানী থানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান মহাখালি থানার সাব ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন। তবে পুলিশের নজরদারি বেশি ছিল মোটর বাইকের কাগজপত্র পরীক্ষা নীরিক্ষা নিয়ে। এরমধ্যে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায় যিনি নিজেকে পুলিশ সদস্যের মিথ্যা পরিচয়ে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালিয়ে আসছেন। এ ধরণের ঘটনায় কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান সাব ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন। আদতে পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন দেখছেন না বলে জানান বাসের জন্য অপেক্ষারত চাকুরিজীবী সাহানা আক্তার। তিনি বলেন, "রাস্তায় দেখছি পুলিশ বাইকগুলোকে দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র দেখছে। এই জন্য কিছুটা নিয়ম হয়তো কেউ কেউ মানছেন। তবে বাসগুলো ওই আগের মতো রাস্তার মাঝখান থেকেই লোক তুলছে। ইচ্ছামতো চলছে।" এদিকে কাকলি থেকে শুরু করে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত চেকপোস্ট চোখে পড়ে। প্রত্যেকটি চেকপোস্টেই ছিল পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। এছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং আনসার সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। মূলত বেআইনীভাবে চলাচলরত যান ও চালকের নামে মামলা ও জরিমানা দায়েরের কাজ করছেন তারা। তবে চেকপোস্ট পার হয়ে পুলিশের চোখের আড়াল হতেই অনেক যানবাহনকে আগের মতোই এলোমেলোভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ অতিরিক্ত সদস্য নিয়ে মাঠে নামলেও এতো মানুষকে শৃঙ্খলায় আনা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, "যে সব গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস, ইনস্যুরেন্স, রুট পারমিট বা চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, মোটরসাইকেলে তিনজন ও হেলমেট ছাড়া যারা সড়কে নামেন, বা কোন আইন লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনানুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করছি। তবে সবাইকে হাতে ধরে ধরে আইন শেখানো সম্ভব না। এক্ষেত্রে নাগরিকদেরও সেটা মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।" ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে ঢাকার বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭ হাজার মামলা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে অন্তত ৯২ লাখ টাকা। মামলা জরিমানার ভয় সেইসঙ্গে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন ঢাকাসহ সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ফেরাতে বিশেষ করে জন মানুষকে সচেতন করতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মীর রেজাউল আলম।
https://www.bbc.com/bengali/news-45102807
8/7/2018
BBC Bangla
Neutral
69
ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
নকলায় নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ
শেরপুরের নকলায় পরপর কয়েকটি সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৬ জানুয়ারী) দুপুরে নকলা উপজেলা ছাত্র সমাজের আয়োজনে পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মানববন্ধন, শোভাযাত্রা ও সড়ক অবরোধ করে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড়ের একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় তাদের হাতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তারা স্লোগান তোলে- ‘সড়ক সড়ক সড়ক চাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর শিক্ষার্থীরা নকলা থানার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের নকলা-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ করে। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপ জন মিত্র শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এবং নকলার গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টে জেব্রা ক্রসিং, স্প্রিড ব্রেকার নির্মাণসহ ট্রাফিক ব্যবস্থা আরো জোরদার করার আশ্বাস দেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুতসময়ের মধ্যে এসব করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। পরে শিক্ষারা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এসএম মাসুম, রাইয়্যান আল মাহদি অনন্ত, শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ, মুকিত, সুমাইয়্যা, স্বপ্না, মো.মেহেদি হাসান, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ গনমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/719179
1/6/2025
Daily Inqilab
Neutral
70
ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাত বছর দুর্ঘটনা বিশৃঙ্খলা প্রাণহানি আগের মতোই
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে এক অভূতপূর্ব আন্দোলন গড়ে তোলে দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাস হয় ‘‌সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। যদিও পরের ছয় বছরে সেগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। তাই ধারাবাহিকভাবেই বাড়ে সড়ক দুর্ঘটনা আর হতাহতের সংখ্যা। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তী সরকারও এক্ষেত্রে ব্যর্থ। প্রায় এক বছর সময়েও কমাতে পারেনি সড়কের দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা। নেয়নি দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত ৮০ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক যানবাহনের (বাস, ট্রাক, পণ্যবাহী যান) অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে। প্রায় ৬ লাখ ২৬ হাজার যানবাহনের নেই হালনাগাদ ফিটনেস সনদ। বিপুলসংখ্যক চালকের যথাযথ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, এসব যানবাহন ও চালকের সড়কে থাকার কথা নয়। অথচ নজরদারির অভাব আর আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে এসব অবৈধ যানবাহন ও চালক সড়কে অবাধে চলাচল করছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য প্রধানত এসব অবৈধ যানবাহনচালককে দায়ী করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাস ও শৃঙ্খলা ফেরাতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে একাধিকবার ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েও তেমন কিছু করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু এর প্রতিবাদে মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছেন। এখন আমরা যদি কঠোর অবস্থানে যাই, আর মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট দিয়ে দেয়, তাহলে কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তি হবে। এ ভোগান্তি যেন না হয়, সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পুরনো গাড়ি সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।’ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে স্কুল-কলেজের যে শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তারা অনেকে বড় ভূমিকা রাখে। অন্তর্বর্তী সরকারেও এ ছাত্রদের একটি প্রভাব রয়েছে। সরকারের নিরাপদ সড়কসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমেও এ ছাত্রদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। তবে সড়ক নিরাপদ করতে অন্তর্বর্তী সরকারও দৃশ্যমান কিছু করে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ইনজামামুল হক। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। সড়ক নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এ ছাত্রনেতা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সড়কে কাঠামোগত যেসব ত্রুটি ছিল, সেগুলো এখনো রয়ে গেছে। এর মানে সড়ক এখনো আগের মতোই ঝুঁকিপ্রবণ। এ ঝুঁকি নিয়েই আমাদের সড়কে বের হতে হচ্ছে। আগের চেয়ে বরং এখন সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা আরো বেড়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’ সড়ককে নিরাপদ করার রূপরেখা নিয়ে এগোচ্ছেন জানিয়ে ইনজামামুল হক বলেন, ‘‌সড়ক নিরাপদ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের কাছে আমরা কিছু লিখিত সুপারিশ তুলে ধরতে চাই। শুধু বর্তমান সরকার নয়, ভবিষ্যতে যারা এ দেশে সরকার গঠন করবে এ সুপারিশ তাদের জন্যও। এতে সড়ক নিরাপদ করার রূপরেখা থাকবে। এ সুপারিশমালা তৈরির জন্য আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কাজ করছেন বলে অভিযোগ। এর আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপের কারণে ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারায় সংশোধনী আনতে হয় তৎকালীন সরকারকে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও আইনের কিছু ধারার সংশোধনী এনে শাস্তি-জরিমানা কমানোর জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘‌আইনটি নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এক ধরনের চাপ আছে। আবার আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চাপও আমাদের ওপর রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতটা সম্ভব আইন প্রয়োগ করব। কোনো ধরনের সংশোধনী অন্তর্বর্তী সরকার করবে না।’ সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তারা জনবান্ধব ও টেকসই সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা, সড়ক আইন ও সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়ানোরও পরামর্শ দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সমাজের নৈতিকতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। মানুষ আশাবাদী হয়েছিল—এবার সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। সরকারের সংস্থাগুলোও আশার বাণী শুনিয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকেও কতগুলো কমিটমেন্ট এসেছিল। সুশৃঙ্খলভাবে বাস পরিচালনার জন্য পরীক্ষামূলক করিডোর হিসেবে ঢাকার ভিআইপি রোডকে বেছে নেয়া হয়েছিল। মালিকরা বলেছিলেন—গাড়ির ফিটনেস, দরজা বন্ধ রাখা, লিজ বন্ধের মতো বিষয়গুলো দেখভাল করব। বিআরটিএ থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ, পরিবহন মালিক, বিআরটিএ—কেউই তাদের কথা রাখতে পারেনি।’ সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সবার আগে সঠিক পরিকল্পনায় অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সেই সঙ্গে প্রয়োজন সড়ক ব্যবহারকারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা। সবার শেষে প্রয়োজন আইনের শাসন। প্রথম ও দ্বিতীয়টি বাদ দিয়ে শুধু আইন প্রয়োগ করে কোনোভাবেই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।’
https://bonikbarta.com/bangladesh/XLCDrC6cGtE3a8sf
7/28/2025
Bonik Barta
Govt critique
71
ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ২৯ ছাত্রের জামিন হচ্ছে না
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ২২ ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৭ ছাত্রের জামিন হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গ্রেপ্তার ছাত্রদের জন্য চার দফায় জামিন চাওয়া হলেও প্রত্যেক বারই আবেদন খারিজ হয়েছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে তাদের কারাবাস। গত ৭ আগস্ট ২২ জন ছাত্রের পক্ষেই জামিন আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জামিন না হওয়ায় দুদিন পর ফের সবার পক্ষে জামিন চাওয়া হয়। সেবারও আবেদন খারিজ করেন আদালত। রোববার চার জন ছাত্রের পক্ষে ও গতকাল আট জন ছাত্রের পক্ষে জামিন চাওয়া হলেও ইতিবাচক আদেশ পাওয়া যায়নি। আন্দোলনকারী ছাত্ররা কারাগারে থাকলেও হেলমেট পরে লাঠি, রামদা ও পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইভাবে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের কারাবাস দীর্ঘতর হলেও হামলাকারীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হামলাকারী বেশ কয়েকজনের পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৬ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ২২ জন ছাত্রকে আটক করা হয়। এসময় হেলমেটের আড়ালে থাকা একদল যুবককে পুলিশের সঙ্গে থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। পরে আটক শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। গতকাল ঢাকার আদালতে যে আট শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয় তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে। আট শিক্ষার্থীর আইনজীবীরা দুটি পৃথক জামিন আবেদন করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রণব কুমার হুই জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার এই একই আদালতে চার শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন নাকচ হয়েছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২২ ছাত্রের দুই দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর দুদিন আগে ৭ আগস্টও তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে হামলা ও সহিংসতা নিয়ে রাজধানীর ১৬টি থানায় ২৯টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর অভিযোগে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা অজ্ঞাত পরিচয় শিক্ষার্থী। তাদের অনেকের গায়েই স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম ছিল। মামলার নথিতে আসামিদের সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, কিছু অজ্ঞাত পরিচয় যুবক ২৯ জুলাই বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে। আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীকে কেন আসামি করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের কারও বিরুদ্ধে মামলা করার মতো সাহস আছে কোনো অফিসারের?’ পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মোট মামলা হয়েছে ২৭টি । মামলাগুলোয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও তরুণকে আসামি করা হয়েছে। আর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে দলটির একজন নেতা বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছেন। গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন প্রথম কয়েকদিন শান্তিপূর্ণ থাকলেও ২ আগস্ট থেকে রাস্তায় আক্রমণের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘাত হয়। শুধুমাত্র সেখানেই সেদিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। হামলা থেকে রেহাই পায়নি পথচারীরাও। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হেলমেট পরা ব্যক্তিরা গুলিও চালায় সেদিন। এর পর দিন সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের সঙ্গে লাঠি, রামদা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এছাড়াও আন্দোলন চলাকালে মিরপুর, উত্তরা, রামপুরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই হামলাকারীদের মাথায় ছিল হেলমেট। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত মে মাস থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত ১৮ বার হামলা চালিয়েছেন। এতে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখন পর্যন্ত একজন হামলাকারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, হামলায় আহত বেশ কয়েকজনকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আবার চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই কাউকে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তরিকুলের ওপর হাতুড়ি, ধারালো অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে হামলাকারীদের দ্য ডেইলি স্টার চিহ্নিত করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
https://bangla.thedailystar.net/node/96781
8/14/2018
The Daily Star
Govt critique
72
ডিএসএ (ডিজিটাল আইনের) কার্যকর
‘ডিএসএ নিয়ে আপত্তিগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় প্রতিফলিত হয়নি’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘের অধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় তা প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারকে লেখা চিঠিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের সুপারিশগুলোর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ নম্বর ধারা বাতিলের কথা উল্লেখ করা ছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।' আবার ৩১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।' ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা অপরাধ হিসবে গণ্য হবে। আর ধারা ২ (প) অনুযায়ী, '"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" অর্থ যে সব মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সব আদর্শ।' চিঠিতে আইরিন খান বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মানুষকে তাদের ধর্ম বা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এটি ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুভূতির সমালোচনা করার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে না।' 'এ ছাড়া, আইনে এই ধরনের বিধান ধর্মের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উত্সাহিত করার ঝুঁকি তৈরি করে এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আইনি নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।' তাই ২৮ নম্বর ধারাটি বাতিল করা উচিত বলে মনে করেন জাতিসংঘের এই বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার। আইরিন খান বলেছেন, 'রাষ্ট্রের প্রধানসহ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা এবং রাষ্ট্রের পতাকা, জাতীয় প্রতীক বা ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত।' তিনি বলেন, 'এই বিধান অস্পষ্টভাবে প্রণীত হওয়ায় বাংলাদেশের স্বতন্ত্র জাতীয় ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রক্ষায় সরকারের ইচ্ছা রাজনৈতিক অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।' আইরিন খানের মতে, সরকারের উচিত মানহানির বিষয়টিকে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ফৌজদারি আইন থেকে সরিয়ে তার পরিবর্তে মানহানি বিষয়ে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। যাতে করে শুধুমাত্র প্রকৃত ভুক্তভোগীরাই এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ করতে পারেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করলে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। আইনটির ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি, ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত পাঠান, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জানা থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে প্রকাশ বা প্রচার করেন, (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জানা থাকা সত্ত্বেও, সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করলে বা সহায়তা করলে তা ওই ব্যক্তির অপরাধ হবে।' আইরিন খানের ভাষ্য, 'যারা সরকারের সমালোচনা করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই দুটি ধারাই সচরাচর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।' তিনি বলেন, 'যদিও আন্তর্জাতিক আইনে অন্যের সুনাম রক্ষার জন্য কারো বক্তব্যে সীমারেখে নির্ধারণের অনুমতি রয়েছে, তবে সেটা কেবল ভুক্তভোগী ব্যক্তির দ্বারা মামলা করার মাধ্যমেই করতে হবে। এক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনের অধীনে রাষ্ট্র কর্তৃক বিচারের মাধ্যমে সেটা করা যাবে না।' 'এক্ষেত্রে "আপত্তিকর বা মিথ্যা তথ্য" দেওয়ার বিষয়টিকে অপরাধ গণ্য করা আইনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা কার্যকর নয়। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সব ধরনের তথ্য ও ধারণার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যার মধ্যে এমন তথ্য বা ধারণাও থাকতে পারে যেগুলো মানুষকে আঘাত দিতে পারে, বলেন তিনি। জাতিসংঘের এই বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ারের মতে, 'স্বাধীন ও বৈচিত্র্যময় গণমাধ্যমসহ তথ্যের বিভিন্ন উত্স জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকলে এবং ডিজিটাল মাধ্যম ও মিডিয়া বিষয়ে জনসাধারণের সম্যক ধারণা মিথ্যা তথ্য রোধে বেশি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত।'
https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-510406
8/31/2023
The Daily Star
Govt critique
73
ডিএসএ (ডিজিটাল আইনের) কার্যকর
সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া ঘুরেফিরে আবারও পুরোনো ধারা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিল * আইনে ৯ অধ্যায়, ৬০টি ধারা; জামিনযোগ্য হয়েছে ৮টি, জামিন অযোগ্য ৬টি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধিকাংশ ধারাই সাইবার নিরাপত্তা আইনে হুবহু প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবে কয়েকটি ধারায় অপরাধের সংজ্ঞায় নতুন কিছু শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। অজামিনযোগ্য ৮টি ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ছয়টি ধারা জামিন অযোগ্যই রয়ে গেছে। তবে কয়েকটি অপরাধের ক্ষেত্রে একই কাজের পুনরাবৃত্তির জন্য সাজার বিধান বাতিল করা হয়েছে। কয়েকটি ধারায় সাজা কমলেও জরিমানা বেড়েছে একাধিক ধারায়। Advertisement প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির অধীনে সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের বিধানও রয়েছে এই আইনের খসড়ায়। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের জোর আপত্তি সত্ত্বেও ডিএসএ’র নয়টি ধারা এবং এর সব উপধারা প্রায় অপরিবর্তিত রেখে নতুন আইনের খসড়ায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিশিষ্টজনদের আশঙ্কা, আইনে আমূল পরিবর্তন না এনে সাজা কমালে অপব্যবহারের আশঙ্কা কোনোভাবেই কমবে না। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৬ পাতার খসড়ায় নয়টি অধ্যায় ও ৬০টি ধারা রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধারা ছিল ৬২টি। এর মধ্যে ডিএসএ’র বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর, ইত্যাদি দণ্ডের ধারাটি বিলুপ্ত করে অন্য ধারায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। নতুন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য হিসেবে খসড়ার শুরুতেই আছে-ডিএসএ-২০১৮ রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ। এছাড়া এসব প্রতিরোধ, দমন ও অপরাধগুলোর বিচার এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে নতুন একটি আইন প্রণয়ন। নতুন এই আইনের খসড়ায় জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির অধীনে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠনের কথাও বলা হয়েছে। আছে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের বিষয়ও। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর বিষয়েও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো প্রায় একইভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নতুন আইনের খসড়ার মাধ্যমে আমাদের যা শঙ্কা ছিল তাই প্রতীয়মান হলো। এটি নতুন মোড়কে পুরোনো আইন। এর পুরোটাই লোকদেখানো। ভয়ের সংস্কৃতি ও নজরদারিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতেই আইনটি করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তার কথা বলে অযাচিতভাবে সেখানে নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। তারা (সরকার) কিছু একটা করেছে, এটা বোঝাতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নামে আইনের খসড়াটি প্রণয়ন করেছে। সাজা কমানোর বিষয়টিও তারই অংশ। এর মাধ্যমে এ আইনে হয়রানি কোনোভাবেই কমবে না। ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদনের পর ৯টি ধারা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়। এগুলো হলো-৮, ২১, ২৫, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩। এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি) নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ছিল সাংবাদিকদের মধ্যে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ২৯ ধারার সংজ্ঞায়ও মানহানিসংক্রান্ত বিষয়টি রাখা হয়েছে। তবে এ ধারায় গ্রেফতারের বিষয়টি রহিত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ ধারার শাস্তি ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ বারবার করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। বিপরীতে পরিবর্তিত আইনে এ ধারায় কারাদণ্ড বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। একই অপরাধ ফের করার জন্য পৃথক কোনো উপধারা এখানে নেই। ডিএসএ’র ৩১ ধারায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর ধারাটি হুবহু নতুন আইনের খসড়ায় সংযোজন করা হয়। তবে সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। আগের আইনে এর সাজা ছিল ৭ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। নতুন আইনে সাজা সাত বছর থেকে দুই বছর কমিয়ে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। অর্থাৎ এখানে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। ডিএসএ’র ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের দণ্ডের বিষয়টি নতুন খসড়া আইনে ৩২ ধারাতেই রাখা হয়েছে। ডিএসএ-তে এ আইনে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। নতুন আইনে এ ধারায় সাজা কমিয়ে ৭ বছর কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। ডিএসএ-তে এই ধারার অপরাধ দ্বিতীয়বার সংঘটনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। পরিবর্তিত খসড়া আইনে সেই বিধানটি রহিত করা হয়। ডিএসএ’র ৪৩ ধারায় পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে। এই ধারাটি বাতিলে বা সংশোধনে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, মানবাধিকারকর্মীসহ সব মহল থেকে জোর দাবি ওঠে। তবে খসড়া আইনে এ ধারাটিকে ৪২ ধারায় হুবহু রাখা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়নি এর উপধারাগুলোও। এছাড়া ডিএসএ’র বিতর্কিত ৮ ধারা হুবহু রাখা হয়েছে। সেখানে কেবল ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মাধ্যম যুক্ত হয়েছে। খসড়ায় ২৫ ধারায় সাজার মেয়াদ কিছুটা কমেছে। ডিএসএ’র এই ধারায় ৩ বছরের সাজা বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। খসড়া আইনে সাজার মেয়াদ ১ বছর কমিয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পুনরায় একই অপরাধে ৫ বছর দণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল, সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। ২১ ধারায় ফের অপরাধের দণ্ডের উপধারা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া সাজার পরিমাণ ১০ বছর থেকে ৩ বছর কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। এই ধারায় পুনরায় অপরাধ করলে যাবজ্জীবন সাজা বা ৩ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। তা বাতিল করা হয়েছে। এখানে অপরাধের মাধ্যম হিসাবে নতুন করে ইলেকট্রনিক মাধ্যম যুক্ত করা হয়েছে। ডিএসএ’র অপরাধের আমলযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতার ৫৩ ধারাটি নতুন আইনের খসড়ায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে ৫২ ধারায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে। অপরদিকে ডিএসএ’র ২৮ ধারায় ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করা বা উস্কানি দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ করলে শাস্তি ছিল পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ বারবার করলে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ দ্বিগুণ হওয়ার বিধান ছিল। এই ধারায় সাজা কমিয়ে ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। আইনের প্রয়োগ : এর প্রয়োগের বিষয়ে বলা হয়, এই আইনের কোনো বিধানের সঙ্গে যদি অন্য কোনো আইনের কোনো বিধান অসামঞ্জস্য হয়, তবে অন্য কোনো আইনের বিধানের সঙ্গে এই আইনের বিধান যতখানি অসামঞ্জস্য হয় ততখানির ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান কার্যকর থাকবে। তথ্য অধিকারসংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর বিধানাবলি কার্যকর থাকবে। আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করে যা বাংলাদেশে করলে এই আইনের অধীনে দণ্ডযোগ্য হতো, তাহলে এই আইনের প্রযোজ্যের বিধান এমন হবে যে, তিনি অপরাধটি বাংলাদেশেই করেছেন। যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে থেকে দেশে অবস্থিত কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইন এভাবে প্রযোজ্য হবে যে, দেশের ভেতরেই অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে। দেশে থেকে দেশের বাইরে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করলে দেশেই অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে একজন মহাপরিচালক, দুজন পরিচালকের সমন্বয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি নামে একটি এজেন্সি গঠন হবে। এর বাইরে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এজেন্সির প্রয়োজনীয় জনবল থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল নামের পরিবর্তন ও কিছু ধারায় সাজা কমিয়ে সাইবার সিকিউরিটি আইন হলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) মূলত বিতর্কিত হয় এর নিবর্তনমূলক বেশকিছু ধারার কারণে। এই বিতর্ক কেবল সাজার বিধান নিয়ে ছিল তা নয়। বরং যেসব অভিযোগে কাউকে এই আইনে বিচারের আওতায় আনা যাবে তার অস্পষ্টতা এবং অপব্যবহার ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে। কারণ সাজা হলো বিচারের সর্বশেষ ধাপ। সেখানে কেউ নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে খালাসও পেতে পারেন। কিন্তু এই সাজার আগেই নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণে বছরের পর বছর ভুক্তভোগীদের গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। এজন্যই আইনটি বাতিলের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। ফলে নিবর্তনমূলক ধারাগুলোর সাজা কমানো সামগ্রিক অর্থে ভোগান্তি থেকে জনগণকে রেহাই দেবে না। ডিএসএ-তে চলমান সাড়ে পাঁচ হাজার মামলাসহ ভবিষ্যতে যারা পরিবর্তিত আইনে বিচারের আওতায় আসবে তারা একই ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হয়। ওই বছর ৮ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। এরপর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে এই আইনে ৭ হাজার ১টি মামলা হয়। সুপ্রিমকোর্টের গোপনীয় শাখার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজার ৫১২টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার বড় একটি অংশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের দায়ে অনেক গণমাধ্যমকর্মীকে কারাগারে যেতে হয়েছে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ মামলাই হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন ৩৫৫ সাংবাদিক। আইন প্রণয়নের পর থেকে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১২৯৫টি মামলা বিশ্লেষণ করে তারা এ তথ্য দিয়েছে। তবে এই আইনে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা যেসব কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের কথা বলছিলাম, সেই অর্থে যদি কোনো গুণগত পরিবর্তন না হয় তাহলে এই ধরনের আলংকরিক পরিবর্তন লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা বলছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নাগরিকদের নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়নের সুযোগ-সম্ভাবনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে আইন নিজেই সবার জন্য অনিরাপত্তা তৈরি করছে, তা কখনোই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হতে পারে না। সেই দিক থেকে মৌলিক কোনো পরিবর্তন না এলে পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আইনমন্ত্রী বললেন, ‘নাগরিকদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়েছে, নাম পরিবর্তনে সেটা অন্তত কাটবে।’ এর থেকেই তো তারা এক ধরনের স্বীকারোক্তি দিলেন যে, এই আইন মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। আইন তো সরকারের জন্য নয়। জনগণের প্রয়োজনে আইন। দণ্ড বাতিল করে জরিমানার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে না পারলে তাকে জেল খাটতেই হচ্ছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে ভিন্নমত দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বারা নিপীড়নের বিষয়টি যেভাবে সামনে আনা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। এটি মূলত সব ধরনের মানুষের সুরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কেউ এর দ্বারা হয়রানির শিকার হলে প্রচলিত আইনে প্রতিকার চাইতেই পারে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি বলেন, সব যে হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে তা নয়। গত ছয় মাসে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে প্রায় ৫০ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলেই সাজা হয়েছে।
https://www.jugantor.com/tp-firstpage/705282
8/10/2023
Jugantor
Govt critique
74
ডিএসএ (ডিজিটাল আইনের) কার্যকর
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল কিংবা সংস্কার দরকার
বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা আইনকে (সিএসএ) ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে এটি বাতিল কিংবা সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস। একইসঙ্গে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে সিএসএ, ডিএসএ ও আইসিটি অ্যাক্টের সব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। গত মঙ্গলবার আমেরিকান বারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : ফ্লড সাইবার ক্রাইম রিজিম রিকোয়ারস রিপিল অর রিফর্ম, সেপ্টেম্বর, ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাগ্‌স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষকে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩৬ মামলা দায়ের ও আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ২৮৭ জনকে। ঢাকাভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিজিএসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন কার্যকরের পর অন্তত ৬২ মামলা ও ৩৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ আইনগুলোর মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ। আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন এসব আইনে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নয় মাসের বেশি কারাবন্দি থাকার পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যাওয়া লেখক ও কলামিস্ট মুশতাক আহমেদসহ কয়েজনের উদাহরণ টেনেছে। অন্তত ছয়বার মুশতাকের জামিন নাকচ হয়। ওই সময় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনটির ব্যবহার বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। অন্তর্বর্তী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে। ফলে তারা কিছু সুপারিশ গ্রহণ করতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে পারে। বিকল্প হিসেবে সরকার আইনের ২১, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় মৌলিক সংশোধন আনতে পারে।
https://samakal.com/bangladesh/article/255911/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0
9/14/2024
Samakal
Govt critique
75
ডিএসএ (ডিজিটাল আইনের) কার্যকর
৪টি ধারা অজামিনযোগ্য রেখে সাইবার আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি সাধন, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অজামিনযোগ্য চারটি ধারা রেখে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, “খসড়ায় সংজ্ঞাসহ সামান্য কিছু পরিবর্তন করে সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৭, ১৯, ২৭ ও ৩৩ ধারা অজামিনযোগ্য রয়েছে। বাকিগুলো জামিনযোগ্য।” ১৭ ধারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ, ১৯ ধারায় কম্পিউটটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি, ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে। বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে একই আদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে সরকার। গত ৭ অগাস্ট এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সংসদের আগামী মাসের অধিবেশনে এই আইন পাস করা হবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছেন। তবে নতুন আইনেও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো ও অধিকারকর্মীরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান সোমবারও এক সভায় বলেন, সরকার ‘নতুন বোতলে পুরনো ডিএসএ’ আনছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন নীতিগত অনুমোদনের সময় যে খসড়াটি ছিল, সেখানে দু’একটি সংজ্ঞাসহ ‘সামান্য কিছু’ পরিমার্জন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জরিমানার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে জানান তিনি। আগের আইনের দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কী হবে- সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের রহিতকরণ একটা ধারা থাকে। সেখানে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর অধীনে অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে এমনভাবে পরিচালিত ও নিষ্পত্তি হবে, যেন ওই আইন রহিত হয়নি। “নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের আইনের যে সকল কার্যক্রম ছিল ওই আইনে সেগুলো নিষ্পন্ন হবে।” অংশীজনদের মতামত নিয়ে নতুন এই আইন করা হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা ওই মন্ত্রণালয়কে (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ) জিজ্ঞাসা করলে ভালো হবে। আমাদের কাছে খসড়াটা চলে আসে, প্রসেসটা আমাদের কাছে আসে না।” সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করার আগে অংশীজনদের মতামত নিতে সরকারের প্রতি ইতোমধ্যে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত আইন নীতিগতভাবে অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, খসড়াটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, এর উপর মতামত দিতে ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। অজামিনযোগ্য ধারা ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ করলে তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হবেন। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন বা এসব করার চেষ্টা করেন, তবে ছয় কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। ১৯ ধারায় কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতিসাধন ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে। কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত-ভাণ্ডার, তথ্য বা উহার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা স্থানান্তরযোগ্য জমাকৃত তথ্য-উপাত্তসহ ওই কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোনো উপান্তের অনুলিপি বা অংশ বিশেষ সংগ্রহ করলে বা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ধরনের সংক্রামক, ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করালে বা প্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে, তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, উপাত্ত বা কম্পিউটারের উপাত্ত-ভাণ্ডারের ক্ষতি করলে বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করলে বা উক্ত কম্পিউটার, সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে রক্ষিত অন্য কোনো প্রোগ্রামের ক্ষতি করলে বা করার চেষ্টা করলে বা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কোনো বৈধ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোনো উপায়ে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করলে বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাও অপরাধ হবে। এর বাইরে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেরক বা গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা বিপণনের উদ্দেশ্যে, স্পাম উৎপাদন বা বাজারজাতকরণ বা করার চেষ্টা করেন বা অযাচিত ইলেক্ট্রনিক মেইল পাঠালে অথবা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ বা কারসাজি করে কোনো ব্যক্তির সেবা গ্রহণ বা ধার্যকৃত চার্জ অন্যের হিসাবে জমা করলে বা করার চেষ্টা করলে সাত বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধের জন্য ১৪ বছর কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন, তাহলে সেটি একটি অপরাধ। এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। হ্যাকিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- কম্পিউটার তথ্য ভাণ্ডারের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা এর মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন। অথবা নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে তার ক্ষতিসাধন।
https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/x6pd8bq24v
8/28/2023
Bdnew24
Govt critique
76
ডিএসএ (ডিজিটাল আইনের) কার্যকর
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধনের ইঙ্গিত আইনমন্ত্রীর
ঢাকা: ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) নিয়ে নানা সমালোচনার কারণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে নিয়ম কিংবা আইনের সংশোধন আনার কথা ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টর-ল অ্যান্ড পলিসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব উপস্থাপন উপলক্ষে ইউএসএইড, ইন্টারন্যাশনাল-সেন্টার-ফর-নট-ফর-প্রফিট ল (আইসিএনএল) ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলেছেন এটার (ডিএসএ) কোনো উপকারিতা নেই। আমার মনে হয় কিছু কিছু উপকারিতা তো এই অ্যাক্টে রয়েছে। আামি এমন কথা বলব না এই আইনটার ত্রুটি বিচ্যুতি নেই। সব আইনেরই কিছু কিছু সিস্টেমিক প্রবলেম আছে, কিছু বাস্তবায়নে সমস্যা আছে। তখন আইনটা টেবিলে আসে, এই বাস্তবায়নে যে সমস্যা আছে সেগুলো কীভাবে রিসলভ করা যায় সেগুলো দেখা হয়। ঠিক সে কারণেই এই আইনটা নিয়ে আমি আবারো বসব। যদি নিয়মের (রুলস) পরিবর্তন করে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি অবশ্যই সেদিকে আমরা যাব। যদি তারপরেও আমরা দেখি রুলস না আইনটাকে কিছু পরিবর্তন কিংবা সংশোধন করার প্রয়োজন আছে, আমরা কিন্তু সেটা করতে উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না যদি ঢালাওভাবে বলি আইনটাকে বাতিল করে দাও, সেটা যুক্তিসঙ্গত কারণ হবে না। আসুন আমরা বসি। আপনারা চাইলে সেটা রমজানের আগে হতে পারে বা পরেও হতে পারে। তবে রমজানের আগে হলে ভালো, সংসদের বাজেট অধিবেশনের আগে সেটি উত্থাপন করতে পারব। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে আইনটা আছে, রুলস আছে এবং আইনের কোথায় কেথায় অপব্যবহার হয়েছে সেটি আছে। আমরা আলাপের মাধ্যমে এই আইনটাকে আরও সমস্যা দূরীকরণ করতে চাই। যাতে এ আইন প্রণয়নের আসল উদ্দেশ্যের সহায়ক হয়। আমাদের সরকার যুক্তিসঙ্গত কথা শোনতে চায়। নাগরিক সমাজের কথা বলা বন্ধ করা সরকারের উদ্দেশ্য নেই। ডিএসএ আইন করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যে রকম এদেশের নাগরিক, আমরাও সে রকম এদেশের নাগরিক। আপনাদের যে রকম সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, আমাদেরও সে রকম আনুগত্য আছে। আমরা চাই না সংবিধান বিরোধী কোনো আইন হোক। এই আইন কারো বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য করা হয়নি। পেনাল কোডে সরাসরি চুরির শাস্তি আছে। এখন দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তির বিস্তারে চুরি এখন ফিজিক্যালি করতে হয় না। এটা করা হয়েছিল ডিজিটাইজেশন-অগ্রগতির কারণে যে অপরাধ করা যাচ্ছিল সেটাকে আইনের মাধ্যমে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার ছিল।
https://www.banglanews24.com/law-court/news/bd/1068352.details
3/6/2023
Bangla News24
Neutral
77
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন
সংসদ নির্বাচন ২০১৮: যেভাবে হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে এই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, ফলে সে বিবেচনায় ২০১৮ সালের এই জাতীয় নির্বাচনের একটা ভিন্ন দিক ছিল। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়াভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে। এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এবং অভিযোগের পাল্লা অনেক ভারী হয়। অনেক প্রশ্ন এবং অভিযোগের মুখেও টানা তৃতীয় বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পেয়ে শেষ পর্যন্ত সংসদে গেছে। ৩০শে ডিসেম্বেরের নির্বাচনই এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়। কারণ এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। Skip সর্বাধিক পঠিত and continue reading ভোটের আগের রাতেই অনেক অভিযোগ ভোটের দিন সারাদেশে সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু অনেক নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপি এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কিছু প্রার্থী ভোটের আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকেরা ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। প্রায় সারারাতই বিরোধী প্রার্থীরা বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিফোন করে এমন অভিযোগ করছিলেন। তবে আগের রাতে সিল মারার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনও এমন অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি। সকালটা কেমন ছিল ভোট শুরুর আগের মুহুর্তে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রে বিবিসি বাংলার সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ব্যালট ভর্তি বাক্স। চট্টগ্রাম-১০ আসনের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ভোট গ্রহণের প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে ঐ কেন্দ্রে বিবিসি'র সাংবাদিক দেখতে পান, বিভিন্ন বুথে ব্যালট বাক্স নেয়া হচ্ছে। ভোট শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৮টা। কিন্তু ওই কেন্দ্রে বিবিসির সাংবাদিক যেসব ব্যালট বাক্স দেখেছেন, সেগুলো ছিল ব্যালট পেপার দিয়ে ভরানো। বিবিসি'র সাংবাদিক কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে গিয়েও ব্যালট ভর্তি বাক্স দেখতে পান। তিনি তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ব্যালট ভর্তি বাক্স কেন্দ্রের বুথে নেয়ার দৃশ্য ধারণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের সেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে কিন্তু ততক্ষণে অনেক ভোটার জড়ো হয়েছিলেন। ভোটের আগেই বিবিসি'র ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যালট ভর্তি বাক্সের ভিডিও সকালেই প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ঐ কেন্দ্রটির ভোট স্থগিত করা হয়েছিল বলে জানানো হয়। সকালেই ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় বিবিসি'র সাংবাদিকরা অনেক অনিয়ম, কারচুপির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ভোট কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রিত ছিল ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সকাল থেকেই। অনেক কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ দেখে ভিতরের অবস্থা বোঝার উপায় ছিল না। ভোট শুরুর ঘন্টাখানেক পর থেকেই অনেক কেন্দ্রের ভিতরে আওয়ামী লীগ বা তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। ঢাকার বিভিন্ন আসনে অনেক কেন্দ্রে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না। কেন্দ্রগুলোর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক কেন্দ্রে বিবিসি'র সাংবাদিকরা দেখেছিলেন, পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রের মুল দরজা বন্ধ করে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। আর কেন্দ্রের ভিতরে সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারা হচ্ছে - এমন অভিযোগ ছিল দিনভর। দিন যত গড়াচ্ছিল, রাজধানীর কেন্দ্রগুলোর বাইরে শুধু ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীর সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অনেক কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারেরাও দীর্ঘ অপেক্ষা করে ভোট দিতে না পারায় অনেকে তাদের ক্ষোভ তুলে ধরেন কেন্দ্রে থাকা সাংবাদিকদের কাছে। সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ: ইকোনমিস্ট সংবাদমাধ্যমের খবর হয়, কয়েক ঘন্টা ভোট হওয়ার পরই কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ নিয়ে যখন নানান খবর বা অভিযোগ প্রকাশ হচ্ছিল, তখনই ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরও কমে গিয়েছিল। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে যে সব খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেই খবরের ভিত্তিতে এটি একটি নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়া নির্বাচন ছিল বলা যায়। দেশের অন্য এলাকাগুলো থেকেও ভোট নিয়ে একই রকম অভিযোগ আসে। ভোটের পুরোটা সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নিয়ে শুধুই অনিয়ম কারচুপির নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। ভোটের দিন সহিংসতাও ঘটে। চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতা বা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ভোটের শুরুতে নেতাদের বক্তব্য শুরুতেই ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "এই নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।" সকালে বিএনপি এবং গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি ভোট জালিয়াতির খবর পাচ্ছেন। তিনি আশা করেন, নির্বাচন কমিশন এগুলোর দিকে নজর রাখবে। বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচন বয়কট ভোট শুরুর পর ঘণ্টা দুয়েক যেতে না যেতেই অনেক এলাকা থেকে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়া শুরু করেন। দুপুর দু'টার মধ্যেই ১০০টির বেশি আসনে বিএনপি প্রার্থীরা একের পর এক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সারাদেশ থেকে শুধু তাদের নির্বাচন বয়কটের খবরই পাওয়া যাচ্ছিল। তবে বিএনপি দলগতভাবে এবং তাদের নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন বয়কট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিল। তবে বেশিরভাগ আসনে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে তাদের প্রার্থীরা ছিলেন না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বলেছিলেন যে বয়কটের বিষয়টি ছিল প্রার্থীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। বিএনপির পুরোনো ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে ভোটের দিন দুপুর দেড়টার দিকে জামায়াত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার কররার ঘোষণা দেয়। ভোটের ফলাফলও ছিল চমকে দেয়ার মতো নির্বাচনের ফলাফলও ছিল সম্পূর্ণ এক পাক্ষিক। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। বাকি তিনটি আসন পায় অন্যান্যরা। অনেক ভোট কেন্দ্রে একশো' ভাগ ভোট পড়ে বলে ফলাফলে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বাইরে অন্য কেউ ভোট পাননি অনেক কেন্দ্রে। নির্বাচনের ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্র-ভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করে সুজন নামের একটি সংগঠন যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় যে ৭৫টি আসনের ৫৮৬টি কেন্দ্রে যত বৈধ ভোট পড়েছে, তার সবগুলোই নৌকা মার্কার প্রার্থীরা পেয়েছেন। জাতীয় সংসদের মোট আসনের একটি বাদে ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হয়। নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখান ভোট শেষে কিছু ফলাফল আসার পর দেখা যায় যে ক্ষমতাসীনরা বিপুল ভোটে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই ধারার প্রেক্ষাপটে ৩০শে ডিসেম্বরই সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন এবং ফলাফল প্রত্যাখান করে। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন নজিরবিহীন অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, "দেশের সব জায়গা থেকে ভোট ডাকাতির খবর এসেছে। প্রহসনের এই নির্বাচন বাতিল করা হোক।" বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি তুলে ধরেন। মি. আলমগীর বলেন, "অনেকে বলে থাকেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে আমরা ভুল করেছিলাম। কিন্তু এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। আমরা পুরো নির্বাচন প্রত্যাখান করেছি।" তবে আওয়ামী লীগ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে, "একটি অভূতপুর্ব নির্বাচন হয়েছে। একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।" প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, "বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনেই ভোটের মাঝপথে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে এবং বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। এগুলো তারা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।" নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন অভিযোগ এবং পুনঃনির্বাচনের দাবি নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ তাদের ভোট দিয়েছেন। প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচন কি উদাহরণ হয়ে থাকবে? কয়েকটি জায়গায় সহিংসতায় কমপক্ষে ১৫ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে নির্বাচন কমিশনের মতে, কয়েকটি জায়গায় সহিংসতা হলেও তারা সার্বিকভাবে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন শেষ করতে পেরেছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে - এমন একটা স্বস্তি দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মধ্যেও। এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে যত অভিযোগ বা প্রশ্ন এসেছে, তাতে এটি গণতন্ত্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়ার প্রতীক হয়েছে। এই নির্বাচন বিভিন্ন সময় একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে আসবে।" আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য তা মানতে রাজি নন। দলটির নেতারা বলেন, বিএনপি যখন যে নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। ফলে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে তারা চিন্তিত নন।
https://www.bbc.com/bengali/news-50916704
12/30/2019
BBC Bangla
Govt critique
78
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন
জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নমিনেশন ফরম বিক্রি-জমার কার্যক্রম চলছিল। দলটির নেতাকর্মী মিছিল, ব্যান্ড পার্টি ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ভিড় করেছিল। এ সময় পুলিশ রাস্তা চালু করার নামে লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে। মুহূর্তেই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মনোনয়ন উৎসব রূপ নেয় সংঘাতে। ঘটনাস্থল থেকে ৫৯ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনার জন্য ওই বছর পুলিশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ পান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। পদকপ্রাপ্তির প্রকাশনাতেই কারণ হিসেবে এর উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু আনোয়ার নন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওই বছরে এমন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ পদক পেয়েছেন অনেকেই। মোট পদক দেওয়া হয় ৩৪৯ জনকে। এত বেশি সংখ্যক পুলিশ পদক ওই বছর ছিল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালের নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। সম্প্রতি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তারা অনিয়মের জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলোও বলছে, মূলত রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের এত বেশি পদক দেওয়া হয়। পদক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরের বছরই (২০১৯) পুলিশ পদকের সংখ্যা নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে ১১৮ জন। এর পরের তিন বছরও চিত্র একই রকম; ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে পুলিশ পদক পান ১১৫ জন করে। পরের বছরের পদক দেওয়া হয় ২০২৪ সালে। পদক পান ৪০০ জন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে তা ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বেশির ভাগ কর্মকর্তা নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রাখার পুরস্কার হিসেবে এই পদক পেয়েছেন। নির্বাচনের আগে-পরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে দমনপীড়নের স্বীকৃতি ছিল ওই পদক। পদক পাওয়া ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন। একটি বড় অংশ এখনও পুলিশে রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সেবাসহ পেশাদারিত্ব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হয়। বিপিএমের জন্য প্রত্যেক পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা এককালীন হিসেবে পান এক লাখ টাকা এবং বিপিএম-সেবার জন্য পান ৭৫ হাজার টাকা। পিপিএমের জন্য পান এককালীন ৭৫ হাজার এবং পিপিএম-সেবার জন্য ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিপিএম ও বিপিএম-সেবার জন্য প্রতি মাসে দেড় হাজার এবং পিপিএম ও পিপিএম-সেবার জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। পুলিশ সদস্যদের কাছে এই পদক অত্যন্ত সম্মানজনক ও মর্যাদাকর হিসেবে বিবেচিত। গত ১০ বছরের পুলিশ পদকের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে পুলিশ পদকের হিড়িক পড়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের বছরে ৩৪৯ জনকে বিপিএম-পিপিএম দেওয়া হয়েছিল। দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটপ্রধানরা পদক পেয়েছিলেন। এর আগে ৬৪ জেলার এসপিসহ সব ইউনিটপ্রধানের একসঙ্গে পদক পাওয়ার নজির নেই। গত ১৬ বছর নানাভাবে বঞ্চিত ছিলেন– এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ভোট ডাকাতির পুরস্কার হিসেবে সে সময় দায়িত্ব পালন করা ৬৪ জেলার এসপি, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সব রেঞ্জ ডিআইজিসহ সব ইউনিটপ্রধানকে পুলিশ পদক দেওয়া হয়। বছরের হিসাব গড়াল সাড়ে ১৩ মাসে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের পুলিশ সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মকর্তাকে বিপিএম, পিপিএম দেওয়া হয়েছিল। ৪০০ কর্মকর্তা-সদস্য এই পদক পান। সাধারণত এক বছরের (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কার্যক্রম বিবেচনায় বিপিএম-পিপিএম দেওয়া হলেও ২০২৩ সালে ব্যতিক্রম করা হয়। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (১৩ মাস ১০ দিন) কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে পদক দেওয়া হয়। যদিও ২০২২ সালের পদকের মধ্যেও ডিসেম্বরের কার্যক্রম যুক্ত ছিল। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির গণসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। ৭ ডিসেম্বর নেতাকর্মী জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীর ওপর। ওই কার্যক্রমে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েকজন পদকবঞ্চিত ছিলেন। তাদের পদক দিতে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে পরের বছরের সঙ্গে ওই মাসটি যুক্ত করা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় যুক্ত করা হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগে-পরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও আন্দোলন মোকাবিলা করা কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করতে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পদক প্রকাশনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিরোধী দল ও নেতাকর্মীর দমনপীড়ন, দ্বাদশ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ পদক পেয়েছেন অন্তত ৫৭ কর্মকর্তা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের পদক পরিয়ে দেন। পদক পান ৪০০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে বিপিএম ৩৫ জন, বিপিএম-সেবা ৯৫, পিপিএম ৬০ ও পিপিএম-সেবা ২১০ জন। নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২২ সালে পদক পেয়েছিলেন ১১৫ কর্মকর্তা। ২০২১ সালে ১১৫ জন, ২০২০ সালে ১১৫ ও ২০১৯ সালে ১১৮ জন। ২০১৮ সালে পুলিশ পদক পান ৩৪৯ কর্মকর্তা-সদস্য। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহে কর্মকর্তাদের এই পদক পরিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ৬৪ এসপির মধ্যে বিপিএম-সেবা পান ২৪ জন, ৩৯ জন পিপিএম-সেবা এবং একজন বিপিএম। এর আগে ২০১৭ সালে পদক পান ১৮২ জন, ২০১৬ সালে ১৩২, ২০১৫ সালে ১০২ এবং ২০১৪ সালে ৮৬ জন। ২০১৮ সালে পদক পাওয়া ৬৪ এসপির মধ্যে অন্তত ৩০ জন ২০তম বিসিএসের। অন্যরা ২১, ২২ ও ২৪ বিসিএসের। ২০১৮ সালের পর তাদের পদোন্নতিতে আর বাধা পেতে হয়নি। ২০তম বিসিএস কর্মকর্তার বেশির ভাগই পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন। ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচের কেউ কেউ হয়েছেন অ্যাডিশনাল ডিআইজি। তাদের বেশির ভাগই ৫ আগস্টের আগে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাদের কাউকে বদলি এবং কাউকে রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। দু’জন ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ আত্মগোপনে রয়েছেন। ‘দেশবিরোধী নৈরাজ্য’ ঠেকিয়ে আশরাফের বিপিএম ডিএমপির রমনা বিভাগের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ২০২৩ সালে বিপিএম পান। তাঁর বিষয়ে পুলিশ পদক-সংক্রান্ত প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবিরোধী নৈরাজ্যজনক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। মহাসমাবেশের একটি অংশ প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে চলে আসে। আন্দোলনকারীরা শান্তিনগর, মালিবাগসহ আশপাশে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ অবস্থায় আশরাফ হোসেনের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব ও নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে (বিএনপি নেতাকর্মী) লাঠিচার্জ, শটগান ফায়ার, সাউন্ড গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করে এলাকা পরিষ্কার করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ পদকে ভূষিত হন আশরাফ হোসেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলায় ভূমিকা রেখে পদক ২০২৩ সালের পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির ৭৩ জন ছিলেন। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের আট কর্মকর্তা পদক পান। এই বিভাগের সে সময়ের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলায় সাহসী ভূমিকা রাখায় বিপিএম পদক পান বলে প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়। পদক-সংক্রান্ত প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়, এক বছরে (২০২৩) ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ৩০০টি বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি অসংখ্য কর্মসূচি পালিত হয় মতিঝিল বিভাগে। হায়াতুলের নেতৃত্বে এসব কর্মসূচিতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সহায়তা করে। খিলগাঁও জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রাশেদুল ইসলামের পিপিএম-সেবা পদক পাওয়ার বিষয়ে প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) মহাসমাবেশ উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর ওই দলের পার্টি অফিসের সামনে নেতাকর্মী জড়ো হন। তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে পুলিশের ওপর হামলা করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় নেতাকর্মীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীদের শক্ত হাতে দমন তৎকালীন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বিপিএম (সেবা) পদকে ভূষিত হন ২০২৩ সালে। পদকপ্রাপ্তির কারণ হিসেবে প্রকাশনায় বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন বাধাগ্রস্ত করতে স্বার্থান্বেষী মহল প্রচেষ্টা চালায়। তাঁর নেতৃত্বে রংপুর রেঞ্জ পুলিশ এই প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়। নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার আগে ও পরে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও নাশকতাকারীদের সব পরিকল্পনা শক্ত হাতে দমন করা হয়। ফলে গণতন্ত্রবিরোধী গোষ্ঠী রাজপথসহ কোথাও উল্লেখযোগ্য নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কাজী শফিকুল ইসলাম গাজীপুরের এসপি ছিলেন। নির্বাচনের পর তিনিও বিপিএম পেয়েছেন। তাঁর পদক পাওয়া সম্পর্কে প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও বর্তমান সরকারের (ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনের আগে থেকেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলায় নাশকতা চালায়। তাঁর (এসপি শফিকুল) নেতৃত্বে নির্বাচন প্রতিহতকারী ২৫৬ দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এখন কারা কোথায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের কাউকে গুরুত্বহীন জায়গায় বদলি এবং কাউকে বিভিন্ন রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। নির্বাচনের পর পদক পাওয়া কর্মকর্তার মধ্যে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমানকে রেলওয়ে পুলিশ সংযুক্ত; বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি ইলিয়াছ শরীফকে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটে সংযুক্ত; ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেনকে ট্যুরিস্ট পুলিশে সংযুক্ত; বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির ও সিলেট মহানগর কমিশনার জাকির হোসেন খানকে পিবিআইয়ে এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হক ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। সম্প্রতি সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এ বি এম মাসুদ হোসেনকে সারদায় বদলি ও যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়, অ্যাডিশনাল ডিআইজি আলমগীর কবিরকে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে সারদায় বদলি করা হয়। শহীদুল্লাহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি টুটুল চক্রবর্তীকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় ও বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাতকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। কে কী বলেন অভিযোগের বিষয়ে জানতে ২০১৮ সালে এসপির দায়িত্ব পালন করা ১২ জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। চারজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আটজনের মধ্যে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এসপি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের বিষয় রিটার্নিং কর্মকর্তা কথা বলবেন। পুলিশ তো আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ, সেটি জানি না।’ ফরিদপুরের সাবেক এসপি জাকির হোসেন খান বলেন, ‘এখন বাসের ভেতরে। এসব বিষয়ে কথা বলতে পারব না।’ তিনি বর্তমানে পিবিআইয়ে সংযুক্ত। বাগেরহাটের সাবেক এসপি পংকজ চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে কে কোথায় কী অভিযোগ করেছে, জানি না।’ তিনি বর্তমানে রেলওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি। প্রত্যাহারের উদ্যোগ ২০১৮ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের বছরে পুলিশের ১০৩ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দেওয়া বিপিএম-পিপিএম প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশের ১০৩ পদস্থ কর্মকর্তাকে ঢালাওভাবে পদক দিয়ে রাষ্ট্রীয় পদকের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পুলিশ স্টাফ কলেজের অ্যাডিশনাল ডিআইজি আবদুর রাজ্জাক গত ৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রায় পুরোটাই জেলার ডিসি, পুলিশ সুপার, নির্বাচন অফিসার, অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নির্ধারিত দিনের আগেই সম্পন্ন হয়েছিল।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘নগদ অর্থের পুরস্কার স্বৈরাচারের কোষাগার থেকে মেটানো হলেও পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রতি মাসে আজীবন ভাতা দেওয়ার বিধান রয়েছে। দিনের পর দিন জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে ভাতা পেতে থাকবেন, তা কীভাবে হয়? নির্বাচনী পদক ও খেতাবগুলো বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘পদক-সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুকেই তো স্ট্যাটাস দিয়েছি।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, দুই পর্যায়ে নির্বাচনের পর পুলিশের যে পদক দেওয়া হয়েছিল, সেটি বিতর্কিত ছিল। এটি বোঝাই গিয়েছিল পুলিশের যারা নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কর্তৃত্ববাদী সরকারের ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায়ও প্রতীয়মান হয়েছে, নেতিবাচক দিক থেকে পুলিশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার জন্য ভূমিকা রেখেছে। পদক বাতিলের বিষয়ে সম্প্রতি যে প্রশ্ন উঠেছে সেটি যৌক্তিক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাতিল যেন ঢালাওভাবে না হয়। কোনো নিরপরাধ কর্মকর্তাকে যেন পদক থেকে বঞ্চিত করা না হয়। সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, যদি ভালো কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে পদক পেতেই পারে। তাই সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পদক দেওয়ার যে কারণ বলা হচ্ছে, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন কাউকে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে কিনা বা পুলিশ বাহিনী সরকারের দলীয় বাহিনীর মতো কাজ করেছে কিনা, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আইনানুগভাবে কাজ করেছে কিনা– এসব। আইন অনুযায়ী কাজ করে থাকলে ঠিক আছে।
https://samakal.com/bangladesh/article/280960/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A6-%E0%A6%AD%E0%A7%8B%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%AC
2/16/2025
Samakal
Neutral
79
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ৩৩ সাবেক ডিসিকে ওএসডি
ঢাকা: যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের পদে থাকা প্রশাসনের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করে। পাঁচটির প্রতিটিতে ছয়জন করে এবং আরেকটিতে তিনজনকে ওএসডি করা হয়। এই ৩৩ কর্মকর্তা ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাদের ওএসডি করার কারণ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রতি প্রজ্ঞাপনেই বলা হয়েছে। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ১২ কর্মকর্তা এর আগে ওএসডি হয়েছিলেন। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে।
https://www.banglanews24.com/national/news/bd/1471222.details
2/29/2025
Bangla News24
Govt critique
80
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন
আ.লীগের বিতর্কিত তিন সংসদ নির্বাচন তদন্ত করবে ইসি
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া কি কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ১০ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে সংস্থাটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ এরপর লিখিত নির্দেশনায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন৷ এতে উল্লেখ করা হয়-বিগত নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সনাক্ত করে প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসে ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে মনে করা হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এক তরফা ভোট হয়, যে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন। নির্বাচনি ইতিহাসে যা বিরল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবগুলো দল অংশ নিলেও রাতের ভোট বলে অভিহিত করা হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও শরিকরা সাতটি আসন পায়, যা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের সন্দেহকে দৃঢ় করে তোলে। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখানো হয়। এতে টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় আসে দলটি। অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে ইসি সংস্কারের পর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন হলে বিভিন্ন মহল থেকে ওই তিন নির্বাচনে অনিয়মের কারণ খুঁজে বের করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে৷ এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেও সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তা খুঁজে বের করার দাবি তোলেন। সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়াই নির্বাচন কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অমূল্য অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। আপনারা ভালো নির্বাচনও দেখেছেন, খারাপ নির্বাচনও দেখেছেন। ভালোর অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করবেন। খারাপ অভিজ্ঞতাকে পরিহার করবেন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করে নির্বাচন কমিশনের আস্থার সংকট দূর করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শ্রদ্ধার আসনে বসাতে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমিশনের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। যে কোনো সময় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা কি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এটি কমিশনকে অবগত করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্বলতা ও দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেজন্য আগাম সর্তক থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কর্মকর্তাদের বলেন, বিগত নির্বাচনের ত্রুটি সনাক্ত করে তা কটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। জনগণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে। বর্তমান সময়ে নির্বাচনি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। গত ২১ নভেম্বর দায়িত্ব নেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছেন৷ পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে৷ একাদশ সংসদ নির্বাচন করেছেন কেএম নুরুল হুদার কমিশন। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। অভ্যুত্থানের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো কমিশন নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন।
https://dailyinqilab.com/national/news/718568
1/4/2025
Daily Inqilab
Govt critique
81
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন
নির্বাচনের বছর ২০১৮
২০১৮ সাল। আজ যাত্রা শুরু হল নতুন বছরের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি হবে নির্বাচনী বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এছাড়া নতুন বছরের শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচন দিয়ে শুরু হবে নির্বাচনী ডামাডোল। এরপর পর্যায়ক্রমে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বছরজুড়ে রাজনীতি আবর্তিত হবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি সব কিছুতেই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করবে। ফলে বছরটিতে ভোটের মাঠের হাকডাক থাকছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়টিও উড়িয়ে দিতে চান না বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে নতুন বছরটিতে নানা ঘটনা-অঘটনের রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে রয়েছে ভোটারদের ভোটের মাঠে যাওয়ার বিশেষ আকুতি। সবাই চান, বছরটিতে যেন রাজনৈতিক ও সামাজিক সব অশান্তি দূর হয়। অবসান হয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরবস্থার। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সব কিছুতে যেন ইতিবাচক নতুন সূচক অর্জিত হয়। নতুন বছরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবে। প্রেক্ষাপট তেমন বার্তাই দিচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দলগুলো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেমন চাইবে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের শপথ নিতে, তেমনি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির চাওয়া সরকার পরিচালনার স্বাদ গ্রহণ করা। তবে এ চাওয়া থেকে জাতীয় পার্টিও বাদ যাচ্ছে না। তারা এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা না করলেও বেশ শক্ত বাঁধনে যে ক্ষমতার সঙ্গী হতে চায় তা অনেকটা স্পষ্ট। রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বিপুল ভোটে জয়ের পর দলটি বেশ চাঙ্গা। তাই রাজনীতির নানা সমীকরণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ট্রাম্পকার্ডটি এবার হয়ে উঠতে পারে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার অংশীদার হতে চেষ্টা চালাবে। এখন থেকে তাদের গ্রীনরুমে সে রকম রিহার্সালই চলছে। এই যখন অবস্থা তখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দুই দলই মিত্র বাড়ানোর চেষ্টা করবে। সে চেষ্টা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে। ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’- প্রচলিত এমন কথার এবার প্রতিফলন ঘটবে বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, সবকিছু মিলিয়ে ২০১৮ সাল হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক উত্থান-পতনের একটি স্মরণীয় বছর। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর এতে কোনো সন্দেহ নেই। নতুন বছরের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। নির্বাচন মানে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। সেই নির্বাচনে অবশ্যই উৎসব থাকতে হবে। তিনি বলেন, কিন্তু আবারও একটি বিতর্কিত নির্বাচন হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসিকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ ইসি পার্টটাইম সংস্থা নয়। প্রতিটি নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তেমন পরিবেশ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখন পর্যন্ত যেসব পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে এ বছর যে জাতীয় নির্বাচনী বছর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বরং কিছুটা আগে হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু সেই নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনটা কিভাবে, কার অধীনে হবে- বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী তা স্পষ্ট। কিন্তু বিএনপি জোটের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব পেলে সেটি নিয়ে সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই দলই বিপরীত মেরুতে অনড় অবস্থানে আছে। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও রাজপথে সংঘাত-সহিংতার বিষয়টি শঙ্কার মধ্যে থাকছে। যদিও অনেকে মনে করেন, নির্বাচনের আগে সব সংকট আলোচনার মাধ্যমে দূর হবে। কারণ এবার যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে যাবেই তাই সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নানামুখী চাপও তৈরি হবে। আর সবার প্রত্যাশাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে যদি ফের ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন হয় তাহলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও এ বছরকে নির্বাচনী বছর ধরে নিয়ে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বছরটিতে তাদের কয়েকটি সেমিফাইনাল (সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন) খেলে জাতীয় নির্বাচনে চূড়ান্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষাটা শুরু হবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচন দিয়ে। সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই। যদিও অনেকের মধ্যে এমন আশঙ্কা ভর করেছে যে, শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতায় এ নির্বাচনটি আটকে যাবে। এর পরেই রয়েছে খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। চার সিটি নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ জুন। ২০১৩ সালে ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ভোট। তাই কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে ৫ সিটির নির্বাচন হতে পারে একই দিনে। কারণ রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের জুন থেকে জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানি প্রস্তুতি শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন বিএনপিসহ অনেক দল বর্জন করে। দেশে-বিদেশেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। নির্বাচনের পর থেকেই সব দলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা শোনা গেলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ক্ষমতাসীনরা পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুর দিকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। সিদ্ধান্ত হয় একাদশ নির্বাচনে যাওয়ার। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসা বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দলটি যে এবার নির্বাচনের বাইরে থাকবে না তা দলের নীতিনির্ধারকরা জোরোশোরে বলছেন। তাই তো নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রস্তুতিও ব্যাপক। ইতিমধ্যে দলটির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে যাওয়া শুরু করেছেন। নতুন বছরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর হিসেবে ধরে নিয়ে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামতে চায় দলটি। অপরদিকে ক্ষমতাসীনরাও বসে নেই। সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপির নেতিবাচক দিকগুলো জনগণের সামনে এনে জানুয়ারি থেকেই রাজপথে নামছেন দলটির নেতারা। সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে ১৫টি টিমও গঠন করা হয়েছে। বসে নেই জাতীয় পার্টিও। ইতিমধ্যেই তারা বেশ কয়েকটি জেলা সফর করেছে। নতুন বছরে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বড় এ তিন দলের পাশাপাশি ছোট ছোট দলগুলো যার যার নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করছে। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ২০১৮ সাল হল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বছর। এ বছর হবে বিএনপির এবং এ দেশের গণমানুষের, যারা বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন তাদের। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা একাদশ নির্বাচনে অংশ নেব। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সে রকম একটি নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ২০১৮ সালে আমরা অবশ্যই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যে সংকট রয়েছে তা সমাধানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করছি, সরকার আলোচনা করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। কারণ বিএনপি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। যখন তারা বর্জন করে, নির্বাচন প্রতিহত করার কথা বলে, তখন সমস্যা তৈরি হয়। তিনি মনে করেন, অসাংবিধানিক দাবি বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে একটি আদর্শ নির্বাচন হতে পারে। বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আরও আলোচনায় বসতে পারে।
https://www.jugantor.com/tp-firstpage/1525
1/1/2018
Jugantor
Neutral
82
‘ক্যাসিনো রাজা’ অভিযান
ক্যাসিনো ব্যবসা, শুদ্ধি অভিযান প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
ঢাকা মহানগরীতে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে স্পোর্টিং ক্লাবগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরে দু-একটি জেলায়ও অভিযান হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র্যাব। ঢাকা মহানগর পুলিশও ক্লাবগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র, ওয়ান্ডারার্স ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়াচক্র, ধানমণ্ডি ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলমান আছে। ওই সব ক্লাব থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাসিনো বোর্ডসহ বিপুল পরিমাণ জুয়া খেলার সামগ্রী, নগদ টাকা, অস্ত্র, মদ ও বিয়ার জব্দ করে। ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী জি কে শামীমকে তাঁর নিকেতনের অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর রিসিপ্টসহ আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার পরই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করেন; ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত যুবলীগ নেতা ও যুবলীগ নামধারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়। ক্লাবগুলো থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাত্ক্ষণিকভাবে তাঁদের সাজা প্রদান করেন। মিডিয়ার রিপোর্ট ও প্রাথমিক বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, ক্লাবকেন্দ্রিক ক্যাসিনো ব্যবসা তথা জুয়া খেলার সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জড়িত। তাঁরাই সব ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করতেন। এভাবে তাঁরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনের শাসন ও গুড গভর্ন্যান্স তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর সতর্ক বাক্য উচ্চারণ করেছেন। তিনি আট মাস পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সূত্র থেকে সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এবং সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন, এ তথ্য জানার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান নিজ দল থেকেই শুরু করেছেন। তিনি মনেপ্রাণে চান, তাঁর নেতাকর্মীরা দুর্নীতি ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে জনগণের জন্য কাজ করুক। তিনি সব সময় নিজেকে জনগণের সেবক বলেন এবং তাঁর নেতাকর্মীদের সেভাবেই নির্দেশ দেন। তার ব্যত্যয় ঘটায় তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। একজন রাষ্ট্রনায়কের গভীর দেশপ্রেম, নিজের শতভাগ স্বচ্ছতা, নৈতিক সাহস ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা না থাকলে এভাবে নিজের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি অভিযান চালাতে পারেন না। শেখ হাসিনার মধ্যে সে গুণাবলি আছে বিধায়ই এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন, যা দেশবাসী স্বাগত জানাচ্ছে। স্পোর্টিং ক্লাবের কাজ ক্রীড়াবিদ তৈরি করা। ক্রীড়ার অনুশীলন ও ক্রীড়ার মানোন্নয়নে কাজ করা। যুবকদের বিনোদনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। একইভাবে সামাজিক ক্লাবগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—সমাজ উন্নয়ন, সামাজিক দায়িত্ব পালন ও সমাজের দুস্থদের পাশে থাকা। আর সাংস্কৃতিক ক্লাবগুলোর লক্ষ্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুবকদের জড়িত করে তাদের সুস্থ পরিবেশে ধরে রেখে নির্মল বিনোদন ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করা। এসব লক্ষ্য নিয়েই ক্লাবগুলোর কাজ করার কথা। এখন দেখা যায় এসব লক্ষ্য বিসর্জন দিয়ে কিছু স্পোর্টিং ক্লাব ইনডোর গেমের নামে জুয়া খেলার আসরে রূপান্তরিত হয়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে ক্লাব মানেই জুয়া খেলা আর মদ খাওয়ার জায়গা। জুয়া ও মদ ক্লাবের অনুষঙ্গ হিসেবেই অনেকে মনে করে। কিন্তু ক্লাবগুলোকে ক্যাসিনো বানানো এবং ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়ার আসর বসানো এটা অতীতে কেউ দেখেনি। এটা ধারণারও বাইরে ছিল। ক্লাবকেন্দ্রিক ক্যাসিনো ব্যবসা ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এ চক্রে শাসক দলের সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা রয়েছেন। এই অবৈধ ব্যবসার অর্থ অনেক প্রভাবশালী নেতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য ও কর্মকর্তার কাছেও যায়—এমন ধরনের তথ্য গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন বলে মিডিয়া রিপোর্টে জানা যায়। শুধু প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, নেপথ্যে থেকে যাঁরা মদদ দিয়েছেন এবং যাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হোন বা ক্লাব কর্মকর্তা বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যই হোন বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাই হোন, সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাঁরা তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি, সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। অভিযান, গ্রেপ্তার, মামলা ইত্যাদির মাধ্যমে চমক ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে তা ঝিমিয়ে পড়ে এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ফলে ওই সব অভিযানের টেকসই ও ইতিবাচক প্রভাব সমাজ, রাজনীতি ও প্রশাসনে পড়েনি। এবারের শুদ্ধি অভিযান ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল নিজ দলের মধ্যে এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান করেছে বলে জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী সব কিছু বুঝে-শুনে, সুচিন্তিতভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। এ অভিযান থেকে অন্যরা সতর্ক হবেন এটাই কাম্য। সংশোধিত না হলে তাঁদের পরিণতি একই হবে। বাংলাদেশে জুয়া খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো ধরনের জুয়া খেলার অনুমতি কোনো কর্তৃপক্ষেরই দেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ জুয়া খেলার বিরুদ্ধে দেশে তেমন কোনো শক্ত আইন নেই। একমাত্র আইন The Public Gambling Act, ১৮৬৭ যা মেট্রোপলিটন সিটি অর্থাত্ মহানগরের বাইরে প্রযোজ্য। মহানগর এলাকায় জুয়া খেলার বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইন নেই, যা পুলিশ প্রয়োগ করতে পারবে। The Public Gambling Act, ১৮৬৭-তে জুয়া খেলার অপরাধে শাস্তির বিধান খুবই লঘু। এক-দুই মাস জেল অথবা দুই-এক শ টাকা জরিমানা। এ আইন প্রয়োগ করে জুয়া খেলা বন্ধ বা দমন করার সুযোগ খুবই কম। অতীতের ঔপনিবেশিক শাসক বা এ দেশীয় শাসক বা আইন প্রণেতা জুয়া খেলার অপরাধে কঠোর শাস্তির বিধান চাননি। তাঁরা জুয়া খেলাকে বড় ধরনের অপরাধ মনে করেননি বিধায় কঠোর আইনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। অথচ সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে জুয়া খেলা একটি বড় অপরাধ। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব প্রকট। তাই এই আইনের সংশোধন দরকার এবং নতুন আইন করা বা The Public Gambling Act, ১৮৬৭ মহানগরের জন্য প্রযোজ্য করা প্রয়োজন। যেহেতু জুয়া খেলা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেহেতু জুয়া খেলার সামগ্রীও আমদানি অযোগ্য আইটেম হওয়া স্বাভাবিক। তাহলে ক্যাসিনোসামগ্রী কিভাবে দেশের মধ্যে প্রবেশ করল। এগুলো তো বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে। ওই সব বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতগুলো ক্যাসিনো দেশের মধ্যে ঢুকবে তা অস্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া অপরিহার্য। কারো কোনো সম্পৃক্ততা, উদাসীনতা বা অবহেলা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও প্রয়োজন। স্পোর্টিং ক্লাবগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও খেলোয়াড়দের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। এ জন্য দেশের সব ক্লাবে সপ্তাহে এক বা দুই দিন হাউজি খেলার বিষয়টিতে প্রশাসনের মৌন সমর্থন থাকে। ভেতরে তাস বা তাসের মাধ্যমে সীমিত আকারে জুয়া খেলা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকে না। এগুলো ক্লাবের আয়ের উত্স হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ক্যাসিনোর মাধ্যমে বড় ধরনের জুয়া খেলা এবং তার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উপার্জন, যা কিছু ব্যক্তির পকেটে যায়, তা কোনোক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়। এই বেআইনি ও সমাজবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হওয়া অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে ক্লাবগুলোকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ক্লাব চালাতে হলে অর্থের প্রয়োজন হয়। এ অর্থ কোথা থেকে আসবে, ক্লাবের আয়ের উত্স কী হবে তাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢালাওভাবে সব ক্লাবে হানা দেওয়া ঠিক হবে না। যেখানে ক্যাসিনো বা বড় জুয়া খেলার অভিযোগ বা গোপন তথ্য পাওয়া যাবে, শুধু সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা যাবে। ক্লাবপাড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি না করাই ভালো। দেখা যায়, সব সরকারের আমলেই রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিশেষ করে শাসক দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নানা অনিয়ম ও অপকর্মে জড়িয়ে যান। তাঁরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বাস-লঞ্চ-টেম্পো টার্মিনাল, হাটবাজার ও খেয়াঘাট দখল করে আয়-রোজগার করেন। সংগঠনের নেতারাও সহযোগী সংগঠনের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেন না। তাঁরা মনে করেন, দল যখন ক্ষমতায় তখন দলের লোকজন কিছু আয়-রোজগার করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হোক। কিন্তু তাঁদের কর্মকাণ্ড যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে সীমা অতিক্রম করে সে ব্যাপারে কারো মাথাব্যথা থাকে না। তাই তাঁরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়। জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। মিডিয়া রিপোর্টে আরো জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে যুবলীগের ছয় শীর্ষ নেতা ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই অন্য দল থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী। কেউ বিএনপির যুবদল থেকে, কেউ আবার জামায়াত-শিবির থেকে, কেউ জাতীয় পার্টি থেকে, কেউ ফ্রিডম পার্টি থেকে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগে জামায়াত-শিবির ও ফ্রিডম পার্টির লোকের আশ্রয়স্থল হবে এটা ভাবাই যায় না। কোনো যুক্তিতেই এটা মানা যায় না। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলের কার্যকরী কমিটিতে ঢুকতে হলে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। যুবলীগে ঢুকতে নাকি ৫০ লাখ টাকাও কেউ কেউ ঘুষ দিয়েছেন। এটা পার্টির কর্মীরাই বলে থাকেন। এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিরা যুবলীগে ঢুকতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন তা অবিশ্বাস করার কিছু নেই। তাঁরা তো নানা অপকর্মের মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছানোর জন্যই শাসক দল বা শাসক দলের সহযোগী সংগঠনে ঢুকে নিরাপদে অপকর্ম চালান। তাঁদের কাছে দলের আদর্শ বা নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নেই। শাসক দলকে নিজের আশ্রয় ও অবৈধ প্রভাবের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ রোজগার ও প্রতিপত্তি লাভ করে থাকেন। যুবলীগে কিভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হলেন তার জবাব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকেই দিতে হবে। তাঁদের এত বেপরোয়া হওয়ার বিষয়টির দায়িত্বও শীর্ষ নেতৃত্ব এড়াতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তা সামরিক সরকারের স্টান্টবাজির মতো হবে না এবং এ উদ্যোগের কার্যকারিতা অব্যাহত থাকবে—এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। দেশবাসী বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবেই দেশে আইনের শাসন, সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর দলের নেতাকর্মী, সব রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর এ শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানালে, সমর্থন দিলে ও সহযোগিতা করলে জনগণের কল্যাণ হবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2019/10/01/820803
10/1/2019
Kaler Kontho
Govt leaning
83
‘ক্যাসিনো রাজা’ অভিযান
ক্যাসিনোর সাজসজ্জা দেখে সবার চোখ ছানাবড়া
বিকেল ৩টার দিকে ক্লাব পাড়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, পুলিশ ঢুকেছে আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবে। কেন ঢুকেছে? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একযোগে এ চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামাদি, মদ, নগদ টাকা, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করেছে। অভিযান চলাকালে পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেসব ক্লাবে ক্যাসিনো জুয়া হয় বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, সেগুলোতেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এখানে চারটি ক্লাবে এ অভিযান চালিয়েছি। সকালে গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নেও আমরা গিয়েছিলাম। তবে সেখানে ক্যাসিনো কিংবা অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি।’ ফকিরেরপুল, আরামবাগ ও মতিঝিলের এ ক্লাব পাড়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন সেখানে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনেক সাধারণ মানুষও ক্যাসিনো খেলার স্থানে গিয়ে পুলিশের অভিযান দেখে। ক্যাসিনো খেলার পরিবেশ দেখে অনেকের চোখই ছানাবড়া। ‘শুনেছিলাম, ক্যাসিনো নাকি সুন্দর করে সাজানো থাকে। কিন্তু এত সুন্দর তা না দেখলে জানতাম না। তাও তো দেখলাম এলোমেলো অবস্থায়’- ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে বেরিয়ে বলছিলেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে র‌্যাবের আচমকা অভিযানের পর থেকেই আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবের ক্যাসিনো ছিল বন্ধ। রোববার পুলিশ বন্ধ ক্যাসিনোর তালা ভেঙে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। বন্ধ থাকার কারণে কোনো ক্যাসিনো থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামাদি, কিছু মাদকদ্রব্য এবং ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে নগদ এক লাখ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। শোনা যায় রাজধানীর বিভিন্ন ধরনের ক্লাবে জুয়া খেলা হয়। তবে কেন স্পোর্টস ক্লাবগুলোতেই বেশি অভিযান হচ্ছে? এমন প্রশ্ন করলে পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেখুন আমরা কিন্তু সবার শেষে খেলাধুলার ক্লাবগুলোতে অভিযান শুরু করেছি। এর আগে আমরা অন্যান্য যে সব ক্লাবে ক্যাসিনো বা অবৈধ কার্যকলাপ চলে সেগুলোতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করেছি।’ অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযানে ক্লাবগুলো খেলাধুলাসহ স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোন ব্ঘাোত ঘটবে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ক্লাবগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। যে কার্যকলাপ অবৈধ আমরা শুধু সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
https://www.jagonews24.com/national/news/528514
9/22/2019
Jago News
Neutral
84
‘ক্যাসিনো রাজা’ অভিযান
অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে
সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অনেকগুলো মামলা হলে র‍্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায় ১০টি মামলায়। এর মধ্যে ৯টির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়ে গেছে। একটির তদন্ত আটকে আছে আদালতের স্থগিতাদেশে। দুই বছর আগের আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে রাজধানীর ক্লাবগুলোতে প্রকাশ্যে এই খেলা বন্ধ হয়েছে। তবে এই খেলা বন্ধ হয়ে গেছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি আর অভিযানের কারণে এখন ঝোঁক তৈরি হয়েছে অনলাইন ক্যাসিনোতে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‍্যাব। এই অভিযানে সরকার দলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বসহ ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার কথা জানানো হয়। অভিযানের সফলতা প্রসঙ্গে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোর জন্য খেলাধুলা বন্ধ ছিল। আমাদের অভিযানের পর আবার খেলা চালু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহরে দৃশ্যত এখন ক্যাসিনো নেই। কোনো ক্লাবেই এটা হচ্ছে না। গোয়েন্দারা নজরদারি করছে। কোথাও এমন কিছু পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে ক্যাসিনো বন্ধ হলেও অনলাইন ক্যাসিনোতে ঝুঁকছে মানুষ। তা বন্ধেও আমাদের নজরদারি রয়েছে।’ আরও পড়ুন: অনলাইন ক্যাসিনো ঠেকানো যাচ্ছে না ফেসবুক ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে এসব সাইটের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে বাংলায়। অনলাইন ক্যাসিনোর অ্যাপ ইনস্টলের জন্যও দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অফার। এমনকি বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগোও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অ্যাপের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সক্ষমতার অভাব রয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের। তারা বলছে, বিদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালিত হওয়ায় এগুলো ঠেকানো সহজ নয়। অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে ঠিকাদার ও ক্যাসিনো কারবারি জি কে শামীম। ফাইল ছবি ফেসবুকে বুস্ট করা বেশ কয়েকটি অনলাইন ক্যাসিনোর বিজ্ঞাপন পেয়েছে নিউজবাংলা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই অনলাইন ক্যাসিনো। তবে এসব ক্যাসিনোর মালিক কারা বা কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই। আরও পড়ুন: গ্রামেও ছড়িয়েছে ‘বাজি’র ক্যাসিনো, বেশি বুঁদ শিক্ষার্থীরা কয়েকটি ক্যাসিনোর ফেসবুক পেজে দেয়া রয়েছে ওয়াটসঅ্যাপ নম্বর। এগুলোতে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং টাকার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্য হওয়ার শর্ত দেয়া হয়েছে। চাওয়া হয়েছে ভোটার আইডি কার্ড, নাম, বয়স, জন্মতারিখ, মোবাইল ফোন নম্বর। এসব তথ্য দিলেই মেলে গ্রুপের সদস্য হওয়ার অনুমতি। অনলাইনে ক্যাসিনো চালাতে রীতিমতো অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এর নাম বাজি। অ্যাপটি স্মার্টফোনে নামিয়ে জিমেইল আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে আইডি খুললেই ঢোকা যায় অনলাইন ক্যাসিনো দুনিয়ায়। যে অ্যাকাউন্ট খোলা হলো, তাতে বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে টাকা ঢুকিয়ে শুরু করা যায় বাজি খেলা বা জুয়া খেলা। বাজি ধরা যায় সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ‘যত ইচ্ছা’ তত টাকা। অ্যাপটিতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই চলে জুয়া খেলা। অংশগ্রহণকারীরা যে যার মতো বিভিন্ন দানের ঘর বা আইকন বাজি ধরার পর ঘুরতে শুরু করে ক্যাসিনোর চাকা বা হুইল। হুইলের কাঁটা যে ঘরে থামে, সেই ঘরে যারা বাজি ধরেছিলেন তারা জিতে যান দান। টাকা পান ১০ গুণ, ২০ গুণ, ৪০ গুণ, ৪০০ গুণ, এমনকি ৪০০০ গুণ পর্যন্ত। আরও পড়ুন: অনলাইন ক্যাসিনোর লাগামহীন বিজ্ঞাপন ফেসবুক, গুগলে সাইবার পুলিশ বলছে, অনলাইন ক্যাসিনোর সাইটগুলোর ডোমেইন দেশের বাইরে এবং নির্ধারিত সময় পর পর এসব সাইটের আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণকারীরা। যে কারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে অনলাইন ক্যাসিনোর কিছু সাইট বন্ধ করা হলেও ফল মিলছে না। এমন শতাধিক সাইট ও অ্যাপস চিহ্নিত করেছে র‍্যাব। অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ও ক্যাসিনো কারবারি সম্রাট। ফাইল ছবি সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অনেকগুলো মামলা হলে র‍্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায় ১০টি মামলায়। এর মধ্যে ৯টির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়ে গেছে। একটির তদন্ত আটকে আছে আদালতের স্থগিতাদেশে। পাঁচটি ক্লাবে অভিযান দিয়ে শুরু ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে চারটি ও গুলশানের একটি ক্যাসিনোতে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করে। ২০১ জনকে আটক করে দেয়া নয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। বিদেশি মদ, বিদেশি সিগারেট, বিয়ার, হেরোইন, কষ্টি পাথরের মূর্তি এবং ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। পাঁচটি ক্লাব হলো- ফকিরাপুল ইয়াং ম্যান্স ক্লাব, ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া ও গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর প্রথমদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান থেকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফকিরাপুল ইয়াং ম্যান্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক, অবৈধ অস্ত্র, ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় তার দুটি অস্ত্রও জব্দ করা হয়। অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে ক্যাসিনো খালেদ নামে পরিচিত ছিলেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তার কমলাপুর অফিসে অভিযান চালিয়ে মাদক ও শক দেয়ার ইলেক্ট্রিক মেশিনও জব্দ করা হয়। গুলশান ও মতিঝিল থানায় চারটি মামলা করা হয়। গুলশান থানায় অস্ত্র আইনে মামলাটির অভিযোগপত্রও দিয়েছে র‌্যাব। একই দিনে ঢাকার ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম, তুহিন মুন্সি ও নবীর হোসেন সিকদার। ওই ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ছাড়াও বিদেশি মদ পাওয়ার কথা জানানো হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতিঝিল থানায় মামলা হয়। জি কে শামীম গ্রেপ্তার ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা ও শীর্ষ ঠিকাদার জি কে শামীমের নিকেতনের বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। সাত দেহরক্ষীসহ জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে গুলশান থানায় তিনটি মামলা হয়। শফিকুল আলম ফিরোজ গ্রেপ্তার ২০ সেপ্টেম্বর অভিযান চালানো হয় কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে। অভিযানে ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে মাদক, অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ তাসসহ গ্রেপ্তার করা হয। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি ও গুলশান থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয় এই মামলাতেও র‌্যাব অভিযোগপত্র দিয়েছে। অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে লোকমান ও শফিকুল আলম ফিরোজকেও ক্যাসিনো কারবারির জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। ফাইল ছবি ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান একইদিন ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ক্লাবটি সিলগালা করা হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র, হালিশহরের আবাহনী লিমিটেড ও সদরঘাট এলাকায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জুয়া খেলার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এনু-রুপনের বাসায় অভিযান ওয়ান্ডার্স ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় দুই ভাই এনামুল হক এনু, রুপন ভূঁইয়া ও তার দুই বিশ্বস্ত সহযোগীর বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৫ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ৭ দশমিক ২০ ভরি সোনা এবং ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র (একটি অবৈধ) উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, ওয়ারী থানাতে সাতটি মামলা হয়। অস্ত্র, মানি লন্ডারিং ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো করা হয়। এই মামলাতেও র‌্যাব অভিযোগপত্র দিয়েছে। ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্লাব থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা, অবৈধ মদ ২ হাজার বোতল, বিয়ার ক্যান ১০ হাজার ও বিপুল পরিমাণ আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়। তেজগাঁও থানায় মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। এই মামলায় র‌্যা অভিযোগপত্র দিয়েছে। ‘ক্যাসিনো সেলিম’ গ্রেপ্তার দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩০ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের বিমান থেকে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা সন্দেহে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে সেলিমের বাসা ও অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, পাসপোর্ট, চেক বই, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া সেলিমের তিন সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিযানের ২ বছরে ক্যাসিনো অনলাইনে দেশে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান। ফাইল ছবি সেলিম প্রধানকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া গুলশানে মাদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়। এই মামলাতেও র‌্যাব অভিযোগপত্র দিয়েছে। সম্রাট-আরমান গ্রেপ্তার ৬ অক্টোবর ভোরে র‌্যাবের অভিযানে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও এনামুল হক আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন সাহেব নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনির চৌধুরী নামে একজনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তারা। গ্রেপ্তারের সময় এমরানুল হক আরমানকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক আইনে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়। গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সম্রাটের দেয়া তথ্যে ঢাকার কাকরাইল (সম্রাটের অফিস), মহাখালী ডিওএইচএস (বাসা), শান্তিনগরে (ভাইয়ের বাসা) অভিযান পরিচালনা করা হয়। সম্রাটের কাকরাইলের অফিস থেকে উদ্ধার করা মাদক, অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বন্যপ্রাণীর চামড়া ও শারীরিক নির্যাতনে ব্যবহার করা সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। সম্রাটকে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অফিসে বন্যপ্রাণী চামড়া রাখার দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়। সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। এ ছাড়া আরমানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের বাসায় অভিযান করে বিভিন্ন ব্যাংকের ১২টি চেক বই জব্দ করা হয়। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে এবং রমনা মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। রমনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। পাগলা মিজান গ্রেপ্তার ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি ও সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে দেশত্যাগের সময় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মিজানকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মিজানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার লালমাটিয়া অফিস ও আওরঙ্গজেব রোডের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। মিজানের আওরঙ্গজেব সড়কের বাসা থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক, এক কোটি টাকার এফডিআরসহ অস্ত্র এবং গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় অস্ত্র আইনে ও মোহাম্মদপুরে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়। কমিশনার রাজীব গ্রেপ্তার ১৯ অক্টোবর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও মাদক সেবন করার অভিযোগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে মোহাম্মদপুর বাসা ও অফিস অভিযান পরিচালনা করে বাসা থেকে নগদ ৩৩ হাজার টাকা, ৫ কোটি টাকার চেক, বিদেশি মদ, পাসপোর্টসহ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়। অস্ত্র আইনে মামলাটির অভিযোপত্র দিয়েছে র‌্যাব। কাউন্সিলর ময়নুল গ্রেপ্তার চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মাদক কারবার ও জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগে ৩১ অক্টোবর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে ময়নুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার অফিস থেকে অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়। পরে তার তথ্যে হাটখোলা রোডের ‘গ্লোব নিবাসে' অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়। সম্রাটের সহযোগী জাকির গ্রেপ্তার ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসার সহযোগী হিসেবে নাম আসা জাকির হোসেন আত্মগোপন করে ভোলার চরনোয়াবাদ এলাকায় চলে যান। ২৯ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়। ভোলা সদর থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়।
https://www.newsbangla24.com/news/157792/Casino-online-in-one-year-of-the-campaign
9/18/2021
News Bangla
Neutral
85
‘ক্যাসিনো রাজা’ অভিযান
র‌্যাবের অভিযানে ‘ক্যাসিনো রাজা’ লোকমান গ্রেপ্তার
অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর চালানোর অভিযোগে লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান‘ক্যাসিনোর রাজা’ হিসেবে পরিচিত। বুধবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ায় লোকমানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা। এ সময় তার বাসা থেকে বেশ কয়েক বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে র‌্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লোকমানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মোহামেডান ক্লাবের কয়েকটি রুম ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, লোকমানের বাসায় ক্যাসিনো বাণিজ্যের বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে- এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানটি শুরু করতে একটু দেরি হওয়ায় হয়তো সুযোগ বুঝে তিনি টাকাসহ অবৈধ জিনিস সরিয়ে ফেলেছেন। তবে তাকে সার্বিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেপ্তারকৃত লোকমান একসময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। তবে বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে অবৈধ ক্যাসিনোর টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
https://www.bangla.24livenewspaper.com/post-49549
9/26/2019
Bangla 24 live newspaper
Neutral
86
‘ক্যাসিনো রাজা’ অভিযান
ক্যাসিনোতে অভিযান: র‍্যাব-পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার পর ফের সুর নরম করলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী
বাংলাদেশে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানো বা জুয়ার বিরুদ্ধে র‍্যাবের অভিযান নিয়ে এখন দ্বিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, এতদিন অবৈধভাবে চলা ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে কেন অভিযান চালানো হয়নি? একইসাথে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মি: চৌধুরী বলেছেন, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর পিছনে যুবলীগের অনেকে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে এটি তার ব্যর্থতা বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থতার দায় নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি নন। র‍্যাব গত বুধবার রাতে ঢাকায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চলা চারটি ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে।
https://www.bbc.com/bengali/news-49754642
9/19/2019
BBC Bangla
Govt critique
87
নুসরাত হত্যাকাণ্ড
নুসরাত হত্যা নিয়ে শুরু থেকেই তাচ্ছিল্য ছিল সবার
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন নিপীড়ন ঘটনার ব্যাপারে প্রশাসন, পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে দেখার চেষ্টা করেছে। পরবর্তীতে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটিও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর সবার টনক নড়ে। gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন এমনই তথ্য পেয়েছে নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে গঠিত পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দল। তদন্ত টিম নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও পুলিশের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে জানতে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসসহ ৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের এ তালিকায় রয়েছেন- নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর তাকে আগুন দেওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে দায়িত্বে ছিলেন যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য। এছাড়া রয়েছেন মাদ্রাসা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্ত দলের প্রধান ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন বলেন, আমরা সব কিছু গুছিয়ে এনেছি। নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশ, প্রশাসন ও মাদ্রাসা কমিটির কি নেগলেজেন্সি ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কবে নাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের করণীয় সম্পর্কে তদন্ত টিম বেশ কিছু মতামত দেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি রুহুল আমিন কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা তদন্তে যা পেয়েছি, সেটাই প্রতিবেদন উল্লেখ করবো। তদন্তের ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, তদন্ত চলছে, তথ্য সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কার কতটুকু দায় ছিল কিংবা আসলেই কারও দায় ছিল কি না- সে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আরো পড়ুন: শ্রীলঙ্কার ব্যর্থ পুলিশ প্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ সোহেল রানা আরো বলেন, প্রতিবেদনের যদি পুলিশের কোনো সদস্যের দায়িত্বে অবহেলা বা অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের অপরাধ ফৌজদারি সমতুল্য হলে প্রচলিত আইনে মামলা হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত দল ৩৫ থেকে ৩৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য দ্বিতীয় দফায় আরো ১২/১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও প্রতিবেদন দিতে আরও ৮-১০ দিন সময় লাগবে। তদন্ত সূত্র জানায়, নুসরাত ছাড়াও আরো কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল বলে পুলিশের তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে। যৌন নিপীড়নের মামলায় কারাগারে গেলেও জেলে বসেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। তদন্ত কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, মাদ্রাসার গভর্নিং বডি আগের বিষয়গুলো আমলে নিলে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা এড়ানো যেত। সূত্র জানায়, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনকে প্রশাসন, পুলিশ, মাদ্রাসা কমিটি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ কোন রকম গুরুত্ব দেয়নি। তারা বিষয়টি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হিসেবেই গণ্য করেছে। নুসরাতের শরীরের আগুন দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সবাই নড়ে চড়ে বসে। আরো পড়ুন: বাংলাদেশের আইসিইউতে ৮০ শতাংশ মারা যায় সুপারবাগে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দলের প্রধান ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন জানান, সিরাজ উদ দৌলা এর আগে আরও অনেক ছাত্রীর সঙ্গেই নুসরাতের মতোই ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে নুসরাতের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সঙ্গেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছিল ছ’মাস আগে। বিষয়টি মাদ্রাসা গভর্নিং বডিকে লিখিত আকারে জানিয়েছিলেন ভিকটিমের বাবা। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পারিনি। ওই অভিযোগগুলোর যদি সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তবে হয়তো নুসরাতের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনাটি না-ও ঘটতে পারত বলে মনে করেন তিনি। গুরুত্ব দেননি পুলিশ সুপার তদন্ত সূত্র জানায়, যে দিন (৬ এপ্রিল) নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়া হয় বিষয়টি ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমকে জানানো পরও তিনি (পুলিশ) ঘটনাস্থলে আসেননি। ঘটনা শুনেও এসপি রওয়ানা হন খাগড়াছড়ির ক্রীড়া অনুষ্ঠানে। পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে পুলিশ সুপার ফেনীতে ফিরে আসেন। সূত্র জানায়, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলা দায়েরের পর নুসরাতের নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে পুলিশ উদ্দ্যোগ নেয়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত টিমের কাছে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ৩০ তারিখ উপজেলা নির্বাচন ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যস্ত থাকার কারণে নাকি নুসরাতের নিরাপত্তার বিষয়টির দিকে নজর দিতে পারেননি। অপরদিকে, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুরসাতের মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন। এমনকি হত্যা মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নামটি লিখেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। শুধু তাই নয় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পদ পদবি পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। শুধু সিরাজ উদদৌলার বাড়ির ঠিকানা লিখেছিলেন। সূত্র জানায়, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধীনের রয়েছে ১২টি দোকান। প্রতিমাসে এসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। পাশাপাশি মাদ্রাসার ভেতরে পুকুরে মাছের চাষ করা হয়। সেখান থেকেও মোটা অংকের টাকা আসে। এছাড়া প্রতি মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের পরিমাণ ছিল অনেক। সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে দুইটি গ্রুপ। একটি গ্রুপ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেত। ওই গ্রুপটি ঘটনার পর অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আরো পড়ুন: আদরের নাতিকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী আর্থিক লেনদেন তথ্য পায়নি সিআইডি নুসরাত হত্যার ঘটনা চাপা দিতে ১৭ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সিআইডির তদন্ত টিমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম সোনাগাজীতে অবস্থিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে অনুসন্ধান চালায়। এ ব্যাপারে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ মাদ্রাসার একাউন্টের পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে। তবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে বোরখাসহ অন্যান জিনিস কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম। একই তথ্য জানিয়েছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা। ঘটনার পর ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির একটি টিম ঘঠনাস্থল পরিদর্শন করে। উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা তদন্ত করছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন )। এ মামলায় পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
https://www.ittefaq.com.bd/48453/%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0
4/24/2019
Daily Ittefaq
Govt critique
88
নুসরাত হত্যাকাণ্ড
নুসরাত হত্যার ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহবুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমাদের সামাজিকভাবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে হবে। সমাজের প্রতিটা মানুষ যদি সচেতন হয় তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন শুক্রবার দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০ বছরপূর্তি ও পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের পলিথিন না ব্যবহারের প্রতি সচেতন হতে হবে। পলিথিন পরিবেশ বিপর্যয়ে অনেক ভূমিকা রাখে। আমাদেরকে পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহারে উৎসাহিত হতে হবে। পাটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অনুষ্ঠানে ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফের সঞ্চালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন একসাথে কাজ করলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। আজকের এ প্রোগ্রাম আয়োজন করার জন্য ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশকে ধন্যবাদ। আরো পড়ুন : বাংলাদেশে আবার আসছেন মেসি! অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্কুল অব ম্যানেজম্যান্ট এন্ড বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের ডিন ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোছাদ্দেক আহমেদ চৌধুরী বক্তব্যে রাখেন। এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সভাপতি তানভির আহমেদ শাকিল, সাধারণ সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মনির আহমেদ চৌধুরী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন আখন্দ, আল হারামাইন গ্রুপের এমডি এহসানুর রহমান, বারডেম হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক ড. এম ফয়জুদ্দীন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সাবেক ডিন ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মাযহারুল আযম মজুমদার, অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম বক্তব্যে রাখেন।
https://www.ittefaq.com.bd/45252/%E2%80%98%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87%E2%80%99
4/12/2019
Daily Ittefaq
Govt leaning
89
নুসরাত হত্যাকাণ্ড
নুসরাত হত্যা ঃ পিপিইয়াএর ৭ করমকর্তা এর বিরুদ্ধে মামলা
বুধবার (২৩ অক্টোবর) আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নাহার বাদী হয়ে ফেনীর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা লোকমানের আদালতে মামলার আবেদন করেন। মামলার আবেদনে অভিযুক্তরা হচ্ছেন, পিবিআই সাবেক ডিআইজি বনজ কুমার, পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম, পিবিআই উপপরিদর্শক সন্তোষ চাকমা, রতেপ চন্দ্র দাস ও লুৎফর রহমান। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের স্বচ্ছতা ও রায়ের বিষয়ে শুরু থেকেই এক ধরনের সমালোচনা চলে আসছিল। ওই মামলার ১নং সাক্ষী ছিলেন পিবিআইয়ে কর্মরত পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাবলু। তিনি গত ১২ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ওই মামলার তদন্ত চলাকালে নিয়মবহির্ভূতভাবে আসামিদের নির্যাতন ও তাদের পরিবার থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি ছড়িয়ে দেন। এর আগেও আসামি পক্ষ থেকে বহুবার পিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ ওঠে। আরও পড়ুন: সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে টাস্কফোর্স গঠন এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি ইমরান হোসেন মামুনের মা নুর নাহার বাদী হয়ে ফেনীর আদালতে পিবিআই প্রধানসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় ও আসামির স্বজনদের থেকে অন্তত ৭৭ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে মামলার আবেদন করেন। বিচারক বাদীর মামলাটি গ্রহণ করে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তবে এখন পর্যন্ত এ মামলায় কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি। এদিকে রাফি হত্যা মামলার আসামির স্বজনরা একই অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেন। ফেনীর মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ তাকে নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে। পরে রাফি বিষয়টি পুলিশকে জানায়। এরপর ৬ এপ্রিল রাফির মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তার জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠায়। এরপর থেকে রাফি ও তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করার চাপ দিতে থাকে অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা। যার ধারাবাহিকতায় রাফি পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে তাকে মিথ্যা কথা বলে একটি ভবনের ছাদে নেওয়া হয়। সেখানে বোরকা পরা পাঁচ ব্যক্তি প্রথমে মামলা তোলার জন্য একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে।’ রাফি অস্বীকৃতি জানালে ওই পাঁচ হত্যাকারী প্রথমে রাফিকে হাত-পা বেঁধে মুখ চেপে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। হত্যাকারীদের তিনজন পুরুষ এবং দুইজন নারী। অগ্নিদগ্ধ রাফি ছাদ থেকে নিচে পালিয়ে আসে। তবে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায় বলে চিকিৎসকেরা জানান। ফেনী হাসপাতালে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে ১০ এপ্রিল রাতে চিকিৎসাধীন রাফি মারা যায়। আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে মাদ্রাসাছাত্র জিসান হত্যা মামলায় ২ যুবকের যাবজ্জীবন পরে অগ্নিসন্ত্রাসের ওই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
https://www.somoynews.tv/news/2024-10-23/ts3V40TK
10/23/2023
Somoy news
Govt critique
90
নুসরাত হত্যাকাণ্ড
মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর দেখে যেতে চান মা
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নৃশংসতার কথা মনে হলে এখনো আঁতকে উঠেন এলাকাবাসী। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নুসরাতকে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন নুসরাত ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা শুরুর আগে ছাত্রলীগের ৫ সন্ত্রাসী নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার দিন পর ১০ এপ্রিল মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওয়ামীপন্থি অধ্যক্ষ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের ১৬ নেতাকর্মীকে (এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে ৬ বছর পরও চূড়ান্ত বিচার পায়নি নুসরাতের পরিবার। খুনি শিক্ষক ও আওয়ামী নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় কার্যকর দেখতে চান এলাকাবাসী। সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। Advertisement নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, ছাত্র ও যুবলীগ কর্মী নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, সাইফুর রহমান, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন, ইমরান হোসেন, মহিউদ্দিন শাকিল, মোহাম্মদ শামীম, কামরুল নাহার ও উম্মে সুলতানা পপি। ১৬ আসামির মধ্যে ২ জন ফেনী এবং অপর ১৪ জন কুমিল্লা, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। সাজার ৫ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। সম্প্রতি সোনাগাজী এলাকা সরেজমিন দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অর্থাৎ থানার প্রায় দেড়শ গজ দূরে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাদ্রাসাটি পুরোপুরি ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছু স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশনায় বাস্তবায়িত হতো। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ তৈরি করেন। ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানানভাবে শ্লীলতাহানি করা হতো। খোদ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করতেন। নুসরাতকে বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাব দেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন নুসরাত। তার মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় সিরাজের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। তখন থেকেই সিরাজসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছাত্রীদের জড়ো হয়ে খেলার দৃশ্য। তিনটি বহুতল পাকা ভবনের সঙ্গে দুটি টিনশেডের ভবনও রয়েছে। যুগান্তরের এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতেই তারা বলছিল, ‘নুসরাত আপাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, ভাবনায় এলেই আতঙ্কে কাঁপতে থাকি। যে ভবনের ছাদে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, সে ভবনের নিচে যেতেই নির্যাতনের কথা মনে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, ‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ ছিল অসংখ্য। পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের চারণভূমি ছিল। আওয়ামী লীগের সব ধরনের সভা-অনুষ্ঠান, মিছিলে শিক্ষার্থীদের জোর করে অংশগ্রহণ করানো হতো। ছাত্রীদের শুধু প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নয়, মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথেও নানাভাবে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করত ছাত্রলীগ ও সিরাজের পালিত সন্ত্রাসীরা। যে ভবনের ছাদে নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়, সেখানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। চারতলা পর্যন্ত উঠে দেখা গেছে, ছাদে একটি তালা ঝুলছে। ওই ভবনের নিচে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা ভয়ে ছাদের দিকেই তাকান না। ওই তালার চাবি থাকে অধ্যক্ষের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রহরী বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ ছিলেন ত্রাস। তার কক্ষে সব সময় ছাত্রলীগ ও বখাটে ছেলেরা আসা-যাওয়া করত। মাদ্রাসার প্রধান গেটের সামনে সারি সারি দোকান রয়েছে। লেপ-তোশকের দোকানে কাজ করা এক শ্রমিক জানালেন, ঘটনার দিন চিৎকার শুনে তিনিও মাদ্রাসাটির ভেতরে ঢোকেন। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলেই সবাই আঁতকে উঠেন। যৌন লালসায় একটি ছাত্রীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বিচার চূড়ান্ত না হওয়ায় আমরা লজ্জিত। মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহিম খলিল যুগান্তরকে বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড চরম বর্বর, নৃশংস। আসামিরা জেলে রয়েছে। এলাকাবাসী তথা আমরাও চাই দ্রুত এর চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত হোক। রায় কার্যকর হলে আমরাও কলঙ্কমুক্ত হব। নুসরাতের মায়ের আর্তনাদ : নুসরাতের বাড়ির প্রবেশমুখেই পুলিশি পাহারা রয়েছে। ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দায়িত্বরত পুলিশকে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দেওয়া হয়। পর্দার আড়ালে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতেই পরিচয় দিয়ে কথা বলছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। নুসরাতের বাবা বিশিষ্ট আলেম মাওলানা একেএম মুসা জামেয়া সারাফাতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। তিনি প্রায় ৩০ বছর ইমামতি করছেন। তাদের ছিল তিন ছেলে ও এক মেয়ে (নুসরাত)। নুসরাত ছিল অদম্য সাহসী, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। নুসরাতের স্মৃতিবিজড়িত কক্ষে পড়ার টেবিল, মাদ্রাসার পোশাক, বই-খাতা সবই পড়ে রয়েছে। শুধু নুসরাত নেই। আর্তনাদ করে মা বলছিলেন, তার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা উত্ত্যক্ত করত। খোদ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ তার মেয়েকে শ্লীলতাহানি করেছে-নুসরাতের এমন অভিযোগে তিনি থানায় একটি মামলা করেন। তখন থেকেই আসামিরা মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। ওই সময় পুলিশি সহযোগিতাও তেমন পাননি। মেয়েকে হত্যার পর আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো তাদের ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটে। বাড়িতে পুলিশি পাহারা থাকলেও পরিবারের সদস্যরা বাইরে গেলে প্রাণভয়ে থাকতে হয়। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মরেও শান্তি পাবেন না জানিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, আসামিরা খুবই ক্ষমতাবান। তাদের আত্মীয়স্বজনরা এলাকায় ত্রাস করে বেড়ায়। রাজনৈতিক ক্ষমতায় তারা যা ইচ্ছা তাই করত। আসামিদের হয়ে এখনো সন্ত্রাসী চক্রটি হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফাঁসির রায় কার্যকর হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে সবকিছু বলে গেছে। আসামিদের নাম বলে গেছে, যা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে নুসরাত মারা যান। হাসপাতালে পুরো সময়ই মা নুসরাতের পাশে ছিলেন। পোড়া শরীর নিয়ে নুসরাতের বেঁচে থাকার টানা আর্তনাদ ভুলতে পারছেন না মা। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, নুসরাত ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করলে নুসরাতের আত্মাও শান্তি পাবে।
https://www.jugantor.com/tp-lastpage/961017
6/1/2025
Jugantor
Govt critique
91
নুসরাত হত্যাকাণ্ড
ফেনীর নুসরাত হত্যার নাটক সাজানোর এডিসি পি কে এনামুল কবির সিলেটের ডিসি
ন্যায়বিচার পেতে ২০১৯ সালে ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পি কে এম এনামুল করিমের কাছে গিয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি ও তার মা শিরিন আক্তার। কিন্তু ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সে সময় নুসরাতের বিরুদ্ধে ‘নাটক’ সাজানোর অভিযোগ থাকার পর ও আজ তিনি সিলেট জেলার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া ২৫ জেলা প্রশাসকের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসাবে পরিচিতরা নিয়োগ পেয়েছেন। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, মাঠ প্রশাসনে ২৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে তাদের বেশির ভাগই আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা ভোগী। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উপসচিব পদমর্যাদার এসব কর্মকর্তাকে জেলা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালের সালে আওয়ামীলীগ সরকার তাদের নিয়োগ বাতিল করেছিলো। অর্থচ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আবারো ছাত্রলীগের নেতারা ডিসি হচ্ছেন। এসব কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। এবিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ফেনীর জেলার সাবেক এডিসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছাত্রলীগের নেতা পি.কে.এম এনামুল কবিরকে সিলেট জেলার ডিসি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছাত্রলীগের বড় মাপের নেতার মো. সাইদুজ্জামানকে জয়পুরহাটের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগের নেতা মো. ইসরাইল হোসেনকে মৌলভীবাজারে ডিসি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মুফিদুল আলমকে ময়মনসিংহ, স্বাস্ত্যসেবা বিভাগের উপসচিব তরফদার মাহমুদুর রহমানকে শেরপুর জেলার ডিসি করা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসিচব এবং গাজী টিভির উপস্থাপিকা ফারহানা ইসলামকে কুষ্টিয়া ডিসি করা হয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব মো. অহিদুল ইসলামকে মাগুরার ডিসি করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালকে রংপুর, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামকে পাবনা, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও ছাত্রলীগের নেতা মোহাম্মদ আমিরুল কায়সারকে কুমিল্লায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনকে মৌলভীবাজার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসিচব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে খুলনা এবং ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্মাানকে গোপালগঞ্জের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তারা আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। আবার অনেকই পিএস ও প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার শুরু হয়। গত ২০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৫ ডিসিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ওই দিন এক আদেশে ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রংপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, নাটোর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খুলনা, গোপালগঞ্জ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পৃথক আদেশে, ফরিদপুর, শেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, চাঁদপুর জেলার ডিসি প্রত্যাহার করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, গত কয়েক দিন ধরে ডিসি নিয়োগের ফিটলিস্ট তৈরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এদিকে ওই সময় নুসরাতের মৃত্যুর আগে তার মা শিরিন আক্তারকে হুমকি দিয়ে এডিসি বলেছিলেন, ‘আপনারা প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, তা প্রমাণ করতে না পারলে আপনাদের বিরুদ্ধে প্রিন্সিপালের লোকজন ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলা করবে। জেলার সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এমন কথায় মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন নুসরাত। শিরিন আক্তার আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষের কক্ষে আমার সামনে নুসরাত অজ্ঞান হয়ে গেলে তার মুখে পানি ছুড়ে মেরেছিলেন সোনাগাজী থানার এসআই ইকবাল।’ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার লোকজনের দেওয়া আগুনে পুড়ে নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর গত ১৮ এপ্রিল তার মা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন। জবানবন্দিতে শিরিন আক্তার বলেন, ৪ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে আমি, আমার মেয়ে রাফি, ছেলে নোমান, মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিসহ ফেনী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পিকে এনামুল করিমের অফিসে গিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগটি জানাতে চাই। তখন এডিএম বলেন, এখন কেন এসেছেন? আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলার করার আগে আসতেন, তা হলে দেখতাম কী করা যায়। এখন মামলায় যা হবে তা-ই হবে। তখন রাফি এডিসিকে বলেন, আপনি আমার বাবার মতো। আপনি আমার কথাগুলো শোনেন। রাফি মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে তার অভিযোগটি জানানোর চেষ্টা করেন এডিসিকে। তখন এডিসি বলেন, প্রিন্সিপাল তো খারাপ, তা সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছ কেন? উত্তরে রাফি বলেন, আমি তো ইচ্ছা করে যাইনি। পিয়নকে দিয়ে প্রিন্সিপাল আমাকে ডেকে নিয়ে গেছেন। তখন এডিসি বলেন, গেছই যখন, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদ্রাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছ?।
https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/684910
9/9/2024
Daily Inqilab
Govt critique
92
আবরার ফাহাদ হত্যা
আবরার হত্যা: সেদিন যা ঘটেছিল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ২৫ আসামির মধ্যে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। বাকি ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই বছর তিন মাস আগে গভীর রাতে বুয়েট ছাত্রাবাসে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে। রোমহর্ষক হত্যা মামলায় এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবরারের বাবা বলেছেন, ‘আমি রায়ে সন্তুষ। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের এ রায়ই তো শেষ নয়। এরপর হাইকোর্ট, আপিল বিভাগেও যেতে পারেন আসামিপক্ষ। আমরা চাই, এই রায় বহাল থাকুক। এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’ যা ঘটেছিল সেদিন ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর দুইদিন আগে ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ রাব্বী। এর জেরে পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে রাতে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইলসহ ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। এরপর ওই কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যেভাবে হত্যাকাণ্ড আবরার হলের যে কক্ষে থাকতেন, ওই কক্ষ ও আশপাশে কক্ষগুলোর কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছুটি কাটিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ৬ অক্টোবর বিকেলে নিজের ক্যাম্পাসে ফেরেন আবরার। ওই দিন বিকেলের দিকে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে পৌঁছে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, বাড়ি থেকে ফিরে আবরার নিজের কক্ষেই পড়ালেখা করছিলেন। ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আবরারের কক্ষে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নম্বর কক্ষে। এই কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগের চার নেতা। সেখানে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করেন নেতারা। ওই কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তারা আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সেটি যাচাই করেন। এক পর্যায়ে আবরারকে তার ফেসবুক আইডি খুলতে বলেন। পরে তারা তার ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে তাকে শিবিরের নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এর পরই ওই দুই নেতার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। 'শিবির ধরা হয়েছে'- এমন খবর পেয়ে সেখানে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী আরও সাত থেকে আটজন নেতা জড়ো হন। তারাও সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরারের দেহ। রাত ২টার পর তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে হলের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়। একজন শিক্ষার্থী জানান, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চিৎকার ভেসে আসছিল। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি ওই কক্ষে যাননি। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সকালে বুঝতে পারেন, সেখানে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। অপর দু'জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পেটাতে পেটাতে আবরারকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের নেতারা। তিনি তাতে রাজিও হন। এরপরও তাকে ছাড়া হয়নি; নৃশংস ও নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হলের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মোস্তফা সে সময় দাবি করেন, প্রতি রাতেই শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে কমবেশি হৈ-হুল্লোড় করেন। কিন্তু রোববার রাতে তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। বিষয়টি গভীর রাতে জানতে পারেন তিনি। আবরারকে হত্যার ঘটনা জানাজানির পর হলজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ওই ছাত্রের রুমমেট ও সহপাঠীরাও এ বিষয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবরারের কয়েকজন সহপাঠী জানান, হত্যার পর দীর্ঘক্ষণ আবরারের লাশটি ২০১১ নম্বর কক্ষেই পড়ে ছিল। রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার নিথর দেহ নামিয়ে আনেন। এক পর্যায়ে নিচতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়িতে তার লাশটি ফেলে রাখা হয়। শেরেবাংলা হলের একজন আবাসিক ছাত্র সে সময় জানান, তিনি রাত ২টার দিকে পানি আনতে গিয়ে দেখেন নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝে তোশকের ওপর আবরারের নিথর দেহ পড়ে আছে। তখন সেখানে ছাত্রলীগের অন্তত তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ঘটনা জানাজানি হয়। তখন সবাই হলের চিকিৎসকদের খবর দেন। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার এক পর্যায়ে চিকিৎসক জানান, আবরার আর নেই, মারা গেছে। ততক্ষণে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময়ে হলের প্রভোস্টও ঘটনাস্থলে আসেন। বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী সে সময় জানান, খবর পেয়ে তিনি রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন- ছেলেটি বেঁচে নেই। ঘটনার বিষয়ে পরদিন হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান জানান, এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেন। সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের মুখ সমকালের হাতে আসা প্রায় দেড় মিনিটের একটি ফুটেজে দেখা যায়, আবরারকে মারধরের পর কক্ষ থেকে বের করা হচ্ছে। প্রথমে একজন বারান্দা দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ান। এরপর তিনি একই পথে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর আরও তিনজনকে দেখা যায় যারা আবরারকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই তিনজনের পেছনে আরও একজনকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপরই চশমা পরা একজন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এর পরপরই আরও পাঁচজনকে ওই বারান্দা দিয়ে পেছনে হাঁটতে দেখা যায়। তাদের একজন আবার মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফুটেজে দেখতে পাওয়া ছাত্রদের মধ্যে নেতা ছাড়াও কর্মী রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ফুটেজটি ছাড়া আর কোনো সিসিটিভিতে ঘটনা ধরা পড়েছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। সেই কক্ষে তখন যারা উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষটিতে থাকেন বুয়েটের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা। ওই কক্ষটি বুয়েট ছাত্রলীগের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার হতো। নেতারাও আড্ডা দিতেন সেখানে। আবরারের ওপর নির্যাতন চলার সময় ওই কক্ষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ছাড়াও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকাল, উপ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, ক্রীড়া সম্পাদক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মিফতাউল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অনিক সরকার, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বী তানিম ও মুজাহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই অবরারকে নির্যাতনে অংশ নেন।
https://samakal.com/bangladesh/article/88120/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2
12/8/2021
Samakal
Govt critique
93
আবরার ফাহাদ হত্যা
আবরার ফাহাদ: বুয়েট ছাত্র হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, পাঁচজনের যাবজ্জীবন
বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই মামলায় মোট ২৫ জন আসামি ছিল। মামলায় অভিযুক্ত ২২ আসামী কারাগারে রয়েছেন, তিনজন পলাতক। রায়ের প্রতিক্রিয়া আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট, তবে যে পাঁচজনের যাবজ্জীবনের হয়েছে, তাদেরও মৃত্যুদণ্ড চান তারা। যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তাদের রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য পরের ধাপগুলোও দ্রুত এগোবে বলে আশাবাদ জানান মিসেস খাতুন। আসামীদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ৩০২ ধারায় নরহত্যা, ৩০২ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী হত্যার পূর্ব-পরিকল্পনা এবং ১০৯ ও১১৪ ধারায় হত্যায় অংশগ্রহণের অভিযোগ গঠন করা হয়। এসব অভিযোগে বলা হয়, তারা পরস্পর যোগসাজশে 'শিবির সন্দেহে' আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০২১ সালের আটই সেপ্টেম্বর এই মামলার অভিযোগে কিছু ভুল সংশোধন করে অভিযোগ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভুঁইয়া বিবিসিকে বলেছেন, গত বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালতে চার্জ-ফর্মে ঘটনাস্থলের নাম এবং এরকম আরও কিছু ভুল ছিল, যা সংশোধনের পর পুনরায় অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচার চলাকালে মোট ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আবরার হত্যা: বিভিন্ন স্থানে ছাত্রবিক্ষোভ, নানারকম দাবি 'যত ভয় দেখানো হচ্ছে, আমরা তত ভয় পাচ্ছি' আবরার হত্যা - ভুলের কারণে এক বছর পর ফের অভিযোগ গঠন ঘটনাপ্রবাহ কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের সাতই অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, পুলিশের ধারণা রাত দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে হত্যার ঘটনা ঘটে। মরদেহ উদ্ধার করা হয় ভোরে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ পরদিন চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে বুয়েট ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির ২৬জন ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষও সোচ্চার হয়েছে। শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
https://www.bbc.com/bengali/news-59574046
12/8/2021
BBC Bangla
Neutral
94
আবরার ফাহাদ হত্যা
আবরার হত্যাকাণ্ড এবং ছাত্র রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক কথাবার্তা, বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। এসবের মধ্যে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের লাভ-লোকসানের খতিয়ান নিয়ে আলাপ আলোচনা। দায় থাকলে না এড়ানো বা না এড়ানোর প্রশ্ন আসবে মি. ইসলাম। কিন্তু এখানে বিবিসি বাংলার দায় কেন থাকবে? আপনি যদি এই চিঠি লেখার আগে একটু রিসার্চ করতেন, তাহলেই দেখতে পেতেন আবরার ফাহাদ কোন ভাবেই বিবিসি বাংলার খবর দেখে কিছু লিখতে পারে না। কারণ, তার সেই স্টেটাস পোস্ট করা হয়েছিল ৫ই অক্টোবর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটে। আর বিবিসি বাংলার রিপোর্টের প্রথম সংস্করণ, যেটায় ভুল তথ্য ছিল, সেটা প্রকাশ করা হয়েছিল ৫ই অক্টোবর রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে। অর্থাৎ আবরার তার স্টেটাস বিবিসি বাংলার রিপোর্টের চার ঘণ্টা আগে পোস্ট করেছিল। তাহলে কীভাবে বলবেন আবরারের স্টেটাসের সাথে বিবিসি বাংলার রিপোর্টের কোন সম্পর্ক ছিল? এটা উদ্ভট একটা প্রশ্ন। আবার কিছু কিছু লোক দু'টোর মধ্যে যোগসাজশও খুঁজে পাচ্ছেন, বিশেষ করে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন নিয়ে। যেমন লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মিনহাজুল ইসলাম তারেক: ''সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের যে সংবাদ বিবিসি বাংলা প্রথম প্রকাশ করে তাতে বলা হয় - জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রফতানি করবে। বিষয়টি ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে পরে আপনারা সংশোধনীও দেন। তবে এর আগেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়! বাংলাদেশে ছাত্র সংগঠনগুলোর বর্তমান ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন টাঙ্গাইলের সরকারি ম্যাটস থেকে বিলকিস আক্তার: ''বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেশের মানুষের জন্য কী কী কল্যাণ অর্জন করেছে? আর ছাত্র সংগঠনগুলো দ্বারা সংগঠিত অকল্যাণগুলোই বা কী? কল্যাণ আর অকল্যাণ দুটির মধ্যে কোনটির পাল্লা ভারী? এসব ভেবে দেখার সময় এখনই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরিও বটে।! কারণ অনেকেই মনে করে, বর্তমান ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে আদর্শ-বহির্ভূত রাজনীতি । এ ধরণের রাজনীতির সংস্কার হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।'' একই বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে জহিন মুমতাহিনাহ: ''আমি মনে করি বাংলাদেশে দ্রুত ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত, কারণ ছাত্র রাজনীতি এতটাই ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া হয়ে গেছে যে, প্রায়শই কোন না কোন মায়ের বুক খালি হচ্ছে। কলুষিত হচ্ছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে অনেক অন্যায়, অপরাধ আর সন্ত্রাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যেত।'' আপনাদের দু'জনকেই ধন্যবাদ বিলকিস আক্তার এবং জহিন মুমতাহিনাহ। অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং তার জন্য যে ছাত্র সংগঠনগুলোই দায়ী, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে অপরাধ রোধ করার জন্য দরকার আইনের প্রয়োগ এবং যথাযথ বিচার। ছাত্র রাজনীতিকে অপরাধ মুক্ত করতে পারলেই ক্যাম্পাসে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আমার মনে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি একদম নিষিদ্ধ করার আগে দু'বার ভাবতে হবে। ''অনেকেই বলছেন, বুয়েটের নিহত ছাত্র আবরারও এই খবরটির ওপর ভিত্তি করে নিজের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে গ্যাস রফতানির বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। এখানে বিবিসি বাংলা'র কাছে আমার প্রশ্ন, আপনাদের ভুল সংবাদ পরিবেশনের উপরই যদি আবরার স্ট্যাটাস দিয়ে থাকে আর এই স্ট্যাটাসই যদি তার জীবনের কাল হয়ে থাকে, তবে বিবিসি বাংলা কি এক্ষেত্রে তাদের দায় এড়াতে পারে?'' এখানে আরেকটি কথা সোজা-সাপটা বলে রাখা ভাল। যেসব ছাত্র বা নেতারা আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তারাই এই খুনের জন্য দায়ী। অন্য কারো দায় এখানে নেই। আপনাকে ধন্যবাদ। দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর কৌশল নিয়ে লিখেছেন খুলনা থেকে মুনির আহম্মদ: ''একজন মন্ত্রীর কথা উদ্ধৃত করে যখন 'জনকণ্ঠ' পত্রিকায় শিরোনাম হয়, 'বিবিসির প্রচারিত সংবাদের কারণে আবরার ফাহাদের এই নির্মম মৃত্যু' তখন আমরা ব্যথিত হই। এদেশে হলুদ সাংবাদিকতার এ রকম উদাহরণের অভাব নেই। মন্ত্রী মহোদয় হয়তো অনেক কথা বলতে পারেন, তবে বিবিসির ভুল সংবাদের কারণে আবরার ফাহাদ পোস্ট দিয়েছে আর সেই কারণে ছাত্রলীগ দ্বারা নির্মমভাবে হত্যাকে জায়েজ করার এক কূটকৌশল কি কোন সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করতে পারে? ''সত্যিই আমি অবাক হই এদেশ আজ কোথায় চলেছে। শামসুর রাহমানের একটা কবিতার বইয়ের কথা মনে পড়ে গেলো, "উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।'' আমি একটু আগে এই কথাই বলছিলাম, মি. আহম্মদ। কে কখন পোস্ট দিল সেটা ঠিকমত না দেখেই আবোল-তাবোল বক্তব্য অনেকেই দেন। তবে সাংবাদিক বা রাজনীতিকদের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ আশা করা যায়। আর একটা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এরকম কূটকৌশল মোটেই কাম্য নয়। আপনাকে ধন্যবাদ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যেমন লিখেছেন রাজশাহীর রানীবাজার থেকে হাসান মীর:   ''ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র। 'বন্ধু প্রতিম' অর্থ বন্ধুর মতো, সম্পূর্ণ বন্ধু নয়। বন্ধুত্ব হয় সমানে সমানে, ছোট আর বড়র অসম বন্ধুত্ব প্রকৃত বন্ধুত্ব হয় না। ভারত আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই। ''প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে জানা গেল, বাংলাদেশ ভারতকে ফেনী নদীর পানি দেবে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেবে, ভারত যাতে বঙ্গোপসাগরে চীনা নৌবাহিনীর আনাগোনার ওপর নজরদারি করতে পারে সেজন্যে বাংলাদেশের উপকূলে রাডার স্থাপন করতে দেবে ইত্যাদি। বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি, যেখানে তিস্তার পানির কথা নেই, গঙ্গার পানি পাওয়া যাবে তবে কেবল বর্ষাকালে, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না। ''তারপরেও বলবো , বাংলাদেশ -- ভারত মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক, কারণ ভারতকে বৈরী ভেবে নয়, বন্ধু ভেবেই বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে।'' বিষয়টি যে জটিল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই মি. মীর। ভারতের সাথে কূটনৈতিক দর কষাকষিতে বাংলাদেশের হাত তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বৈরিতা সৃষ্টি করে সে হাতকে শক্তিশালী করা যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা চেষ্টা করছেন ভারত এবং চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে। কাজটা সহজ না। আপনাকে ধন্যবাদ। একই বিষয়ে লিখেছেন ঢাকার উত্তরা থেকে শফিকুল, যিনি শুধু একটি নামই ব্যবহার করেছেন: ''এবারের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ছিল সব দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। আট বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির একটি সুরাহা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানবিক দিক বিবেচনা করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহরের মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ভারতকে উত্তোলনের সুযোগ দিবে বাংলাদেশ। শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে খরা আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা। এই উভয় সংকট নিরসনের জন্য তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অতীব জরুরি। বাংলাদেশ, ভারতের প্রতি মানবিক আচরণ করলেও ভারত আমাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছে না।''  অনেকেই তাই মনে করছেন মি. শফিকুল, এমনকি ভারতের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাগুলোও ভারতের রাজনীতিকদের প্রতি বাংলাদেশের স্বার্থর কথা ভাবার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে আসামের নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করা এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির কাজ তরান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ। আবার যাচ্ছি বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে। শুক্রবার আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে লিখেছেন চুয়াডাঙার আলমডাঙ্গা থেকে কাজী সাইদ: ''বিবিসি বাংলার সায়েদুল ইসলামের ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি খুবই ভাল লেগেছে। সত্যি কথা বলতে, ছাত্র রাজনীতির আসলেই দরকার আছে কিনা, বা থাকলে সেটা ঢেলে সাজানোর দরকার কিনা, তা ভেবে দেখার সময় এখন এসেছে। ভাল রাজনীতিবিদ হতে ছাত্র রাজনীতি করতে হবে, এই যুক্তি আর খাটছে না। আরেকটি ব্যাপার হল, ছাত্র রাজনীতি শুধু ছাত্রদের উপর প্রভাব ফেলে, তাতো না। এর প্রভাব পরিবারগুলোতে পড়ে মারাত্মক ভাবে। উদাহরণস্বরূপ, আবরার-এর মৃত্যু শুধু আবরার-এর পরিবার নয়, শেষ করবে খুনিদের পরিবার গুলোকেও।'' ছাত্র রাজনীতি এক সময় বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয় ছিল, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড যেভাবে চলেছে, তাতে কেউ আর গর্ব করছে বলে মনে হয় না। আজ ছাত্রদের দাবির মুখে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। ঘটনার এখানেই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না, কারণ সারা দেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলেও, ব্যাপক সংস্কারের দাবি যে জোরদার হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের একটি সাক্ষাৎকারে ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন পঞ্চগড়ের রতন রঞ্জন রায়: ''এ'মাসের ৭ তারিখের সকালের অনুষ্ঠানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ ভিত্তিক বাইসাইকেল পরিসেবা চালুর খবর প্রচার করা হলো। জো-বাইকের প্রধান নির্বাহী মেহেদী রেজার বাইসাইকেল বললেও সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বারবার বাইক বাইক বলছিলেন। বিষয়টা পরিষ্কার বুঝলাম না। বাইক আর বাইসাইকেল কি এক জিনিস? নাকি দুই জনের এক মধ্যে জনের বলার ভুল?'' এখানে কারো বলার কোন ভুল ছিল না মি. রায়। বাইসাইকেলকে সংক্ষেপে বাইক বলা হয়। আবার মোটরসাইকেলকেও সংক্ষেপে বাইক বলা হয়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বাইসাইকেলই বলেছেন, আর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সহকর্মী দু'এক সময় বাইক শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। লাইব্রেরিতে বই ফেরত দেয়া নিয়ে একটি ঘটনার কথা বলছেন ঢাকা থেকে আতাউর রহমান:   ''গত ৩০শে সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র ৬০ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে একটি বই ফেরত দিয়েছে। এখানে জানাতে চাই, বাংলাদেশেও এরকম একটি ঘটনা বছর দুয়েক আগে ঘটেছে। ''বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. শমশের আলী ১৯৫৩ সালে যশোর জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে, William McCardie র 'English Idioms and How to Use Them' বইটি নিয়েছিলেন স্কুল লাইব্রেরি থেকে। কিন্তু ১৮৯০ সালে প্রকাশিত বইটি তিনি একসময় হারিয়ে ফেলেন। বহুদিন খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে ঠিক ১৮৯০ সালে প্রকাশিত সেই একই সংস্করণটিই খুঁজে পান কলকাতার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। সেখান থেকে ফটোকপি করে তিনি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যশোর জিলা স্কুলের ১৮০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বইটি হস্তান্তর করেন।'' ঘটনা দুটো একই রকম মনে হলেও, মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে, মি. রহমান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রটি যে বই নিয়েছিলেন, সেই বইটিই ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু আপনার বর্ণনা অনুযায়ী, ড. শমশের আলী সেই বই-এর আরেক কপি ফটোকপি করে স্কুলকে দিয়েছেন। অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে যে বই নিয়েছিলেন, ঠিক সে বইটি না। তারপরেও, শেষ কথা হলো ছয় দশকেও তিনি সেই বইটির কথা ভোলেননি। আপনাকে ধন্যবাদ। পরের চিঠি লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, তবে তার ইমেইলে কোন ঠিকানা দেয়া ছিল না: ''রাষ্ট্রের বড় কোন আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানকে পুলিশ যদি ধরে বা ধরার প্রস্তুতি নেয়, তখন বলা হয় প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এই ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার কথা হলো তাদের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিতে হবে কেন? তাহলে পুলিশের কাজটা কী? নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নিবে আর না পেলে ব্যবস্থা নিবে না?'' পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করলে এ'ধরণের নির্দেশের কথা হয়তো আমরা শুনতাম না মি. রাজ্জাক। অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর কোন ঘটনা সরকার তার অনুকূলে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় নির্দেশনার কথা বলে থাকতে পারে। তবে আপনার মূল বক্তব্যর সাথে অনেকেই একমত হবেন যে, কোন অপরাধ সংঘটিত হলে কারো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কেন? আপনাকে ধন্যবাদ। একটু বিরক্ত হয়েই লিখেছেন ফেনীর পরশুরাম থেকে ছালাহ উদ্দিন: ''আমি বিবিসি বাংলার নিয়মিত পাঠক। প্রতিবেদনগুলো অনেক ভাল লাগে। তবে এ'মাসের ৮ তারিখে, আর্জেন্টিনা দল নিয়ে লিওনেল মেসির ঢাকায় আসার খবরটা পড়তে অনেক বিরক্ত লাগছিল। বাক্যগুলো সঠিকভাবে সাজানো ছিল না, বিধায় ঠিকভাবে বুঝতে পারছিলাম না। প্রশ্ন হল, কোন একটি খবর পাবলিশ করার পূর্বে কি এটা যাচাই করা হয় না? মাঝে মাঝে এরকম দেখতে পাই কেন?'' লেখার ত্রুটির জন্য আমরা দু:খিত সালাহ উদ্দিন। সব লেখাই দ্বিতীয়বার চোখ বোলানোর পরেই প্রকাশ করা হয়, তবে এই লেখা হয়তো কোন কারণে তাড়াহুড়ার মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা মোটেই কাম্য নয়। আপনাকে ধন্যবাদ। সব শেষে, বিবিসি বাংলার ৭৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''আটাত্তর ছাড়িয়ে বিবিসি বাংলা এবার পা রেখেছে ৭৯ তে। দীর্ঘ এই পথ চলায় বিবিসি বাংলা নিরলসভাবে তার দর্শক, শ্রোতা, পাঠকদের তথ্যের যোগান দিয়ে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিবিসি বাংলা সব সময়ে তার অডিয়েন্সের চাহিদার দিকটি বিবেচনায় রেখেই অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এসেছে। ''নিরপেক্ষতার বিচারে বিবিসি বাংলা এখনো সবার উপরে। তাইতো লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও নিয়মিত বিবিসি বাংলা শোনেন, দেখেন এবং পড়েন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিবিসি বাংলার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।''
https://www.bbc.com/bengali/news-50022668
10/12/2019
BBC Bangla
Neutral
95
আবরার ফাহাদ হত্যা
ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় তাঁর বাবা বরকতউল্লাহ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আবরারের বাবা আদালতকে বলেছেন, ‘আমার ছেলেকে টানা ছয় ঘণ্টা অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।’ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ২২ জন বুয়েট ছাত্রকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে আদালতের নির্দেশে আবরারের বাবা সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ান। তিনি যখন সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন আসামিরা চুপ ছিলেন। আদালতকে বরকতউল্লাহ বলেন, তাঁর ছেলে আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থেকে লেখাপড়া করতেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফজরের আজানের পর লোক মারফত জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করে গুরুতর জখম করে হত্যা করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। পরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে যান। হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। হলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখেন। তখন জানতে পারেন হলের ছাত্র মেহেদী হাসান রাসেল, ফুয়াদ, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ, মেহেদি হাসান রবিন, মনিরুজ্জামান, মিফতাহুল ইসলাম, মাজেদুর রহমান, তানভীর আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, জিসান, আকাশ, মশিউর, তানিমসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বুয়েট ছাত্র তাঁর ছেলেকে গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত আটটা পাঁচ মিনিটের দিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যান। আবরার ফাহাদের বাবা আদালতকে আরও বলেন, রাত ৮টা ৫ মিনিট থেকে রাত ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হলের ২০০৫ নম্বর কক্ষে তাঁর ছেলে আবরার ফাহাদকে লাঠিসোঁটা এবং দড়ি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেন আসামিরা। পরে ঘটনাস্থলে তাঁর ছেলে মারা যান। আসামিরা তাঁর ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত করেই হলে দ্বিতীয় তলার মৃতদেহ ফেলে রেখে দেন। পরে কতিপয় ছাত্র তাঁর ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁর ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি চকবাজার থানায় ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে হত্যা মামলা করেন। আবরারের বাবার জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহবুব আহমেদ তাঁকে জেরা শুরু করেন। কীভাবে তিনি ছেলে আবরারের মৃত্যুর সংবাদ পান, কীভাবে সেদিন ঢাকায় আসেন, কীভাবে মামলার এজাহার দায়ের করেন, সে-সংক্রান্ত নানা জেরার জবাব দেন বরকতউল্লাহ। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় পলাতক তিন আসামি। গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। বর্তমানে তিন আসামি পলাতক। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ঠিক রয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। ক্রিকেট স্টাম্প, মোটা দড়ি দিয়ে নির্যাতন করার একপর্যায়ে আবরার ফাহাদ বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আসামি মিজানের দেওয়া আবরারের বিরুদ্ধে শিবির করার ‘তথ্যের’ ভিত্তিতে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর আসামি ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে কে শিবির করে।’ তখন আসামি মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে আসামি মেহেদি হাসান ওরফে রবিনকে জানান, আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে। এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান ওরফে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় আসামি ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতলার সিঁড়িতে রাখেন। এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে ঘোষণা দেন, তিনি মারা গেছেন।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%9B%E0%A7%9F-%E0%A6%98%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%9F
10/5/2020
Prothom Alo
Neutral
96
কোভিড১৯ গোটা দেশে শুরু
নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ২৯ দেশে
চীনসহ ২৯টি দেশে ছড়িয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭৭ হাজার। বিশ্বে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ২৩৬০ জন। যাদের মধ্যে ১৫ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু চীনে। বাংলাদেশে এখনও এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। উহান ফেরত ৩১২ জন ভালো আছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮৮ জন। আর ২৯টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৭ হাজার ৭৬৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট। শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৪৫। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। এদের মধ্যে ইরানে চারজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দু’জন করে এবং ফিলিপাইন, ফ্রান্স, তাইওয়ান ও ইতালিতে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং, ম্যাকাওয়, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে। প্রথমদিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু গত কয়েক দিনে চীনের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। রয়টার্স জানিয়েছে, এ রোগ যাতে অন্যান্য দেশে মহামারী আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তার মতে, এখনও এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে যত সময় যাচ্ছে, সুযোগ ততই কমে আসছে। যদি আমরা ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে গুরুতর সংকট এড়াতে পারব। তবে আমরা যদি সুযোগগুলো নষ্ট করি তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ। বাংলাদেশ পরিস্থিতি : আইইডিসিআরের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে সন্দেহজনক (COVID-19) আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে এযাবৎ কারও নমুনাতে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। উহান ফেরত ৩১২ যাত্রীর কোয়ারেন্টিন পরবর্তী আরও ১০ দিন ৩১২ জনকে সীমিত চলাচল ও নিজেদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবহিত করতে আইইডিসিআরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ হটলাইনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক COVID-19 সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউতে। কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ : এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। ওই শহরে একটি চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেয়া ১৬৯ জন মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই সম্প্রদায়ের নয় হাজার সদস্য স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চীন এবং জাপানের প্রমোদতরীর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশে দেশে করোনা : উপকূলে কোয়ারেন্টিন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৩৯ জনসহ জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দেশটির কওম শহর থেকে। সেখান থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবোল, আরাক, ইসফাহান, রাস্তসহ অন্যান্য শহরে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। এর মধ্যে তেহরানের এক শহরের মেয়রও রয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কওম শহরে কাজ করা চীনা শ্রমিকদের কাছ থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন ইরানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কেবল শুক্রবারই সেখানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে বড় আকারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সে রকম পরিস্থিতি দেখা দিলে স্কুল ও অফিস আদালত বন্ধ করে দেয়া হবে। দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কর্মকর্তা ন্যান্সি মেসোনিয়ের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়লেও কমিউনিটিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করছে। এর মাঝেই শনিবার ইরান এবং ইতালিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মোট ৩০ ও ইরানে ২৮ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, শনিবার ইরানে নতুন করে ১০ জনকে করোনাক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়াল ৫ জনে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপোর বলেছেন, আমরা নতুন করে ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। আক্রান্তদের একজন মারা গেছেন, ৮ জন কম শহরে ও দু’জন তেহরানের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাস আগে হানা দিলেও প্রথম প্রাণ কাড়ে ইরানে। এদিকে ইউরোপের দেশ ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক নারীর প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আনসার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আনসা বলছে, মারা যাওয়া ওই নারী মিলান শহরের লম্বার্ডি অঞ্চলের বাসিন্দা। ভেনেতো অঞ্চলের পাদুয়া এলাকায় ৭৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই নারীর প্রাণহানির খবর এসেছে। আমিরাতে এক বাংলাদেশি আক্রান্ত : সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও দু’জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। আমিরাতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে গালফ নিউজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। সব মিলিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ জনে। গালফ নিউজ লিখেছে, নতুন দুই রোগীর মধ্যে একজন ৩৪ বছর বয়সী ফিলিপিনো এবং অন্যজন ৩৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্বাস্থ্য রেগুলেশন্স বিভাগের প্রধান ডা. ফাতিমা আল-আক্তারকে উদ্ধৃত করে আল-আরাবিয়া লিখেছে, যাদের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস ধরা পড়ছে, তাদের সবাইকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের সবাইকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। সতর্ক বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো : করোনাভাইরাস আতঙ্কে পুরো বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। দেশে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিদেশিদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছেন এমন ব্যক্তিদের ভিসা দেয়া থেকে বিরত থাকছে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। দূতাবাসের কার্যক্রম ঠিক রেখে নিজেদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তাদেরকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চীন, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ যেসব দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, সেসব দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে এসব নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে। চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমরা এখানে এক ধরনের ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে চীন সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিকেও একই পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করে যাচ্ছি। ইউক্রেনে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ : করোনা আতঙ্কে চীন থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফেরানোর প্রতিবাদে ইউক্রেনে বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার চীনফেরত ৪৫ ইউক্রেনীয় ও ২৭ বিদেশিকে ছয়টি বাসে করে রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দেশটির নাগরিকরা। তাদের আশঙ্কা, চীন থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইউক্রেনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই চীন থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, জার্মানি, রাশিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশের নাম রয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বলে দাবি করা একটি ভুয়া ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে লোকজনকে মেইল করে বলা হয়েছে, চীনফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। বিল গেটসের অনুদানের প্রশংসায় জিনপিং : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এর অনুদানের প্রশংসা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ৬ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল বিল গেটসের সংস্থাটি। জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এমন আর্থিক অনুদানের কাজের গভীর প্রশংসা করছি। চীনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনাদের এমন চিঠি, এদেশের জনগণের সঙ্গে আপনাদের সংহতির বহিঃপ্রকাশ। অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুরু হতে পারে : শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্তুতি নিতে হবে অন্য ভাইরাসের জন্যও। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী কয়েক বছরে আরও কী কী ভাইরাস আসতে পারে তা নিয়ে এখনই কাজ করতে হবে সরকারকে। তবে বর্তমানে চীনে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুরু হতে পারে। চীনে করোনাভাইরাস দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ নিজেদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেবে। বাংলাদেশকেও এ কারণে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত রাজধানীর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পোশাক শিল্প ১০ থেকে ২০ বছর থাকবে। উন্নত দেশগুলোতেও পোশাক প্রতিযোগিতামূলক দামে উৎপাদন করার মতো ক্ষমতায় চলে আসছে। কারিগরি পরিবর্তনের ফলে পোশাক শিল্পের প্রভাব বাংলাদেশ থেকে আস্তে আস্তে কমে যাবে। তাই পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এ ধরনের ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারকে একটা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে চীনের দৃশ্যমান কোনো সংযোগ না থাকার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বলেন, ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা কম। কিন্তু যেভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। চীনে ভ্রমণ বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মতো স্পষ্ট মহামারীর সংযোগ না থাকার কারণে বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ইরানে মৃত্যু ও নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া খুব উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি মনে করেন, চীনসহ অপর দেশগুলো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে এখনও ভাইরাসটির আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি সম্ভাব্য মহামারী ঠেকাতে আরও বেশি প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
https://www.jugantor.com/tp-firstpage/281309
2/23/2020
Jugantor
Neutral
97
কোভিড১৯ গোটা দেশে শুরু
নতুন মহামারির শঙ্কায় বিশ্ব, কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
করোনা মহামারির পর বিশ্বে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। চলতি জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এখন এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এই ভাইরাস নিয়ে এখনও কোনো সতর্কতা জারি করেনি। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। ২০২০ সালের ১৪ মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২১৩টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হন ১৭ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে মারা যান ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫১২ জন। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হবে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাদের। এইচএমপিভি ভাইরাসকে মৌসুমী ফ্লু-ও বলা যায়। ভাইরাসটির মূল লক্ষণ শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা। তবে ভাইরাসটি কতোটা ভয়াবহ হবে? শরীর ও জীবনের জন্য এটি কেমন হুমকি হতে পারে? এ নিয়ে তেমন কিছু এখনও জানা যায়নি। এইচএমপিভি ভাইরাস কী ভাইরাস হলো অতিক্ষুদ্র সংক্রামক, যা শুধুমাত্র একটি জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ভাইরাস উদ্ভিদ, প্রাণী থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়াসহ সব জীবজগতকে আক্রান্ত করে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি বাস্তুতন্ত্রেই ভাইরাস পাওয়া যায়। এরা হলো সবচেয়ে বহুল সংখ্যক জৈবিক সত্ত্বা। ২০০১ সালে প্রথম দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আবিষ্কার হয়। আবিষ্কারেরও ৬০ বছর আগে থেকে ভাইরাসটি মানবজগতে রয়েছে, ফলে কোভিডের মতো নভেল বা নতুন ধরনের ভাইরাস এইচএমপিভি নয়। মূলত ১৪ বছর বয়সের নীচের শিশু এবং বয়স্করা এতে আক্রান্ত হবেন। চীনে সম্প্রতি এটি শনাক্ত হয়। ভাইরাসের প্রকোপে চীনে প্রচুর মানুষ হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। গত বছর চীনে ৩২৪ জন এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যাটি ছিল ২২৫। বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, এটা নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এমনকি এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কোভিড-১৯ একেবারে ভিন্ন ও নতুন আবহের ভাইরাস হওয়ায় এর প্রাদুর্ভাব বা মহামারির রেশ এতোটা বিস্তর হয়েছিল। এর লক্ষণগুলো কী জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময় এই ভাইরাসের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, শ্বাসতন্ত্রে ছড়ায় এমন অন্যান্য ভাইরাসের মতোই এটি। অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরণের ভাইরাসের আক্রমণের মতোই, যার উপসর্গ হিসেবে জ্বর-স্বর্দি-কাশি-ঠান্ডা হয়ে থাকে। কোন কোন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এইচএমপিভি মূলত মৌসুমী রোগ বা ভাইরাসের হঠাৎ বৃদ্ধিকে প্রাদুর্ভাব বলা হয়। এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব প্রথমে শুরু হয় চীনে। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি। যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যে কোনো সময়ে দেশটি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের। চীনের মতো একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে সাত লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে। মালয়েশিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিক টাইমস। আজ সোমবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে একই দিনে দুই শিশুর শরীরে পাওয়া গেছে। প্রথমে আট মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে ভাইরাসের হদিস মেলে। পরে তিন মাসের এক শিশুর শরীরেও একই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে আগে থেকেই সতর্ক ছিল ভারত। শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। সেই সঙ্গে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) আজ সোমবার নিশ্চিত করেছে, ওই দুই শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশব্যাপী শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে আইসিএমআরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দুই শিশুর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
https://samakal.com/bangladesh/article/273984/%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87%C2%A0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
1/6/2025
Samakal
Neutral
98
কোভিড১৯ গোটা দেশে শুরু
সোমবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন
করোনা মহামারি পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ায় আগামী সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপাতত সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধসহ এই লকডাউন জারি করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রাতে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার স্বাক্ষরিত সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এই কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন শুধু চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। তবে গণমাধ্যম এর আওতা-বহির্ভূত থাকবে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আদেশ আগামীকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এদিকে আজ সকাল আটটার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মারা গেছেন আরও ১০৮ জন, যা এই বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ আর শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৯ জন৷ সংক্রমণের হার ২২.২১ ভাগ। দেশে করোনা সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি সেটা ঠেকানো না গেলে পরিস্থিতি ভারতের চেয়েও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি ডা. মো. শহীদুল্লাহ। তিনি আজ জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে যে অবস্থা হবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না৷ ভারতের চেয়েও খারাপ হবে৷ তাই আমরা ১৪ দিনের জন্য পুরো দেশ শাটডাউনের সুপারিশ করেছি৷’ দেশে বেশ কিছুদিন আগে থেকে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ায় এবং এর সংক্রমণে মৃত্যুহার বেশি। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সীমান্তবর্তী বেশ কিছু জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ঢাকার আশপাশের সাত জেলাতেও বিধিনিষেধ জারি করা হয় গত মঙ্গলবার থেকে। এবার তৃতীয়বারের মতো সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার ১০ দিন পর প্রথম কোনো করোনা রোগী মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই মাসের ২৬ তারিখ দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যেটি লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পায়। কয়েক মাস কার্যত অচল থাকে গোটা দেশ। পরে সংক্রমণ আস্তে আস্তে কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবকিছুতেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে দেশ। করোনা সংক্রমণ গত বছরের শেষ দিকে এমনকি চলতি বছরের শুরুর দিকে তিন শতাংশের নিচে নেমেছিল। কিন্তু সংক্রমণের সেই নিম্নগতির ধারা ধরে রাখা যায়নি পরবর্তী সময়ে। চলতি বছরের মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি হতে থাকে। এপ্রিলের শুরুতে সরকার দেশে বিধিনিষেধ এবং ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয়বারের মতোলকডাউন জারি করে। লকডাইন চলে সপ্তাহ খানেক, তবে টানা কয়েক বিধিনিষেধ চলার পর সংক্রমণ কমে আসায় শিথিল করা হয় সবকিছু। করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা আবার অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশে শাটডাউনের সুপারিশ করে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা সারা দেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশের কথা জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদেন জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে করণীয় সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানাবে সরকার। আজ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কঠোর লকডাউনের, যা সোমবার থেকে বাস্তবায়ন হবে।
https://www.dhakatimes24.com/2021/06/25/219443
6/25/2021
Dhaka Times
Neutral
99
কোভিড১৯ গোটা দেশে শুরু
সোমবার নয়, বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী সোমবার থেকে নয়, বৃহস্পতিবার ১ জুলাই থেকে সাত দিন সারাদেশে কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) শেখ রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকবে। যেহেতু জুন মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেহেতু সিদ্ধান্তটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।’ এর আগে, গতকাল সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে আগামী ২৮ জুন সোমবার থেকে সাত দিন সারাদেশে কঠোর লকডাউন আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওই তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। লকডাউনের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। তবে, গণমাধ্যম এর আওতার বাইরে থাকবে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত প্রজ্ঞাপন আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে এর আগের দিন সরকারকে দেশব্যাপী ১৪ দিনের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ করার পরামর্শ দেয় করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (এনটিএসি)। সারাদেশে লকডাউনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনটিএসি সেসময় বলেছিল, ৫০টির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সম্পূর্ণ শাটডাউন দেওয়ার সুপারিশ করে এনটিএসি।
https://bangla.thedailystar.net/node/234229
6/26/2021
The Daily Star
Neutral
100
গার্মেন্টস খোলা ও শ্রমিক মজুরি
২৪ হাজার টাকা মজুরি দাবি গার্মেন্টস শ্রমিকদের
সর্বনিম্ন মজুরি ২৪ হাজার টাকা ও ৩টি গ্রেড নির্ধারণ এবং বাৎসরিক ১০ শতাংশ মজুরি বাড়ানোসহ ছয় দফা দাবিতে মানবন্ধন করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদ। গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের নেতারা দাবি তুলে বলেন, গার্মেন্টসের উৎপাদন ও রপ্তানি দুটোই বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। কিন্তু শিল্পের উন্নয়নের কোনো ফলই গার্মেন্টস শ্রমিকরা পাচ্ছে না। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়। সভাপতির বক্তব্যে মো. আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে জীবনযাপন করা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাদ্য, নিত্যপণ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যয়, বাড়িভাড়া, যাতায়াত ভাড়া ব্যাপক হারে বাড়ায় অবিলম্বে নিম্নতম মঞ্জুরি বোর্ড গঠন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন ও জোটের পক্ষ থেকেও মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি করে আসছে। তিনি বলেন, মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৪১ ধারা অনুযায়ী জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে হবে। ৭০শ তাংশ বেসিক মজুরি নির্ধারণ করে, নিম্নতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা ঘোষণাসহ ৩টি গ্রেডে নির্ধারন করার দাবি জানাচ্ছি। গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের সদস্য সচিব ও রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কস ফেডারেশনের সভাপতি দাগী ইয়াসমিন বলেন, শ্রম আইন অনুযারী সেই সেক্টরের জন্য মজুরি কমিশন গঠিত হবে। সেই সেক্টরের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের প্রতিনিধিকে মজুরি বোর্ডের সদস্য করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে জীবনমানের খরচ এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তা দিয়ে কোনোভাবেই শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহ হয় না। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের মূল অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। অথচ তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের জন্য নেই কোনো প্রণোদনা ব্যবস্থা। তাই আমরা সব গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি। গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের দাবিগুলো হলো- ১. গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে। ২. গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের মজুরি বোর্ডের সদস্য করতে হবে। ৩. নিম্নতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা (৭০ শতাংশ মূল বেসিক) ঘোষণাসহ ৩টি গ্রেডে নির্ধারণ করতে হবে। ৪. প্রতি বছর ১০ শতাংশ বাৎসরিক মজুরি বাড়াতে হবে। ৫. নিম্নতম মজুরি ঘোষনায় বিলম্ব হলে মূল বেসিকের ৪০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে। ৬. স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সব গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের আহ্বায়ক ও মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মিয়া। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জাহানারা বেগম, বাংলাদেশি গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদুল হাসান নয়ন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মাহবুব আলম আকনসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা।
https://www.banglanews24.com/economics-business/news/bd/1053874.details
2/13/2023
Bangla News24
Govt critique